Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভারতীয় প্রতিরক্ষায় দুর্বলতা সাবমেরিনের সীমাবদ্ধতা

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৩ জুন, ২০১৯, ৮:২২ পিএম

পুলওয়ামা হামলার পরবর্তী সময় ভারতীয় নৌবাহিনী তাদের সাবমেরিনকে নজরদারি এবং প্রতিরক্ষা মিশনে ব্যবহার করেছে। তাদের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল পাকিস্তানের নৌ স্বার্থকে টার্গেট করা এবং পাকিস্তানী নৌবাহিনীর অবাধ বিচরণে বাধা সৃষ্টি করা। তাদের চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে কারণ আক্রমণাত্মক অবস্থান ধরে রাখতে পারেনি ভারত। যেটা ভারতীয় নৌবাহিনীর পানির নিচের শক্তি হওয়ার কথা ছিল, সেখাতে তাদের সাবমেরিনের সীমাবদ্ধতা উঠে এসেছে। ভারতীয় নৌবাহিনী সাবমেরিন কালভেরি পাকিস্তানী জলসীমায় টহল দেয়ার সময় পি৩সি ওরিয়ন বিমানের কাছে ধরা পড়ে যায়। ৪/৫ মার্চ মিডিয়ায় যে ছবিগুলো প্রকাশিত হয়েছে, সেখানে দেখা গেছে যে ভারতের স্করপিয়ন শ্রেণীর সাবমেরিন কালভেরি পাকিস্তানের জলসীমায় প্রবেশ করেছে।

পাকিস্তানের কাছে ধরা পড়ার পর কালভেরি নিজের দেশে ফিরে যায় এবং বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, সেখানে সাবমেরিনের কমান্ডিং অফিসার ও নাবিকদের বরখাস্ত করা হয়েছে। সম্ভবত ‘শত্রুর’ হাতে ধরা পড়ার অপরাধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ হিসেবে এই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে একদিকে পাকিস্তানী নৌ সীমার কাছে ভারতীয় সাবমেরিনের উপস্থিতি এবং পাকিস্তানের সক্ষমতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গেলো, অন্যদিকে ভারতীয় নৌবাহিনীর আভিযানিক সক্ষমতা ও তাদের সাবমেরিন মোতায়েনের ব্যাপারে নীতিগত স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন তৈরি হলো। পাকিস্তানী সাবমেরিন-বিরোধী বিমানের কাছে ভারতীয় সাবমেরিনের ধরা পড়ার ঘটনা এটাই প্রথম নয়। ২০১৬ সালের ১৪ নভেম্বরেও পাকিস্তানী জলসীমার কাছে ধরা পড়েছিল ভারতের টাইপ ২০৯ সাবমেরিন।

এই ভাবে সাবমেরিন চিহ্নিত হওয়ার কারণে সঙ্কটের স্থায়িত্ব কমে গেছে এবং সে কারণে ভারত ও পাকিস্তান একে অন্যের বিরুদ্ধে হামলা করেনি। রবার্ট পাওয়েল অ্যামেরিকান পলিটিক্যাল সায়েন্স রিভিউতে ১৯৮৯ সালে প্রকাশিত তার ‘ক্রাইসিস স্ট্যাবিলিটি ইন দ্য নিউক্লিয়ার এজ’ নিবন্ধে লিখেছেন যে, যখন প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে হামলার আয়োজন বাড়ে, তখন সঙ্কটের স্থিতিশীলতা হ্রাস পায় এবং যুদ্ধের আশঙ্কা বাড়ে। পাকিস্তানের উপকূলে ভারতীয় সাবমেরিনের উপস্থিতি ধরা পড়ার অর্থ হলো পাকিস্তানের নৌ স্বার্থের উপর আঘাত হানার পরিকল্পনা করেছিল ভারত, যেটা একটা সঙ্ঘাতের সূচনা করতে পারতো। এরকম পরিস্থিতিতে পাকিস্তান ভারতীয় সাবমেরিনকে চিহ্নিত করে সেটাকে অকেজো করার চেষ্টা করবে। যে উদ্দেশ্যেই সাবমেরিন মোতায়েন করা হোক না কেন, সাগরের জলসীমা যাতে স্বাধীনভাবে ব্যবহার করা যায়, সেটা নিশ্চিত করার চেষ্টা করবে তারা। এই ‘অ্যাকশান-রিয়্যাকশান’ ধারা অব্যাহতভাবে চলতে থাকলে সেটা দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধের কারণ হতে পারে। এই পরিপ্রেক্ষিতে ভারতকে অবশ্যই কিছু বিষয় পুনর্বিবেচনা করতে হবে, ‘ডিটারেন্স থ্রু ডিনায়াল’ নীতির জন্য কনভেনশনাল সাবমেরিনের ব্যবহার এবং ‘সাগরে প্রতিরোধ ব্যবস্থা অব্যাহত’ রাখার কৌশল।

ভারতীয় নৌবাহিনীর সাবমেরিনে এ পর্যন্ত বেশ কতগুলো বড় ও ছোট দুর্ঘটনা ঘটেছে। যে সব সাবমেরিনে দুর্ঘটনা ঘটেছে, সেগুলো হলো আইএনএস সিন্ধুঘোষ, সিন্ধুরক্ষক, শঙ্কুশ, সিন্ধুরত্ন এবং অরিহন্ত। ২০১৬ ও ২০১৯ সালে পাকিস্তানের কাছে ভারতীয় সাবমেরিনের উপস্থিতি ধরা পড়ার কারণ হলো এই সাবমেরিনগুলোর প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা, যেখানে এই সাবমেরিনগুলো অব্যাহতভাবে সাগর তলে কাজ করতে পারে না। দুর্বল রক্ষণাবেক্ষণ ব্যবস্থার সাথে যুক্ত হয়েছে ত্রুটিপূর্ণ ‘ডিটারেন্স থ্রু ডিনায়াল’ নীতি, যেটার কারণে ভারতের কনভেনশনাল সাবমেরিনগুলোর আভিযানিক কার্যকারিতা ও নজরদারির সক্ষমতা যথেষ্ট জটিল হয়ে গেছে। সূত্র: সাউথ এশিয়ান মনিটর।



 

Show all comments
  • Aminul Islam ৩ জুন, ২০১৯, ৮:৩৮ পিএম says : 0
    ভারতীয় সাবমেরিন, ভারতীয় মিগ-21 বাইসন এগুলোর সার্ভিস পিরিয়ড অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। ভারত সেই মান্ধাতার আমলের যুদ্ধ সামগ্রী নিয়েই পড়ে আছে। তবে তাদের ছিঃনেমাতে অত্যাধুনিক অস্ত্র প্রদর্শন করে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সাবমেরিন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ