Inqilab Logo

শুক্রবার ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১, ২৮ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

তোমাকে দেখার জন্যে হে বঙ্গবীর

এস.এম.জেড. হক বাঙালী | প্রকাশের সময় : ২৩ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

মানুষ যখন দলে দলে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়ার জন্য ভারতের দিকে যেতে লাগলো, তখন আমার এক ভাতিজাকে ডেকে বললাম, ‘বাবা চলো, আমরাও মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়ার জন্য ভারতে যাবো। তুমি খুব তাড়াতাড়ি প্রস্তুতি নাও, আজ রাতেই আমরা চলে যাবো।’ তখন আমি দুই সন্তানের জনক, আর সে স্কুলের ছাত্র। তখন ভাতিজা একটু চিন্তা-ভাবনা করে বললো, ‘চাচামিয়া, দুইজন যাওয়া যাবেনা। হয় আপনি যান, না হয় আমি যাবো। কারণ দেশে যে হত্যাযজ্ঞ চলছে, এমতাবস্থায় বাড়ীর মহিলা ও শিশুদের নিরাপত্তার জন্য যেকোন একজনকে থাকতে হবে। কোন বিপদের আশংকা যদি দেখা যায় তবে এদের নিয়ে কোন নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে হবে। অতএব, এদের নিরাপত্তার জন্য আপনিই বাড়ীতে থাকুন। আমিই চলে যাই। আর তাছাড়া আপনার ছোট ছোট দুইজন ছেলেমেয়ে রয়েছে। আল্লাহ না করুন যদি আপনি যুদ্ধে মারা যান তবে ওরা দুটি ভাইবোন এতিম হয়ে যাবে। আপনি শুধু আমার জন্য দোয়া করুন যেন মাতৃভ‚মিকে শত্রæমুক্ত করে বিজয়ীর বেশে আপনাদের কাছে ফিরে আসতে পারি।’
ওর কথাগুলি আমার কাছে যুক্তিসঙ্গত বলেই মনে হল। তাই ওকে সর্বন্তকরণে দোয়া করে মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে ওর সর্বপ্রকার হেফাজতের দায়িত্ব অর্পন করে ওকে সেই রাত্রেই বিদায় করে দিলাম। অতঃপর সব সময় ওর জন্য এবং ওর সহযোদ্ধাদের জন্য দোয়া করতে থাকলাম।
এ দেশের দামাল ছেলেরা বীর বিক্রমে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে লাগলো এবং বিভিন্ন স্থানে হানা দিয়ে পাকিস্তান বাহিনী ও রাজাকার-আলবদরদের নিশ্চিহ্ন করতে লাগলো। ঠিক সেই সময় একটি নাম মাঝে মধ্যেই শুনতাম, টাংগাইলের কাদের সিদ্দিকী। তন্ময় হয়ে শুনতাম তার বীরত্বের কাহিনী, শুনতাম কাদেরিয়া বাহিনীর গল্প। মনে মনে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতাম, এ যুদ্ধে জয় আমাদের হবেই ইনশাল্লাহ। দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধের পর বহু রক্তের বিনিময়ে দেশকে শত্রæমুক্ত করে সহযোদ্ধা বহু ভাইদেরকে হারিয়ে সাফল্যের হাসি নিয়ে ভাইহারা বেদনা বুকে নিয়ে অশ্রæসিক্ত নয়নে যার যার স্বজনদের কাছে ফিরে এলো ওরা। আমার ভাতিজাও আল্লাহর অশেষ রহমতে অক্ষত অবস্থায় ফিরে এলো আমাদের কাছে। ওকে বুকে জড়িয়ে ধরে আনন্দাশ্রæ বিসর্জন করতে লাগলাম, দু’চোখে নেমে এলো বাঁধভাঙ্গা প্লাবনের ন্যায় তপ্ত অশ্রæ। সে মুহূর্তের আনন্দের কথাটা লেখনী দ্বারা পরিষ্ফ‚টন করা সম্ভব নয়, সেটা একমাত্র উপলব্ধির ব্যাপার। একদিকে আপনজনকে ফিরে পাওয়া, অপরদিকে প্রিয় মাতৃভ‚মি শত্রæমুক্ত হওয়ার কি যে আনন্দ তা যারা অনুধাবন করতে পেরেছেন, একমাত্র তাদেরই হৃদয়াঙ্গম হওয়া সম্ভব।
ঠিক সেই আনন্দঘন মুহূর্তে একটি গর্বিত নাম এবং একটি কাল্পনিক বীরমূর্তী আমার মানসপটে বার বার উদিত হতে হতো। আরব্য উপন্যাসের গল্পের মতো তার গল্প তন্ময় হয়ে শুনেছি। মনে আশা জেগেছে যে, একদিন মুক্তিযুদ্ধের এই মহানায়কের নেতৃত্বে যুদ্ধ করে আমাদের অকুতভয় মুক্তিযোদ্ধারা এ দেশকে শত্রæমুক্ত করবে ইনশাল্লাহ। তখন বার বার মনে হতো, আহা, এই মুহূর্তে যদি আমার সেই প্রিয় মানুষটিকে কাছে পেতাম তাহলে তাকে বুকে জড়িয়ে ধরে স্বর্গীয় আনন্দ অনুভব করতাম। কিন্তু হায়, কোথায় আমার সেই কাঙ্খিত ব্যক্তি? স্বাধীনতার এত বছর অতীত হওয়ার পরও আজ পর্যন্ত তাঁকে একটি বারও দেখতে পাইনি। মনকে এই বলে প্রবোধ দেই, তিনি তো একজন প্রখ্যাত ব্যক্তি আর আমি? আমি কে? আমি তো পাড়াগায়ের একজন অখ্যাত অশিতিপর মৃত্যুপথযাত্রী কঙ্কালসার এক বৃদ্ধ। তিনি হয়তো কত শত খ্যাতনামা পরিষদ বেষ্টিত হয়ে কোন সুরম্য অট্টালিকায় দুগ্ধ ফেননীভ শয্যায় শায়িত রয়েছেন। তাঁর মত স্বনামধন্য ব্যক্তির সাথে আমার সাক্ষাৎ হওয়ার কি কোন সম্ভাবনা আছে?
এতদিন এই ভেবেই মৃত্যুর প্রহর গুনছিলাম। কিন্তু সাম্প্রতিককালে কোন কোন সংবাদপত্রে তাঁর কতগুলি মুল্যবান লেখা দেখে দেখে আমার দীর্ঘ দিনের সেই লালিত সুপ্ত ব্যথাটা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। সংবাদপত্রে তার সেই পবিত্র হাস্যোজ্জল মায়াময় ছবিখানা দেখে আগের সেই কাল্পনিক বীরমূর্তিটি আমার অন্তর হতে সম্পূর্ণ তিরোহিত হয়ে গেছে। আমি যেন প্রকৃতপক্ষেই বাস্তবে বঙ্গবীরকেই পেয়ে গেছি। তাঁর সেই মায়াময় হাসিখানা ছবি দেখেই যেন তাঁর ভিতর বাহির সবকিছুই বুঝতে পেরেছি। অনুধাবন করতে পেরেছি, এ দেশের জন সাধারণের প্রতি তাঁর কি মায়া কি ভালবাসা! তাঁর অন্তরের অন্তস্থলে কি যে ব্যথা অহর্নিশি বৃশ্চিক দংশন জ্বালার মতো জ্বালাতন করছে তা যেন আমি দিব্যদৃষ্টিতে দেখতে পাচ্ছি। এ দেশের উৎপীড়িত শোষিত অধিকার বঞ্চিত ভাগ্যাহত মানুষগুলির জন্য তার আকুল আকুতিকে যেন আমার চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে।
বছর কয়েক আগে, নয়াদিগন্তে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. আ. রহমান সিদ্দিকী সাহেবের একটি লেখা দেখতে পেলাম। তার লেখায় বুঝতে পারলাম, তিনিও আমার মতই বঙ্গবীরের আশেক ছিলেন। আল্লাহপাক তার আশা পূরণ করেছেন। কিন্তু আমারটা? আমার আশা কি পুরণ হবেনা? হয়তো হবে না। কারণ, আমি তো কোন প্রখ্যাত লোক নই, কোন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা নই, কোন বিশ্ববিদ্যালয়েরর প্রফেসর নই, আমার কোন উল্লেখযোগ্য পরিচিতি নেই। আমার পরিচিতি হল, আমি একজন কৃষকের ছেলে কৃষক। অতীতে জীবনটা ছিল আনন্দবহুল, নাটক-ফাটক লিখতাম, পরিচালনা করতাম, নাট্যকার হিসেবে সমাজে ছোট্ট একটি পরিচিতি এখনও আছে। কিন্তু সেসব দিন অনেক আগেই চলে গেছে। এখন সম্পূর্ণ ভিন্ন জগতে বিচরণ করছি। ভক্তবৃন্দ নিয়ে ধর্মীয় আলোচনায়ই দিবারাত্রির অধিকাংশ সময় অতিবাহিত হয়। শ্রবণেন্দ্রীয়দ্বয় একপ্রকার বন্ধই রেখেছি। পৃথিবীর আনন্দ কোলাহল কর্ণকুহরে প্রবিষ্ট হতে দেইনা। কারণ তাতে নিজের কর্মের ব্যঘাত সৃষ্টি হয়। শুধুমাত্র দর্শনেন্দ্রীয়দ্বয় খোলা রেখেছি, মহান স্রষ্টার এই বিচিত্র সৃষ্টি জগত দর্শন করে এরই মাঝে ¯্রষ্টাকে খুজে পাওয়ার জন্য।
কিন্তু হায়, আমার সে তন্ময়তা, ধ্যান-ধারণা আজ পদে পদে বিঘ্নিত হচ্ছে। কারণ মহান স্রষ্টার বড় সাধের সৃষ্টি আশরাফুল মাখলুকাত এই মানব জাতির আর্তচিৎকার, সন্তানহারা মায়ের, স্বামীহারা স্ত্রীর, পিতৃহারা এতিম সন্তানের, ভাইহারা ভাইয়ের আর্তনাদে বৃকফাটা দীর্ঘশ্বাসে আমার সে তন্ময়তা অনেকটা দূরে চলে গেছে।
যাইহোক, প্রফেসর ড. আব্দুর রহমান সিদ্দিকী সাহেবের সেই লেখাটার কথা বলছি। প্রফেসর সাহেব, তার লেখায় অত্যন্ত সুন্দর স্বচ্ছ এবং বোধগম্য ভাষায় মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক বাঙালীদের একান্ত আপনজন বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীকে যেভাবে জনসম্মুক্ষে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছেন তা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবীদার।
তিনি লিখেছেন, ‘দীর্ঘ একহারা গড়নের ঋজুদেহী একজন হাস্যোজ্জল মানুষ এসে দাড়ালেন সবার সামনে। মুখে খোচা খোচা সাদা দাড়ি গোফ ভেদ করে একটা স্বপ্রতীভ চেহারা ফুটে উঠেছে। হাত উঠিয়ে অভিবাদন জানালেন সমবেত লোকদের। অনেকের সাথে আমিও দাড়িয়ে গেলাম। তাঁর চেহারায় একটি নিম্মোহ প্রশান্ত অমায়িক ভাব মিশে আছে। অহমিকা, প্রতাপ কিংবা কৃত্তিম ভাবগাম্ভির্য্য নেই তাতে, আছে অকৃত্রিম ভাবভঙ্গি। অনেকটা শিশুসুলভ সারল্য। একজন অপরাজেয় বীর মুক্তিযোদ্ধাকে একদম কাছে থেকে দেখার সুযোগ হল। যাকে জাতি ভালবেসে বঙ্গবীর বাঘা সিদ্দিকী উপাধি দিয়েছে, রাষ্ট্র ‘বীর উত্তম’ খেতাব দিয়ে সম্মানিত করেছে।’
তিনি আরো লিখেছেন, ‘আয়োজকদের বক্তব্যে বুঝা গেল বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী দেশের নানা অঞ্চলের গণমানুষের সাথে কথা বলার জন্য বের হয়েছেন। তারই অংশ হিসেবে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ঘুরে এসে পৌছেছেন রাজশাহীতে। এখন দেশে চলছে চরম দুর্দিন ও দুঃশাসন। মহাজোট সরকার মহাপ্যাচে ফেলে দিয়েছে এই জাতিকে। নৈরাজ্য গ্রাস করেছে সবকিছু। দেশের সর্বত্র ঝরছে রক্ত ও অশ্রু, দেশপ্রেমিকেরা কোনঠাসা, শান্তিপ্রিয় মানুষেরা মহা আতংকে।
তাই বঙ্গবীর মানুষের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে পথে নেমেছেন। বিদ্যমান সমস্যাকে তিনি বুঝতে চান, সংকটের গভীরতাকে জানতে চান। কিভাবে এই মহা সংকট থেকে জাতিকে পরিত্রান দেওয়া যায়। তার উপায় খুজে বের করার জন্যই পথিমধ্যে থেমে সমাজের নানা স্তরের মানুষের সাথে কথা বলতে চান। তিনি মত বিনিময় করতে চান বিদ্বান, বুদ্ধিমান ও বুদ্ধিজীবিদের সাথে। রাজশাহী মহানগরীতে তার এই সমাবেশের উদ্দেশ্যও তাই। তাঁর সহচরদের কাছে জানলাম তিনি চাপাইনবাবগঞ্জের প্রত্যন্ত গ্রামে, পথে-প্রান্তরে, হাট-বাজারে গেছেন। কথা বলেছেন চাষাভুষা, দিনমজুর, দোকানদার, শিক্ষিত, অশিক্ষিত হিন্দু-মুসলমান নানা ধরণের লোকজনের সাথে। একাত্ম হয়েছেন তাদের আনন্দ-বেদনার সাথে। বুঝতে চেয়েছেন গণমানুষের সুখ-দুঃখের কথা, অনুধাবন করতে চেয়েছেন দুর্ব্বীনিত শাসক শ্রেণীর কার্যকলাপের নানাদিক।’ তিনি আরও লিখেছেন, ‘সিটি প্রেসক্লাবের সভা শেষে যখন বাসায় ফিরছিলাম তখন কেন যেন মনে হলো, কাদের সিদ্দিকীর মধ্যেও মওলানা ভাসানীর একটা ছায়া যেন উকি মারছে। হুজুরের কিছু আমল, আকল, ভাবনা-চিন্তার, কাজকর্মের মিল খুজে পাওয়া যাচ্ছে তার সাম্প্রতিক চলাফেরায়। গ্রামেগঞ্জে সাধারণ মানুষের সাথে একাত্ম হয়ে যাওয়া নিরহংকার চলাফেরা, সাদামাটা পোষাক-পরিচ্ছদ, খোলামেলা কথাবার্তা, নির্ভীক উচ্চারণ সবকিছু মিলে মনে হচ্ছে টাংগাইলের ছেলে কাদের সিদ্দিকী বুঝি টাংগাইলের হুজুরের পথ ধরে হাটতে শুরু করেছেন। মওলানা ভাসানী যেমন নির্ভয়ে দুঃশাসনের বিরুদ্ধে কথা বলতেন, আঙ্গুল উচিয়ে শাসকদের হুশিয়ার করে দিতেন, খামোশ হয়ে যাওয়ার জন্য হুংকার দিতেন, কাদের সিদ্দিকীর ভাব-ভাঙ্গিতেও কোথায় যেন তারই একটা ছায়া দেখা যাচ্ছে। ভাসানী যেমন হক কথা প্রকাশ করে শাসকদের মুখোশ উম্মোচন করে দেওয়ার কাজ শুরু করেছিলেন, কাদের সিদ্দিকীও ইদানীং লেখালেখি শুরু করেছেন দারুন সাহসের সাথে। দেখলাম বীরোচিত সাহসিকতার ছাপ, আবার হুজুর মওলানার মতোই সহজ সরল অমায়িক ব্যবহার। বিশ্বাসই হতে চায়না যে, এই মানুষটিই এক সময় বিধ্বংসী মারনাস্ত্র হাতে নিয়ে দাবড়ে বেরিয়েছেন পাহাড়-নদী-খাল।’
প্রফেসর সিদ্দিকী সাহেবের উপরোক্ত লেখাটি পড়ে বঙ্গবীরের বিরহজ্বালা শতগুনে বর্ধিত হয়ে এখন তা প্রায় আকাশচুম্বী হয়ে উঠেছে। কোথায় গেলে তাকে পাবো, কার কাছে জানতে চাইবো তার ঠিকানা, তার কোন ফোন নাম্বারও জানা নেই, ঢাকাতে তার বাসা কোথায় তাও তো জানিনা।
অতএব হে বঙ্গবীর, তোমার কাছে আবেদন রইলো, তোমার সাথে দেখা হওয়ার আগে যদি আমি পরপারে চলে যাই, আর আমার এ অসমাপ্ত লেখাটুকু যদি কারও মাধ্যমে কোনক্রমে তোমার হাতে পৌছে, তবে কষ্ট হলেও আমার কবরের পাশে এসে একটু দাঁড়িও। আমার অতৃপ্ত বিদেহী আত্মা তোমায় দেখে একটু শান্তি পাবে। আর যদি ভাগ্যক্রমে তোমায় পেয়ে যাই তবে তো মনপ্রাণ উজাড় করে তোমার সাথে কথা বলতে পারবো।
প্রশ্ন করতে পারো, তোমার সাথে আমার কোন চেনা-জানা নেই, নেই কোন আত্মীয়তার সম্পর্ক। আমার জন্য এত ব্যস্ততা কেন? জবাবে বলবো, হে বাঙালী জাতির গৌরব, হে বাংলার লৌহমানব, তোমাকে তো আজ আমি নতুনভাবে চিনছিনা। সেই স্বাধীনতার সংগ্রাম থেকেই তো তোমার সাথে আমার পরিচয়, ব্যতিক্রম শুধু এটুকুই যে, অদ্যবধি আমি তোমাকে স্বচক্ষে দর্শন করতে সক্ষম হইনি। কেন তোমাকে সব সময় আমার আপন ভাইয়ের মতো মনে হয়। তুমি যদি টাংগাইলের সেই রত্নগর্ভা মহিয়সী মায়ের গর্ভে না জন্মে আমার দুঃখিনী মায়ের গর্ভে জন্ম নিতে তাহলে তো তোমাকে হয় বড় ভাই, না হয় ছোট ভাইয়ের মতোই সব সময় কাছে পেতাম।
হে স্মরণীয় বরণীয় বঙ্গবীর, তোমার সাথে দেখা হলে তোমার কাছে জানতে চাইবো, দেশমাতৃকাকে শত্রুমুক্ত করার জন্য প্রাণের মায়া বিসর্জন দিয়ে প্রাণপণে যুদ্ধ করে এদেশকে শত্রুমুক্ত করেছো তার জন্য দেশবাসী তোমার কাছে চির ঋণী। কিন্তু এ দেশবাসীকে স্বাধীনতা দিতে পারলেনা কেন? দেশের মানুষ আজ স্বাধীনভাবে চলতে পারছেনা কেন? মানুষের বাকস্বাধীনতা হরণ করা হলো কেন? কেন মানুষের স্বজন হারানোর ব্যথা? কেন আর্তনাদ, কেন হাহাকার আর বুকফাটা দীর্ঘশ্বাস? দেশের মানুষ এই কি আশা করেছিল?
হে বঙ্গবীর, তোমার মতো আরও যারা বীরশ্রেষ্ঠ, বীর প্রতীক, বীর উত্তম রয়েছেন তাদের কাছেও আমার একই প্রশ্ন। তোমরা সবাই এক হও, জাতির এই মহাসংকটে তার পাশে দাঁড়াও। পরিত্রাণের একটা পথ আবিষ্কার করো। নইলে লাখো শহীদের আত্মা তোমাদিগকে অভিশাপ দেবে।
হে বাংলার অগ্নিপুরুষ, আমি অত্যন্ত আশাবাদী, তোমার কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের ব্যাপারে। আমার মন কেবলই বলছে, এ দেশবাসী তোমার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের অছিলায় একদিন এ মহা সংকট হতে পরিত্রাণ পাবে। অমানিশার ঘোর তমসার অবসান হয়ে পূর্ব দিগন্তে ঊষার আলো প্রতিভাত হবে।
হে বঙ্গবীর, আমি কথা দিচ্ছি, জীবন মরণের এই সন্ধিক্ষণে এসে যতটুকু সময় সামনে আছে এটুকু নিয়েই সর্বদা তোমার পাশে থাকবো। ছুটে বেড়াব দেশের আনাচে কানাচে, গ্রামেগঞ্জে, পথে-প্রান্তরে। ডাক দেব উৎপীড়িত মানুষদের, তোমরা এসো সমবেত হও, বঙ্গবীরের গামছার ছায়াতলে। এই গামছাই তোমাদেরকে রক্ষা করবে রোদ-বৃষ্টি-ঝড়ের কবল থেকে।
দুর্বল পদযুগলের কাছে স্বীকৃতি পেয়েছি, ওরা আমার দেহভার বহণ করে টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া পর্যন্ত ঘুরে বেড়াতে প্রস্তুত আছে। জীবনের বহু মূল্যবান সময় অপচয় করেছি, বাকী সময়টুকু যদি একটু কাজে লাগাতে পারি এই আশায় তাবলিগী ভাইদের মতো গাট্টি-বোচকা বেধে অনতিবিলম্বে তোমার খোঁজে গৃহত্যাগী হবো। পিছু টানার মতো কেউ নেই, যে ছিল সে অনেক আগেই আমাকে যা দেবার তা দিয়ে চিরদিনের জন্য অজানা এক দেশে চলে গেছে। সেখানে নাকি সে খুব শান্তিতে অবস্থান করছে এবং আমাকেও যাওয়ার জন্য সর্বদাই আহবান করছে। সেখানে যাবার জন্যই প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। সহসায় তোমার মায়ায় পড়ে একটু ইতস্ততঃ করছি। যাই হোক, হে বঙ্গবীর, তোমার নবগঠিত গামছা বাহিনীকে নিয়ে এ দেশের সমস্ত অপশক্তি, অনাচার-অবিচার ঝটিকাহত মুলোৎপাটিত কদলীবৃক্ষতুল্য ধরাশায়ী করে পদদলিত নিষ্পেষিত করে সাফল্যের সর্বোচ্চ শিখরে যেন আরোহণ করতে পারে মহান রাব্বুল আল আমীনের দরবারে এই প্রার্থণা করি।
লেখকের গ্রাম ও পো. গোয়ালের চর, ইসলামপুর, জামালপুর



 

Show all comments
  • Alamin Riyad ২৩ এপ্রিল, ২০১৯, ১:৫৩ এএম says : 0
    ধন্যবাদ ভাই
    Total Reply(0) Reply
  • HM Kamal Sikder ২৩ এপ্রিল, ২০১৯, ১:৫৩ এএম says : 0
    শুভ জন্মদিন ৭১এর বীর সেনানী।
    Total Reply(0) Reply
  • Musha Hak ২৩ এপ্রিল, ২০১৯, ১:৫৩ এএম says : 0
    আলহামদুলিল্লাহ ভাই জান আপনাকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই
    Total Reply(0) Reply
  • MD Dalower Hossain Shorub ২৩ এপ্রিল, ২০১৯, ১:৫৪ এএম says : 0
    সত্য বলা মহা পাপ বর্তমানের রীতি, সত্যকে আজ মিথ্যা বলা এই দুনিয়ার নীতি, সত্যকে সত্য বলে দেয়না কেউ ঠাই, মিথ্যা এই দুনিয়াতে সত্য বলা নাই, মন থেকে দোয়া থাকল এই লোকটার প্রতি
    Total Reply(0) Reply
  • Rafique Md Lutfar ২৩ এপ্রিল, ২০১৯, ১:৫৪ এএম says : 0
    বঙ্গবীর সত্যি একজন ভাল মানুষ, অনেক কাছ থেকে ওনাকে দেখেছি। তবে সম্ভব হয়েছে মানিক দাদুর জন্যই। মায়াসসালাম।
    Total Reply(0) Reply
  • Shamsuddin Mahmud ২৩ এপ্রিল, ২০১৯, ১:৫৪ এএম says : 0
    শুভ কামনা রইলো..!
    Total Reply(0) Reply
  • মোঃ দিদারুল ইসলাম ২৩ এপ্রিল, ২০১৯, ১১:৪৩ পিএম says : 0
    ধন্যবাদ প্রিয় ভাই, এই মিথ্যার বাজারে সৎ সাহসের সহিদ সত্য প্রকাশ করার জন্য, মহান রাব্বুল আলামীনের নিকট প্রার্থনা করি অতি তাড়াতাড়ি বঙ্গবীর সহিত আপনার দেখা করিয়ে মহান আল্লাহ আপনার মনোবাসনা পূরণ করুন আমিন।
    Total Reply(0) Reply
  • নূর মোহাম্মদ জোবায়ের হোসেন ১ অক্টোবর, ২০২০, ৯:৩৯ পিএম says : 0
    নাইস
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বঙ্গবীর

১ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

আরও
আরও পড়ুন