বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
রাজধানীর ফুটপাতে আবারও বসতে শুরু করেছে হকার। এতে পথচারীদের চলাচল বাধাগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি সড়কে যানজটের মাত্রাও বেড়ে গেছে। গত কয়েক দিনে গুলিস্তাান, মতিঝিল, বায়তুল মোকাররম ও পল্টনের আশপাশের এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। এর আগে গত ২০ ফেব্রæয়ারি গুলিস্তান এলাকার ফুটপাত অবৈধ দখলমুক্ত করা হয়। এরপর থেকে প্রায় দুই মাস ধরে গুলিস্তান এলাকা হয়ে বিভিন্ন স্থানে যাতায়াতে স্বাচ্ছন্দ্য ছিল। এতে সন্তোষ প্রকাশ করেছিল পথচারীরা। তবে অতীতের মতো এবারও উচ্ছেদের পর হকার বসায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে তারা।
রাজধানীর শান্তিনগর থেকে প্রতিদিনই বংশালে যাওয়া-আসা করেন ব্যবসায়ী জাফর আহমেদ। তিনি বলেন, কোনো ধরনের ঝামেলা ছাড়াই গুলিস্তান এলাকা থেকে হকারদের উচ্ছেদের পর গোটা এলাকাতেই যেন স্বস্তি নেমে এসেছিল। তবে এবারও এই অভিযান টেকসই না হওয়াটা দুঃখজনক। অল্প কিছু লোক জোরজবরদস্তি করে ফুটপাত দখল করে ব্যবসা করবেন আর নগরীর লাখ লাখ পথচারী বছরের পর বছর দুর্ভোগ পোহাবে, এটা মোটেই যুক্তিসংগত নয়। এটা অনুচিত। এ কারণে শহর স্থবির হয়ে পড়েছে।
হকারদের জন্য রাজধানীর গুলিস্তান, মতিঝিল, পল্টন এলাকার যে ফুটপাত দিয়ে চলাচল করাই মুশকিল ছিল, ডিএসসিসি ও ডিএমপির যৌথ উদ্যোগে বদলে যায় সেই দৃশ্য। তারপর থেকে কিছু দিন আগেও এসব ফুটপাতে কোন দোকান ছিল না। ফলে স্বচ্ছন্দে চলাচল করতে পেরে সন্তুষ্টিও প্রকাশ করেছিলেন পথচারীরা। কিন্তু ডিএসসিসির ফুটপাত দখলমুক্ত রাখার এ উদ্যোগ দুই মাসও টেকেনি।
গতকাল শনিবার সরেজমিনে দেখা গেছে, রাজধানীর মতিঝিল, গুলিস্তান, পল্টন, জিপিও ভবনের পশ্চিম পাশের সড়ক, জিরো পয়েন্টের দক্ষিণ পাশে খদ্দর বাজার শপিং কমপ্লেক্স, গোলাপ শাহ মাজারের উত্তর-পূর্ব দিকে অবস্থিত রমনা ভবন ও রেলওয়ে সুপার মার্কেট, বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ, ফুলবাড়িয়া সুপার মার্কেট ও ঢাকা ট্রেড সেন্টারের সামনের সড়কের ফুটপাত দখল করে আবার আগের মতোই হকাররা বিভিন্ন পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছেন। এর মধ্যে জিপিও ভবনের পশ্চিম পাশের সড়কের ফুটপাতে ও খদ্দর বাজার শপিং কমপ্লেক্সের সামনে হকাররা বিভিন্ন প্রকার ফল বিক্রি করছেন। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ, ফুলবাড়িয়া সুপার মার্কেট ও ঢাকা ট্রেড সেন্টারের সামনের ফুটপাতে পোশাক নিয়ে বসেছেন হকাররা।
রেলওয়ে সুপার মার্কেটের সামনের ফুটপাতে শিশুদের পোশাক বিক্রি করছেন রবিউল। তিনি বলেন, আগের মতো কড়াকড়ি নেই। তাই সাহস করে বসে গেছি। তবে যখন পুলিশ আসে, তখন সরে যাই। তবে রায়হান নামের আরেক হকার বলছেন, পুলিশ তাঁদের বসতে দিচ্ছে না। দক্ষিণ দিকে অভিযান শুরু হলে উত্তর দিকের হকাররা সরে যান। আবার উত্তর দিকে শুরু হলে দক্ষিণ দিকের হকাররা সরে যাচ্ছেন। বেশ কয়েকটি স্থানে হকাররা বসলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যের উপস্থিতিও আছে গুলিস্তানে। কয়েকটি স্থানে পুলিশের পাহারাও দেখা গেছে।
গুলিস্তান এলাকায় আবার হকাররা পণ্য বিছিয়ে বসলেও মতিঝিল ও বায়তুল মোকাররমের পশ্চিম পাশের সড়ক এখনো অনেকটাই হকারমুক্ত দেখা গেছে। কয়েকটি স্থানে বিচ্ছিন্নভাবে হকাররা বসলেও ওই পথ হয়ে এখনো নির্বিঘে্ন পথচারীরা চলাচল করতে পারছেন। তবে পল্টন এলাকায় কয়েকটি স্থানে হকারদের বসতে দেখা গেছে।
গোলাপ শাহ মাজার এলাকায় আবদুর রহমান নামের আরেক পথচারী বলেন, গত দেড় মাস স্বচ্ছন্দে গুলিস্তান এলাকায় চলাচল করেছি। যানবাহনের চলাচলও ছিল স্বাভাবিক। তবে আস্তে আস্তে আগেরই চিত্রই দেখা যাচ্ছে।
গুলিস্তান এলাকায় হকাররা বসেছেন, এটা জানা নেই দাবি করে ট্রাফিক দক্ষিণ বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) এস এম মুরাদ আলী বলেন, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক ও ক্রাইম বিভাগের সম্মিলিত প্রচেষ্টা না থাকলে এই পরিস্থিতি ধরে রাখা সম্ভব হবে না।
রাজধানীর মুগদাপাড়া থেকে মতিঝিল পর্যন্ত লেগুনায় আসেন বেসরকারি চাকরিজীবী নাজমুল হক। এরপর হেঁটে পল্টনে অফিসে পৌঁছান। তিনি বলেন, ফেব্রুয়ারির শেষভাগ থেকে ফুটপাত দিয়ে স্বাচ্ছন্দে হাঁটতে পেরেছিলাম, একটি দোকান বা হকারও ছিল না। হেঁটে যাওয়ার মত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। কিন্তু দেড়-দুই মাস না যেতেই আবারও ফুটপাত দখল নিয়েছে হকাররা, ফলে আগের মত বিড়াম্বনা ফিরে এসেছে।
আরেক পথচারী সবুজ আহমেদ বলেন, গুলিস্তান, মতিঝিল, পল্টন এলাকায় প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ হেঁটে চলাচল করে। কিছু দিন ফুটপাত দখলমুক্ত থাকায় সবাই খুব ভালোভাবে চলাচল করতে পেরেছিল। কিন্তু বর্তমানে আবারও দখল হওয়ায় ফুটপাত দিয়ে চলাচল করা কঠিন হয়ে পড়েছে। তাই বাধ্য হয়ে পথচারীদের মূল সড়ক ধরে হাঁটতে হচ্ছে। যে কারণে দুর্ঘটনার শঙ্কা বাড়ার পাশাপাশি যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। ডিএসসিসির উচিত পথচারীদের কথা মাথায় রেখে ফুটপাত দখলমুক্তে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান বলেন, ফুটপাত দখলমুক্ত রাখতে আমাদের তৎপরতা অব্যাহত আছে। আমরা অভিযান চালিয়ে ফুটপাত দখলমুক্ত করি। কিন্তু চলে আসার পর হকাররা অনেক সময় আবার বসে পড়ে। তাদের তো সব সময় আর পাহারা দেয়া সম্ভব না। তবে ফুটপাত দখলমুক্ত রাখতে আমাদের নিয়মিত প্রক্রিয়া অব্যাহত আছে।
ট্রাফিক পূর্ব বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) এ এইচ এম কামরুজ্জামান বলেন, ফুটপাত থেকে হকার সরানোর সিদ্ধান্তে কোনো শিথিলতা আসেনি। সিদ্ধান্ত আগের মতোই আছে। যদি কেউ বসে থাকেন, তাহলে তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে সার্বক্ষণিক পুলিশ পাহারায় হকার সরানো কঠিন কাজ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নগর পরিচালনার দায়িত্বে যাঁরা আছেন, তাঁদের এ বিষয়ে এগিয়ে আসতে হবে। যাঁদের উচ্ছেদ করা হয়েছে, তাঁদের কেউ ঢাকা ছেড়ে যাননি। সুতরাং এ বিষয়ে নগরের শীর্ষ কর্তাদের উচিত আমাদের সহযোগিতা করা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।