পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
২০১৪ সালের চেয়েও ভাল ফলাফল করে দ্বিতীয়বারের মতো ভারতের প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন উগ্র হিন্দুত্ববাদের ধারক হিসেবে পরিচিত নরেন্দ্র মোদি। ঐ বছর প্রথমবারের মতো জাতীয় পর্যায়ে নির্বাচিত হয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। চাওয়ালা থেকে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ক্ষেত্রে তার মূল অস্ত্র ছিল প্রধানত ‘হিন্দুত্ববাদ’-এর নামে উগ্র হিন্দু জাতীয়তাবাদকে জাগিয়ে তোলা। ২০০২ সালে গুজরাটে হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গার ইন্দনদাতা হিসেবে এই মোদিকেই আখ্যায়িত করা হয় ‘বুচার অব গুজরাট’ বা গুজরাটের কসাই হিসেবে। মনেপ্রাণে সাম্প্রদায়িক এমন এক ব্যক্তিই অসাম্প্রদায়িক হিসেবে পরিচিত ভারতে পরপর দুইবার প্রধানমন্ত্রী হলেন। মোদির দ্বিতীয়বার নির্বাচিত হওয়া নিয়ে তির্যক মন্তব্য করেছেন লন্ডন প্রবাসী ভারতীয় লেখক সলিল ত্রিপাঠি। তিনি বলেছেন, ‘বিশ্বে যে বছরটিতে (অহিংসার বাণী প্রচারক) গান্ধীর ১৫০ তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন করছে, সে বছরই ভারত নির্বাচিত করেছে এমন একজন সন্ত্রাসীকে, যে গান্ধীর হত্যাকারী নথুরাম গডসেকে প্রকৃত দেশপ্রেমিক মনে করে।’ পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, মোদির প্রথম শাসনামলে রেকর্ড বেকারত্ব, নোট বাতিলের ভোগান্তি, ঋণগ্রস্ত কৃষকদের রোকর্ড আত্মহত্যা ও বিক্ষোভ, গরুর পবিত্রতা রক্ষার নামে সংখ্যালঘু মুসলমানদের ওপর নিপীড়ন-নির্যাতন ও হত্যার মতো ঘটনা, রাফায়েল জঙ্গিবিমান কেনার ক্ষেত্রে দুর্নীতি ইত্যাদি গুরুতর অভিযোগের কোনোটিই দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে উঠতে পারেনি। এ থেকে প্রতীয়মাণ হয়, মোদির যে চারিত্রিক উগ্র হিন্দুত্ববাদ এবং হিন্দু জাতীয়তাবাদ, তাই ভোটাররা বেছে নিয়েছে। ভারতকে একটি পুরোপুরি হিন্দু রাষ্ট্রে পরিণত করার উদ্দেশকে ভোটাররা সমর্থন দিয়েছে। এ নিয়ে বিশ্লেষকরা বিস্ময় প্রকাশ করে বলছেন, মোদির বিজয় বিস্ময়কর ও দুঃখজনকভাবে দেখিয়েছে, এ যুগেও ধর্মীয় বিদ্বেষ ও সাম্প্রদায়িক রাজনীতির মতো সস্তা ব্যবহারও ভোটারদের প্রলুব্ধ করে এবং তারা প্রভাবিত হয়।
ভারতে দ্বিতীয়বারের মতো উগ্র হিন্দুত্ববাদের বিজয়ে তার প্রতিবেশি দেশগুলো বিশেষ করে বাংলাদেশের জন্য যথেষ্ট শঙ্কার কারণ রয়েছে। যদিও আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, ভারত আমাদের বন্ধু। অনিষ্ট করবে বলে মনে করি না। পর্যবেক্ষরা মনে করছেন, ভারত বাংলাদেশের যা অনিষ্ট করার করে ফেলেছে। বাকি আছে সেখানের সীমান্ত সংলগ্ন রাজ্যগুলোতে বসবাসকারি মুসলমানদের বাংলাদেশি আখ্যা দিয়ে রোহিঙ্গাদের মতো ঠেলে দেয়া। ভারত ইতোমধ্যে তার যত ধরনের চওয়া ছিল সবকিছুই আমাদের কাছ থেকে আদায় করে নিয়েছে। আমাদের সরকারও বিনা বাক্যে তা দিয়ে দিয়েছে। ট্রানজিট, করিডোর, ব্যবসা-বাণিজ্য, জোর করে উচ্চ সুদে ঋণ দেয়া থেকে শুরু করে শ্রমবাজার ও পণ্যের অন্যতম প্রধান উৎসে পরিণত করাসহ হেন কোনো সুবিধা নেই যা ভারত তার প্রয়োজনে আদায় করে নেয়নি। আমাদের চাওয়া ছিল অভিন্ন নদ-নদীর পানি সমস্যার সমাধান এবং এক তিস্তা চুক্তি। তিস্তা চুক্তির কথা এলেই ভারত নানা তালবাহানা করে এড়িয়ে যায়। ফলে এ চুক্তি আদৌ হবে কিনা, তা এখন অনিশ্চিত। আমরা মুখে যতই বলি না কেন, ভারত আমাদের খুব ভালো বন্ধু এবং আমাদের সম্পর্ক সর্বোচ্চ উচ্চতায় রয়েছে, এ কথা যে ¯্রফে কথার কথা তা দেশের সচেতন শ্রেণীমাত্র বোঝেন। অনেকে একে তোয়াজের পররাষ্ট্রনীতি হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তারা ভাল করেই জানেন, ভারত কখনোই আমাদের ভাল চায় না। বরং যতভাবে পারা যায় তার স্বার্থ আদায় করে আমাদের ক্ষতি সাধন করাই তার লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভারতে পরপর উগ্র হিন্দুত্ববাদী বিজেপির ক্ষমতাসীন হওয়াকে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এর মাধ্যমে ভরতের যে ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র তা পুরোপুরি হারিয়ে যাবে। কথায় কথায় মোদি যেভাবে ‘হিন্দুস্তান’ উচ্চারণ করেন তাতে এটাই প্রতীয়মাণ হয় বিশ্বে ভারতকে একটি পুরোপুরি হিন্দু রাষ্ট্র হিসেবে তিনি প্রতিষ্ঠা করতে চান। বিশেষ করে মুসলমানদের বিতাড়ন করে তার এই লক্ষ্য পূরণ করতে চান। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যে দেশটির দ্বিতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ নাগরিক মুসলমানদের উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তাদের অধিকার ও সুযোগ-সুবিধা সংকুচি করা হয়েছে। যতভাবে পারা যায় নিপীড়ন-নির্যাতন চালানো হচ্ছে। গত বছর আসামে মুসলমান বাংলা ভাষাভাষীদের বিতাড়নের লক্ষ্যে নাগরিকত্বের তালিকায় নাম থাকা বাধ্যতামূলক করার উদ্যোগ নিয়ে ৪০ লাখের বেশি মুসলমানকে তালিকা থেকে বাদ দিয়েছে। মুসলমান বিদ্বেষী হিসেবে মোদি সরকারের এটি একটি ঘৃণ্যতম পদক্ষেপ। এবারের নির্বাচনী প্রচারণাও বিজেপির সভাপতি ঘোষণা দিয়েছিলেন, পাশ্চিমবঙ্গসহ অন্যান্য সীমান্তবর্তী রাজ্যে নাগরিকত্বের তালিকা কার্যক্রম শুরু করা হবে। এসব রাজ্যে বসবাসকারি মুসলমানরা নাকি বাংলাদেশ থেকে গিয়েছে। তার এ ঘোষণা বাংলাদেশের জন্য হুমকির কারণ হয়ে উঠবে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বিজেপি সভাপতির এ ঘোষণা শুধু রাজনৈতিক বক্তব্য হিসেবে নেয়া ঠিক হবে না। তারা যা বলে তা কার্যকর করে। ইতোমধ্যে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির কর্মীরা তাদের বিরোধীদের বাড়িতে গিয়ে হামলা ও ভাঙচুর শুরু করেছে। বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গসহ বাংলাদেশের সীমান্ত সংলগ্ন রাজ্যগুলোতে বিজেপির ভাল ফলাফল করা। এ রাজ্যগুলোতে বিজেপির আধিপত্য বেড়ে গেছে। বিজেপির যে মজ্জাগত মুসলমান বিদ্বেষ তাতে এ শঙ্কা রয়েছে, তাদের কথামতো রাজ্যগুলো থেকে মুসলমানদের বিতাড়িত করে বাংলাদেশের দিকে ঠেলে দেবে। তাছাড়া উগ্র হিন্দুত্ববাদের কারণে সীমান্তে প্রাণঘাতি ঘটনা বৃদ্ধি পেতে পারে। এমনিতেই বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত বিশ্বের সবচেয়ে প্রাণঘাতী সীমান্ত হিসেবে পরিচিত। সীমান্ত সংলগ্ন রাজ্যগুলোতে বিজেপির আধিপত্য বিস্তৃত হওয়ায় তা আরও প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে। এতে বাংলাদেশীরাই বেশি শিকার হতে পারে।
পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, বিজেপির পুনরায় ক্ষমতায় আসার বিষয়টি দলটিকে আরও বেশি উগ্র এবং আগ্রাসী করে তুলতে পারে। এতে বাংলাদেশের সতর্ক হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। বিজেপির সাম্প্রদায়িক চরিত্র দেশটির মুসলমানদের উপর চড়াও হতে পারে। তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী মুসলমান বিদ্বেষী আচরণ ও সাম্প্রদায়িক উস্কানি যে দেব না, তা গ্যারান্টি দিয়ে বলা যায় না। এতে উত্তেজনা বৃদ্ধি পাওয়া অসম্ভব কিছু না। এ কারণে আমাদের সতর্ক থাকা বাঞ্ছনীয়। সরকারকে অত্যন্ত সাবধানে ও দক্ষতার সাথে পথ চলতে হবে। সরকারের দায়িত্ব হবে দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে জাতীয় ঐক্যমত সৃষ্টি করা। ঐক্যমত সৃষ্টি করতে পারলে বাইরের যে কোনো অপকৌশল থেকে দেশকে রক্ষা করা সহজ। আমরা আশা করি, এ ধরনের কোনো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটবে না এবং দুই দেশের মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় থাকবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।