Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নকশিকাঁথার মাঠ ও কবি জসীম উদ্্দীন

আ ফ তা ব চৌ ধু রী | প্রকাশের সময় : ২৪ মে, ২০১৯, ১২:০৬ এএম


(পূর্বে প্রকাশিতের পর)
মনে হয় রূপার ব্যক্তি জীবনকে প্রতীকী অর্থে ধরে নিয়ে তার মধ্যে ব্যঞ্জিত হয়েছে বৃহত্তর জীবনের আর্তি-
‘মেয়ে শুধু দুটি ভাষা-ভরা আঁখি ফিরাল মায়ের পানে;
কত ব্যথা তার কমিল ইহাতে সেই তাহা আজ জানে।
গণিতে গণিতে শ্রাবণ কাটিল, আসিল ভাদ্র মাসে,
বিরহী নারীর নয়নের জলে ভিজিল বুকের বাস’ (পৃঃ ৫২)
লোকজীবনের এ কবি আলোচ্য কাব্যের নামাকরণের প্রসঙ্গটি শেষ দুটি কথায় বর্ণিত করেছেন। মনে হয় সেখানেই অনেকটা ব্যঞ্জিত হয়েছে কাব্যটির যথার্থরূপ। নকসী-কাঁথাটি মেলে ধরে সাজু যেভাবে ব্যথার দিনলিপিকে লিপিবদ্ধ করেছে তাতে তাঁর জীবনের ইতিহাসটাও অন্যভাবে ফুঠে উঠে:
‘নকসী কাঁথাটি বিছাইয়া সাজু সারারাত, আঁকে ছবি,
ও যেন তাহার গোপন ব্যথার বিরহিয়া এক কবি।’
স^ামীর পাশে থেকে যদিও সাজু একদিন বহু যতœ ভরে নকসী কাঁথাকে পরিপূর্ণ করেছিল, আজ আর সেদিন চলে গেছে বহুদূরে। তাই কবিও সাজুর দুঃখ দুদর্শার চিত্র এঁকেছেন এভাবে-
‘সেই কাঁথা আজো মেলিয়াছে সাজু যদিও সেদিন নাই,
সোনার স^পন আজিকে তাহার পুড়িয়া হয়েছে ছাই।’ (পৃঃ ৫৪)
একটি চাষীকে’িদ্রক জীবন সমাজের রূপচিত্রকে অঙ্কিত করতে গিয়ে এবং নিগুঢ় প্রেমের অনুভবটিকে আরও বেশি ব্যঞ্জিত করে তুলতে নকসী-কাঁথাটি হয়েছে যথার্থ উপযোগী। সময়ের অনুরণন কিংবা মহাসময়ের আশ্চর্যছাপ নৈঃশব্দের মত কবিতার মধ্যে অবাধে যাতায়াত করে। এগুলোর মধ্যেই রয়ে যায় কবিতা কিংবা কাব্যের প্রকৃত সুর। আলোচ্য কাব্যটিতেও আছে এর বহু সংকেত। যদিও কবি কাব্যটির রচনায় জানিয়েছেন-
‘সারা গায়তার জড়ায়ে রয়েছে সেই যে নকসী-কাঁথা,
আজও গাঁর লোকে বাঁশি বাজাইয়া গায় এ করুণ গাথা।
সেই হতে গাঁর নামটি হয়েছে নকসী-কাঁথার মাঠ।
ছেলে বুড়ো গাঁর সকলেই জানে ইহার করুণ পাঠ।’ (পৃঃ ৫৮)
একটি কাব্যালোচনায় কবি জসিম উদ্দিনের প্রতিভার মূল্যায়ন করা কোনওভাবেই সম্ভব নয়। তবে এটা ঠিক একটি মহাকাব্যিক ব্যঞ্জনার পাশাপাশি কাজটির মধ্যে নিজস^ আকল্পের সহযোগে পুরোপুরি লোকায়ত ঘরানায় কবি যে নিজস^ বৃত্ত গড়ে তুলেছেন তা বস্কত হয়ে উঠেছে বিশ্বসাহিত্যেরই সহধর্মী। একটু ভিন্ন প্রসঙ্গ হলেও কবি জসিম উদ্দিন স¤পর্কেও এ কথাটারও যেন আশ্বর্য সামঞ্জস্য রয়েছে-
‘সাধনা মৃত্যুর পর লোক সফলতা দিয়ে দেবে;
পৃথিবীতে হেরে গেলে কোনও ক্ষোভ নেই।’ (সমাপ্ত)



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন