Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বেড়িবাঁধ সংস্কারে এখনই নজর দিতে হবে

| প্রকাশের সময় : ৫ মে, ২০১৯, ১২:০৯ এএম

ঘূর্ণিঝড় ফণী দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে ভারতের স্থলভাগ হয়ে গতকাল সকাল ৬টায় বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের খুলনা-সাতক্ষীরা ও যশোর এলাকায় প্রবেশ করে। পরে তা মধ্য অঞ্চলের দিকে অগ্রসর হয়। এর আগে গত শুক্রবার সকালে ২০০ কিলোমিটার বেগে ফণী ভারতের উড়িষ্যা রাজ্যে আছড়ে পড়ে। ঐ দিনই মধ্যরাতের পর তা পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে প্রবেশ করে। তখন এর গতিবেগ প্রায় অর্ধেকে নেমে আসে। সেখানে ঝড়ের গতিবেগ ছিল ৭০ থেকে ৮০ কিলোমিটার। বাংলাদেশে প্রবেশের পর ঘূর্ণিঝড়ের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার। এটি ঘণ্টায় প্রায় ২০ কিলোমিটার বেগে অগ্রসর হয়। বলা যায়, আল্লাহর অশেষ রহমতে ফণী যেভাবে আঘাত হানার কথা ছিল, সেভাবে আঘাত হানতে পারেনি। তবে এর প্রভাবে ক্ষয়ক্ষতি কম হলেও ঝড়ো হাওয়া এবং বজ্রপাতে এ পর্যন্ত কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে। দেশের উপকূলীয় অঞ্চলের বেড়িবাঁধ ভেঙে হু হু করে জোয়ারের পানি ঢুকে নিম্নঞ্চল প্লাবিত করেছে। ফসলি জমি, ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে। পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে পাঁচ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। রাঙ্গাবালীতে বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে চার গ্রাম তলিয়ে গেছে। সাতক্ষীরায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্টগুলো যে কোনো মুহূর্তে ধসে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কয়েক স্থানে বাঁধ উপচে পানি ঢুকছে। উপকূলীয় অঞ্চলের অন্যান্য এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ফণী যেভাবে শক্তি সঞ্চয় করে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছিল, বিগত ৪৩ বছরের ইতিহাসে কোনো ঘূর্ণিঝড়ের এমন রূপ ধারণ করতে দেখা যায়নি। ঘূর্ণিঝড়টি যদি সমুদ্র থেকে সরাসরি বাংলাদেশে আঘাত হানত তবে কী পরিস্থিতি দাঁড়াতো তা অচিন্তনীয়। ভারত ঘুরে দুর্বল হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করায় ধারণার চেয়েও কম ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের এই দুর্বল আঘাতেই দেখা যাচ্ছে, দেশের উপকূলীয় অঞ্চলের বেড়িবাঁধগুলো নড়বড়ে হয়ে গেছে। কোথাও কোথাও ভেঙ্গে বিভিন্ন অঞ্চল প্লাবিত হয়ে তলিয়ে গেছে। ভারতের উড়িষ্যার মতো আঘাত হানলে এসব বাঁধের অস্তিত্ব থাকত কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ পোষণ করা যেতেই পারে। আমরা বহুবার বলেছি, উপকূলীয় বাঁধসহ দেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন এলাকার বাঁধগুলো দৃঢ়, মজবুত করে গড়ে তুলতে। যেসব বাঁধ নির্মিত হয়েছে, সেগুলো নিয়মিত সংস্কার করতে হবে। দেখা যাচ্ছে, পানি উন্নয়ন বোর্ড এ ব্যাপারে উদাসীন থেকে যাচ্ছে। প্রতি বছর বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হলেও এগুলোর কোনো উন্নতি হচ্ছে না। এসব বাঁধের সিংহভাগই যে কত নাজুক অবস্থায় রয়েছে তা ঝড়-বৃষ্টি-বন্যা হলেই বোঝা যায়। তখন সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষই স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে বাঁধ রক্ষায় নেমে পড়ে। এক্ষেত্রে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্তা ব্যক্তিদের ভূমিকা খুবই দায়সারা গোছের। তাদের আচরণে মনে হয়, যেমনই হোক আমরা বাঁধ নির্মাণ করে দিয়েছি, এখন রক্ষার দায়িত্ব তোমাদের। আমাদের আর কোনো দায়িত্ব নেই। অথচ জনগণের অর্থ দিয়েই প্রতিষ্ঠানটি এসব বাঁধ নির্মাণ করেছে এবং করছে। তারা এমনভাবেই এগুলো নির্মাণ করছে যেন তা বালির বাঁধ হয়ে থাকে এবং বন্যায় বা জোয়ারের পানিতে ভেসে যায়। ভেসে গেলেই প্রতিষ্ঠানটির অসাধু কর্মকর্তাদের লাভ। তাদের মধ্যে এ প্রবণতা বিরাজমান, বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারে পুনরায় অর্থ বরাদ্দ হবে এবং তাদের পকেট ভারি হবে। মানুষ, ঘরবাড়ি, ফসলী জমি, গবাদি পশু ভেসে গেল কি গেল না, তা নিয়ে তাদের মাথাব্যাথা নেই। অর্থাৎ জনগণের অর্থে নির্মিত বাঁধ নিয়ে দুর্নীতি চক্র স্থায়ী ব্যবসা তৈরি করে নিয়েছে। বছরের পর বছর ধরে বাঁধ নিয়ে এমন খেলা চলছে। উপকূলীয় অঞ্চলসহ দেশের অন্যান্য অঞ্চলে যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ নিয়ে বাঁধগুলো নির্মাণ করা হয়েছে, তা যদি সততার সঙ্গে নির্মাণ ও সংস্কার করা হতো, তাহলে দেশের অনেক প্রাণ এবং সম্পদ রক্ষা করা পেত। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ শূন্যের কোঠায় থাকত। ফণীর দুর্বল হয়ে বয়ে যাওয়া থেকে উপকূলীয় বাঁধগুলোর যে করুণ চিত্র ফুটে উঠেছে, সামনে বর্ষা মৌসুমে যদি ঘূর্ণিঝড় ও বন্যা হয় তবে পরিস্থিতি কতটা খারাপ হবে তা সহজেই অনুমেয়। উপকূলীয় অঞ্চলের বাঁধগুলো যে কতটা ভঙ্গুর ও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে, তা ফণীর দুর্বল আঘাত থেকেই বোঝা যায়।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রায় ৫ হাজার কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে ৪ হাজার কিলোমিটারই নাকি ঝুঁকিপূর্ণ। যদি তাই হয় তবে বাঁধগুলোর যে অস্তিত্ব এখনো আছে, তা বিস্ময়করই বটে। বর্ষা মৌসুমে প্রবল জোয়ার ও বন্যায় এগুলোর অবস্থা কী হবে, তা ভাবতে কষ্ট হয় না। বরাবরের মতো আমরা আবারো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বলবো, যেসব বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে সেগুলোর সংস্কার ও মেরামত অনতিবিলম্বে শুরু করতে হবে। বিপদ আসার আগেই সতর্ক হওয়ার বিষয়টি মাথায় নিয়েই এ কাজে নেমে পড়া উচিত। বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ার পর এবং বসত-ভিটা ও ফসলাদি ভেসে যাওয়ার পর সংস্কার ও নির্মাণের কোনো অর্থ হয় না। আমরা মনে করি, বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারে প্রতি বছর যে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয় তা সরকারের কেন্দ্র থেকে সরাসরি মনিটর করা উচিত। বাঁধ নির্মিত হবে অথচ তা ভেসে যাবে, এ ধরনের বাঁধ নির্মাণের চেয়ে না নির্মাণ করাই ভালো। এতে অন্তত অর্থের অপচয় রোধ হবে। কাজেই বিদ্যমান বাঁধগুলোকে মজবুত করে গড়ে তোলা এবং যেসব বাঁধের বিভিন্ন পয়েন্ট দুর্বল তা চিহ্নিত করে সংস্কার করতে হবে। এ কাজটি বছরব্যাপীই করতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন