Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পর্ক ভাঙলেই প্রতিহিংসায় আইনকে ব্যবহার করা হয়

ভারতে হাইকোর্টের অভিমত

টাইমস অব ইন্ডিয়া | প্রকাশের সময় : ১১ মে, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

২০১৩ সালে গোয়ায় এক ক্যাসিনোর দুই নারী ও পুরুষ কর্মচারি পরিচয় থেকে ভালোবাসায় জড়িয়ে পড়ে। পুরুষ যোগেশ পালেকর ক্যাসিনোর শেফ। একদিন সে তার প্রেমিকাকে বাড়িতে নিয়ে যায় তার বাবা-মার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়ার কথা বলে।
আসলে সেদিন তার বাবা-মা অন্য এক শহরে গিয়েছিলেন বেড়াতে। মেয়েটি প্রেমিকের বাড়িতে রাত কাটায়। তারপর বেশ কয়েকবার তাদের মধ্যে দৈহিক সম্পর্ক হয়। কয়েকদিন পরই মেয়েটি বিয়ের জন্য চাপ দিলে প্রেমিক জানায় যে মেয়েটি নীচু জাতের হওয়ায় তাকে বিয়ে করা তার পক্ষে সম্ভব নয়।
মেয়েটি তখন প্রেমিকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা দায়ের করে। তাতে মেয়েটি বলে যে পালেকর তাকে বিয়ে করার প্রতিশ্রুতি দেয়ার কারণেই সে তার সাথে দৈহিক সম্পর্ক স্থাপনে রাজি হয়েছিল। গত বছর বোম্বে হাইকোর্টের গোয়া বেঞ্চ পালেকরকে অভিযোগ থেকে মুক্তি দেন এই যুক্তিতে যে তাদের দুইজনের মধ্যে গভীর প্রেম ছিল।
২০১৭ সালের ঘটনা। বোম্বে হাইকোর্ট কুনাল মান্ডালিয়ার বিরুদ্ধে আনা ধর্ষণের অভিযোগ খারিজ করে দেন। তার বিরুদ্ধে ধর্ষণ ছাড়াও প্রতারণা, ভীতি প্রদর্শন ও মারধরের অভিযোগ ছিল। আদালত বলেন, অভিযুক্তের সাথে ২০১০ সাল থেকে অভিযোগকারিণীর সম্মতিক্রমে সম্পর্ক ছিল। তাদের মধ্যে সম্পর্ক তিক্ত হয়ে ওঠার পরই তিনি ধর্ষণের অভিযোগ আনেন। হাইকোর্টের রায়ে বলা হয়, প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষ সম্পূর্ণ জেনেবুঝেই যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হয় এবং তার দায় তাদেরই।
সম্মতিক্রমে যৌন সম্পর্কের বিষয়ে ভুল ধারণা বা ভুল ব্যাখ্যা যাই বলা হোক না কেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে হাইকোর্ট যেসব পুরুষ বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিয়ে করেনি তাদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ দায়েরের প্রবণতা লক্ষ্য করেছেন। হাইকোর্ট ও এমনকি সুপ্রিম কোর্টও বহু লোককে ধর্ষণের মামলা থেকে মুক্তি দিয়েছেন যেগুলোতে বিয়ে করার প্রতিশ্রুতি দিয়েও বিয়ে না করার অভিযোগ করেছে মহিলারা।
৩৪ বছর বয়স্কা এক নারী অভিনেত্রী পূজা বেদী অভিনেতা করণ ওবেরয়ের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ আনার পর পুলিশ তাকে গত ৬ মে গ্রেফতার করে। এ প্রেক্ষিতে বিষয়টি নতুন করে গুরুত্ব পেয়েছে এবং এ ধরনের ঘটনায় পুরুষের অধিকারের বিষয় নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে।
৬ বছর আগে এ ধরনের একটি পর্যবেক্ষণে বোম্বে হাইকোর্টের বিচারপতি সাধনা যাদব বিচারিক আদালত কর্তৃক ধর্ষণের দায়ে সাজাপ্রাপ্ত ৩৯ বছর বয়স্ক এক ব্যক্তিকে খালাস দেন। বিচারক রায়ে বলেন, যৌন সম্পর্কের ক্ষেত্রে যদি নারীর স্বেচ্ছা সম্মতি থাকে তবে তা ধর্ষণের পর্যায়ে পড়ে না।
তিনি বলেন, অভিযোগকারিনী একজন সুশিক্ষিতা প্রাপ্তবয়স্কা। অভিযুক্ত ব্যক্তি তাকে প্রস্তাব দিলে অভিযোগকারিনী তার সাথে যেতে সম্মত হন এবং অভিযুক্তের জন্মদিন পালনের অনুষ্ঠানে একটি হোটেলে যান। তিনি এর পরিণতি সম্পর্কে সচেতন ছিলেন। তিনি সাহায্যের জন্য চিৎকার করেননি, তাকে কার্যকর ভাবে বাধাও প্রদান করেননি।
এ সত্তে¡ও গত মাসে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট একটি ধর্ষণ মামলায় ছত্তিশগড়ের এক ডাক্তারের দন্ড বহাল রেখেছেন। এক মহিলা মামলার আবেদনে বলেন যে বিয়ের মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে যৌন সম্পর্কের ক্ষেত্রে তার সম্মতি নেয়া হয়েছিল। প্রতিটি ঘটনাই বিচিত্র ধরনের। এখানে প্রশ্ন হচ্ছে যে যৌন সম্পর্কে সম্মতিটা স্বেচ্ছায় ছিল কিনা? সুপ্রিম কোর্ট একটি মামলার ক্ষেত্রে বলেছেন যে প্রথম থেকেই বাদিনীকে বিয়ে করার ইচ্ছে কখনোই অভিযুক্তের ছিল না।
২০১৭ সালে দিল্লি হাইকোর্টের বিচারপতি প্রতিভা রানী এ ধরনের ধর্ষণ অভিযোগ থেকে এক ব্যক্তিকে মুক্তি দিয়েছিলেন। হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণে বলা হয় যে ধর্ষণের বিভিন্ন মামলায় দেখা গেছে যে মামলার বাদি ও বিবাদি উভয়ে তাদের ইচ্ছায় ও পছন্দে সম্মতিক্রমে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলেন। কিন্তু কোনো কারণে যখন সম্পর্ক ভেঙ্গে যায় তখন তখন নারীটি তার প্রতিশোধ ও ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা মিটাতে আইনকে ব্যবহার করেন।
বিচারক ধর্ষণ ও সম্মতিক্রমে যৌন সম্পর্কের মাঝে সুস্পষ্ট সীমারেখা টানার আহ্বান জানিয়ে বলেন, নারীরা হতাশা ও ক্রোধের বশবর্তী হয়ে এ ধরনের সম্মতিক্রমে যৌন মিলনকে ধর্ষণের ঘটনায় রূপান্তরিত করেন যার ফলে আইনটির বিশেষ উদ্দেশ্য পরাজিত হয়। চলতি বছরের জানুয়ারিতে বোম্বে হাইকোর্টের বিচারপতি নিতিন সাম্বরে ধর্ষণ মামলার এক আসামির অন্তবর্তী জামিন মঞ্জুর করেন। আদালত দেখতে পান যে মামলার এফআইআর দায়ের করতে ১৬ মাস বিলম্ব করা হয়েছে এবং ঘটনার মধ্যে সামঞ্জস্য নেই।
আইনজীবীরা বলছেন, যেসব মামলায় মেয়েরা বিয়ের প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতে শারীরিক সম্পর্কে সম্মতি দেয় বলে অভিযোগ করে সে সব মামলায় অব্যাহতি ও আগাম জামিন দেয়া হচ্ছে। ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে একই ধরনের মামলায় ২১ বছর বয়স্ক পুনের এক যুবককে গ্রেফতার পূর্ব জামিন দিয়ে বোম্বে হাইকোর্টের বিচারপতি মৃদুলা ভাটকর বলেন, একটি তরুণ ও তরুণীর মধ্যে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হওয়া ও শেষ পর্যন্ত সম্পর্ক ভেঙে যাওয়া দুর্ভাগ্যজনক, কিন্তু রুটিন ঘটনা। বিচারক তার রায়ে বলেন, তাদের মধ্যে নিঃসন্দেহে সম্মতিক্রমে যৌন সম্পর্ক ছিল এবং তারা পরস্পরকে ভালবাসত।
আইনজীবী হৃতেশ জৈন বলেন, প্রতিটি মামলাই যখন তার প্রকৃত ঘটনার প্রেক্ষিতে পরীক্ষা করা হচ্ছে। প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের পর মিথ্যা এফআইআর-এর মামলাগুলো সে মামলাগুলোকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে। যেগুলোতে একজন পুরুষ বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে শুরু থেকেই অসৎ উদ্দেশ্য চরিতার্থ করে আসছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ