পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
হালদা নদী বাংলাদেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র। দেশের আভ্যন্তরীণ মৎস্য চাহিদা পুরণে শত শত বছর ধরে হালদার এই প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্রটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভ’মিকা পালন করে আসছে। শুধু বাংলাদেশেই নয়, দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় ঐতিহ্যবাহী মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্রের নাম হালদা। হালদা নদী প্রবাহের প্রাকৃতিক পরিবেশগত নিরাপত্তা বাংলাদেশের মৎস্য সম্পদ ও কৃষি অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হিসেবে গণ্য। লক্ষ লক্ষ টন মৎস্য সম্পদ এবং হাজার হাজার মৎস্যচাষীর ভাগ্য এই হালাদার প্রাকৃতিক পরিবেশের অক্ষুন্নতার উপর নির্ভর করছে। অতএব হালদার যে কোনো বিপদের আশঙ্কা দেশের মৎস্য সম্পদ তথা জাতীয় অর্থনীতির জন্যই বিপর্যয় হিসেবে গণ্য করা হবে। এ কারণেই হালদা নদী দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও সংরক্ষিত এলাকা হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আসে। গত এক দশকের বেশী সময় ধরে অস্বাভাবিক দূষণ ও দখলে হালদার প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্রের অস্তিত্ব ভয়াবহ হুমকির সম্মুখীন হয়েছে। সেই সাথে হালদার দূষণ রোধসহ এর নিরাপত্তায় সরকারের নানাবিধ উদ্যোগের পাশাপাশি পরিবেশবাদী, বিশেষজ্ঞ ও নাগরিক সমাজকেও যথেষ্ট সক্রিয় ভ‚মিকা পালন করতে দেখা যাচ্ছে। তবে একের পর এক নানাবিধ বিপর্যয় ও অনাকাঙ্খিত ঘটনা যেন হালদার পিছু ছাড়ছেনা। একদিকে অপরিকল্পিতভাবে হালদার বিভিন্ন স্থানে গড়ে ওঠা শিল্প কারখানার দূষণ ও দখলে বিপর্যস্ত অন্যদিকে হালদায় যান্ত্রিক ও নৌযান ও ট্রলার চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও প্রায়শই ট্রলারের পাখার আঘাতে ডিমওয়ালা মা মাছের মৃত্যুর খবর পাওয়া যাচ্ছে।
গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায়, হালদা নদীতে মা মাছের ডিম ছাড়ার মওসুম সমাগত হলেও এ সময়ে নদীর এখানে সেখানে প্রায়শ ডিমওয়ালা মাছ মরে ভেসে থাকতে দেখা যাচ্ছে। এসব মৃত মাছের কোনো কোনোটা নদীতে চলমান ট্রলারের পাখায় বা বডিতে ধাক্কা লেখে অধবা নদীতে ফেলা শিল্প বর্জ্যরে দূষণে মৃত্যু হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। নদীর বিভিন্ন স্থান থেকে একই সময়ে বেশ কিছু মরা মা মাছ উদ্ধারের খবর পাওয়া গেছে। পানি দূষণ এবং ইঞ্জিন চালিত নৌকার পাখার আঘাতের পাশাপাশি মাছের ডিম ছাড়ার সময়ে গরমের দাবদাহ, প্রত্যাশিত বৃষ্টি না হওয়ার কারণেও হিটস্ট্রোকে মা মাছের মৃত্যুর আশঙ্কা করেছেন মৎস্য বিভাগের কোনো কোনো কর্মকর্তা। এহেন বাস্তবতায় গত সোমবার হাটহাজারি ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতকেন্দ্রের জন্য ফার্নেস অয়েলবাহী ট্যাঙ্কার মরাছরা রেলসেতুর উপর লাইনচ্যুত হয়ে হাজার হাজার লিটার ফার্নেস অয়েল মরাছরা খালে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিটি ট্যাঙ্কারে ২৪ হাজার তেলসহ তিনটি ট্যাঙ্কার খালে পড়ে গেছে এবং আরো চারটি ট্যাঙ্কার লাইনচ্যুত হয়ে কাত হয়ে পড়লে সে সব তেলও খালে গিয়ে পড়ছে। এহেন বাস্তবতায় মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরের হালদা নদীর বড় ধরনের বিপর্যয়ের সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। মরাছরা খাল হালদা নদীতে গিয়ে মিশেছে। হাজার হাজার লিটার ভাসমান ফার্নেস অয়েলের মিশ্রণ ঠেকাতে না পারলে হালদার বিপর্যয় অবশ্যম্ভাবি। এটি এমনি সময়ে ঘটেছে, যখন আর কদিনের মধ্যেই অমাবশ্যা ও পূর্ণিমা তিথিতে জেলেরা মাছের ডিম সংগ্রহের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
হালদার পানিতে অক্সিজেনের পরিমান স্বাভাবিক প্রত্যাশিত মাত্রার চেয়ে অনেক কম এবং অ্যমোনিয়ার পরিমান অস্বাভাবিক হারে বেশী। হালদার আশপাশের খালগুলোতে এ হার আরো অনেক বেশী। হালদা নদীর তীরে এবং আশপাশের এলাকায় গড়ে ওঠা কলকারখানা রাসায়নিক বর্জ্য শেষ পর্যন্ত হালাদায় গিয়ে পড়ছে যা ডিমওয়ালা মা মাছের জীবনচক্র বিপর্যস্ত করে তুলেছে। হালদা নদীর দূষণে মাছ মরে ভেসে উঠার ক্রমবর্ধমান সংখ্যায় জেলে ও মৎস্য বিশেষজ্ঞরা মৎস্য খাতের জন্য অশনি সংকেত হিসেবে দেখছেন। ইতিমধ্যে কয়েকটি কারখানা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও হালদার প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজননের জন্য ভারসাম্যপূর্ণ পরিবেশ ও পানির গুনাগুণ রক্ষায় যা যা করণীয় তার সবই করতে হবে। প্রয়োজনে সেখানকার আশপাশের সব কলকারখান সরিয়ে নেয়ার উদ্যোগ নিতে হবে। হালদা নদী ও খালের সাথে সংযুক্ত যে সব কলকারখানা সরিয়ে নেয়া সম্ভব নয় সে সব কারখানায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও ইটিপি বাস্তবায়নে জিরো টলারেন্স দেখাতে হবে। এই মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরী বিষয় হচ্ছে, হাটহাজারি খালে পড়ে যাওয়া অয়েল ট্যাঙ্কারের তেল হালদায় ছড়িয়ে পড়ার নুন্যতম আশঙ্কাকেও প্রবল শক্তিতে রুখে দেয়ার বাস্তব উদ্যোগ নেয়া। ইতিমধ্যে এ সংক্রান্ত একাধিক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং কমিটি অকুস্থল পরিদর্শন করেছে বলে খবর প্রকাশিত হয়েছে। তবে তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে হাজার হাজার লিটার ভাসমান তেল তুলে নেয়া এবং তেলমিশ্রিত পানি যেন হালদায় মিশতে না পারে তার জন্য সর্বোচ্চ পদক্ষেপ গ্রহণ করা। এ ক্ষেত্রে স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনের পাশাপাশি নৌবাহিনী, কোস্টগার্ডসহ জাতীয়ভাবে জরুরী পদক্ষেপ নিতে হবে। হালদায় ডিম সংগ্রহের সময়কাল সম্পর্কে সব ধরনের বিভ্রান্তি দূর করতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞদের আরো সতর্কভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।