পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দফায় দফায় সময় বাড়ানোর পরও হজযাত্রী নিবন্ধনে কাঙ্ক্ষিত গতি আসছে না। সরকারি-বেসরকারি মিলে নিবন্ধন সংখ্যা এখনও ৫০ হাজার হয়নি। অথচ এ বছর এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজ পালনের সুযোগ পাবেন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১৫ হাজার জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় এক লাখ ১২ হাজার ১৯৮ জন হজ পালন করতে পারবেন।
হজ নিবন্ধন পোর্টালে দেখা যায়, শনিবার (৪ মার্চ) বিকেল ৪টা পর্যন্ত নিবন্ধন করেছেন মোট ৪৩ হাজার ৮৯৫ জন। যার মধ্যে সরকারিভাবে নিবন্ধন করেছেন ৮ হাজার ২৪ জন। বেসরকারিভাবে ৩৫ হাজার ৯০৮ জন। অর্থাৎ হজ কোটার অর্ধেকেরও কম নিবন্ধন হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিমান ভাড়া বৃদ্ধির কারণে হজের খরচ অনেক বেড়ে গেছে। তাই এক বছর আগেও যারা হজে যাওয়ার চিন্তা করেছিলেন, তাদের অনেকেই এখন হজে যাওয়ার উৎসাহ দেখাচ্ছেন না। ফলে কমেছে নিবন্ধন।
ঘোষণা অনুযায়ী, সরকারি ব্যবস্থাপনায় এবার হজ করতে জনপ্রতি খরচ হবে ছয় লাখ ৮৩ হাজার ১৮ টাকা। প্রতি বছর দুটি প্যাকেজ থাকলেও এবার একটি প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়। যা ২০২২ সালে সরকারিভাবে হজে যেতে প্যাকেজ-১ এ ৫ লাখ ২৭ হাজার ৩৪০ এবং প্যাকেজ-২ এ ৪ লাখ ৬২ হাজার ১৫০ টাকা খরচ নির্ধারণ করা হয়েছিল। সে হিসেবে চলতি বছর হজের খরচ বেড়েছে ১ লাখ ৬১ হাজার ৮৬৮ টাকা বেড়েছে।
হজযাত্রী নিবন্ধন শুরু হয় গত ৮ ফেব্রুয়ারি। ঘোষণা অনুযায়ী ২৩ ফেব্রুয়ারি নিবন্ধনের সময় শেষ হওয়ার কথা। পরে সময় পাঁচদিন বাড়িয়ে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত করা হয়। এরপর সময় আরও সাতদিন বাড়ানো হয়। সে হিসেবে আগামী ৭ মার্চ পর্যন্ত নিবন্ধন করতে পারবেন হজযাত্রীরা। সবমিলে তৃতীয়বারের মতো নিবন্ধনের সময় বাড়ানো হয়েছে।
সময় বাড়িয়েও পর্যাপ্ত নিবন্ধন না হওয়ার কারণ হিসেবে অনেকেই হজের খরচ বেড়ে যাওয়াকে দায়ী করছেন। গত ১ ফেব্রুয়ারি চলতি বছরের হজ প্যাকেজ ঘোষণা করে ধর্ম মন্ত্রণালয়। ঘোষণা অনুযায়ী, সরকারি ব্যবস্থাপনায় এবার হজ করতে জনপ্রতি খরচ হবে ছয় লাখ ৮৩ হাজার ১৮ টাকা। প্রতি বছর দুটি প্যাকেজ থাকলেও এবার একটি প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়। যা ২০২২ সালে সরকারিভাবে হজে যেতে প্যাকেজ-১ এ ৫ লাখ ২৭ হাজার ৩৪০ এবং প্যাকেজ-২ এ ৪ লাখ ৬২ হাজার ১৫০ টাকা খরচ নির্ধারণ করা হয়েছিল। সে হিসেবে চলতি বছর হজের খরচ বেড়েছে ১ লাখ ৬১ হাজার ৮৬৮ টাকা বেড়েছে।
এর মধ্যে একজন হজযাত্রীকে শুধু বিমান ভাড়াই ৫৮ হাজার টাকা অতিরিক্ত গুনতে হচ্ছে, যা গতবারের বিমান ভাড়ার চেয়ে প্রায় ৩০ শতাংশ বেশি। এবার একজন হজযাত্রীর ঢাকা-সৌদি-ঢাকা রুটে বিমান ভাড়া লাগবে এক লাখ ৯৮ হাজার টাকা। যা এক বছর আগে ছিল এক লাখ ৪০ হাজার টাকা।
অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশের (আটাব) দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ৭ বছরে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স হজের ফ্লাইট ভাড়া প্রায় ৮০ শতাংশ বাড়িয়েছে। ২০১৭ সালে এই ভাড়া ছিল ১ লাখ ১৮ হাজার ৭৩৭ টাকা, ২০১৮ সালে ১ লাখ ২৮ হাজার টাকা, ২০১৯ সালে ১ লাখ ২৮ হাজার, ২০২০ সালে ১ লাখ ৩৮ হাজার টাকা বাড়ানো হয়। করোনা পরিস্থিতির কারণে ২০২১ সালে হজ গমন বন্ধ ছিল। ২০২২ সালে ছিল ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা। আর চলতি বছরের জন্য হজযাত্রীর ফ্লাইট ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৯৮ হাজার টাকা।
অবশ্য হজের খরচ বৃদ্ধির দায় সৌদি মুদ্রা ‘রিয়াল’ এর ওপর চাপাচ্ছে মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (হজ) মহিতুল ইসলাম বলেন, রিয়ালের বিনিময় হার বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে এবার হজ প্যাকেজের মূল্য বেড়েছে। ২০২২ সালের হজ প্যাকেজে রিয়ালের বিনিময় হার ধরা হয়েছিল ২৪ টাকা ৩০ পয়সা। এবার হজ প্যাকেজে রিয়ালের বিনিময় হার ধরা হয়েছে ২৮ টাকা ৩৯ পয়সা। এতে গতবারের তুলনায় বেড়েছে প্রায় ৬৪ হাজার টাকা। সৌদি সরকার হজের ব্যয় এবার কমিয়েছে। মিনার তাঁবু ভাড়া কমিয়েছে। শুধু জমজম পানির দাম ১২ রিয়ালের স্থলে এবার ৩ রিয়াল বাড়িয়ে ১৫ রিয়াল করেছে।
২০২২ সালে রোড টু মক্কা ইনিশিয়েটিভের অধীনে হাজীদের ল্যাগেজ পরিবহনে ব্যয় ধরা হয়নি। এবার হাজীদের ল্যাগেজ পরিবহনে ২০ দশমিক ৭০ রিয়াল ব্যয় ধরা হয়েছে।
হজযাত্রীদের বিমান ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়ে মহিতুল ইসলাম বলেন, বিমান ভাড়ার বিষয়টি আমাদের এখতিয়ারের বাইরে। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় হাজীদের বিমান ভাড়া নির্ধারণ করে। সেখানে আমাদের করার কিছু থাকে না।
খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় এবার অনেকেই দ্বিধাদ্বন্দ্বের মধ্যে আছেন। অনেকেই হজে না গিয়ে ওমরায় যাওয়ার চিন্তাভাবনা করছেন। অন্য দেশের তুলনায় আমাদের দেশের ফ্লাইট ভাড়া বেশি বাড়ানো হয়েছে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ ভাড়া। সরকার যদি বিষয়টা বিবেচনা করে খরচ কিছুটা কমিয়ে দেয় তবে অনেকেই হজে যাওয়ার আগ্রহ ফিরে পাবে।
এদিকে হজের অতিরিক্ত খরচের কারণে প্রাক-নিবন্ধন বাতিল করে ওমরা পালনের পরিকল্পনা করছেন অনেকে। কয়েকটি হজ এজেন্সির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হজের খরচ বেশি হওয়ার কারণে অনেকেই ২-৩ বছর আগে করা প্রাক-নিবন্ধন বাতিল করছেন। এর একটা বড় অংশ ওমরাহ পালন করছেন। যেখানে বছরে সোয়া লাখের মতো ওমরাহ পালন করেছেন, সেখানে এবার ওমরাহ পালন করছেন আড়াই লাখেরও বেশি। যার একটা বড় অংশ হজ নিবন্ধন বাতিল থেকে করা।
এ বিষয়ে দেশ-বিদেশ হজ এজেন্সির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এহসানুল হক ঢাকা মেইলকে বলেন, হজের খরচ বৃদ্ধির কারণে এবার হজের নিবন্ধন অনেক কমে গেছে। আমাদের আগে থেকে যেসব প্রাক-নিবন্ধন করা ছিল তার অর্ধেকও নিবন্ধন পরিপূর্ণ করছেন না। এর মূল কারণ, যারা তিন-চার বছর আগে হজের প্রাক-নিবন্ধন করেছিলেন তখন হজের খরচ ছিল চার লাখেরও কম। এখন খরচ হচ্ছে প্রায় সাত লাখ টাকা। বিমান ভাড়া বেড়েছে। রিয়ালের দাম বেড়েছে। সবমিলে অনেক বড় একটা অংশ হজ করা থেকে বিরত থাকতেছেন।
হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশনের বাংলাদেশের (হাব) মহাসচিব ফারুক আহমেদ সরদার বলেন, এ বিষয়ে আমরা বারবার বলে আসছি। ঘুরেফিরে একই কারণ। বিমান ভাড়ার কারণে খরচ বেড়েছে। ডলারের দামের একটা প্রভাব পড়েছে। দুই বছর আগে যাদের প্রাক-নিবন্ধন করা ছিল এখন খরচ বাড়ার কারণে সেটা তাদের টার্গেটের বাইরে চলে গেছে। বিমান ভাড়া আগের থেকেই অনেক বাড়তি। গতবার যে বিমান ভাড়া ছিল সেটার থেকে ৫৮ হাজার টাকা বেড়েছে। এটা হজের খরচের ওপর অনেক প্রভাব ফেলেছে। যদি বিমান ভাড়া কমানো হয় তবে হজের খরচও কিছুটা কমবে। এতে স্বাভাবিকভাবেই হজযাত্রীদের ওপর চাপ কমবে। মানুষের হজের আগ্রহ বাড়বে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।