Inqilab Logo

সোমবার, ০১ জুলাই ২০২৪, ১৭ আষাঢ় ১৪৩১, ২৪ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

মুসলমানদের খুন হওয়া আটকান নির্ভয়ে শান্তিতে বাস করতে দিন

সংবিধানে মানুষের জীবনের অধিকার স্বীকৃত, পশুর নয় : মোদির প্রতি ভারতের দুই শীর্ষ মুসলিম নেতা

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৮ মে, ২০১৯, ১২:০৬ এএম

ভারতে লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর মুসলমানরা আক্রান্ত হওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে শান্তিতে বসবাস করার জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি লিখে আহ্বান জানানো হয়। মুসলমানদের শান্তির সাথে নির্ভয়ে বাস করতে দেয়ার পাশাপাশি তাদের খুন হওয়া আটকাতে এই আহ্বান জানিয়েছেন ভারতের দুইজন শীর্ষ মুসলিম নেতা। মুসলমানরা যাতে ভারতে শান্তিতে বসবাস করতে পারে এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ও ধর্মীয় উগ্রতার কারণে তারা যাতে ভীতসন্ত্রস্ত না হয় সে জন্য ভারতের সংখ্যালঘু মুসলমানদের দিকে বিশেষ দৃষ্টি রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ভারতের সবচেয়ে প্রভাবশালী মুসলিম নেতা মাওলানা সাইয়্যিদ মাহমুদ মাদানী।
ভারতের পার্লামেন্ট নির্বাচনে ভ‚মিধস জয় লাভ করায় ভারতীয় মুসলমানদের সর্ববৃহৎ সামাজিক সংগঠন জমিয়তে উলামা হিন্দের জেনারেল সেক্রেটারি মাওলানা সাইয়্যিদ মাহমুদ মাদানী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে অভিনন্দন জানিয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন। ওই চিঠিতে শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে ধর্মীয় ভেদাভেদ ভুলে সব নাগরিকদের এক দৃষ্টিতে দেখার জন্য নরেন্দ্র মোদির প্রতি তিনি আহ্বান জানান। গত রোববার ভারতীয় বিভিন্ন গণমাধ্যমে মাওলানা মাহমুদ মাদানীর ওই চিঠি প্রকাশিত হয়। জাতি ও ধর্মের ভিত্তিতে কোনো ভেদাভেদ করা হবে না, নির্বাচনে জয়ের পর এমন বক্তব্য দিয়েছেন মোদি। তার এমন বক্তব্যকে স্বাগত জানিয়ে চিঠিতে মাওলানা মাদানী বলেন, আপনার সাম্প্রতিক বক্তব্য থেকে আমরা জানতে পেরেছি সংখ্যালঘুদের ভোটব্যাংক হিসেবে ব্যবহার করার পরিবর্তে তাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং কর্মসংস্থানের ব্যাপারে আপনি বিশেষ মনোযোগী হবেন। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস আপনার এ কথাগুলো বাস্তবায়িত হবে।
ধর্মীয় উগ্রতার বিষয়ে লক্ষ্য রাখার আহ্বান জানিয়ে মোদিকে মাওলানা মাদানী বলেন, আমরা আশা করছি আপনি ভারতের সংখ্যালঘু মুসলমানদের দিকে বিশেষ দৃষ্টি রাখবেন। যাতে মুসলমানরা ভারতে শান্তিতে বসবাস করতে পারে এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ও ধর্মীয় উগ্রতার কারণে মুসলমানরা ভীতসন্ত্রস্ত না হয়।
উল্লেখ্য, জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ ভারতীয় মুসলমানদের সর্ববৃহৎ পুরোনো প্লাটফর্ম। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন থেকে এ সংগঠনটির জন্ম। উপমহাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে এ দলটির ব্যাপক অবদান রয়েছে। মাওলানা মাহমুদ মাদানী ব্রিটিশ বিরোধী সংগ্রামের প্রাণপুরুষ সাইয়্যেদ হুসাইন আহমদ মাদানীর দৌহিত্র ও সাইয়্যেদ আসআদ মাদানীর ছেলে। তার বুদ্ধিবৃত্তিক প্রচেষ্টা ও সৃজনশীল কর্মপন্থায় ভারতীয় মুসলমানরা এক অভিন্ন প্লাটফর্মে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। মাওলানা মাদানীর রাজনৈতিক দূরদর্শিতা ভারতের সর্বমহলে স্বীকৃত। আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি, মত পথ ভুলে এক কাতারে সবাইকে নিয়ে চলার মানসিকতা ও উদ্যোগ তাকে পৌঁছে দিয়েছে এক অনন্য উচ্চতায়।
এদিকে ভারতে মুসলমানদের খুন হওয়া আটকাতে প্রধানমন্ত্রী মোদির প্রতি জোর আহবান জানিয়েছেন এআইএমআইএম নেতা ও এবার লোকসভা ভোটে গেরুয়া ঝড়ের মধ্যে হায়দরাবাদ কেন্দ্রে ফের জয়ী হওয়া পার্লামেন্ট সদস্য আসাদুদ্দিন ওয়াইসি।
বিজেপি জামানা নিয়ে মুসলিমদের মিথ্যে ভয় দেখানো হচ্ছে বলে দাবি করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি বলেন, তার সরকার সকলকে সঙ্গে নিয়ে চলার পক্ষপাতী। কিন্তু সোমবার তথাকথিত ‘গোরক্ষকদের’ তান্ডব নিয়ে মোদির কঠোর সমালোচনা করেন আসাদুদ্দিন ওয়াইসি। তার প্রশ্ন, মোদি এই ধরনের গোষ্ঠীর তান্ডব রুখতে কী পদক্ষেপ করছেন?
বিজেপি দেশে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার ঠিক পরেই ফের ‘গোরক্ষকদের’ তান্ডবের অভিযোগ উঠেছে মধ্যপ্রদেশে। সিওনীতে গরুর গোশত নিয়ে যাওয়ার ‘অপরাধে’ এক দম্পতিসহ তিনজনকে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে পাঁচ জন ‘গোরক্ষকে’র বিরুদ্ধে। তার পরে আক্রান্ত তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কারণ, মধ্যপ্রদেশে গরুর গোশত রাখা বা বিক্রি করা বেআইনি।
ওয়াইসি বলেন, ‘সংবিধানে মানুষের জীবনের অধিকার স্বীকৃত, পশুর নয়। প্রধানমন্ত্রী যদি মনে করেন সংখ্যালঘুরা ভয়ে ভয়ে আছেন তাহলে তার জানা উচিত উত্তরপ্রদেশের দাদরিতে যারা মহম্মদ আখলাককে পিটিয়ে মেরেছিল তারা একটি নির্বাচনী জনসভার প্রথম সারিতে বসেছিল।’ ২০১৫ সালে দাদরিতে বাড়িতে গরুর গোশত রাখার ‘অপরাধে’ মহম্মদ আখলাককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। সেই ঘটনায় ১৪ জন গ্রেফতার হয়। তাদের মধ্যে ১২ জন জামিন পেয়েছে।
ওয়াইসির প্রশ্ন, ‘প্রধানমন্ত্রী এই ধরনের গোষ্ঠীগুলিকে রুখতে কী ব্যবস্থা নিচ্ছেন? এই গোষ্ঠীগুলি মুসলিমদের পিটিয়ে খুন করছে। সেই ঘটনার ভিডিও পর্যন্ত তুলে রাখছে। আমাদের চ‚ড়ান্ত অপমান করা হচ্ছে। মধ্যপ্রদেশের ঘটনাই এর সাম্প্রতিক নজির।’ তার বক্তব্য, ‘সংসদে মুসলিমদের প্রকৃত প্রতিনিধিত্বের বিষয়ে কি বিজেপি উদ্যোগী হয়েছে? প্রধানমন্ত্রীর নিজের দলের সংসদ সদস্যের সংখ্যা এখন ৩০০ জনের বেশি। কিন্তু তাদের মধ্যে ক’জন মুসলিম?’
উল্লেখ্য, এবারের লোকসভা ভোটে গেরুয়া ঝড়ের মধ্যে হায়দরাবাদ কেন্দ্রে ফের জয়ী হয়েছেন ওয়াইসি। সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা।



 

Show all comments
  • লক্ষীন্দর মজুমদার ২৮ মে, ২০১৯, ১:৪৬ এএম says : 1
    আপনারা আবার কয়েকদিন আগে মোদীকে ভোট না দেওয়ার জন্য প্রকাশ্যে প্রচার করেছিলেন। রাষ্ট্রের নাগরিক হয়ে আপনারা যেনো ভালো থাকতে পারেন তার কামনা করি।
    Total Reply(0) Reply
  • Salahuddin Ayubi ২৮ মে, ২০১৯, ১:৪৮ এএম says : 0
    আমি একজন ভারতীয় মুসলিম। আমরা আতঙ্কিত আছি। মোদী হচ্ছে হিটলারের প্রেতাত্মা যার দুটো হাত এখন বিচারবহির্ভূত ভাবে মুসলিম হত্যার রক্ত রন্জিত ....
    Total Reply(0) Reply
  • Muzzammil Hossain ২৮ মে, ২০১৯, ১:৪৮ এএম says : 0
    গাজওয়াতুল হিন্দের জন্য অপেক্ষা করো মোদী। এই ভারতীয় উপমহাদেশে মুসলমানদের সাথে তোমাদের বিশাল একটি যুদ্ধ হবে। জিহাদ হবে। সেখানে মুসলমানরা বিজয় লাভ করবে ইনশাল্লাহ। এটি আমাদের রাসুল আজ থেকে প্রায় চৌদ্দশ বছর আগে বলে গিয়েছেন
    Total Reply(0) Reply
  • Mosharaf Hossain ২৮ মে, ২০১৯, ১:৪৯ এএম says : 0
    নরেন্দ্র মোদী সমগ্র পৃথিবীর একজন ভয়ংকর কালপ্রিট রাষ্ট্র নেতা, ভারতের বহু ঘটনার মহানায়ক, বহু নিরাপারাধ মানুষের ঠান্ডা মাথায় হত্যাকারী হিন্দু জঙ্গি সংগঠন আর এস এস,সিবসেনাদের সদা আস্থাভাজন ও তাদের হাতের পুতুল,মূলত হিন্দু আদর্শ পুঁজি করে, জনগনকে ধোকা দিয়ে তিনি জিতেছেন। দূঃখজনক হলেও সত্য, ভারতীয়রা একজন কালপ্রিট কে তাদের রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে বেছে নিয়েছেন
    Total Reply(0) Reply
  • Hasan Amir ২৮ মে, ২০১৯, ১:৫১ এএম says : 1
    নরেন্দ্র মোদি পুনরায় প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়ে সংখ্যালঘুদের উপর যে পরিমাণ অত্যাচার,নিপীড়ন,হত্যা শুরু হয়েছে তা আমরা ভারতের পত্র পত্রিকার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বড়বড় পেপার পত্রিকা এবং টেলিভিশনে দেখতে পাচ্ছি। গনতন্ত্রের ধারক বাহক,বিশ্বের বৃহত্তম গনতান্ত্রীক দেশ এবং গনতন্ত্রের চর্চাকারি খেতাব ভারতের ঝুলিতেই এখন পর্যন্ত লেগে আছে। বর্তমানে ভারতে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়াছে তা এভাবে চলতে থাকলে সব খেতাবই হারিয়ে যাবে। নরেন্দ্র মোদি এখন বর্তমানে পুনরায় প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন তাই মোদির প্রথম কাজ হবে এইসব সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার,নিপিড়ন সহ সংখ্যালঘু হত্যা বন্ধ করতে হবে অবশ্যই।
    Total Reply(0) Reply
  • Muhammad Akbar Hossain ২৮ মে, ২০১৯, ১:৫২ এএম says : 0
    এইবার পুরা বিশ্বব্যাপী পরিষ্কার দেখবে হিন্দুরা কত নিকৃষ্ট শ্রেণীর হতে পারে তারা গরু রক্ষার নামে প্রতিমুহূর্তে মুসলিমদের উপর নিত্যনতুন হামলা চালাবে এবং মারবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Abu Isha ২৮ মে, ২০১৯, ১:৫২ এএম says : 0
    ভারত বাসী সুখে থাকতে পারবে যদি ভারতের অভ্যন্তরে কিছু রাজ্য স্বাধীনতা ঘোষণা করে । সেটা করা উচিত । বিশেস করে মুসলিম সংখ্যা গরিষ্ট রাজ্য গুলোর ।
    Total Reply(0) Reply
  • নাইম ২৮ মে, ২০১৯, ৪:৩২ এএম says : 0
    ভারতীয় মুসলমানদের জন্য একটি মজবুত পলিসি গ্রহন করা সময়ের দাবি নিজেদের জানমাল ও ইমান রক্ষা করার জন্য।
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammed Kowaj Ali khan ২৮ মে, ২০১৯, ৯:১৯ এএম says : 0
    মুদি সহ সকল উগ্র হিন্দুদেরকে ...... করার জন্য মোসলমান সহ সকল মানব জাতি প্রস্তুত হও। ইনশাআল্লাহ।
    Total Reply(0) Reply
  • Abu ২৮ মে, ২০১৯, ১২:৩৫ পিএম says : 0
    Turture Muslims in India will until Bangladesh protest heavily. But unfortunately Bangladesh government is heavily dipendent on India to stay in power. So that will never happen from Bangladesh by this government. Even India has no friends around except Bangladesh where Bangladesh could play a big game.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ