মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ভিক্টোরিয়া যুগে ইসলাম গ্রহণকারী বিখ্যাত ব্রিটিশ নারী ছিলেন লেডি এভলিন কোবল্ড। তবে শৈশবকাল থেকেই তিনি মনে প্রাণে নিজেকে মুসলমান মনে করতেন। উনিশ শতকে মুসলিম দেশগুলো ভ্রমণ করতে গিয়ে ব্রিটেনের উচ্চ শ্রেণির অনেকেরই ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়া কোনো অস্বাভাবিক বিষয় ছিল না। লেডি এভলিন মারে, স্কটল্যান্ডের এডিনবার্গের এক ধনাঢ্য পরিবারের সন্তান। শৈশবের বেশিরভাগ সময় কাটিয়েছেন স্কটল্যান্ড ও উত্তর আফ্রিকা যাওয়া-আসা করে। উত্তর আফ্রিকায় তার তত্ত্বাবধানকারিণীরা সবাই ছিলেন মুসলিম নারী। তিনি লিখেছেন, ‘সেখানে আমি আরবি বলতে শিখি। আমি প্রায়ই আমার গভর্নেসের চোখ এড়িয়ে বাড়ির বাইরে যেতাম। আমার আলজেরিয়ান বন্ধুদের সাথে মসজিদে ঘুরে বেড়াতাম। ধীরে ধীরে অবচেতন মনে আমি মনেপ্রাণে এক ক্ষুদে মুসলমান হয়ে উঠি।’
তিনি স্বচ্ছন্দ ভাবে আরবি বলতে পারতেন। ডানমোর পার্কের পৈত্রিক বাড়িতে থাকার সময় তিনি হরিণ শিকার ও স্যামন মাছ ধরায় দক্ষ হয়ে ওঠেন। তার পরিব্রাজক বাবা সপ্তম আর্ল অব ডানমোর প্রায়ই চীন এবং কানাডার মত দেশে ঘুরতে যেতেন। তার মাও ছিলেন একজন পর্যটক। তিনি পরে রানী ভিক্টোরিয়ার লেডি-ই-ওয়েটিং হয়েছিলেন।
বাবা মায়ের মতই লেডি এভলিনও ঘুরে বেড়াতে ভীষণ ভালোবাসতেন। কায়রোতে লেডি এভলিনের সঙ্গে দেখা হয় জন কোবোল্ডের। পরে যাকে তিনি বিয়ে করেন। জন কোবোল্ডও বেশ ধনাঢ্য পরিবারের সন্তান। ১৯২৯ সালে তার স্বামী মারা যান। তারপর তিনি আর বিয়ে করেননি। লেডি এভলিন ঠিক কবে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন তা জানা যায় না। তবে ছোটবেলার অভিজ্ঞতার রেশ তার মনে রয়ে গিয়েছিল।
একবার ছুটি কাটাতে এভলিন রোমে যান। সেখানে তার সঙ্গে দেখা হয় পোপের। এক চিঠিতে তিনি লিখেছেন, ‘হঠাৎ পোপ যখন আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন আমি ক্যাথলিক কিনা। আমি থমকে গেলাম। একটু ভাবলাম, তারপর বললাম, আমি মুসলমান। আমি জানি না তখন আমাকে ঠিক কী পেয়ে বসেছিল। অনেক বছর ধরে আমি ইসলাম ধমের্র কথা ভাবিওনি। হঠাৎ আমার মনের মধ্যে যেন একটি বাতি জ্বলে উঠল। আমি ইসলাম সম্পর্কে আরো জানতে ও পড়তে শুরু করলাম।’
লেডি এভলিনের আত্মজীবনীর ভ‚মিকায় ইতিহাসবিদ উইলিয়াম ফেইসি লিখেছেন, ‘বেশিরভাগ ধর্মান্তরিত মুসলমান আকৃষ্ট হয়েছিলেন এ ধর্মটির আধ্যাত্মিক দিকের প্রতি।’ তিনি আরো লিখেছেন, ‘তারা মনে করতেন, পৃথিবীতে যত ধর্ম আছে তাদের মূল কথা একই। ধর্মগুলোর ছোটখাটো বিভেদের মধ্যেও রয়েছে এক বড় ঐক্য। মানুষ ইচ্ছে করে ধর্মের ভেতর নানা বিভেদ তৈরি করে রেখেছে।’
মধ্যপ্রাচ্যে লেডি এভলিন তার বন্ধুদের কাছে পরিচিত ছিলেন ‘লেডি জয়নাব’ নামে। সেখানে মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত জায়গাগুলোতে তার অবাধ যাতায়াত ছিল। তিনি মুসলিম সংস্কৃতিতে নারীদের আধিপত্যমূলক প্রভাব নিয়ে একটি লেখাও লিখেছিলেন।
তিনিই প্রথম হজ্ব পালন কারী ব্রিটিশ নারী। ১৯৩৩ সালে তিনি পঁয়ষট্টি বছর বয়সে হজ্ব পালন করতে মক্কায় যান। তিনি জয়নাব নাম নেন। এ সময় তিনি সউদী আরবের প্রতিষ্ঠাতা সউদ ইবনে আবদুল আজিজের সাথে সাক্ষাত করেন।
তিনিই প্রথম ইংরেজ নারী হাজি যিনি হজ পালনের বর্ণনা সম্বলিত প্রথম গ্রন্থ রচনা করেন। এটির নাম ‘পিলগ্রিমেজ টু মক্কা।’ সেখানে তিনি লেখেন যে ওই যাত্রা তাকে অফুরান আনন্দের পাশাপাশি দিয়েছে সৌন্দর্য আর বিস্ময়ের অগাধ উপকরণ। তিনি অল্প সময়ের জন্য কেনিয়া গিয়েছিলেন। কেনিয়া ভ্রমণ বিষয়ে তিনি ‘কেনিয়া : ল্যান্ড অব ইল্যুশন’ নামে একটি বই লেখেন ও তা প্রকাশিত হয়।
১৯৬৩ সালে ৯৫ বছর বয়সে স্কটল্যান্ডের এক নার্সিং হোমে তিনি মারা যান। তাকে তার ইচ্ছানুসারে ওয়েস্টার রস-এ নিজ গেøনক্যারন এস্টেটে প্রত্যন্ত এলাকায় পাহাড়ের শীর্ষে কবর দেয়া হয়। তিনি লিখে গিয়েছিলেন, তাকে দাফনের সময় যেন ব্যাগপাইপ বাজানো হয়। কবরে তাকে যেন কিবলামুখী রাখা হয়। আর তার কবরে যেন কোরআনের ২৪ নম্বর সুরার ৩৫ নম্বর আয়াত (সূরা আন্ নূর-এর একটি আয়াত) খোদাই করা হয়। সে মোতাবেক তার কবরে ‘সূরা আন্ নূর’ এর আয়াত খোদাই করা হয়েছিল। তবে পরে এটি কে বা কারা ছুরি দিয়ে খুঁচিয়ে নষ্ট করে দেয়। এটাই প্রমাণ করে যে তার বিশ্বাস তাকে কতটা বিতর্কের মুখে ফেলেছিল।
তিনি তার আত্মজীবনীতে লিখেছেন, ‘মানুষ আমাকে প্রায়ই জিজ্ঞাসা করে যে, আমি কখন এবং কীভাবে মুসলিম হলাম। উত্তরে আমি শুধু এটুকুই বলতে পারি যে, আমি আসলেই জানি না প্রথম কখন ইসলামের আলো আমাকে ছুঁয়েছে।’ ‘আমার মনে হয় আমি সব সময়ই মুসলিম ছিলাম।’ আবদুল্লাহ কুইলিয়ামের মত তিনিও ব্রিটেনে ইসলাম প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।