Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

যে সমীকরণে হেরে যেতে পারেন মোদি

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৫ মে, ২০১৯, ৭:৪৪ পিএম

ভারতে সাধারণ নির্বাচনের শেষ পর্বে এসে এই ধারণা ক্রমেই জোরালো হয়ে উঠছে যে বিজেপি দেশে টানা দ্বিতীয়বার সরকার গড়তে পারবে কি না তা এখন অনেকটাই নির্ভর করছে উত্তরপ্রদেশের ওপর।

ভারতের সবচেয়ে জনবহুল এই রাজ্যটিতেই সর্বাধিক, ৮০টি লোকসভা আসন আছে - আর গত নির্বাচনে তার মধ্যে ৭৩টিই পেয়েছিল বিজেপি ও তার সঙ্গীরা।

কিন্তু এবারে সে রাজ্যের পরিবর্তিত রাজনৈতিক সমীকরণে বিজেপি তার মধ্যে কতটুকু ধরে রাখতে পারবে তা নিয়ে পর্যবেক্ষকরা রীতিমতো সন্দিহান।

কিন্তু কেন এই উত্তরপ্রদেশেই ভারতে লোকসভা নির্বাচনের 'উত্তর' লুকিয়ে আছে বলে মনে করা হচ্ছে?

আসলে ভারতে সরকার গঠনের জন্য কোনো দল বা জোটের কমপক্ষে ২৭২টি আসন দরকার পড়ে, আর ২০১৪তে তার মধ্যে একা উত্তরপ্রদেশই বিজেপিকে দিয়েছিল ৭২রও বেশি এমপি।

তবে সেবারে ওই রাজ্যে বিজেপি বিরোধী ভোট অন্তত তিনভাগে ভাগ হয়েছিল, এবারে নির্বাচনী পাটিগণিতের যে সুবিধাটা বিজেপি মোটেই পাচ্ছে না।

দিল্লিতে রাজনৈতিক বিশ্লেষক সোমা চৌধুরী বিবিসিকে বলছিলেন, "বিজেপি সরকার গড়তে পারবে কি না সেই হেস্তনেস্ত কিন্তু উত্তরপ্রদেশেই হয়ে যাবে।"

"সমাজবাদী আর বহুজন সমাজ পার্টি মিলে সেখানে ঐক্যজোট করাতে বিজেপি অন্তত গোটা তিরিশেক আসন হারাতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে, আর সেটা হলে কেন্দ্রে তাদের নিরঙ্কুশ গরিষ্ঠতার স্বপ্ন বড় ধাক্কা খাবে।"

"সহজ রাজনৈতিক বাস্তবতাই বলে দিচ্ছে বিজেপি কিন্তু উত্তর প্রদেশে মোটেই স্বস্তিতে নেই।"

তার ওপর গোটা রাজ্য জুড়ে গত দুমাস ধরে চষে বেড়াচ্ছেন কংগ্রেসের নতুন তারকা প্রিয়াঙ্কা গান্ধী।

বিজেপি যে কৃষক-দলিত-যুবসমাজ সবার সঙ্গে প্রতারণার রাজনীতি করেছে সে কথা একের পর এক জনসভায় বলছেন তিনি।

আর তাতে কংগ্রেসের আসন বিশেষ না বাড়ুক, বিজেপি থেকে উচ্চবর্ণের হিন্দু ব্রাহ্মণ ভোট বেশ কিছুটা সরে যেতে পারে বলেই মনে করা হচ্ছে।

তবে বিজেপির জন্য অবশ্যই সবচেয়ে দুশ্চিন্তার কারণ পুরনো শত্রুতা ভুলে অখিলেশ যাদব ও মায়াবতীর হাত মেলানো।

অখিলেশ যাদব বারে বারেই বলছেন, 'বিজেপির অহঙ্কার ভাঙার জন্যই' তাদের দুই দল সমঝোতা করেছে। এই জোট গড়ার জন্য তিনি দু-পা পিছোতেও রাজি ছিলেন বলে জানাচ্ছেন।

আর ২০১৪তে একটিও আসন না-পাওয়া বহুজন সমাজ পার্টির নেত্রী মায়াবতীও রীতিমতো আত্মবিশ্বাসী, "আমাদের জোট বিজেপিকে এবার হারানোর ক্ষমতা রাখে।"

ফলে খুব স্বাভাবিকভাবেই উত্তরপ্রদেশে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জনসভাগুলোতেও তার আক্রমণের প্রধান নিশানা এই জোট।

মায়াবতী-অখিলেশের জোটকে 'বুয়া-বাবুয়ার জোট' বলে কটাক্ষ করে তিনি বলছেন, "দেখবেন ২৩ মে ভোট গণনার দিনেই এই জাল দোস্তি ভেঙে যাবে আর বুয়া-বাবুয়া একে অন্যের শত্রুতায় নেমে পড়বেন!"

সোমা চৌধুরী আবার বলছিলেন, ২০১৪তে উত্তরপ্রদেশে বিজেপির সাফল্যের রহস্য ছিল এমন এক সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং - যাতে সব ধর্ম-বর্ণ-জাতের ভোটই তারা বেশ কিছুটা পেয়েছিল, মানুষ ভোট দিয়েছিল নতুন আশায় ভর করে।

"কিন্তু এবারে নরেন্দ্র মোদি তার পুনরাবৃত্তি ঘটাতে পারছেন না। দলিত ও যাদব ভোট তারা পাচ্ছে না, ব্রাহ্মণ ভোট কমছে।"

"এমন কী গতবার যে কিছু মুসলিম ভোট বিজেপি পেয়েছিল সেটাও পাওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই।"

"হ্যাঁ, কিছু নবীন ভোটার হয়তো মোদির মাস্কুলার ক্যাম্পেনে ভরসা রাখবেন - কিন্তু আপাতদৃষ্টিতে বিজেপির গতবারের ভোটারদের বেশির ভাগেরই তাদের ছেড়ে যাওয়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে", বলছিলেন চৌধুরী।

পাঁচ বছর আগেই নিজের রাজ্য গুজরাট ছেড়ে নিজেকে উত্তরপ্রদেশের এমপি হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদি।

তার রাজনীতিতে পূর্ব উত্তরপ্রদেশে নিজের সংসদীয় কেন্দ্র বারানসি ও গঙ্গা নদীর ভূমিকাও বিরাট।

বারাণসী হয়তো তাকে এবারও নিরাশ করবে না, কিন্তু বাকি উত্তরপ্রদেশের জটিল নির্বাচনী কেমিস্ট্রির ওপরই নির্ভর করছে নরেন্দ্র মোদির রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ।
সূত্র : বিবিসি

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ