Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মোদির ভারতে আতঙ্ক পিছু ছাড়ছে না মুসলমানদের

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১ জুন, ২০১৯, ৬:২৮ পিএম

শুক্রবার দেড়টার পর, সারাই আলাওর্দী মসজিদের বাইরের লাউডস্পিকার হঠাৎ বেজে উঠলো। সঙ্গে সঙ্গে হাজারেরও বেশি মুসল্লি মাটিতে সিজদায় পড়ে গেলেন। তাদের ঘিরে উঁচু উঁচু ভবনগুলো আকাশে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে।

বলা হচ্ছে ভারতের গুরুগ্রামের কথা। দক্ষিণ দিল্লির ওই উপগ্রহের শহরটিকে প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর ঘর বলে আখ্যায়িত করা হয়। হিন্দুত্ববাদী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিজের ভূমিধ্বস বিজয় ঘোষণার পর জামায়াতে হাজির হওয়াদের অনেকেই নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় পড়ে যান।-খবর গার্ডিয়ানের

তাদের প্রশ্ন, নরেন্দ্র মোদির নতুন ভারতে কি তাদের কোনো জায়গা হবে? স্থানীয় মুসলমানদের একটি সংস্থার প্রধান হাজি শেহজাদ খান বলেন, এই জায়গাটা এখন আর আমাদের জন্য নিরাপদ না।

মসজিদের পাশেই একটি খোলা মাঠে তিনি বসে ছিলেন। তার মতো বহু মুসলমানের জন্য মোদির এই বিপুল বিজয় একটি বিচ্ছিন্ন অভিজ্ঞতা। পৃথিবীর সপ্তম বৃহৎ দেশটিতে ২০ কোটির বেশি মুসলমান বসবাস করেন।

সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনের প্রচার ছিল দেশটির সাম্প্রতিক ইতিহাসের সবচেয়ে তিক্ততায় পূর্ণ। এতে প্রতিবেশী বাংলাদেশ থেকে যাওয়া অস্বীকৃত অভিবাসীদের কথা উল্লেখ করে তাদের ঘূণপোকার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে।

এমন এক হিন্দু সন্ন্যাসিনীকে নির্বাচনে প্রার্থী করা হয়েছে, পরবর্তীতে তিনি বিজয়ীও হয়েছেন, যার বিরুদ্ধে মসজিদে হামলা চালিয়ে ছয়জনকে হত্যার অভিযোগ রয়েছে। যিনি মহাত্মা গান্ধীর হত্যাকারীকে দেশপ্রেমিক বলে আখ্যায়িত করেন।

এসব সত্ত্বেও কিংবা সম্ভবত এসবের কারণে রেকর্ডসংখ্যক ২৭ কোটি ভারতীয় তাদের ভোট ভারতীয় জনতা পার্টি বা দলটির মিত্রদের দিয়েছে।

ভারতে মুসলমান শিশু বৃদ্ধি নিয়ে বই লিখেছেন নাজিয়া ইরুম। তিনি বলেন, আমরা সত্যিকারভাবে বিশ্বাস করি, এটা প্রত্যাঘাত হয়ে ফিরে আসবে।

‘আমাদের বিশ্বাস, ২০১৪ সালে মোদির উন্নয়ন এজেন্ডার কারণে তার পক্ষে প্রচুর ভোট পড়েছে। সেগুলোর কতটা বাস্তবায়ন হয়েছে, লোকজন এখন তা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখার সুযোগ পাবেন। এতে মানুষের চোখ খুলে যাবে। লোকজন নিজেদের ভুল বুঝতে পারবেন।’

হিন্দু-মুসলমানদের বিবাদ এবং দুই ধর্মের সাম্প্রতিক উত্তেজনা ভারতীয়দের ভবিষ্যৎ জীবনেও টেকসই হয়ে রয়ে যাচ্ছে। কিন্তু গত পাঁচ বছরে মুসলমানদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বেড়ে গেছে।

গোরক্ষাকারীরা এ পর্যন্ত ৩৬ জনকে হত্যা করেছেন। তাদের পবিত্র প্রাণীর ক্ষতির মিথ্যা অজুহাত দিয়ে এসব হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে।

অবকাঠামো নির্মাণ খাত ও কারখানায় কাজ করতে হিন্দুদের মতো কয়েক হাজার অভিবাসী মুসলমানও গুরুগ্রামে গত কয়েক বছরে এসেছেন। এখন সেখানে উত্তেজনা চরমে।

খোলা আকাশের নিচে মুসলমানদের নামাজ আদায় নিয়েও সাম্প্রতিক নির্বাচন ব্যাপক তিক্ত প্রচারের মধ্য দিয়ে গেছে। বসতবাড়ি থেকে মসজিদ বহু দূরে কিংবা মসজিদে জায়গা না ধরায় মুসলমানরা বাইরে নামাজ পড়তে বাধ্য হন।

হিন্দু সংগঠনগুলোর প্রতিবাদের মুখে নামাজের জায়গা কমিয়ে দেয়া হয়েছে। শেহজাদ খান বলেন, তারা আমাদের নামাজ পড়তে দেয় না।

স্থানীয় মসজিদের বিরুদ্ধে প্রচার চালাচ্ছেন হিন্দুত্ববাদী একটি গোষ্ঠীর প্রধান রাজিব মিত্তাল। তার প্রচার পৌরসভা পরিকল্পনা আইনের বাইরে নয় বলে তিনি জোর দিয়েছেন। রাজিব মিত্তাল বলেন, আমরা মানুষের প্রার্থনার বিরোধিতা করি না। কিন্তু এটা কেবল মসজিদ কিংবা যে স্থানটি তাদের জন্য নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে, সেখানে করা উচিত।

পরিসংখ্যানের উল্লেখ করে বিজেপি বলছে, নরেন্দ্র মোদির প্রধানমন্ত্রীতে এখন পর্যন্ত কোনো দাঙ্গা হয়নি। দেশটির প্রাতিষ্ঠানিক নথিতে এমন কোনো অপরাধের প্রবণতা দেখানো হয়নি। তবে মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, তাদের এ তথ্য সামঞ্জস্যহীন ও অনির্ভরযোগ্য।

সমালোচকরা বলছেন, মোদির শাসন উগ্রপন্থীদের শক্তিশালী করছে। দেশটিতে একটা অন্ধ ধর্মপ্রেমের সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে। এছাড়া দায়মুক্তির কারণে সেটা আরও বিকশিত হতে পারে।

মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়চের দক্ষিণ এশিয়ার পরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলি বলেন, দাঙ্গার চেয়েও আরও বড় সংকট হচ্ছে মুসলমানদের নিয়ে নানা সময় বিরূপ মন্তব্য ছোড়া।

তিনি বলেন, ইতিমধ্যে একজন মুসলমান সবজি বিক্রেতাকে মারধর করা হয়েছে। এমন সময় এই ঘটনা ঘটেছে, যখন মুসলমান পরিবারগুলো বলছে, তারা লাঞ্চবক্স বহন করতে ভয় পান। কারণ তারা জানেন না, কখন তাদের বিরুদ্ধে গরুর গোশত বহনের অভিযোগ তোলা হবে।

‘মুসলমানদের কণ্ঠ অবদমিত রাখতে চাপ প্রয়োগের অধিকার আছে বলে ভারতীয়দের মধ্যে ধারনা তৈরি হয়েছে। এটা তারা অনেকটা সহিংসভাবে করেন। সে ক্ষেত্রে মুসলমানদের রক্ষায় রাষ্ট্র এগিয়ে আসবে কিংবা সুরক্ষা দেবে, এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই।’

মোদির সমর্থক ও বিরোধীরা স্বীকার করে নিয়েছেন যে, সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনে তার বিজয় বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসিতপূর্ণ দেশটিতে একটি মতাদর্শিক পরিবর্তনকে আরও জোরদার করবে।

অধিকাংশ নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্ব্তিাপূর্ণ রূপকল্পের মধ্যের একটি পছন্দ। কিন্তু কংগ্রেস এমপি শশী থারুরের ভাষায় চলতি বছরের নির্বাচন ছিল, ভারতের চেতনার জন্য একটি লড়াই।



 

Show all comments
  • MAHMUD ১ জুন, ২০১৯, ৭:০৫ পিএম says : 0
    As a MUSLIM very sadly I have read the news. ISLAM is the peace religion in the world. Switch of ISLAM control by ALLAH. So MUSLIMS never afraid to others (NASARA) except ALLAH. Therefore , ALLAH will save all muslims.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ