Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আজ চার্জশিট দাখিল

পুড়িয়ে ঠান্ডা মাথায় পরীক্ষা দেয় জাবেদ, পপি ও মনি ১৬ জনের মৃত্যুদন্ড চায় পিবিআই

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৯ মে, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি করা আলোচিত সোনাগাজীর মাদরাসাছাত্রী নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় ১৬ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র চুড়ান্ত করেছে পিবিআই। আর যার বিরুদ্ধে অভিযোগকে কেন্দ্র করে নুসরাতকে পুড়িয়ে মারা হয় সেই মাদরাসা প্রিন্সিপালকে সিরাজ উদ-দৌলাকে করা হচ্ছে হুকুমের আসামি। চার্জশিটে ১৬ জনের প্রত্যেকের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড চেয়েছে পিবিআই। মাদরাসা শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে ডেকে েেরাসিন ঢেলে গায়ে আগুন দেয় পাঁচজন। এর মধ্যে তিনজনই ছিলেন পরীক্ষার্থী। ওই দিন পরীক্ষা থাকায় এই ঘটনার পর পরীক্ষায়ও অংশ নেন তারা। গতকাল মঙ্গলবার ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে পুপিবিআই প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার এ সব তথ্য জানান। সা¤প্রতিক সময়ের আলোচিত এ হত্যা মামলার অভিযোগপত্র আজ বুধবার আদালতে জমা দেওয়া হবে বলেও তিনি জানান।
ধানমন্ডিতে পিবিআই কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়েছে, নুসরাতের গায়ে আগুন দেওয়ার ঘটনায় সরাসরি পাঁচজনের জড়িত থাকার বিষয়ে তারা নিশ্চিত হয়েছেন। অভিযোগপত্রে সিরাজ-উদ-দৌলাকে আসামি করা হচ্ছে নুসরাতকে হত্যার ‘হুকুমদাতা’ হিসেবে। নুসরাত হত্যায় ১৬ জন জড়িত বলে তদন্তের মাধ্যমে প্রমাণ মিলেছে।
পিবিআই চট্টগ্রাম বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার মো. ইকবাল জানায়, নুসরাত হত্যা মামলার তদন্ত কার্যক্রম শেষ এ মামলায় এখন পর্যন্ত ২১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদের মধ্যে ১২ জন হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। এছাড়া পিবিআই নুসরাত হত্যায় ব্যবহৃত বেশ কিছু আলামতও সংগ্রহ করেছে।
এ হত্যা মামলায় গ্রেফতারকৃতরা হলেন- প্রিন্সিপাল এসএম সিরাজ উদ দৌলা, কাউন্সিলর ও পৌর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ আলম, শিক্ষক আবছার উদ্দিন, সহপাঠী আরিফুল ইসলাম, নূর হোসেন, কেফায়াত উল্লাহ জনি, মোহাম্মদ আলা উদ্দিন, শাহিদুল ইসলাম, প্রিন্সিপালের ভাগনি উম্মে সুলতানা পপি, জাবেদ হোসেন, জোবায়ের আহমেদ, নুর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, মো. শামীম, কামরুন নাহার মনি, আবদুর রহিম ওরফে শরিফ, ইফতেখার হোসেন রানা, এমরান হোসেন মামুন, মহিউদ্দিন শাকিল, হাফেজ আবদুল কাদের ও আওয়ামী লীগ সভাপতি ও ওই মাদরাসার সহসভাপতি রুহুল আমিন।
সংবাদ সম্মেলনে পিবিআই প্রধান বলেন, অভিযুক্ত ১৬ জনের মধ্যে এজাহারনামীয় আটজন। এজাহারের বাইরে তদন্ডে সংশ্লিষ্টতা পাওয়ায় আরও আটজনকে অভিযুক্ত করে বুধবার চার্জশিট দাখিল করা হবে। তদন্তের স্বার্থে গ্রেফতারদের প্রত্যেককে একাধিকবার রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। অভিযুক্ত এই ১৬ জনের মধ্যে ১২ জন ১৬৪ ধারায় রাফি হত্যায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহযোগিতা এবং জড়িত থাকার বিষয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
তিনি আরো বলেন, সার্বিক তদন্তে মামলার ঘটনার বিষয়ে জানা যায় যে, সিরাজ উদ দৌলার বিরুদ্ধে নুসরাত জাহান রাফির মামলা দায়ের ও তাকে গ্রেফতার হলে তার অনুগতরা ক্ষিপ্ত হয়। ভয়ভীতি প্রয়োজনে হত্যার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে একাধিকবার বৈঠকও করেন তারা। হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের পরও মামলা তুলে না নেয়ায় আসামিরা নুসরাতের ওপর ক্ষুব্ধ হয়। এর মধ্যে শাহাদাত হোসেন শামীম নুসরাতকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে প্রত্যাখ্যাত হওয়ায় আগে থেকেই ক্ষুব্ধ ছিল। কাউন্সিলর মাকসুদ শাহাদাত হোসেনকে ১০ হাজার টাকা দেয়। শাহাদাত পরিকল্পনা মোতাবেক দূর সম্পর্কের ভাগ্নি কামরুন্নাহার মনিকে দিয়ে দুটি বোরখা ও চার জোড়া হাতমোজা কেনায়।
পরবর্তীতে ৩ এপ্রিল শাহাদাত নুর উদ্দিন, হাফেজ আব্দুল কাদেরসহ কয়েকজনকে নিয়ে জেলখানায় প্রিন্সিপাল সিরাজ উদ দৌলার সঙ্গে দেখা করে। সেখানে সিরাজ উদ দৌলা নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যা এবং এ ঘটনাকে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেয়ার নির্দেশ দেন। ৪ এপ্রিল পরিকল্পনা মোতাবেক মাদরাসার পাশের টিনশেড কক্ষে আসামি শাহাদাত হোসেন শামীম, নুরুউদ্দিন, জোবায়ের, জাবেদ, পপি ও কামরুন্নাহারসহ আরও কয়েকজন নুসরাতকে হত্যার পরিকল্পনা করে।
পরদিন ভূঁইয়া বাজার থেকে শাহাদাত এক লিটার কেরোসিন তেল কিনে নিজের কাছে রাখে। ৬ এপ্রিল সকাল সাড়ে ৭টায় শাহাদাত নুরউদ্দিন, হাফেজ আব্দুল কাদের মাদরাসা প্রাঙ্গণে আসে এবং পরিকল্পনা মোতাবেক সকাল ৮টা থেকে ৯টা ২০ মিনিটের মধ্যে যে যার মতো অবস্থান নেয়। শাহাদাত পলিথিনে করে নিয়ে আসা কেরোসিন তেল ও প্রিন্সিপালের কক্ষের সামনে থেকে একটি কাঁচের গ্লাস নিয়ে ছাদের বাথরুমের পাশে রেখে দেয়।
সংবাদ সম্মেলনে আরো জানানো হয়, কামরুন্নাহার মনির কেনা দুটি ও বাড়ি থেকে নিয়ে আসা একটি মোট তিনটি বোরখা ও চার জোড়া হাত মোজা নিয়ে সাইক্লোন শেল্টারের তৃতীয় তলায় রাখে। শাহাদাত হোসেন শামীম, জাবেদ ও জোবায়ের বোরখা ও হাত মোজা পরিধান করে তৃতীয় তলায় অবস্থান করে। নুসরাত পরীক্ষা দিতে এলে পরিকল্পনা অনুযায়ী পূর্বে অবস্থান করা উম্মে সুলতানা পপি নুসরাতকে তার বান্ধবীকে মারধরের কথা বলে। নুসরাত দৌড়ে ছাদে যেতে থাকে।
নুসরাত ২য় তলায় পৌঁছালে উম্মে সুলতানা পপি নুসরাতকে হুজুরের বিরুদ্ধে মামলা তুলে নিতে বলে ও ভয় দেখায়, নুসরাত মামলা তুলবে না বলতে বলতে পপির সঙ্গে ছাদে উঠলে আসামি কামরুন্নাহার মনি, শাহাদাত হোসেন শামীম, জোবায়ের ও জাবেদ নুসরাতের পিছনে ছাদে যায়। ছাদে তারা নুসরাতকে মামলা তুলে নিতে হুমকি দিয়ে কয়েকটি কাগজে স্বাক্ষর দিতে বলে।
তখন নুসরাত অস্বীকৃতি জানালে শাহাদাত বাম হাত দিয়ে তার মুখ চেপে ধরে এবং ডান হাত দিয়ে নুসরাতের হাত পিছন দিকে নিয়ে আসে। উম্মে সুলতানা পপি নুসরাতের গায়ের ওড়না খুলে জোবায়েরকে দিলে সে ওড়না দুভাগ করে ফেলে। ওড়নার এক অংশ দিয়ে পপি ও মনি নুসরাতের হাত পিছনে বেঁধে ফেলে, অন্য অংশ দিয়ে আসামি জোবায়ের পা পেঁচিয়ে ফেলে, জাবেদ পায়ে গিট দেয়। সবাই মিলে নুসরাতকে ছাদের ফ্লোরে ফেলে দিলে শাহাদাত নুসরাতের মুখ ও গলা চেপে রাখে। কামরুন্নাহার মনি নুসরাতের বুকের ওপর চাপ দিয়ে ধরে এবং উম্মে সুলতানা পপি ও জোবায়ের পা চেপে ধরে। জাবেদ পাশের বাথরুমে লুকানো কেরোসিনের পলিথিন েেক কাচের গ্লাসে কেরোসিন নিয়ে নুসরাতের পুরো গায়ে ঢেলে দেয়। শাহাদাতের ইশারায় জোবায়ের ম্যাচ দিয়ে নুসরাতের গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। আগুন ধরিয়ে প্রথমে জোবায়ের ছাদ থেকে নামে, এরপর উম্মে সুলতানা পপি ছাদ থেকে নেমে যেতে থাকে। ওই সময় পূর্বের শিখানো মতে কামরুন্নাহার মনি উম্মে সুলতানা পপিকে ‘কাম কাম চম্পা/শম্পা’ বলে ডেকে নিচে নেমে যায়।



 

Show all comments
  • Md Ali Akbar ২৯ মে, ২০১৯, ১০:৩২ এএম says : 0
    এদের সবাইকে ফাঁসি দিতে হবে
    Total Reply(0) Reply
  • Mr.Mosharaf ২৯ মে, ২০১৯, ১২:৩২ পিএম says : 0
    nosrat ki sotik bicar pabe na
    Total Reply(0) Reply
  • SAIFUL ২৯ মে, ২০১৯, ১২:৫৩ পিএম says : 0
    P B I DECISION ALL WRIGHT
    Total Reply(0) Reply
  • SAIFUL ২৯ মে, ২০১৯, ১২:৫৪ পিএম says : 0
    PBI DECSION OK
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: হত্যা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ