Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পদত্যাগে অনড় রাহুল, গান্ধী পরিবারের বাইরের কাউকে সভাপতি করার প্রস্তাব

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৬ মে, ২০১৯, ৪:১৭ পিএম

হারের দায় নিয়ে কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী ইস্তফা দেবেন। আর কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটি তা খারিজ করবে এমনটা অনুমিত ছিল। কিন্তু নিজের ইস্তফা নিয়ে রাহুল যে এমন জেদ ধরে থাকবেন, সেটি ভাবতেই পারেননি কেউ। দলের এক নেতা জানান, কমিটির সব নেতা সমস্বরে তাকেই দায়িত্বে থাকতে বলেছেন। পি চিদম্বরম তো কেঁদেই ফেলেছেন। আগেভাগে প্রস্তাব পেশ করে রাহুলের হাতেই সংগঠনের আমূল পরিবর্তনের ভার তুলে দিয়েছে কমিটি। তা সত্ত্বেও ইস্তফায় অনড় রাহুল। শুধু তা-ই নয়, সাফ বলেছেন, তার বদলে যেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বঢরার নামও সভাপতি পদে ভাবা না হয়। গান্ধী পরিবারের বাইরের কারও হাতে এই দায়িত্ব তুলে দেওয়া হোক। এই নিয়ে কোনও আপস হবে না। এর পরেই রাহুল-প্রিয়াঙ্কা বৈঠক থেকে বেরিয়ে যান। অন্য সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন রাহুল। এদিন তা-ও বলেননি। প্রিয়ঙ্কাও আলাদা ভাবে চলে যান।

নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহরা অনেক দিন ধরেই অভিযোগ করছেন, ‘পরিবারের বাইরে কংগ্রেস কিছু ভাবতে পারে না। এখনই চোখ বুজে বলা যায়, রাহুলের পরেও প্রিয়াঙ্কার সন্তানরা ভবিষ্যতে কংগ্রেসের সভাপতি হবেন।’ লোকসভায় বিপর্যয়ের পর রাহুল আর কোনও আঙুল তোলার সুযোগ দিতে চাইছেন না। পুরো বৈঠকে সোনিয়া গান্ধী একটিও কথা বলেননি। কিন্তু রাহুল বলেন, তিনি দলের জন্য অন্য যে কোনও কাজ করবেন। লড়াই জারি রাখবেন। সংসদের নেতাও হতে পারেন। আরও তিনটি বিকল্প দিয়েছেন। কিন্তু সভাপতি থাকবেন না।

ইস্তফা নিয়ে রাহুলের জেদ দেখে কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটির সব সদস্যই তাকে দায়িত্বে বহাল থাকতে বলেন। প্রিয়াঙ্কাও বলেন, বিজেপি এটাই চায়, রাহুল গান্ধী সভাপতি পদ থেকে সরে যান। রাহুল ইস্তফা দিলে বিজেপিরই ফাঁদে পা দেওয়া হবে। চিদম্বরম কেঁদে ফেলে বলেন, সবে দক্ষিণ ভারত থেকে রাহুল জিতে এসেছেন। রাহুল ইস্তফা দিলে দক্ষিণের সমর্থকরা আত্মহত্যাও করতে পারেন। পরে সাংবাদিকদের গুলাম নবি আজাদ জানান, ‘সভাপতি হওয়ার আগে থেকেই গত পাঁচ বছর ধরে রাহুল গান্ধী প্রচার করেছেন। নানা বিষয়ে সরকারকে চেপে ধরেছেন। তার নেতৃত্ব জনতাও চোখে দেখেছেন। তাই তিনি যখন ইস্তফার কথা বলেন, তখন গোটা কমিটি ঐকমত্য হয়ে বলেছে, আপনি অনেক ভাল কাজ করেছেন। সকলে আপনার নেতৃত্বেই কাজ করবেন। সংগঠনের আমূল বদলের জন্য যা যা করার করুন। আপনি সব জানেন, সকলের যোগ্যতা সম্পর্কেও ওয়াকিবহাল। নতুন কেউ এলে সব বুঝতেই আরও পাঁচ বছর লেগে যাবে।’

রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা বলেন, ‘দলের সভাপতির পাশাপাশি কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটির সিদ্ধান্তই সর্বোচ্চ। আর ওয়ার্কিং কমিটি যে প্রস্তাব সর্বসম্মতিতে পাশ করেছে, তাতে স্পষ্ট লেখা আছে রাহুল গান্ধী ইস্তফা দিতে চেয়েছেন, কিন্তু ওয়ার্কিং কমিটি খারিজ করেছে। কমিটির আবেদন, প্রতিকূল পরিস্থিতিতে তারই নেতৃত্ব দরকার। সে কারণে কমিটি রাহুল গান্ধীকেই সময় বেঁধে সংগঠনের দ্রুত আমূল পরিবর্তন ও প্রসারের অধিকার তুলে দিয়েছে।’ আজাদও বলেন, ‘রাহুল গান্ধীকেই সম্পূর্ণ ফ্রি-হ্যান্ড দেওয়া হয়েছে। তিনিই ঠিক করবেন।’ দলের অন্য নেতারাও বলছেন, ওয়ার্কিং কমিটি প্রস্তাব পাশ করার পর সেটি মানতে বাধ্য রাহুল। ফলে নিশ্চিত, তিনিই সভাপতি থাকছেন।

কংগ্রেসের এক শীর্ষ নেতা বলেন, বিজেপি যাই বলুক, গান্ধী পরিবার বরাবরই গোটা দলকে ধরে রাখে। অতীতে দলের নেতৃত্ব থেকে যখন পরিবারের রাশ আল্‌গা হয়েছে, তখন দল ভেঙে টুকরো টুকরো হয়েছে। এখন আর সেই ঝুঁকি নেওয়ার কোনও অবস্থা নেই। তার উপর রাহুল লড়াকু। তিনি যদি সরে যান, তা হলে কেই বা দলকে নেতৃত্ব দিতে পারেন? বড়জোর সোনিয়া গান্ধীকে সাময়িক ভাবে কার্যনির্বাহী সভাপতি করা যায়। রাহুলের নেতৃত্বেই হালে গোবলয়ের তিনটি রাজ্য কংগ্রেস দখল করেছে। মোদী-শাহের গড় গুজরাতেও বিজেপিকে ধরাশায়ী করা গেছে। ভোটে হার-জিত থাকেই। দলে অনেক ত্রুটি, ঘাটতি আছে। সেটি রাহুলই সকলের সঙ্গে বসে ঠিক করবেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ