বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
সাথী বানু নামের এক মহিলা ব্যবসায়ীর কথিত অভিযোগে বগুড়া সদর থানার পুলিশ ওই মহিলার তরুণ ব্যবসায়ীক অংশীদার সোহান বাবু ওরফে আদর (৩২) নামে এক ব্যবসায়ীকে ডেকে নিয়ে বগুড়া সদর থানা পুলিশ মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বৃহস্পতিবার থেকে ২৪ ঘন্টা ধরে নির্যাতনের পর পুলিশ শুক্রবার রাতে গুরুতর আহত বাবুর পিতার নিকট থেকে সাদা কাগজে মুচলেকা নিয়ে তাকে ছেড়ে দিয়েছে। তবে তার শারীরিক পরিস্থিতি নাজুক হওয়ায় আদরের বাবা তাকে বাড়ির বদলে সরাসরি বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেছেন।
আদর বগুড়া শহরের সুলতানগঞ্জপাড়া উটের মোড় এলাকার সাইদুর রহমানের ছেলে। পুলিশী নির্যাতনের কারণ সম্পর্কে আদরের বাবা সাইদুর রহমান বলেন, শহরের গোয়ালগাড়ি এলাকায় আল ফালাহ বহুমুখী নামে একটি ব্যবসায়িক সমিতি রয়েছে। তার ছেলে সোহান বাবু আদর, সাথী বানু ও তার স্বামী বাপ্পি মিয়া তিনজন অংশীদার মিলে ওই সমিতিটি পরিচালনা করে।
নিজেদের মধ্যে আভ্যন্তরীণ বিরোধের জের ধরে সাথী বানুর একটি অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার রাত ১১ টায় সদর থানার কনস্টেবল (মুন্সি) এনামুল হক তার ছেলেকে মোবাইল ফোনে থানায় ডেকে নেন। থানায় আসলে সদর থানায় এস আই আব্দুল জোব্বার, এএসআই এরশাদ ও মুন্সি এনামুল পাশের একটি নতুন কক্ষে হাতে হ্যান্ডকাপ লাগিয়ে পাশে একটি পিলারের সাথে বেঁধে রেখে সাথীর পাওনা বাবদ ১১ লক্ষ টাকা দাবী করে আদরের কাছে। দাবির যৌক্তিকতা না থাকায় টাকা দিতে অস্বীকার করে আদর।
টাকা না পেয়ে শুক্রবার এএসআই এরশাদ থানা হাজতে এসে আদরের নাম ধরে ডেকে বলে ‘ আদর তোকে আদর যত্ন না করলেতো টাকা দিবিনা । আই এবার তোকে একটু আদর করে দেই। একথা বলে হাজত থেকে বের করে অন্য একটি ঘরে নিয়ে গিয়ে এরশাদ একটি পিলারের সাথে আদরের হাত বেঁধে বেদমভাবে পেটায় ও টাকা দিবি কিনা বল বলে চেঁচামেচি করে। ওই দিন রাতেই আবারো এএসআই এরশাদ , এসআই জব্বার ও কনস্টেবল এনামুল এক সাথে লাঠিপেটা শুরু করে । এক পর্যায়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেললে ভয় পেয়ে যায় পুলিশ । তখন সাথীকে দিয়েই আদরের বাবা সাইদুরকে থানায় ডেকে আনে ।
রাত ১২ টায় সাইদুর রহমান থানায় উপস্থিত হলে দারোগা জব্বার বলে, তোর ছেলে সুস্থ্য আছে ভাল আছে এই মর্মে মুচলেকা লিখে দিয়ে ছেলেকে নিয়ে যা। বাধ্য হয়ে সাইদুর পুলিশের লেখা মুচলেকায় সই দিয়ে তার ছেলেকে থানা থেকে বের হয়।
তবে ছেলের শারীরীক অবস্থার কারনে তাকে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করায়। বর্তমানে তার শারিরীক অবস্থা আশংকাজনক। পুলিশের লাঠিপেটায় আদরের কোমরের নীচ থেকে পায়ের গোড়ালী পর্যন্ত এমন ভাবে থেঁতলে গেছে যে সে হাসপাতালের বিছানায় চিৎ হয়ে শুতেও পারছেনা।
এপ্রসঙ্গে আদর জানায়, তার ব্যবসায়ীক পার্টনার সাথী বানু ও তার স্বামী বাপ্পি মিয়া শহরের কাটনারপাড়া আলোরমেলা স্কুল এলাকার বাসিন্দা । সাথী বানু তার পুর্ব পরিচিতা । সাথীর স্বামী বাপ্পী তার বাল্যবন্ধু । পুর্ব পরিচয়ের সুত্রে সাথী ও তার স্বামীর অর্থে এবং তার পরিশ্রমের বিনিময়ে পার্টনারশীপের ব্যবসাটি গড়ে ওঠে। জামানত হিসেবে আদরের কাছ থেকে তার স্বাক্ষর করা কয়েকটি ব্লাংক চেক জামানত হিসেবে রেখে দেয় সাথী দম্পতি। সম্প্রতি সাথীর ব্যক্তি জীবনের কিছু গোপন বিষয় এবং পুলিশ কনস্টেবল এনামুলের সাথে ব্যক্তিগত সম্পর্ক নিয়ে তার সাথে সাথীর মনোমালিন্য সৃষ্টি হয়। এরই জের ধরে সাথী তার পুলিশ কানেকশান ব্যবহার করে তাকে শায়েস্তা করলো বলে জানায় আদর ।
ঘটনার ব্যাক্ষা দিয়ে বগুড়া সদর থানার ওসি এস এম বদিউজ্জামান সাংবাদিকদের জানান, লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে সোহান বাবু আদরকে থানায় আনা হয়েছিল পরে অভিযোগকারী ও অভিযুক্তের মধ্যে আপোষ মিমাংসা হলে তাকে থানা থেকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য কয়েকদিন আগেই বগুড়া সদর থানায় অ্যাডভোকেটস বার সমিতির সদস্য সোহেল রানা সজিবকে তার বাড়ির সামনে থেকে ধরে এনে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজের পর শারীরিক নির্যাতন দারোগা জিলালুর রহমান। এ্যাডভোকেট সজীব বিষয়টি নিয়ে আদালতে মামলা দায়ের করলেও সিনিয়র আইনজীবী ও উর্ধতন পুলিশ কর্মকর্তাদের চাপে ঘটনাটি মিাংসা করতে বাধ্য হন । অভিযোগ রয়েছে , সম্প্রতি বগুড়া সদর থানা ও এর আওতাধীন পুলিশ ফাাঁড়ি গুলিতে নিয়মিতভাবে লোকজনকে ধরে এনে টাকা আদায় করা হচ্ছে । টাকা না দিলে মাদক উদ্ধার দেখিয়ে মাদক সহ চালান করে দেওয়া হচ্ছে ।
রাতে পুলিশ নির্যাতনের এই ঘটনাটি উর্ধতন কর্মকর্তাদের নজরে এলে প্রাথমিকভাবে অভিযুক্ত ৩ পুনির্যাতক পুলিশকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া ) সনাতন চক্রবর্ত্তি । তিনি বলেছেন , তদন্ত সাপেক্ষে দোষী পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে পরবর্তি পদক্ষেপ নেওয়া হবে ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।