Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বাজেটে রাজস্ব আদায়ের টার্গেট ও এডিপির মান প্রসঙ্গে

সরদার সিরাজ | প্রকাশের সময় : ২০ জুন, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

২০১৯-২০ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের প্রস্তাব পেশ করা হয়েছে গত ১৩ জুন, জাতীয় সংসদে। এটা দেশের ৪৮তম জাতীয় বাজেট। আর বর্তমান অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের প্রথম বাজেট উপস্থাপন। তিনি বাজেট উপস্থাপনকালে অসুস্থতা বোধ করলে বাকীটুকু উপস্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ‘সমৃদ্ধ আগামীর পথযাত্রায় বাংলাদেশ: সময় এখন আমাদের, সময় এখন বাংলাদেশের’ শিরোনামে প্রস্তাবিত বাজেট আকারের দিক দিয়ে দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় এবং বিশ্ব পর্যায়ে ৬৪তম বাজেট। প্রস্তাবিত বাজেট হচ্ছে: মোট আকার ৫,২৩,১৯০ কোটি টাকা। তন্মধ্যে রাজস্ব আয় ৩,৭৭,৮১০ কোটি, মূল এডিপি ২,০২,৭২১ কোটি, পরিচালন ব্যয় ৩,১০,২৬২ কোটি, ঘাটতি ১,৪৫,৩৮০ কোটি টাকা। এই ঘাটতি মেটাতে বৈদেশিক উৎস থেকে সংগ্রহ করা হবে ৬৩ হাজার ৮৪৮ কোটি টাকা এবং অভ্যন্তরীণভাবে ৭৭ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা। তন্মধ্যে ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া হবে ৪৭ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া, বিদেশ থেকে নেওয়া ঋণের সুদ পরিশোধে ব্যয় হবে ৪ হাজার ২৭৩ কোটি টাকা এবং অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধ বাবদ ৫২ হাজার ৭৯৭ কোটি টাকা। নতুন অর্থবছরে মোট জিডিপির আকার ধরা হয়েছে ২৮ লাখ ৮৫ হাজার ৮৭২ কোটি টাকা। যা চলতি অর্থবছরে আছে ২৫ লাখ ৩৭ হাজার ৮৪৯ কোটি টাকা। নয়া বাজেটে প্রবৃদ্ধির টার্গেট ৮.২% ও মূল্যস্ফীতি ধরা হয়েছে ৫.৫%। স্মরণীয় যে, বাজেট-পরবর্তী গত ১৪ জুন সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০৩০ সালের মধ্যে ৩ কোটি নতুন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। বেকারত্ব ঘুচাতে স্টার্ট-আপ ফার্ড সৃষ্টি করা হয়েছে। বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ১০০ কোটি টাকা। এছাড়া, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ১০% অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা নেয়া হয়েছে। নয়া বাজেট ঘাটতি জিডিপির ৫ শতাংশের মধ্যে রাখা হয়েছে। এছাড়া, নয়া বাজেটে কৃষি খাতের উন্নয়নে ২০% প্রণোদনা অব্যাহত থাকবে। দেশের ৯৩% মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। উৎপাদন ক্ষমতা ২১ হাজার ১৬৯ মেগাওয়াট। শতভাগ মানুষ বিদ্যুৎ পাবে। গ্রাম হবে আধুনিক শহর। দ্রæততম সময়ে ফাইভ-জির ব্যবস্থা করা হবে।’

প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে রাজনীতিবিদ, অর্থনীতিবিদও সাধারণ মানুষের মধ্যে। তাতে সর্বাধিক আলোচিত হচ্ছে- কালো টাকা সাদা করা। কারণ, এ বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর। কালো টাকা সাদা করার সুযোগ না দিলে তা দেশে থাকবে না, পাচার হয়ে যাবে। আবার সাদা করার সুযোগ দিলেও যে খুব বেশি লাভ হয়, তা নয়। ইতোপূর্বে এ সুযোগের সদ্ব্যবহার হয়েছে খুবই কম। দ্বিতীয়ত: এটা দুর্নীতিকে স্বীকৃতি দেওয়ার শামিল। টিআইবি এটাকে ‘অসাংবিধানিক, বৈষম্যমূলক ও দুর্নীতিবান্ধব’ বলে অভিহিত করেছে। অন্যদিকে, সঞ্চয়পত্রে উৎসে কর কর্তন দ্বিগুন করা এবং মোবাইল ফোনের কলরেট ও স্মার্টফোনের মূল্য বৃদ্ধির বিষয়টিও ব্যাপক আলোচিত হচ্ছে। নয়া বাজেট বক্তৃতায় বলা হয়েছে, দেশের পূর্ব-পশ্চিম এবং উত্তর-দক্ষিণ কোথাও কোনো বৈষম্য নেই। কিন্তু কথাটি সঠিক নয়, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর রিপোর্টই তার প্রমাণ। উক্ত রিপোর্টে কোন জেলায় দারিদ্র্যের হার কত এবং কোন অঞ্চলে এডিপির বরাদ্দ কত তার বিশদ বর্ণনা রয়েছে। অন্যদিকে, দেশে আয় বৈষম্য বাড়তে বাড়তে এখন আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী প্রায় সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। তাই দেশের ৯০% সম্পদের মালিক এখন মাত্র ৫% লোক। চলতি বাজেটে আবারও সার্বজনীন পেনশনের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এ কথা গত বাজেটের সময়ও বলা হয়েছিল। তখন প্রশ্ন উঠেছিল, যেখানে সরকারি খাতেই এখনও শতভাগ পেনশন চালু করা হয়নি, সেখানে বেসরকারি খাতে কীভাবে পেনশন চালু করা যাবে? কারণ, বেসরকারি খাতের শ্রমিকের চাকরির কোনো নিশ্চয়তা নেই। সেখানে ৯০% এর বেশি শ্রমিক স্থায়ী নিয়োগপত্র পায় না। এই অবস্থায় তাদের জন্য পেনশন চালু হবে কীভাবে? এসব প্রশ্নের সুরাহা করা হয়নি। তবুও আবার সার্বজনীন পেনশন চালু করার কথা বলা হয়েছে। তাহলে এটা কি নিছক ব্রাহবা কুড়ানোর উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে? শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে জিডিপির ২-৩% করে বরাদ্দ রাখা হয়েছে, যা দিয়ে মানব সম্পদের উন্নয়ন হবে না। তদ্রুপ সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীতে মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা ও পেনশন সংশ্লিষ্ট করা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। কারণ, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী হচ্ছে গরীব ও দুঃস্থ মানুষদের সাহায্য করার খাত। সেখানে মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা সংশ্লিষ্ট হয় কীভাবে? জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের সম্মানি ভাতা কি সাহায্য ভাতার অন্তর্ভুক্ত হতে পারে? পারে না। তদ্রুপ সরকারি চাকরিজীবীদের পেনশন/গ্র্যাচুইটি পাওয়া অধিকার, নিয়োগ পত্রের শর্তানুযায়ীই প্রাপ্য। তাই সেটা কি করে সাহায্য ভাতার অন্তর্ভুক্ত হয়? এ প্রশ্ন খোদ এমপি ফজলে হোসেন বাদশার। তিনি স¤প্রতি এক টকশো’তে এসব কথা বলেছেন। তাই এসব নিয়ে ভাবনা চিন্তা করা দরকার। অন্যদিকে, দেশের ব্যাংক খাতকে রক্ষা করার জন্য ব্যাংকিং কমিশন গঠন ও খেলাপি ঋণ আদায়ের জন্য কঠোর আইন করা দরকার বলে বিশেষজ্ঞরা বলছেন অনেকদিন ধরে। তাই এসব করতে বাজেটের দরকার হয় না। সরকার যে কোনো সময় করতে পারে। কিন্তু তা করা হয়নি! অপরদিকে, বাজেট প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘এ বাজেটে বাংলাদেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠী অর্থনৈতিক চাপে পড়বে। জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করবে না। এই বাজেট ধনী ও ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষার বাজেট।’ এছাড়া, প্রস্তাবিত বাজেটের বিশ্লেষণ তুলে ধরে সিপিডি বলেছে, ‘নতুন বাজেটে কৃষককে ধানের লোকসান বাবদ প্রণোদনা দেওয়া হয়নি। সাধারণ মানুষের করমুক্ত আয়-সীমাও বাড়ানো হয়নি। কিন্তু সম্পদের সারচার্জের সীমায় ছাড় দেওয়া হয়েছে। ধনীরা ফ্ল্যাট কিনতেও কর ছাড় পেয়েছে। পোশাক রপ্তানিকারকেরাও নগদ ভর্তুকি পেয়েছে।’ অন্যদিকে, সাবেক মন্ত্রী ও ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘বাজেটে ধনী-গরিবের বৈষম্য কমানোর কোনও ব্যবস্থা নেই। ঋণ-খেলাপির বিষয়ে কোনও দিকনির্দেশনা নেই। বিপুল অঙ্কের এই বাজেট বাস্তবায়ন কঠিন হবে।’ বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বাজেটটা সার্বিকভাবে গতবারের বাজেটই এবার রিপিট হয়েছে। আগেরকার বাজেটের মতোই গতানুগতিক ও ধারাবাহিকতা। সদিচ্ছার প্রকাশ হয়েছে অনেক কিছু করার। কিন্তু লক্ষ্যগুলো কীভাবে অর্জন করবেন সে ব্যাপারে কোনো দিক-নির্দেশেনা নেই।’ দ্বিতীয়ত: প্রস্তাবিত বাজেটের আয়ের বিরাট অংক। সেটা অর্জন করা, রাজস্ব আদায় করা, ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন করা ও ভ্যাট আদায়ের আধুনিকায়নের কোনো ব্যবস্থায় নেই এনবিআরের। তাই এই আয় অর্জন করা কঠিন হবে। অন্যদিকে ভ্যাটের উপর আমরা নির্ভরশীল। একটা পণ্যের ওপর ভ্যাট বসলে অন্য সব কিছুর দাম বাড়ে। কারণ একটা পণ্যের দাম আরেকটার ওপর নির্ভরশীল। তাই এবারের বাজেট জনকল্যাণমুখী ও জনবান্ধবমুখী হয়নি। পাশাপাশি বাজেটে সরকার ব্যাংক থেকে ঋণ নেবে। এতে করে ব্যক্তি খাতে ঋণ প্রবাহ কমবে। ফলে এই খাত কঠিন চাপে পড়বে। অপরদিকে, প্রস্তাবিত বাজেটকে ‘উন্নয়ন, গণমুখী ও জনবান্ধব’ হিসেবে আখ্যায়িত করে তাতে পূর্ণ সমর্থন ও স্বাগত জানিয়েছে আওয়ামী লীগ। তবে, সাবেক অর্থমন্ত্রী আবদুল মুহিত সাংবাদিকদের বলেন, ‘বাজেট বাস্তবায়ন খুবই কঠিন। কারণ মানুষ ট্যাক্স দিতে চায় না। ট্যাক্স আদায়ে দক্ষিণ এশিয়ায় আমরা নিচের দিকে।’

নয়া বাজেট নিয়ে আরও অলোচনা হবে বিভিন্ন মহলে। এমনকি জাতীয় সংসদেও বিস্তারিত আলোচনা হবে। অতঃপর এদিকে-ওদিক করে পাশ হবে। তাই এসব বিষয় নিয়ে বেশি আলোচনা করার চেয়ে রাজস্ব আয় ও এডিপি নিয়ে কিছু আলোকপাত করা দরকার। কারণ, লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আদায় না হলে, বাজেট বাস্তবায়ন কঠিন হবে। বিশেষ করে এডিপি নিয়ে। কারণ, রাজস্ব ব্যয় হ্রাস করা সম্ভব নয়। সেখানে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতা ও অন্যান্য খরচাপাতি কম-বেশি করার তেমন সুযোগ নেই। তাই রাজস্ব আয় টার্গেট অনুযায়ী আদায় না হলে তার প্রভাব পড়বে এডিপিতে। হয় কাটছাঁট করতে হবে, নতুবা ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে হবে, কিংবা ঘন ঘন কর বাড়াতে হবে বিভিন্ন খাতে। যার কোনটিই কাম্য নয়। স্মরণীয় যে, দেশে এডিপি বাস্তবায়নের সক্ষমতাও খুব দুর্বল। তাই প্রতিবছর বিপুল টাকা ফেরত যায়। অন্যদিকে, রাজস্ব আদায়ও লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারে না কোনো বছরই। তাই লক্ষ্যমাত্রা কমাতে হয় বারবার। সেটাও অর্জিত হয় না। চলতি অর্থবছরেও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৮৫ হাজার কোটি টাকা কম রাজস্ব আদায় হবে বলে খবর প্রকাশিত হয়েছে। তাই দেশে একটা কথা ব্যাপকভাবে চালু হয়েছে, সেটা হচ্ছে: বাজেট যত বড় হচ্ছে, বাস্তবায়ন তত কমছে!

দেশে কর জিডিপির হার ৯-১০%। যা ইউরোপ-আমেরিকা দূরে থাক, এই অঞ্চলের মধ্যেও সর্বনিম্ন। তাই এই হার ১৯% করার চিন্তা ভাবনা চলছে। সে লক্ষ্যে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। বিশেষ করে এনবিআরের কর্মকান্ডকে অটোমেশনের আওতায় আনা হচ্ছে। এবারের বাজেটে রাজস্ব আদায়ের টার্গেট করা হয়েছে- ৩,৭৭,৮১০ কোটি টাকা। যার বিরাট অংশ ভ্যাট। ভ্যাট আইন সংশোধন করে ২০১২ সালে একটি আইন করা হয়েছিল। কিন্তু ব্যবসায়ীদের প্রবল আপত্তির কারণে তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি এতদিন। এবার ব্যবসায়ীদের সাথে একাধিকার বৈঠক করে আইনটি বাস্তবায়নে রাজী করানো হয়েছে। তবে, ভ্যাটের স্তর একটির স্থলে ৪টি করা হয়েছে। যেমন: ৫, ৭.৫, ১০ ও ১৫ শতাংশ (৫, ৭.৫ ও ১০% এর ক্ষেত্রে কোনো রেয়াত নেই)। তাই এ নিয়ে হযবরল সৃষ্টি হয় কি-না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে সব মহলেই। নতুন ভ্যাট আইন চালু হবে ১/৭/১৯ তারিখ থেকে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোয় ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস (ইএফডি) মেশিন চালু করবে এনবিআর। ফলে পণ্য ও সেবা বেচাকেনায় স্বচ্ছতা আসবে এবং ভ্যাট ফাঁকি অনেকাংশে কমে যাবে। এতদিন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোয় ইলেকট্রনিক ক্যাশ রেজিস্টার (ইসিআর) মেশিন ব্যবহার হতো। কিন্তু তেমন সুফল হয়নি তাতে। তাই অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সংবলিত ইএফডি চালু করা হচ্ছে। যা মূলত ইসিআর-এর উন্নত সংস্করণ। এই যন্ত্রটি এনবিআর-এর সার্ভারের সরাসরি যুক্ত থাকায় প্রতিটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের প্রতিদিনকার বিক্রয়ের তথ্য সরাসরি এনবিআরের সার্ভারে চলে আসবে। তাই ইএফডিতে একবার ইনপুট দেয়া হলে সেই তথ্য গোপন করার কোন সুযোগ নেই। কিন্তু সারাদেশে ইএফডি চালু করতে এনবিআর ও ব্যবসায়ীদের কোন প্রস্তুতি নেই। অন্যদিকে, বিভিন্ন তথ্য মতে, এখনো দেশের কোন প্রতিষ্ঠানেই ইএফডি মেশিন বসানো হয়নি। উপরন্তু ব্যবসায়ীদেরও এ ব্যাপারে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়নি। তাহলে ইএফডি ১/৭/১৯ তারিখ থেকে কার্যকর হবে কীভাবে? দ্বিতীয়ত: করযোগ্য সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নিবন্ধিত হয়নি। তাহলে অনিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান কীভাবে ইএফডি’র মেশিনের আওতায় আসবে? নাকি ভ্যাটের হিসাব কিছু হবে বাঁশের কলমে আর কিছু হবে ডিজিটাল কলমে? অন্যদিকে, শুল্ক কর ও অন্যান্য কর সঠিকভাবে আদায় হবে কি-না তা নিয়েও সংশয় রয়েছে। কারণ, এবার বলা হয়েছে, কর বাড়বে না কিন্তু করের আওতা বাড়বে। করদাতা বাড়িয়ে ৪০ লাখ করা হবে। এটা খুব ভালো কথা। কিন্তু করের আওতা বাড়ানোর কাজটি তো আর অটোমেশনে হবে না। মানুষ দিয়েই করতে হবে এনবিআরের। সেরূপ জনবল নেই সংস্থাটির। তাহলে কর দাতার সংখ্যা বাড়ানো হবে কীভাবে? এভাবে সব মিলে রাজস্ব আদায়ের টার্গেট পূরণ করা সম্ভব হবে কি-না তা নিয়ে সন্দেহ আছে। আর যদি না হয়, তাহলে এডিপি কাটছাঁট করতে হবে ব্যাপক। অন্যদিকে, দেশের এডিপি নিয়ে মানুষের মধ্যে ব্যাপক প্রশ্ন রয়েছে। যার অন্যতম হচ্ছে, যে এডিপি গ্রহণ করা হয়, তার বিরাট অংশই অপ্রয়োজনীয়। তারপর যেটুকু প্রয়োজনীয়, তা সঠিক সময়ে ও মানে বাস্তবায়ন হয় না। তাই বারবার সময় বৃদ্ধি করতে হয়। এতে করে ব্যয় বেড়ে যায় বিপুল। সর্বোপরি বাস্তবায়িত এডিপির মানও অতি নিম্নমানের। বাস্তবায়ন শেষ হতে না হতেই ক্ষতি হয়ে যাওয়ার নজির রয়েছে। এভাবে এডিপির ব্যয় যে হারে বাড়ছে, মানুষের কল্যাণ সেভাবে হচ্ছে না। মাঝখানে কিছু অসাধু ব্যক্তির ব্যাপক লাভ হচ্ছে। আর সে কারণেই এডিপি পাশ করানোর জন্য ব্যাপক তদবির হয়।

সার্বিক দিক বিবেচনা করে রাজস্ব আদায়ের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, তা যেকোনো মূল্যেই হোক পূরণ করা এবং এডিপি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয়তা, নির্দিষ্ট সময়ে কাজ সম্পন্ন ও কাজ মানসম্মত করার দিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া আবশ্যক।

লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বাজেট

১৩ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন