মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ভারতে এবারের লোকসভা নির্বাচনের বুথফেরত জরিপে আবারও বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোটের ক্ষমতায় আসার আভাস পাওয়া গেছে। তবে এই বুথফেরত জরিপ আমলে নিতে রাজি নন দেশটির বিরোধী দলীয় নেতারা। বরং তারা নিজেদের সংঘবদ্ধ করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। ভারতে এক্সিট পোলের রেকর্ড বরাবরই মিশ্র। ১৯৯৬ থেকে ১৯৯৯ এক্সিট পোল মোটামুটিভাবে বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকারকে এগিয়ে রাখলেও ২০০৪ সালে তারা ব্যর্থ হয়। ‘ইন্ডিয়া শাইনিং’ প্রচার সত্তে¡ও ক্ষমতা দখল করে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ। ২০০৯ সালের ভোটেও চ‚ড়ান্ত ব্যর্থ হন বুথ ফেরত সমীক্ষকেরা। মনমোহন সিং সরকার দ্বিতীয়বার ক্ষমতাসীন হয়। এবার সমীক্ষকেরা যে নির্ভুল, ২৩ তারিখের আগে তা নিশ্চিত করে বলা যাবে না।
বিভিন্ন জরিপের ফলাফলকে গড় করে সম্প্রচারমাধ্যম এনডিটিভি বলছে, ২৩ তারিখ ঘোষিত ফলাফলে ২৯৮টি আসন পেতে যাচ্ছে বিজেপি জোট। তবে এই ফল উড়িয়ে দিয়ে ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস বলেছে, সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে। কংগ্রেসের মুখপাত্র রাজীব গৌড়া বলেছেন, ‘দয়া করে ২৩ মে পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। আমরা আপনাদের সারপ্রাইজ দেবো। আসন বন্টনে পুরো ভোট একটি জটিল বিষয়। দেশের ভিতর কিছু মনোব্যাধি আছে। তাতে মানুষের মতামতের প্রকাশ ঘটে না।’
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘আমি বুথফেরত জরিপের রটনায় বিশ্বাস করি না। এটা একটা গেম প্ল্যান, যাতে এই রটনার মাধ্যমে হাজার হাজার ইভিএম বদলে দেওয়া যায়। আমি সব বিরোধী দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আবেদন জানাচ্ছি। শক্তিশালী থাকুন। আমরা সবাই একসঙ্গে লড়াই করবো।’ পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী অমরিন্দর সিংও বুথফেরত জরিপ প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন এর সত্যতা প্রশ্নবিদ্ধ। তবে কংগেসমিত্র ও ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ওমর আব্দুল্লাহ বলেন, সবগুলো বুধফেরত জরিপ ভুল হতে পারে না। তিনি বলেন, ‘এখন টিভি বন্ধ করে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে বের হয়ে ২৩ তারিখের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।’
অন্যদিকে নির্বাচনে বুথফেরত জরিপই সব নয় বলে মন্তব্য করেছেন ভারতের উপ-রাষ্ট্রপতি ভেনকাইয়াহ নাইডু। তিনি বলেন, ‘আমাদের মনে রাখতে হবে ১৯৯৯ সালের পর থেকে সবগুলো বুথফেরত জরিপের ফলাফলই ভুল এসেছে। এটি প্রকৃত অর্থ বহন করে না।’
জরিপের ফল পাত্তা না দিয়ে বিজেপি’র বিরোধীরা জোট গঠনের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। গতকাল সোমবার অন্ধ্রপদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডু কলকাতায় বৈঠক করেছেন মমতার সাথে। তার আগে উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদব ফোন করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। নির্বাচনোত্তর পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন দুজন। সূত্রের খবর, দুজনের মধ্যে যে কথা হয়েছে তাতে এক্সিট পোলকে গুরুত্ব দিতে রাজি নন কেউই। পুরোটাই বিজেপির চক্রান্ত বলে মনে করছেন অখিলেশ ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দুজনেই।
এক্সিট পোল অনুযায়ী বিজেপি ও তার জোট সবচেয়ে বেশি ৩০৬ এবং সবচেয়ে কম ২৬৭ আসন পেতে যাচ্ছে। গতবার এই সংখ্যাটি ছিল ৩৩৬। স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছে, আগেরবারের মতো ততটা ভালো বিজেপি ও তার জোটসঙ্গীরা করতে পারেনি। আবার ২০১৪ সালে কংগ্রেস ও জোটসঙ্গীরা পেয়েছিল ৫৯টি আসন। এবার এই জোটের সবচেয়ে কম প্রাপ্তি ১২৭, সবচেয়ে বেশি ১৪১। এর অর্থ, বিজেপি গতবারের মতো ভালো না করলেও সরকার গড়ার মতো গরিষ্ঠতা পেতে চলেছে। অন্য দিকে কংগ্রেসসহ বিরোধীরা আগেরবারের চেয়ে অনেক ভালো করলেও সরকার গড়ার মতো ততটা ভালো করতে পারেনি। জরিপের বিশ্লেষণ ঠিক হলে বলা যায়, হিন্দি বলয়ে যতটা ভালো করবে বলে বিরোধীরা মনে করেছিল, ততটা হয়নি। একমাত্র উত্তর প্রদেশে সমাজবাদী ও বহুজন সমাজ পার্টি জোটবদ্ধ হয়ে মোদির রথ রোখার চেষ্টা করেছে। কংগ্রেস শাসিত তিন রাজ্য মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড় ও রাজস্থানে জরিপ অনুযায়ী ফল হলে এটা স্পষ্ট, রাজ্যে কংগ্রেসকে ভোট দিলেও কেন্দ্রে তারা মোদির ওপর ভরসা রাখতে চেয়েছে। বিরোধীদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কারও না থাকাও একটা বড় বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তা ছাড়া, পুলওয়ামা-বালাকোট-পাকিস্তানকে কেন্দ্র করে মোদি প্রচার পর্বে দেশের নিরাপত্তাকে যেভাবে তুলে ধরেছেন, মানুষ তাতে প্রভাবিত হয়েছে।
এই প্রথম ভারতের লোকসভা ভোট হলো এমন একমুখী। মোদির পক্ষে-বিপক্ষে গণভোটের রূপ নিয়েছিল এবারে ভোট। বুথ ফেরত জরিপ সত্য হলে বলা যায়, সেই গণভোটের রায় মোদির পক্ষে গেছে। কারও একক ক্ষমতায় এই ভাবে পরপর দুবার সরকার গড়তে পারলে সেটা ইতিহাস হবে। কিন্তু তবুও দেশবাসীকে শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করতেই হবে। সমীক্ষা যাই হোক, তা মূল ফল নয়। তা ছাড়া কথায় আছে, কাপ ও ঠোঁটের মধ্যবর্তী ফাঁক দিয়ে অনেক সময় চা ছলকে পড়ে। রোববারই সব আগাম জরিপের ফল ভুল প্রমাণ করে অস্ট্রেলিয়ায় আবার ক্ষমতায় এসেছে শাসক জোট। সূত্র: এনডিটিভি, টিওআই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।