Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইরানে হারছে ভারত

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৫ জুন, ২০১৯, ৫:১৭ পিএম

নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ইরানি তেল কেনা অব্যাহত রেখে যুক্তরাষ্ট্রের স্বৈরাচারী আচরণকে চ্যালেঞ্জ করেছে চীন। অন্যদিকে, ভারতের কার্যত আত্মসমর্পন শুধু দেশটির পররাষ্ট্রনীতি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কতটা সংযুক্ত সেটাই প্রমাণ করছে না, তা তেহরানের সঙ্গে নয়া দিল্লির ‘পাথরের মতো কঠিন’ সম্পর্কের ক্ষেত্রেও একটি তাৎপর্যপূর্ণ পরিবর্তনের সূচনা করেছে।

দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের গুরুত্ব তুলে ধরা ও মার্কিন নিষেধাজ্ঞা কতটা বেআইনি তা বুঝাতে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্প্রতি ভারত সফরে গেলে উপরোক্ত বিষয়গুলো স্পষ্ট হয়ে ওঠে। তবে ইরানী পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে খালি হাতে ফিরে যেতে হয়। এরপর অনেককে অবাক করে দিয়ে জারিফ পাকিস্তান সফর করেন এবং গোয়াদার বন্দরের সঙ্গে ইরানের চাবাহার বন্দরের সংযোগ প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দেন। অথচ এই বন্দরের উন্নয়ন করছে ভারত এবং সেখানে ব্যাপকভাবে বিনিয়োগও করেছে। ইরানি বন্দরটিকে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা থেকে ছাড় দেয়ার পরও এই প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।

ইরান স্পষ্টতই বন্দরটিকে ভারতের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের সঙ্গে সংযুক্ত করার প্রস্তাব দিতে গিয়ে এর প্রাথমিক উন্নয়নকারী ভারতকে গ্রাহ্য করেননি। আরো যে বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তাহলো, চাবাবার-গোয়াদার সংযোগকে চায়না-পাকিস্তান ইকনমিক করিডোরের (সিপিইসি) মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে চীনের বেল্ট এন্ড রোড ইনিশিয়েটিভে (বিআরআই) যোগদানের সম্ভাব্য প্রবেশপথ হিসেবে দেখছে ইরান।

ভারতের উপর এর বড় ধরনের কৌশলগত প্রভাব পড়বে। চাবাহারে অংশীজন হিসেবে পাকিস্তান ও চীনের উপস্থিতি এই বন্দরকে আঞ্চলিক কানেকটিভিটির ভরসাস্থল হিসেবে ব্যবহার এবং এর মাধ্যমে নতুন বাণিজ্য ভূগোল সৃষ্টির ভারতীয় পরিকল্পনা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং/বা ভারত এই বন্দরটিকে নিজের সুবিধা মতো এককভাবে নিয়ন্ত্রণ বা কাজে লাগাতে পারবে না।

ভারত এরই মধ্যে ৫০০ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করা বন্দরটির উপর নিয়ন্ত্রণ হারাতে শুরু করেছে। আরো মজার বিষয় হলো পাকিস্তান যাওয়ার আগে চীন সফর করেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জারিফ। তিনি সেখানে তার চীনা প্রতিপক্ষের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কারণে উত্তেজনা বৃদ্ধি এবং বিআরআই নিয়ে আলোচনা করেন। সেখানে দুই বন্দরকে সংযুক্ত করার প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হলে তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। এই প্রস্তাব শুধু ইরানের কাছে নয় বেইজিংয়ের জন্যও কৌশলগতভাবে বেশ ওজনদার।

ইরানের অবস্থান পরিবর্তনের কারণ বোঝা যায়, ভারতও একে তার একটি ক্ষতি হিসেবে দেখবে। ভারত নিষেধাজ্ঞার মুখে ইরানের কাছ থেকে তেল কেনা পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়ায় (ভারত প্রতিমাসে ইরান থেকে ১.২ মিলিয়ন টন তেল কিনতো। এটা ছিলো তার মোট তেল আমদানির ১০%। সৌদি আরব ও ইরাকের পর ইরান ছিলো ভারতের তৃতীয় বৃহত্তম তেল রফতানিকারক) নয়া দিল্লির উপর আস্থা হারিয়ে ফেলেছে তেহরান। এখন বন্দর চুক্তি থেকে ভারত বেরিয়ে যেতে পারে বলেও আশংকা করছে তারা, যা ইরানের বড় অর্থনৈতিক উদ্যোগটিকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

তাই পাকিস্তান (ও চীনকে) প্রস্তাব দিয়ে ইরান প্রকল্পটির সফল সমাপ্তি নিশ্চিত করার মাধ্যমে বন্দরটিকে পুরোপুরি কার্যক্ষম করে তুলতে চাচ্ছে।

অন্যদিকে পাকিস্তান ও চীন বন্দরটির কার্যক্রমে প্রত্যক্ষভাবে সংযুক্ত না হলেও চাবাহারে দেশ দুটির উপস্থিতি এর উপর ভারতের প্রভাব খর্ব হবে অথবা ওই অঞ্চলে ভারত তার তৎপরতার উপর নজরদারির আশংকা করতে পারে।

ইরানের অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দেয়ার মার্কিন নীতির পক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে অবস্থান নিয়েছে ভারত। বর্তমান অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে যোগ দিতে পাকিস্তান অস্বীকার করেছে। এর মানে হলো ইরানের সঙ্গে ভারতের অন্যান্য যেসব স্বার্থ রয়েছে সেগুলোও বিপন্ন হবে।

যেমন, ইরানি প্রস্তাবের কারণে উচ্চাভিলাষী নর্থ-সাউথ করিডোরে ভারতের অংশগ্রহণের সম্ভাবনা মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আরোপের আগের সময়ের চেয়ে আরো বেশি অনিশ্চিত হয়ে পড়লো। এই করিডোর স্থলপথে আফগানিস্তান, মধ্য এশিয়া ও ইউরোপের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতো।

ফলে ইরানের স্বার্থের পাশাপাশি এসব প্রকল্পের ভবিষ্যৎও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে অথবা অন্তত এগুলো আর কোন ‘বিশেষ’ উদ্যোগ থাকলো না।

এছাড়াও ইরানের ফারজাদ-বি গ্যাসক্ষেত্রের উন্নয়নে ভারতের আগ্রহ ছিলো। ইরানের বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পক্ষে ভারত অবস্থান নেয়ায় এই উচ্চাভিলাষটিও বিপন্ন হয়ে পড়লো। শুধু ইরান থেকে তেল কেনা নয়, সেখানকার জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ বন্ধ করতেও যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।

ইরানকে হতাশ করে দিয়ে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত এসব ইস্যুতে চুপ করে আছে। ইরানের তেল মন্ত্রী জাঙ্গানেহ বলেন, ‘ভারতের অয়েল এন্ড নেচারাল গ্যাস কর্পোরেশনের বৈদেশিক বিনিয়োগ শাখা ওভিএল এখন পর্যন্ত ইরানের আমন্ত্রণের ব্যাপারে কোনো কথা বলেনি। আমরা অপেক্ষা করছি…তারা না আসলে দেশীয় প্রতিষ্ঠান দায়িত্ব গ্রহণ করবে।

ভারতের নীরবতা ইংগিত দিচ্ছে যে তারা আর গ্যাস খাতে বিনিয়োগ করতে চায় না। যদি তাই হয় তাহলে তা হবে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে। এর আগে চুক্তি ও বিনিয়োগ নিয়ে ভারত ও ইরানের মধ্যে যে মতবিরোধ ছিলো তা ২০১৮ সালেই মিটে গেছে।

ফলে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষার ক্ষেত্রে গুরুতর ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছে ভারত। ভারতের পররাষ্ট্রনীতি পুরোপুরি মার্কিন-পন্থী হয়ে পড়ায় যুক্তরাষ্ট্র ছাড় না দিলে বা ইরানের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করার আগ পর্যন্ত ইরানের ক্ষেত্রে ভারতের বড় ধরনের খেলোয়াড় হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। বতর্মান পরিস্থিতিতে তার সম্ভাবনা কম।

তাই ফলাফল যাই হোক না কেন, এই মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ভারতের আত্মসমর্পণ পরাশক্তিটিকে বিনাশর্তে তুষ্ট করার প্রদর্শনী ছাড়া আর কিছু নয়।
সূত্র : সাউথ এশিয়ান মনিটর



 

Show all comments
  • Mehedi Hasan ৫ জুন, ২০১৯, ১১:১১ পিএম says : 0
    মুসলিম উম্মাহা এক হলে সুধু ইরানে নয়,সারা পৃথিবীতে মুসলিম রাজত্ব কায়েম হবে
    Total Reply(0) Reply
  • Chap Ol ৫ জুন, ২০১৯, ১১:১২ পিএম says : 0
    Hassokor kotha. Iran er kas theke India j subidha passe ta USA GSP subidha theke hazar gun besi
    Total Reply(0) Reply
  • Robiul Korim ৫ জুন, ২০১৯, ১১:১৩ পিএম says : 0
    Nice
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ