পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
গত ১৪ এপ্রিল একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, বাস্তবতার সঙ্গে ঢাকার বহুতল ভবনগুলোর নকশার মিল খুঁজে পাচ্ছে না রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। পরিদর্শনের সময় বেশিরভাগ ভবনে রাজউক অনুমোদিত নকশার গরমিল এবং অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থায় দুর্বলতা পাচ্ছে পরিদর্শনকারী দল। গত ৩০ মার্চ প্রকাশিত অপর একটি প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, রাজধানীর ৬৬ শতাংশ ভবন নিয়ম বর্হিভ‚তভাবে নির্মিত। রাজধানীতে ইমারত বিধি অনুযায়ী ভবন নির্মাণ নিশ্চিতের কর্তৃপক্ষ রাজউক। তার কাছ থেকে এ সব তথ্য এলে রাজউকের প্রয়োজন আছে কিনা সে প্রশ্ন স্বভাবিকভাবেই উঠতে পারে। রাজউকের তথ্যই বলছে, রাজধানীতে নিয়ম বর্হিভ‚ত ভবন ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়েছে। রাজধানীতে নিয়ম বহির্ভ‚তভাবে নির্মিত ভবনগুলো রাতারাতি হয়নি। রাজউকের নাকের ডগায় দীর্ঘ সময় নিয়ে প্রকাশ্যেই ভবনগুলো নির্মিত হয়েছে। রাজউকের নাকের ডগায় নিয়ম বহির্ভ‚তভাবে ভবন নির্মাণ কীভাবে সম্ভব হয়েছে, এর দায় কার ওপর বর্তায়, রাজউক কি দায় এড়াতে পারেÑ এ প্রশ্নগুলোর উত্তর রাজউককে দিতে হবে। রাজধানীতে নির্মাণাধীন ইমারতগুলো ইমারত বিধি অনুযায়ী নির্মিত হচ্ছে কিনা তা নিশ্চিতের জন্যই রাখা হয়েছে রাজউককে, রাজধানীতে নিয়ম বহির্ভ‚তভাবে নির্মিত ভবনের তথ্য প্রকাশের জন্য রাজউক রাখা হয়নি। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) গঠিত হয়েছে ৫০ এর দশকের মাঝামাঝি। প্রতিষ্ঠাকালে এ সংস্থার নামকরণ করা হয়েছিল ঢাকা ইমপ্রæভমেন্ট ট্রাস্ট (ডিআইটি)। আশির দশকে এ সংস্থার লোকবল, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সুযোগ-সুবিধাবৃদ্ধি করে ‘রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ’ (রাজউক) নামকরণ করা হয়েছে। ৫০ এর দশকের মাঝামাঝি এ সংস্থা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল পরিকল্পিত ঢাকা নগরী গড়ে তোলার লক্ষ্যে আর কার্যক্রম বৃদ্ধির লক্ষ্যে আশির দশকে এ সংস্থার লোকবল, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোসহ ঢেলে সাজানো হয়েছে। যে লক্ষ্য- উদ্দেশ্য নিয়ে এ সংস্থা গঠন এবং পরবর্তীতে কলেবর বাড়ানোর হয়েছিল তা বহুলাংশেই পূরণ হয়নি।
রাজউক অর্পিত দায়িত্ব পালনে কমপক্ষে ৬৬ শতাংশ ব্যর্থ বলা যায় রাজধানীতে ৬৬ শতাংশ ভবন নিয়ম বহির্ভ‚তভাবে নির্মিত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে। রাজধানীতে ইমারত বিধি অনুযায়ী ভবন নির্মাণ নিশ্চিতের জন্য রাজধানীতে নির্মিত হবে এমন ভবনের নকশা আগেই রাজউকে জমা দিতে হয়। জমাকৃত নকশায় ইমারত বিধির শতভাগ প্রতিফলন নিশ্চিত হয়ে রাজউক অনুমোদন দেয়; অনুমোদন পাওয়ার পর শুরু হয় ভবন নির্মাণ কার্যক্রম। রাজউকের আওতাধীন এলাকায় রাজউক অনুমোদিত নকশা জাল-জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে পরিবর্তন-পরিবর্ধন করে বা রাজউকের অনুমোদনহীন নকশায় কেউ ইমারত নির্মাণ করছে কিনা তা দেখার জন্য রাজউকের এলাকাভিত্তিক নিয়োগকৃত পরিদর্শকদের মাধ্যমে তদারকিও রয়েছে। পরিদর্শকরা যথাযথ দায়িত্ব পালন করলে নিয়ম বহির্ভ‚ত ভবন নির্মাণকালেই নজরে আসার কথা। রাজউকের এলাকাভিত্তিক পরিদর্শকদের নজর এড়িয়ে কোনো ভবন নির্মাণ সম্ভব নয়। রাজধানীতে নিয়ম বহির্ভ‚তভাবে রাজউকের নাকের ডগায় ভবন নির্মিত হয়েছে তাদেরই দায়িত্বহীনতায়।
রাজধানী ঢাকাকে কংক্রিটের জঙ্গল বলা হয় অপরিকল্পিত নগরায়নের কারণে। অপরিকল্পিত নগরায়ন ও বিল্ডিং কোড না মেনে নির্মিত ভবন ঢাকা নগরীকে নিরাপদ বসবাসের অযোগ্য করে ফেলেছে বহু আগেই। রাজধানীতে পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা এলাকাগুলোও ঘিঞ্জি-অনিরাপদ এলাকায় পরিণত হচ্ছে রাজউকের চোখের সামনে। ঢাকা নগরীকে নিরাপদ বসবাসের যোগ্য করে তোলা অনেকটাই অসাধ্য সাধন করার মতো হয়ে গেছে এখন। গত ৩১ মার্চ পূর্তমন্ত্রী জানিয়েছেন, রাজধানীর সব ধরনের ভবন পরিদর্শন করে বিল্ডিং কোডের আওতায় আনা হবে। বিল্ডিং কোডের সকল শর্ত পালন না করলে বিল্ডিং ব্যবহার করতে দেয়া হবে না। অনুমোদনহীন কোনো ভবন ঢাকা শহরে থাকবে না। অনুমোদনহীন ভবন ভেঙ্গে দেয়া হবে। পূর্তমন্ত্রী বললেও বর্তমান পরিস্থিতিতে রাজউক কতটা কি করতে পারবে তা নিয়ে সংশয় আছে। কারণ, কাজটি কঠিন। কাজটি যে কঠিন তা ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকনের কথাতেও বুঝা যায়। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র গত ৩১ মার্চ এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘রাজধানীতে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে সাড়ে ৫ হাজার ভবন। রাজউক চাইলেই রাজধানীর বিপুল সংখ্যক অবৈধ ভবন ভাঙ্গতে পারবে না। রাজউক প্রভাবশালীদের একটি ভবন ভেঙ্গে দেখাক। তাহলেই বুঝব রাজউকের সদিচ্ছা ও আন্তরিকতা আছে।’ ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের বক্তব্যে নিয়ম বহির্ভ‚তভাবে নির্মিত ভবনের ব্যাপারে বর্তমান পরিস্থিতিতে রাজউক কতটা কি করতে পারবে তার একটা ধারণা পাওয়া যায়। অপরিকল্পিত নগরায়ন ও ইমারত বিধি অগ্রাহ্য করে ভবন নির্মাণের প্রবণতা রোধে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের শক্ত ভ‚মিকা দরকার। কেবল রাজউকের ওপর নির্ভর করে ঢাকাকে অনিরাপদ ভবনের ঝুঁকি মুক্ত রাখা সম্ভব হবে না। রাজউক নিজেই রাজধানী অনিরাপদ করে ফেলার দায়ে অভিযুক্ত হয়ে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে আছে।
অপরিকল্পিত নগরায়ন ও ইমারতবিধি বা বিল্ডিং কোড অগ্রাহ্য করে নির্মিত ভবন জননিরাপত্তার মারাত্মক হুমকি হয়ে দেখা দেয়ায় বিষয়টি অগ্রাহ্যের বা এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সম্প্রতি বলেছেন, কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন এলাকার ৯০ শতাংশ ভবন নকশা বহির্ভ‚ত। এদেশে সচরাচর ইমারত বিধির অস্তিত্ব টের পাওয়া যায় না। ইমারত বিধি বলে বিধি আছে শুনলে তাৎক্ষণিকভাবে যে কারোরই বিশ্বাস করা কঠিন হয়ে যায় ভবনগুলোর দিকে তাকালে। ভবন ধসে পড়লে বা ভবনে অগ্নিকাÐের ঘটনা ঘটলে জানা যায়, ইমারত বিধি বলে একটা বিধি আছে এবং সকলে উপলদ্ধি করেন ইমারত বিধির ‘গুরুত্ব’ আছে। বলা যায়, ইমারত বিধি ‘কাজীর গরু কিতাবে আছে গোয়ালে নেই’-এর মতোই। ইমারত বিধি কিতাব বন্দি রাখার জন্য প্রণয়ন করা হয়নি। অপরিকল্পিত নগরায়ন ও ইমারত বিধি অগ্রাহ্যের ভয়াবহ পরিণতির পূর্বাভাস পাওয়া যাচ্ছে। অপরিকল্পিত নগরায়ন, ইমারতবিধি লংঘন করে ভবন নির্মাণ এবং নিয়ম বহির্ভূতভাবে নির্মিত ভবনের ব্যাপারে কঠোর হওয়ার সময় হয়েছে।
লেখক: সাংবাদিক
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।