Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মালয়েশিয়ায় অবৈধ শ্রমিকদের বৈধতার বিষয়টি আগে দেখতে হবে

| প্রকাশের সময় : ১৩ মে, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

বিশ্বে বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজার মালয়েশিয়ায় লোক নিয়োগ প্রায় ৮ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে। দেশটিতে নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর আগের কর্মী নিয়োগে পদ্ধতি বাতিল করায় বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক পাঠানো বন্ধ রয়েছে। আগে দশটি রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানো হতো। এ প্রক্রিয়ায় নানা ধরনের অনিয়মের অভিযোগে মালয়েশিয়া সরকার নিয়োগ বন্ধ করে দয়ে। জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বায়রা মনে করছে, সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে মালয়েশিয়া সরকারের সঙ্গে আলোচনা না করলে বড় এই শ্রমবাজারটি সহসা খুলবে না। এদিকে আগামী ১৪ মে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ইমরান আহমদের নেতৃত্বে সরকারের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের একটি প্রতিনিধি দল মালয়েশিয়া সফর করবে। সফরের উদ্দেশ্য বন্ধ শ্রমবাজার খোলার বিষয়ে মালয়েশিয়া সরকারের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠক করা। অন্যদিকে মালয়েশিয়ায় অবৈধভাবে অবস্থানরত শ্রমিক এবং অভিবাসীদের দাবী সরকারের প্রতিনিধি দল সফরকালে নতুন শ্রমিক নিয়োগের আগে তাদের বৈধতার বিষয়টি মালয়েশিয়া সরকারের সাথে আলাপ করে সুরাহা করতে। সেখানে অবস্থানরত অবৈধ বাংলাদেশি শ্রমিকরা খুবই দুঃখ-দুর্দশা এবং পুলিশি হয়রানি ও গ্রেফতার আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে।
বিগত প্রায় এক দশক ধরে দেশে জনশক্তি রপ্তানি ক্রমেই হ্রাস পেয়েছে। এখনো এ ধারা অব্যাহত রয়েছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৮ সালে বৈধভাবে বাংলাদেশ থেকে ৭ লাখ ৩৪ হাজার ১৮১ জন কর্মী বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গিয়েছে। তার আগের বছর গিয়েছিল ১০ লাখ ৮ হাজার ৫২৫ জন। গত বছর প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) জনশক্তি রপ্তানি হয়েছিল ২ লাখ ৪ হাজার ২০১ জন। এ বছর তা কমে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৬৩ হাজার ৬৯৯ জন। দেখা যাচ্ছে, দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম প্রধান খান জনশক্তি রপ্তানি দিন দিন ঋণাত্বক দিকে ধাবিত হচ্ছে। এর অন্যতম কারণ কিছু রিক্রুটিং এজেন্সি কর্তৃক নানা অনিয়ম দুর্নীতি ও যথাযথ অনুমতি না নিয়ে বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমর্যাদা ক্ষুন্ন করা। এছাড়া সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়েরও এসব ব্যাপারে উদাসীনতা এবং গাফিলতি রয়েছে। বাংলাদেশের জনশক্তির রপ্তানির শতকরা ৮০ ভাগ যায় মধ্যপ্রাচ্যে। সউদী আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মালয়েশিয়া বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার। সউদীতে বেকারত্বের হার বৃদ্ধি, আরব আমিরাতে নানা সীমাবদ্ধতা এবং মালয়েশিয়ায় অনিয়ম আর দুর্নীতির কারণে জনশক্তি রপ্তানি কমে এসেছে। মালয়েশিয় গত সেপ্টেম্বরের পর থেকে নতুন করে আর ভিসা দেয়নি। বন্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত গত বছর দেশটিতে গিয়েছিল ১ লাখ ৭৫ হাজার ৯২৭ জন। এদের মধ্যে অনেকেরই বৈধ কাগজপত্র ছিল না কিংবা তা জোগাড় করতে সক্ষম হয়নি। এ সময় মালয়েশিয়ার সরকার দেশটিতে অবৈধ অভিাবাসী বিরোধী অভিযান চালায়। এতে অনেক বাংলাদেশি গ্রেফতার হয়, অনেকে দেশে ফেরত আসে। অনেকে বৈধ কাগজ ছাড়াই লুকিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেয়া বন্ধই করে দেয়। এই বন্ধ দুয়ার খুলতেই সরকারের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল মালয়েশিয়া সফর করছেন। বায়রার সভাপতি বেনজীয়র আহমেদ বলেছেন, আমরা যতটুকু আভাস পেয়েছিলাম যে মালয়েশিয়া সরকার অপেক্ষা করছিল আমাদের কোন মন্ত্রী সেখানে গিয়ে তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন্ এখন প্রতিমন্ত্রী মালয়েশিয়া সফরে যাচ্ছেন। মন্ত্রী পর্যায়ের এ বৈঠক হওয়া খুবই জরুরি। বৈঠকে আলোচনা করে ঠিক করা হবে কোন পদ্ধতিতে কর্মী পাঠানো হবে এবং বোঝা যাবে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার কবে নাগাদ খুলবে। উল্লেখ করা প্রয়োজন, বেশ কয়েক বছর আগে বাংলাদেশের সাথে মালয়েশিয়ার গভর্নমেন্ট টু গভর্নমেন্ট বা জি টু জি চুক্তি হয়। চুক্তির আওতায় বছরে প্রায় পাঁচ লাখ করে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর কথা। এ চুক্তির আওতায় শ্রমিক পাঠানো নিয়ে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। মালয়েশিয়ায় দেশের ভাবমর্যাদাও ক্ষুন্ন হয়। এর অনিবার্য ফলস্বরূপ শ্রমিক নেয়াই বন্ধ করে দেয় দেশটি।
মালয়েশিয়ায় শ্রমবাজার খুলুক এটা নিয়ে কারো দ্বিমত নেই। তবে ইতোমধ্যে দেশটিতে যেসব বাংলাদেশি শ্রমিক ও অভিবাসী বৈধ কাগজপত্র ছাড়া অবস্থান করছে এবং নানা হয়রানির শিকার হচ্ছে, তাদের ব্যাপারে সবার আগে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। প্রতিমন্ত্রীর নেতৃত্বে যে প্রতিনিধি দল মালয়েশিয়া যাচ্ছে তাদেরকে অবৈধভাবে অবস্থানকারীদের বৈধতার বিষয়টি নিয়ে মালয়েশিয়া সরকারের সাথে আলোচনা করতে হবে। কারণ যেভাবেই হোক অবৈধভাবে অবস্থানকারীরা সেখানে চলে গেছেন এবং অবস্থান করছেন। তাদের যদি দেশে ফেরত পাঠানো হয়, তবে তা দেশেরই ক্ষতি। বরং তাদের বৈধভাবে মালয়েশিয়া অবস্থানের বিষয়টি নিশ্চিতের মাধ্যমে নতুন করে শ্রমিক পাঠানোর বিষয়টি সুরাহা করতে পারলেই প্রতিনিধি দলের মূল সাফল্য হিসেবে বিবেচিত হবে। আমরা আশা করব, মালয়েশিয়ায় অবৈধভাবে অবস্থানরত বাংলাদেশি শ্রমিক-কর্মীদের বিষয়টি সরকারের প্রতিনিধি দল সমাধানে উদ্যোগ নেবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মালয়েশিয়া

৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন