Inqilab Logo

সোমবার ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অবৈধ অর্থ লেনদেন অনুসন্ধানে পিবিআই

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৩ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

আলোচিত মাদরাসার মেধাবী ছাত্রী নুসরাত হত্যার সঙ্গে কিলিং স্পটে সরাসরি অংশ নেয়া পাঁচজনই আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যথাযথ পদক্ষেপ নিলে নুসরাত হত্যাকান্ডের ঘটনা এড়ানো যেত বলে মনে করেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। গত রোববার কমিটির বৈঠকে তারা বর্বর ওই হত্যাকান্ডের ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। হত্যার ঘটনায় অবৈধ অর্থ লেনদেনের উৎস অনুসন্ধানে সোনাগাজীর বিভিন্ন ব্যাংকের শাখা পরিদর্শন করেছে পিবিআই।
সূত্র জানায়, জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন সংসদীয় কমিটির সভাপতি শামসুল হক টুকু। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, কমিটির সদস্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, পীর ফজলুর রহমান, নূর মোহাম্মদ ও সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ এবং সংশ্ল্ষ্টি কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
কমিটি সূত্র জানায়, বৈঠকে জাতীয় পার্টির এমপি পীর ফজলুর রহমান রহমান আলোচিত নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যার বিষয়টি উত্থাপন করেন। কমিটির সভাপতি সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু তার বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করেন। আলোচনা শেষে প্রয়োজনীয় সুপারিশ করা হয়। কমিটির সভাপতি সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু সাংবাদিকদের বলেন, কোনও তথ্য পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিলে অনেক ক্ষেত্রে প্রাণহানি ঠেকানো যায়। আগামীতে এধরণের ঘটনা যাতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতে না পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে বলা হয়েছে। আগামী বৈঠকে চাঞ্চল্যকর নুসরাত হত্যা মামলার অগ্রগতি নিয়ে আরো আলোচনা হবে বলে তিনি জানান।
এবিষয়ে পীর ফজলুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, আমি বলেছি পুলিশ সতর্ক থাকলে অনেক ঘটনা ঘটার আগে ব্যবস্থা নেয়া যায়। নুসরাত যখন ওসির কাছে অভিযোগ নিয়ে গিয়েছিলেন তখন তিনি (ওসি) যদি গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টি বিবেচনা করতেন তাহলে হয়তো নুসরাত হত্যাকান্ডের ঘটনাটি ঘটতো না। এবিষয়ে পুলিশের আচরণে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
অবৈধ লেনদেন অনুসন্ধান করছে পিবিআই
নুসরাত হত্যার ঘটনায় অবৈধ অর্থ লেনদেনের উৎস অনুসন্ধানে সোনাগাজীর বিভিন্ন ব্যাংকের শাখা পরিদর্শন করেছে পিবিআই। রোববার দুপুরে পিবিআইর চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ পুলিশ সুপার মো. ইকবালের নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি দল ব্যাংকগুলোতে গিয়ে মামলার আসামিদের ব্যাংক হিসাব খতিয়ে দেখেন।
পিবিআইয়ের বিশেষ পুলিশ সুপার মো. ইকবাল সংবাদকর্মীদের জানান, নুসরাত হত্যাকান্ডের ঘটনায় কোনো ধরনের অবৈধ অর্থ লেনদেন হয়েছে কিনা, তারা তা খতিয়ে দেখছেন। সোনাগাজীতে জনতা, ইসলামী ব্যাংকসহ আরও কয়েকটি ব্যাংক পরিদর্শন করেছেন তারা। জেলা শহরের বেশ কয়েকটি ব্যাংকের শাখা পরিদর্শন করে হত্যাকান্ডের অবৈধ লেনদেনের উৎস খুঁজে বের করা হবে।
৫জনে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি
নুসরাত হত্যার সঙ্গে কিলিং স্পটে সরাসরি অংশ নেয়া পাঁচজনই আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এর মধ্যে রোববার ফেনীর সিনিয়র জুড়িশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জাকির হোসাইনের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন মামলার অন্যতম আসামি শাহাদাত হোসেন শামীম। তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে উঠে আসে কিভাবে হত্যাকান্ডটি ঘটানো হয়েছে, কারা ঘটিয়েছে, কোন আঙ্গিকে ঘটিয়েছে, বিষয়গুলো। তার স্বীকারোক্তিতেই উঠে আসে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সহ-সভাপতি রুহুল আমিন ও কাউন্সিলর কমসুদুর রহমান মকসুদসহ অন্যদের নাম।
শামীম অপরাধ স্বীকার করেছেন, হত্যাকান্ড ঘটিয়েছেন। এখানে কয়েকজন সংশ্লিষ্ট ছিলেন, পরিকল্পনায় অংশ নিয়েছেন। তারা কারাগার (কারাগারে বন্দি হত্যা মামলার প্রধান আসামি মাদরাসার প্রিন্সিপাল সিরাজ উদদৌলা) থেকে হুকুম পেয়েছেন। এর আগে শুক্রবার বিকেলে ফেনীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সরাফ উদ্দিন আহমেদের আদালতে এ সংক্রান্ত জবানবন্দি দেন উম্মে সুলতানা পপি (শম্পা)। তিনি জানিয়েছেন, নুসরাতকে হত্যার উদ্দেশে পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে সে-ই ছাদে ডেকে নিয়ে গেছে। তার নাম পপি হলেও হত্যাকান্ডের দিন হত্যাকারীরা তার পরিচয় গোপন রেখে ‘শম্পা’ নামে ডাকে। সেজন্য নুসরাতও তাকে ডেকে নেয়া বোরকাপরিহিত ছাত্রীটির নাম শম্পা বলে গিয়েছিল। শনিবার ২০ এপ্রিল বিকেলে একই জবানবন্দি দেন জাবেদ ও কামরুন্নাহার মনি। আদালতে তাদের উপস্থাপন করে পিবিআই সদস্যরা। কয়েক ঘণ্টাব্যাপী জবানবন্দি রেকর্ডের পর রাত ১০টার দিকে তাদের জবানবন্দির ব্যাপারে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন পিবিআই’র চট্টগ্রাম বিভাগের স্পেশাল পুলিশ সুপার মো. ইকবাল।
তিনি বলেন, আদালতে এ দু’জন স্বীকারোক্তি দিয়েছেন যে, তারা তাদের সহপাঠী নুসরাত জাহান রাফি হত্যায় সরাসরি জড়িত ছিলেন। জাবেদ নুসরাতের পুরো শরীরে কেরোসিন ঢেলে দেন। আগুন ভালো করে লাগার জন্য মনি নুসরাতের বুকসহ শরীর চেপে ধরেন।
সর্বশেষ রোববার ২১ এপ্রিল বিকেলে একই আদালতে জবানবন্দি দেন সাইফুর রহমান মো. জোবায়ের। জোবায়ের আদালতে স্বীকারোক্তি দেন যে, ঘটনার দিন তিনি কিলিং মিশনে সরাসরি অংশগ্রহণ করে নুসরাতে গায়ে কেরোসিন ঢেলে দেন এবং ম্যাচের কাঠির মাধ্যমে আগুন ধরিয়ে দেন। এছাড়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী নুর উদ্দিন, হাফেজ আবদুল কাদের ও আবদুর রহিম শরীফ। তারা হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকলেও কিলিং স্পটে ছিলেন না।
সোনাগাজী (ফেনী) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, গর্ভে তার ৫ মাসের সন্তান। কিলিং মিশনে সরাসরি অংশ নেয়া মনি। সব অপরাধ স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন তিনি। ২০ এপ্রিল আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি শেষে তাকে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। গর্ভে সন্তান ধারণ করে এরকম একটি নৃশংস হত্যাকান্ডে জড়ানোয় ফেনীতে সকল মানুষের মধ্যে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। এমন ঘটনায় তাকে মা নয় ‘কালনাগিনী-ডাইনি’ বলে আখ্যা দিয়েছেন ফেনীর নারীনেত্রী ও কর্মীরা।
ফেনীর নারীকর্মী ফারিহা জানান, কামরুন নাহার মনির পেটে যে সন্তান সে সন্তান নিজ থেকে দুনিয়াতে আসতে চায়নি। যে মা তাকে দুনিয়াতে আনতে চেয়েছেন; সে মা কীভাবে এমন কাজ করতে পারে? এ সন্তানের কী অপরাধ ছিল? তাকে কেন জন্মের আগে জেল খাটতে হচ্ছে।
উম্মে সাদিয়া নামে এক শিক্ষিকা জানান, কামরুন নাহার মা হবে। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ শব্দ মা। প্রত্যেক নারী একসময় মা শব্দ শোনার প্রতীক্ষায় থাকে। গর্ভে সন্তান আসলে প্রত্যেক মা সব সময় ভালো কাজে লিপ্ত থাকে। গর্ভে সন্তান নিয়ে নৃশংসভাবে আরেকজন মেয়েকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করেছে।
হত্যার প্রতিবাদে মানববন্ধন
নুসরাতকে হয়রানি ও আগুনে পুড়িয়ে হত্যার প্রতিবাদে খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ করা হয়েছে। রোববার সকালে দাগনভূঞা উপজেলার গণিপুর জাফর ইমাম বীর বিক্রম উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে এ মানববন্ধন ও সমাবেশ করা হয়। এতে বক্তব্য রাখেন দাগনভূঞা উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি আ ন ম কাশেদুল হক বাবর, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এসএম আমিন উল্লাহ, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী কামাল হোসেন প্রমুখ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: হত্যা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ