মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
বিদেশি কোম্পানিকে স্থানীয় তথ্য সংরক্ষণে বাধ্য করা
শুল্ক ও বাণিজ্য নিয়ে বিরোধ আরো ব্যাপক রূপ নিচ্ছে
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে বলেছে যেসব দেশ বিদেশী কোম্পানিগুলোকে স্থানীয়ভাবে তথ্য সংরক্ষণের জন্য বাধ্য করে তাদের জন্য তারা এইচ-১বি ওয়ার্ক ভিসার ওপর নিষেধাজ্ঞার কথা বিবেচনা করছে। ওয়াকিবহাল তিনটি সূত্র এ রয়টার্সকে বিষয়টি জানিয়েছে। এর ফলে দুই দেশের মধ্যে শুল্ক ও বাণিজ্য নিয়ে বিরোধ আরো ব্যাপক রূপ নিতে যাচ্ছে।
এইচ-১বি ভিসা কর্মসূচির আওতায় প্রতিবছর দক্ষ বিদেশী শ্রমিকদের যুক্তরাষ্ট্রে আনা হয়। নয়াদিল্লিতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওর সফরের কয়েকদিন আগে এই জনপ্রিয় এইচ-১বি ভিসা কর্মসূচির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুঁশিয়ারি এল।
ভারত তথ্য সংরক্ষণ বিষয়ে মাস্টারকার্ড-এর মত কোম্পানিগুলোকে বিপর্যস্ত করেছে এবং যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে বিরক্ত করে কঠোর আইন প্রণয়নের দিকে ঠেলে দিয়েছে। ভারত এ অস্থায়ী ভিসার বৃহত্তম গ্রহীতা। এ ভিসাপ্রাপ্তদের বেশির ভাগই বড় বড় ভারতীয় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানে কাজ করে।
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যে বাণিজ্য উত্তেজনা পাল্টাপাল্টি ব্যবস্থা গ্রহণের রূপ নেয়ার মধ্যে এ মার্কিন হুঁশিয়ারি দেয়া হল। যুক্তরাষ্ট্র নয়াদিল্লির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য সুবিধা প্রত্যাহারের পর গত রোববার থেকে ভারত কিছু মার্কিন পণ্যের উপর উচ্চ শুল্কহার আরোপ করেছে।
গত বুধবার দুইজন উর্ধ্বতন ভারতীয় সরকারি কর্মকর্তা বলেন, গত সপ্তাহে তাদের এইচ-১বি ভিসা নিষেধাজ্ঞা বিষয়ে মার্কিন সরকারের পরিকল্পনা সম্পর্কে ব্রিফ করা হয়েছে। এর আওতায় বার্ষিক কোটায় প্রতি বছর ১০ থেকে ১৫ শতাংশের মধ্যে ভারতীয়দের এইচ-১বি ভিসা দেয়া হত। প্রতি বছর প্রদত্ত ৮৫ হাজার এইচ-১বি ওয়ার্ক ভিসা অনুমোদন করা হলেও কোনো দেশের জন্য কোনো সংখ্যা নির্ধারিত নেই। তবে ধারণা করা হয় যে এর ৭০ শতাংশই পায় ভারতীয়রা।
উভয় কর্মকর্তাই বলেন, তাদের বলা হয়েছে যে এ পরিকল্পনা তথ্য স্থানীয়করণ-এর বিশ^ব্যাপী পরিকল্পনার সাথে সম্পর্কিত যাতে কোনো দেশ তথ্যের উপর অধিকতর নিয়ন্ত্রণ লাভের পথ হিসেবে তথ্যের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। সে সঙ্গে সম্ভবত আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলোর শক্তি খর্ব করে। মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলো বিশ^ব্যাপী তথ্য স্থানীয়করণ আইনের বিরুদ্ধে কঠোর ভাবে লবি করেছিল।
ভারত-মার্কিন আলোচনা বিষয়ে অবগত ওয়াশিংটন ভিত্তিক একটি শিল্পসূত্র বলে, বৈশি^ক তথ্য সংরক্ষণ আইনের জবাবে যুক্তরাষ্ট্র ইচ্ছাকৃতভাবে এইচ-১বি ভিসার সংখ্যার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। তবে সূত্র বলে, ভারত এ পদক্ষেপের একমাত্র লক্ষ্য নয়।
এ ব্যক্তি বলেন, প্রস্তাবটা হচ্ছে এই যে কোনো দেশ যারা তথ্য স্থানীয়করণ করে, তাদের ক্ষেত্রে এটা (এইচ-১বি ভিসা) সীমিত করে কোটার প্রায় ১৫ শতাংশে সীমিত করা হবে। এটা যুক্তরাষ্ট্র সরকারের অভ্যন্তরে আলোচিত হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য প্রতিনিধিত্ব অফিস (ইউএসটিআর) এ প্রশ্নটি পররাষ্ট্র দফতরে পাঠিয়েছে।
আইটি সেক্টও : এ ধরনের কোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে টাটা কনসালটেন্সি সার্ভিস (টিসিএস) ও ইনফোসিস লিমিটেডসহ ভারতের ১৫০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি আইটি সেক্টর যারা তাদের বৃহত্তম বাজার যুক্তরাষ্ট্রে সার্ভিস ক্লায়েন্টদের কাছে ইঞ্জিনিয়ার ও ডেভেলপারদের উড়িয়ে নিতে এইচ-১বি ভিসা ব্যবহার করে। প্রধান সিলিকন ভ্যালি টেক কোম্পানিগুলোও এ ভিসা ব্যবহার করেই লোক সংগ্রহ করে।
রয়টার্সের এ খবরটি প্রকাশিত হওয়ার পর গতকাল বৃহস্পতিবার প্রাথমিক পর্যায়ে ভারতীয় আইটি প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার পতন ঘটে। উইপ্রো লিমিটেডের শেয়ার মূল্য ৪ শতাংশ, অন্যদিকে ইনফোসিস ও টিসিএসের শেয়ার প্রতিটির মূল্য ২ শতাংশ করে হ্রাস পায়। বৃহত্তর নিফটি আইটি সূচকের ১.৮ শতাংশ পতন ছিল গত ৫ সপ্তাহে একদিনের বৃহত্তম শতাংশ হার পতন।
স্ট্রাটফর বিশ্লেষক রেভা গুজন টুইটারে এ পদক্ষেপকে মার্কিন-চীন অর্থনৈতিক যুদ্ধের মধ্যে মার্কিন প্রযুক্তি শিল্পের জন্য সম্ভবত আরেকটি আঘাত বলে আখ্যায়িত করেছেন। কিছু ভারতীয় ও তাদের সমর্থকরা সামাজিক মাধ্যমে এ মনোভাবেরই প্রতিধ্বনি করেছেন।
ভারতীয় দুই সরকারি কর্মকর্তার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বলেন, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যুক্তরাষ্ট্রের গৃহীত এ ধরনের পদক্ষেপ কিভাবে ভারতকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে সে ব্যাপারে কর্মকর্তাদের কাছ থেকে জরুরি জবাব চেয়েছে।
গত বছর থেকে মার্কিন কোস্পানিগুলো যেমন মাস্টারকার্ড বিপাকে পড়ায় ট্রাম্প প্রশাসন উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে এবং কয়েকটি দেশে স্থানীয় ভাবে তথ্য সংরক্ষণে বিদেশী কোম্পানিগুলোকে বাধ্য করার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা বিষয়ক আইনের পদক্ষেপে সমস্যা সৃষ্টি হতে যাচ্ছে।
ভারত গত বছর বিদেশী প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের অর্থ পরিশোধ তথ্য তদারকির জন্য শুধুমাত ভারতে সংরক্ষণের নির্দেশ দিয়েছে। নয়াদিল্লি ব্যাপক তথ্য সংরক্ষণ আইন বিষয়ে কাজ করছে যা সে সংবেদনশীল মনে করে এমন তথ্য স্থানীয় প্রক্রিয়াকরণের জন্য কঠোর আইন প্রয়োগ করবে।
যখন বিশ^ব্যাপী সরকারগুলো তাদের আওতাভুক্ত তথ্যে প্রবেশাধিকারের জন্য কঠোর তথ্য সংরক্ষণ আইন ঘোষণা করতে যাচ্ছে, সমালোচকরা বলছেন আন্তঃসীমান্ত তথ্য প্রবাহে নিষেধাজ্ঞা আরোপ উদ্ভাবনের ক্ষতি করবে ও কোম্পানিগুলোর ব্যয় বৃদ্ধি করবে।
গত মার্চে ইউএসটিআর এক প্রেসনোটে অন্যদের মধ্যে ভারত, চীন, ইন্দোনেশিয়া ও ভিয়েতনামে তথ্যপ্রবাহে নিষেধাজ্ঞার কথা উল্লেখ করে ডিজিটাল বাণিজ্যের প্রধান বাধার কথা তুলে ধরে।
গত সপ্তাহে মার্কিন-ভারত বিজনেস কাউন্সিলের অনুষ্ঠানে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী পম্পেও বলেন, ট্রাম্প প্রশাসন সীমান্ত পেরিয়ে অবাধ তথ্য প্রবাহের জন্য চাপ সৃষ্টি করবে। আর তা শুধু মার্কিন কোম্পানিগুলোকে সাহায্য করার জন্য নয়- ভোক্তাদের গোপনীয়তা রক্ষা নিশ্চিত করাতেও।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।