পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
চট্টগ্রামে চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার তদন্তে গতি আসছে না। আলোচিত চারটি খুনের মামলার রহস্য আড়ালেই থেকে গেছে। এ কারণে অধরা খুনিচক্রের সদস্যরা। তিন বছরেও সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু খুনের রহস্য উদঘাটন হয়নি। এক বছরেও পুলিশ জানতে পারেনি আইনজীবীর স্ত্রী বিবি রহিমার খুনি কারা।
এক বছর আগে গলা কেটে হত্যা করা হয় কিশোরী ইলহাম বিনতে নাছিরকে। আলোচিত এ হত্যাকান্ডে জড়িতদের চিহ্নিত করা যায়নি এখনও। স্কুলছাত্রী তাসফিয়া আমিনের খুনিদের চিহ্নিত করতে না পেরে মামলার ফাইনাল রিপোর্ট দেয় ডিবি। মায়ের আবেদনের প্রেক্ষিতে মামলাটি তদন্ত করছে সিআইডি। তবে এখনও খুনিচক্রের কাউকে চিহ্নিত করা যায়নি।
চাঞ্চল্যকর এবং লোমহর্ষক এ চারটি হত্যা মামলার মতো আরও অসংখ্য হত্যা মামলার তদন্ত এখন হিমাগারে। তদন্ত কর্মকর্তা সেইসাথে তদন্ত সংস্থাও পরিবর্তন হচ্ছে। কিন্তু মামলা তদন্তে কোন অগ্রগতি হচ্ছে না। এতে করে নির্মম খুনের শিকার পরিবারগুলোতে হতাশা বাড়ছে। আড়ালে থেকে গেছে খুনিচক্রের সদস্যরা। তবে তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, রহস্য উদঘাটনে সময় লাগলেও তদন্ত থেমে নেই। খুনি যেই হোক তাকে ধরা পড়তেই হবে।
২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে নগরীর ব্যস্ততম ও আর নিজাম রোডে প্রকাশ্যে গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয় মাহমুদা খানম মিতুকে। ছেলেকে স্কুল বাসে তুলে দিতে এসে নির্মম খুনের শিকার হন সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী। দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টিকারী এ খুনের রহস্য এখনও উদঘাটন হয়নি। এ মামলার দুই আসামি পুলিশের সাথে কথিত বন্দুকযুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছে।
প্রধান সন্দেহভাজন হিসেবে পরিচিত মুসাকে ধরতে ৫ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। পুলিশ বলছে, কার নির্দেশে মিতুকে হত্যা করা হয় তা জানে মুসা। তাকে ধরলেই খুনের রহস্য উদঘাটন হবে। তবে তাকে ধরতে পুলিশের কোন আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। মুসার স্ত্রী আগেই অভিযোগ করেছেন পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে গেছে। তবে পুলিশ বরাবরই এমন অভিযোগ অস্বীকার করছে। তিনবছর পেরিয়ে গেলেও খুনের রহস্যের কোন কুল-কিনারা করতে পারেনি পুলিশ।
এ মামলায় সন্দেহভাজন ১১ জনের মধ্যে এখন পর্যন্ত ধরা পড়েছে সাতজন। এরমধ্যে দুজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। তারা মুসার নির্দেশেই মিতুকে হত্যা করেছে বলে স্বীকার করে। তবে মুসাকে কারা নির্দেশ দিয়েছিল সে তথ্য এখনও অজানা। স্ত্রী খুনের পর রহস্যজনক কারণে চাকরি হারা হন আলোচিত পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার। তিনি এ মামলার বাদী।
কয়েক দফায় তাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। তবে এখনও পর্যন্ত তদন্ত শেষ করে অভিযোগপত্র দেয়া যায়নি। যদিও নগর পুলিশের কর্মকর্তারা গত এক বছর ধরে দাবি করে আসছেন তদন্ত শেষ পর্যায়ে। যেকোন সময় আদালতে চার্জশিট দেয়া হবে। মিতুর স্বজনেরা পুলিশের এ আশ্বাসে বিশ্বাস রাখতে পারছে না। তাদের আশঙ্কা মামলার তদন্ত হিমাগারেই চলে যাচ্ছে।
গত বছরের ১ আগস্ট নগরীর চান্দগাঁও থানার বহদ্দারহাট ফরিদার পাড়ার নিজ বাসায় শিশু সন্তানের সামনে নির্মমভাবে খুন হন অন্তঃসত্ত্বা বিবি রহিমা (২৭)। তিনি চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাংস্কৃতিক সম্পাদক এহতেশামুল পারভেজ সিদ্দিকীর স্ত্রী। ঘটনার সময় তিনি আদালতে ছিলেন। এ ঘটনায় নিহতের মা বেদুরা বেগম বাদী হয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে চান্দগাঁও থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। প্রায় এক বছরেও আলোচিত এ হত্যাকান্ডের কোন কুল-কিনারা হয়নি। কারা দিনদুপুরে বাসায় ঢুকে হাত-পা বেঁধে এ গৃহবধূকে হত্যা করেছে তাদের চিহ্নিত করা যায়নি। থানা পুলিশ এবং ডিবি হয়ে মামলার তদন্ত এখন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-পিবিআইতে।
সর্বশেষ মামলাটি তদন্ত করেন ডিবির পরিদর্শক ইলিয়াস খান। তিনি গতকাল দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, তদন্তে কোন অগ্রগতি হয়নি। কারা কি উদ্দেশে বিবি রহিমাকে হত্যা করে সে সম্পর্কে স্পষ্ট কোন ধারণা পাওয়া যায়নি। আদালতের নির্দেশে মামলাটি গতকালই পিবিআইতে প্রেরণ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
গত বছরের ২৭ জুন নগরীর বাকলিয়ার সৈয়দ শাহ রোডের বাসায় গলা কেটে হত্যা করা হয় স্কুল ছাত্রী ইলহাম বিনতে নাছিরকে। ছোট বোনকে নিয়ে মা স্কুলে যান। এ ফাঁকে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা বাসায় হানা দিয়ে ঘুমন্ত ইলহামকে গলা কেটে হত্যা করে পালিয়ে যায়। আলোচিত এ মামলাটি থানা পুলিশ, ডিবি হয়ে বর্তমানে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডির তদন্তাধীন।
সিআইডির কর্মকর্তারা জানান, স্কুল ছাত্রী ইলহাম হত্যাকান্ডের রহস্য এখনও উদঘাটন করা যায়নি। তবে ঘটনার পর বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেছিল সিআইডির ফরেনসিক টিম। এসব আলামত বিশ্লেষণ করে খুনের রহস্য উদঘাটন ও খুনিদের চিহ্নিত করার কাজ চলছে। ইতোমধ্যে সন্দেহভাজন কয়েকজনের ডিএনএ টেস্টেরও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সিআইডি কর্মকর্তারা আশাবাদী খুব শিগগির তদন্তে অগ্রগতি আসবে।
এ ঘটনায় ইলহামকে রক্তাক্ত অবস্থায় চমেক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া তাদের প্রতিবেশী শিক্ষানবীশ আইনজীবী রিজুয়ান কবীরকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাকে কয়েক দফায় রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও তেমন কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। সিআইডি কর্মকর্তারা বলছেন, পারিবারিক বিরোধ কিশোর প্রেম থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিষয় সামনে রেখে মামলার তদন্ত চলছে। ইলহাম নগরীর মেরন সান স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী। তার বাবা মো. নাছির উদ্দিন সউদি আরব প্রবাসী। এ ঘটনায় নিহতের নানা নাসির উদ্দিন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
গত বছরের ২ মে নগরীর পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত থেকে স্কুল ছাত্রী তাসফিয়া আমিনের (১৬) লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তাসফিয়া সানসাইন স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির ছাত্রী। এ ঘটনায় ৩ মে তাসফিয়ার বাবা বাদী হয়ে ৬ জনকে আসামি করে পতেঙ্গা থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। তার বাবার অভিযোগ বন্ধু আদনান মির্জার সাথে পহেলা মে বিকেলে বাসা থেকে বের হওয়ার পর তার সন্ধান মেলেনি। পরদিন পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে।
তিনি মামলায় অভিযোগ করেন তার কন্যাকে যৌন নির্যাতনের পর হত্যা করা হয়েছে। আলোচিত এ মামলায় আদনান মির্জাসহ সন্দেহভাজন কয়েকজনকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নেয়া হয়। তবে একপর্যায়ে খুনের প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে আদালতে ফাইনাল রিপোর্ট দিয়ে দেয় ডিবি। এর বিরুদ্ধে আদালতে নারাজি দেন তাসফিয়ার মা। আদালতের নির্দেশে মামলাটি অধিকতর তদন্ত চলছে। তদন্ত করছে পিবিআই। তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, অধিকতর তদন্তে এখনও পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য কোন অগ্রগতি নেই। তবে তাসফিয়ার মৃত্যু রহস্য উদঘাটনে নতুন করে কাজ শুরু হয়েছে।
২০১৫ সালের ১০ জানুয়ারি সকালে কলেজে যাওয়ার পথে চকবাজারের তেলিপট্টিতে নিজ বাসার সামনে খুন হন চট্টগ্রাম নার্সিং কলেজের শিক্ষিকা অঞ্জলী রানী দেবী। প্রকাশ্যে তাকে কুপিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।
এ ঘটনায় নিহতের স্বামী চিকিৎসক তেজেন্দ্র লাল চৌধুরী অজ্ঞাত যুবকদের আসামি করে পাঁচলাইশ থানায় মামলা দায়ের করেন। এখনও পুলিশ এ ঘটনার জড়িত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। খুনের রহস্যও উদঘাটন করা যায়নি। কয়েক দফা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন হয়েছে। নিহতের বয়োবৃদ্ধ স্বামী ডা. তেজেন্দ্র লাল এখনও স্ত্রী খুনের বিচারের অপেক্ষায় আছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।