পশ্চিম তীরে সহিংসতা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ
জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এই বৈঠকে তিনি বলেছেন, ফিলিস্তিনের
ভিক্টোরিয়ান আমলে যারা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন তাদের মধ্যে ধনীদের ব্যাপারেই বেশি জানা যায়। যেহেতু তাদের ইতিহাসই ভালোভাবে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।
এ সময়েই ইসলাম গ্রহণ করেন একজন বিশিষ্ট ইংরেজ, রবার্ট স্ট্যানলি। ইসলাম গ্রহণের পর তিনি পরিচিত হন রবার্ট রশিদ স্ট্যানলি নামে। ১৮২৮ সালে ম্যাঞ্চেস্টারের স্ট্যালিব্রিজ শহরে তার জন্ম হয়। ৭০ বছর বয়সে তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন।
‘দিনলিপি বা ডায়েরি লেখা ছিল মধ্যবিত্তদের কাজ’, বলেন ক্রিস্টিনা লংডেন। রবার্ট স্ট্যানলি তার পূর্ব পুরুষ ছিলেন। ক্রিস্টিনার বাবা ব্রায়ান লংডেন ১৯৯৯ সালে তাদের বংশলতিকা খুঁজতে গিয়ে দেখেন তাদের পূর্বপুরুষদের একজন ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন।
১৮৭০ দশকে সামান্য মুদি দোকানি থেকে স্ট্যালিব্রিজ শহরের রক্ষণশীল মেয়র হয়েছিলেন রবার্ট স্ট্যানলি। এটি ছিল ম্যাঞ্চেস্টারের কাছে একটি কারখানা শহর। ১৮৭৪ সালে তিনি প্রথম মেয়র নির্বাচিত হন। তিনি এত জনপ্রিয় ছিলেন যে ১৮৭৫ সালে বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় আবারো নির্বাচিত হন। তার আগে তিনি ১৮৬৪ সালে ডাকিনফিল্ডের কাউন্সিলর, ১৮৬৭ সালে জাস্টিস অব দি পিস এবং ১৮৬৯ সালে স্ট্যালি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছিলেন।
শুধু তাই নয়, ক্রিস্টিনা লংডেন তাকে নিয়ে লেখা এক বইয়ে উল্লেখ করেছেন যে, রবার্ট স্ট্যানলি একজন ম্যাজিস্ট্রেটও ছিলেন। তিনি ছিলেন একজন দয়ালু, বুদ্ধিমান ও লেখাপড়া জানা মানুষ। তিনি সেইসব শ্রমিকদের জন্য ফান্ড সংগ্রহ করেছিলেন যারা তাদের বসদের পছন্দমত ভোট দিতে রাজি না হওয়ায় চাকরি খুইয়েছিলেন।
স্ট্যানলি আব্দুল্লাহ কুইলিয়ামের লিভারপুল মসজিদের নিউজলেটারে ব্রিটিশ উপনিবেশবাদ নিয়ে নিয়মিত লিখতেন। ১৮৯০ সালের শেষ দিকে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার থেকে অবসর নেওয়ার পর কুইলিয়ামের সঙ্গে তার দেখা হয়। তাদের মধ্যে খুবই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল।
ক্রিস্টিনা লংডেন বলেন, ‘রর্বাট স্ট্যানলি ছিলেন কুইলিয়ামের চেয়ে ২৮ বছরের বড়। তাই আমার মনে হয় তাদের সম্পর্ক অনেকটা পিতা-পুত্রের মতই ছিল।’ তিনি আবদুল্লাহ কুইলিয়ামের প্রতিষ্ঠিত লিভারপুল মসজিদের সহ-সভাপতি ছিলেন। ১৮৯৮ সালে লিভারপুল ইসলামিক ইনস্টিউিটে আবদুল্লাহ কুইলিয়ামের উপস্থিতিতে স্ট্যানলি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। তার বয়স তখন ৭০ বছর। তার নতুন নাম হয় রবার্ট রশিদ স্ট্যানলি। তাকে ব্রাদার রশিদ স্ট্যানলিও বলা হত।
ক্রিস্টিনা লংডেনের ধারণা, যে তখন স্ট্যালিব্রিজে অন্য কোনো মুসলিম ছিলেন না। স্ট্যানলি পরে ম্যানচেস্টারে চলে যান। সেখানে আসা কিছু মুসলমানকে নিয়ে একটি ছোট মুসলিম সমাজ গড়ে উঠেছিল। মনে হয়, সে কারণেই তিনি সেখানে চলে গিয়েছিলেন। ১৯১১ সালে ম্যাঞ্চেস্টারেই তিনি মারা যান।
তার ধর্মান্তরের বিষয়টি তিনি তার সন্তানদের জানাননি। ক্রিস্টিনার বাবা বিষয়টি আবিষ্কার করার আগে পর্যন্ত পরিবারের সদস্যদের সবার কাছে অজানাই ছিল। তিনি বলেন, ‘তখনকার সময়টা ছিল অন্য রকম। অন্যদের কাছে মুসলমান হবার কথা বলার মতন পরিস্থিতি তখন ছিল না।’
কাকতালীয় ভাবে, ক্রিস্টিনা লংডেনের ভাই স্টিভেন লংডেন ১৯৯১ সালে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। স্টিভেন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে মিশর গিয়েছিলেন। সেখান থেকে ফিরে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। স্ট্যানলির ধর্মান্তরিত হবার কথা জানার সাত বছর আগে এ ঘটনা ঘটে। তার পূর্বপুরুষের ইসলাম ধর্ম গ্রহণের ব্যাপারটি শুনে তিনি খুশিতে বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন।
ক্রিস্টিনা বলেন, ‘ভাবা যায় যে একটা মানুষ ওইরকম একটা গোঁড়া মনোভাবের ব্যাপক প্রাধান্যের সময়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন! আপনি ভেবে দেখুন সেটা কোন সময়, আর সেটা ম্যানচেস্টারের মত জায়গায়!’
তিনি বলেন, ‘মানুষ যা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে তা বলতে এখন আর দ্বিধা করে না। সেটা রাজনীতির ব্যাপারেই হোক, আর ধর্মীয় ব্যাপারেই হোক। কিন্তু তখন ব্যাপারটা মোটেই তেমন ছিল না।’ (শেষ)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।