মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
আগামীকাল বৃহস্পতিবার ঘোষিত হবে ভারতের লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল। তার আগে ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দুই রাজনৈতিক দলেই দেখা যাচ্ছে দুই বিপরীতমুখী প্রতিক্রিয়া। বিজেপি কর্মীরা প্রস্তুতি নিচ্ছেন ফলাফল ঘোষণার পর রাজধানী দিল্লিতে জমকালো উদযাপনের। অপরদিকে বিরোধী শিবিরে পুরোপুরি নিরবতা বিরাজ করছে। গত ১৫ বছরের ইতিহাসে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভুল হয়েছে বলে দলের শীর্ষ নেতারা এক্সিট পোলের ফল প্রত্যাখান করলেও কর্মীদের মধ্যে তেমন কোন সাড়া দেখা যাচ্ছে না। এদিকে, ভিভিপ্যাটের কাগজের স্লিপের সঙ্গে ইভিএম তথ্যে কোনও গরমিল পাওয়া গেলে সেই আসনের সমস্ত ভিভিপ্যাটের সঙ্গে ইভিএমের তথ্য মিলিয়ে দেখতে হবে। এই দাবি নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার ফের নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হল বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি। বিরোধীদের এই প্রতিনিধিদলে হাজির ছিলেন কংগ্রেস, তৃণমূল, আম আদমি পার্টি, তেলগু দেশম, ন্যাশনাল কনফারেন্সসহ ২২টি বিরোধী রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা।
মঙ্গলবার সকাল থেকেই ইভিএম নিয়ে সরগরম ছিল ভারতের রাজনীতি। উত্তরপ্রদেশের বেশ কয়েকটি জায়গায় স্ট্রং রুমে সন্দেহজনক গতিবিধির ভিডিও ফুটেজ সামনে আসার পর পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়। উত্তরপ্রদেশে সমাজবাদী পার্টি এবং বহুজন সমাজ পার্টির কর্মী-সমর্থকেরা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখাতেও শুরু করেন। দেশের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখোপাধ্যায়-ও ইভিএম কারচুপির ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তবে ইভিএম কারচুপির এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দেয় নির্বাচন কমিশন। একই সঙ্গে কোথাও কোনও গাফিলতি থাকলে দোষী ব্যক্তিকে শাস্তি দেয়া হবে বলে সবাইকে আশ্বস্ত করে তারা।
এরই মধ্যে নয়াদিল্লির কনস্টিটিউশন ক্লাবে চন্দ্রবাবু নায়ডুর উদ্যোগে জরুরি বৈঠকে বসে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি। সেই বৈঠকে অংশ নিয়েছিলেন কংগ্রেস নেতা গুলাম নবি আজাদ, অশোক গহলৌত এবং অভিষেক মনু সাঙ্ঘভি, ডিএমকে নেত্রী কানিমোঝি, তৃণমূল নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন এবং আম আদমি পার্টির নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়াল, বহুজন সমাজ পার্টির নেতা দানিস আলিসহ আরও অনেকে। এরপরই ২২টি বিরোধী দলের প্রতিনিধিরা যান নির্বাচন কমিশনে। নির্বাচন কমিশনে গিয়ে তারা বলেন, ভিভিপ্যাটের কাগজের সিøপের সঙ্গে ইভিএম তথ্যে কোনও গরমিল পাওয়া গেলে সেই আসনের সমস্ত ভিভিপ্যাটের সঙ্গে ইভিএমের তথ্য মিলিয়ে দেখতে হবে। একই সঙ্গে তাদের দাবি, যে পাঁচটি বুথের ক্ষেত্রে ভিভিপ্যাটের স্লিপ এবং ইভিএম মিলিয়ে দেখার কথা বলেছে নির্বাচন কমিশন, সেই পাঁচটি বুথ গণনার আগেই বাছাই করে ফেলতে হবে। নির্বাচন কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী শেষ রাউন্ডের ভোটের পরই এই পাঁচটি বুথকে লটারির ভিত্তিতে চিহ্নিত করার কথা।
নির্বাচন কমিশনে নিজেদের বক্তব্য জানানোর পর কংগ্রেস নেতা গুলাম নবি আজাদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘বুধবার সকালে আমাদের সঙ্গে ফের কথা বলার জন্য সময় চেয়েছে নির্বাচন কমিশন।’ একই সঙ্গে তিনি জানান, কংগ্রেস বা অন্য কাউকে ভোট দিলেও সেই ভোট বিজেপির খাতায় জমা হচ্ছে, এই ধরনের ঘটনা আটকাতেই ব্যবস্থা নিচ্ছেন তারা।
বুথ ফেরত সমীক্ষার ফল নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তিনটি কারণ চিহ্নিত করেছেন। এর মধ্যে প্রধান কারণ- এই ধরনের সমীক্ষার ফল প্রকাশ করে দেশজুড়ে একটা হুজুগ তৈরি করা এবং এর মধ্য দিয়ে মানুষর মধ্যে বিশ্বাস তৈরি যে বিজেপি জিতেছে সেই সুযোগ ইভিএম মেশিন পাল্টে দেবে বিজেপি। দ্বিতীয় কারণ হলো, বিজেপিবিরোধী জোটের মনোবল ভাঙতে বিজেপির একটা চূড়ান্ত কৌশল এবং শেষ কারণ হচ্ছে, শেয়ারবাজার থেকে টাকা তুলে নেয়া। বিজেপির পক্ষে এই সমীক্ষার ফল প্রকাশ করলে শেয়ারবাজার চাঙ্গা হবে এবং মানুষ আবার বিনিয়োগ করবেন আর সেই বিনিয়োগের টাকা তুলে নেবে বিজেপি। বুথ ফেরত সমীক্ষার ফলাফল নিয়ে কলকাতার গণমাধ্যমের কাছে এমন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সভানেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এর আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের টুইট বার্তায় বলেছেন, এই বুথ ফের সমীক্ষা গুঞ্জন ছাড়া কিছুই নয়। বিরোধীদের ভাঙতে এই ধরণের গালগল্প ছড়ানো হচ্ছে।
এক্সিট পোলের উপরে বিরোধীদের ভরসা না রাখার কারণ, ভারতের গত ১৫ বছরের নির্বাচনী ইতিহাসে বেশিরভাগ সময়েই ভুল প্রমাণিত হয়েছে এই জরিপ। ২০০৪ সালে লোকসভা নির্বাচনের পর প্রায় সমস্ত এক্সিট পোলই পূর্বাভাসে জানিয়েছিল অটলবিহারী বাজপেয়ীর নেতৃত্বে ক্ষমতায় আসছে এনডিএ। বিজেপি ২৩০ থেকে ২৭৫ আসন পাবে বলে জানিয়েছিল সমীক্ষা রিপোর্ট। কিন্তু শেষপর্যন্ত এনডিএ থমকে যায় ১৮১-তে। কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউপিএ পায় ২১৮টি আসন। বুথ ফেরত সমীক্ষাকে ভুল প্রমাণ করে বামেদের সমর্থনে সরকার গঠন করে ইউপিএ। ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচন ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে এক্সিট পোল জানিয়েছিল ইউপিএ ১৮৫ থেকে ২০৫ আসন পেতে পারে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় একেবারে অন্য চিত্র। ইউপিএ এক্সিট পোলের থেকে অনেক বেশি আসন নিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল। ২০০৯-এ ইউপিএ পেয়েছিল ২৬২টি আসন। ২০১১-র অসম বিধানসভা নির্বাচন শেষে প্রায় সব এক্সিট পোল জানিয়েছিল আসামে কংগ্রেস সর্বোচ্চ ৪৬ আসন পেতে পারে বলে। কিন্তু বাস্তবে দেখা গিয়েছিল কংগ্রেস ৭৮টি আসন পেয়ে ক্ষমতা ধরে রাখতে সমর্থ হয়। ২০১২ সালের পাঞ্জাব বিধানসভা নির্বাচন বেশিরভাগ বুথ ফেরত সমীক্ষা কংগ্রেসের জয়ের প‚র্বাভাস দিলেও, ২০১২ সালের পাঞ্জাব বিধানসভা নির্বাচনে ৬৮ আসন পেয়ে ক্ষমতা দখল করে বিজেপি ও আকালি দলের জোট। সমীক্ষা বলেছিল, ৬০ থেকে ৬৮টি আসন নিয়ে ক্ষমতায় ফিরবে কংগ্রেস। কিন্তু সেই সমীক্ষাকে উল্টে দিয়ে বিজেপি-আকালি জোট ৬৮ আসন দখল করে। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচন ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের পর সমস্ত বুথ ফেরত সমীক্ষা জানিয়েছিল বিজেপি নেতৃত্ব ক্ষমতায় আসছে এনডিএ। তা-ই হয়েছিল। কিন্তু আসন নিয়ে ছিল বিস্তর ফারাক। এনডিএ ৩০০ আসন পেতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছিল সমীক্ষা। কিন্তু এনডিএ পায় ৩৩৪ আসন। কংগ্রেস পেতে পারে ৮০ থেকে ১০০ আসন। কিন্তু তারা পায় মাত্র ৪৪টি। ২০১৫ সালের বিহার বিধানসভা নির্বাচনের পর প্রায় সমস্ত এক্সিট পোল প‚র্বাভাস দেয় বিজেপি ক্ষমতায় ফিরছে। কিন্তু সম্প‚র্ণ বিপরীত ফল হয় নির্বাচনে। নীতীশ কুমারের জেডিইউ, লালুপ্রসাদের আরজেডি ও কংগ্রেসের জোট ১৭৮টি আসন পেয়ে সরকার গঠন করে। বিজেপি একেবারে ধরাশায়ী হয়। ২০১৫ সালের দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনের পর বেশির ভাগ বুথ ফেরত সমীক্ষা জানিয়েছিল, আম আদমি পার্টিই ক্ষমতায় আসবে, কিন্তু তাদের আসন থাকবে ম্যাজিক ফিগারের আশেপাশে। আপ বড়ঝোর ৩৫-৪৫টি আসন পেতে পারে বলে জানানো হয় প‚র্বাভাসে। কিন্তু শেষপর্যন্ত ৬৭ আসন পেয়ে ক্ষমতা দখল করে আপ। ২০১৬ সালের তামিলনাড়ু বিধানসভা নির্বাচনে এক্সিট পোল জানায়, ডিএমকে-কংগ্রেস জোট ক্ষমতায় ফিরছে। কিন্তু সেই আভাস উল্টে দিয়ে ক্ষমতায় ফেরেন জয়ললিতা। এআইএডিএমকে ১৩৪ আসন নিয়ে দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় ফেরে। ২০১৬ সালের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে এক্সিট পোল জানায় তৃণমূল ক্ষমতা হারাতে পারে। তারা ১২৫ থেকে ১৬৩টি আসন পেতে পারে। সেই প‚র্বাভাসকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে তৃণমূল পায় ২১১টি আসন, কংগ্রেস ৪৪টি এবং বামফ্রন্ট ২৬টি আসন পায়। ২০১৮ সালের ছত্তিশগড় বিধানসভা নির্বাচন ২০১৮ সালে রাজস্থান-মধ্যপ্রদেশ-ছত্তিশগড় বিধানসভা নির্বাচনের পর রাজস্থান ও মধ্যপ্রদেশের বুথ ফেরত সমীক্ষা মিললেও, ছত্তিশগড়ের সমীক্ষায় ডাহা ফেল সমীক্ষক সংস্থাগুলি। ছত্তিশগড়ে কংগ্রেস ৩৫টি ও বিজেপি ৫২টি আসন পেতে পারে জানিয়েছিল সমীক্ষা। দেখা যায় ছত্তিশগড় পুরো উল্টো ফল। কংগ্রেস ৬৩টি আসন পেয়ে ক্ষমতা লাভ করে। বিজেপি জয় লাভ করে ১৮ আসনে। ২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল ২৪টি আসন পেতে পারে বলে জানিয়েছিল এবিপি-সিএসডিএস এর যৌথ সমীক্ষা। এই সমীক্ষা বামফ্রন্টকে ১২টি, কংগ্রেসকে ৫টি এবং বিজেপিকে ১টি আসন দিয়েছিল। ফলাফল ঘোষণার পর দেখা যায় তৃণমূল ৩৪টি, কংগ্রেস ৪টি, সিপিএম ২টি এবং বিজেপি ২টি আসন পায়।
তবে বুথ ফেরত সমীক্ষা ভুল প্রমাণিত হওয়ার যেমন প্রমাণ আছে ভুরিভুরি, তেমনই অনেকক্ষেত্রে এক্সিট পোল পুরোপুরি মিলিয়ে দেওয়ারও নজির রয়েছে। যেমন মহারাষ্ট্র, হরিয়ানা, গুজরাত ও ঝাড়খন্ড বুথ ফেরত সমীক্ষা মিলিয়ে বিজেপি জয়ী হয়েছে। জম্মু-কাশ্মীরের ত্রিশঙ্কু ফলও মিলিয়ে দিয়েছে সমীক্ষা। ২০১৮-তেও মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থানের বুথ ফেরত সমীক্ষার সঙ্গে ফলের মিল ছিল। সূত্র: টিওআই, ইন্ডিয়া টুডে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।