পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
কথাশিল্পী মঞ্জু সরকারের একই উপন্যাসের নাম ‘উচ্ছেদ উচ্ছেদ খেলা’। ওই উপন্যাসের মতোই রাজধানী ঢাকার ফুটপাথ হকারমুক্ত করতে চলে উচ্ছেদ উচ্ছেদ খেলা। একদিকে উচ্ছেদ করা হয় অন্যদিকে ফের ফুটপাথ দখল করে পশরা নিয়ে বসে হকারা। হকারদের বক্তব্য নিয়মিত চাঁদা দিয়ে তারা ফুটপাথে দোকান করছেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ফুটপাথে দোকান বসানো হকারদের কাছে ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতাকর্মী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়মিত চাঁদা নেন। কোনো কোনো এলাকায় মাসিক চাঁদাও আদায় করা হয়। এমনকি হকারদের বসতে দেয়ার জন্য ফুটপাথ ‘ভাড়া’ দেয়াও হয়, ‘বিক্রি’ করা হয়। ফলে যারা হকার উচ্ছেদ করেন তারাই আবার চাঁদা নিয়ে ফুটপাথে দোকান বসানোর ব্যবস্থা করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কয়েক বছর আগে রাজধানীর ফুটপাথ হকারমুক্ত করতে নির্দিষ্ট জায়গায় হকারদের বসানোর ব্যবস্থা করা হয়। রাজধানীর মৎস্য ভবনের সামনের রাস্তা, আইডিয়াল স্কুলের পাশের রাস্তায় শুক্রবার হকারদের পশরা নিয়ে বসার দৃশ্য দেখা গেছে। কিন্তু পরবর্তীতে সেটা আর থাকেনি। আগের মতোই দৈনিক চাঁদা, মাসিক চাঁদা দিয়ে হকাররা ফুটপাথ দখল করে ব্যবসা করছে। এতে রাজধানীর বেশির ভাগ রাস্তা দখল হওয়ায় নিত্য যানজট লেগেই থাকছে। আর পথচারীদের মূল সড়ক দিয়ে চলাফেরা করতে হচ্ছে।
গত কয়েক দিন রাজধানীর গুলিস্তান, পল্টন, নিউমার্কেট, সায়েন্স ল্যাবরেটরি, এলিফ্যান্ট রোড, ধানমন্ডি, ঢাকা কলেজের সামনে, গাউসিয়া মার্কেট এলাকা, ফার্মগেট, উত্তরা, বাড্ডা, রামপুরা, মালিবাগ, মৌচাক, খিলগাঁও, মহাখালী, মতিঝিল, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী, পুরান ঢাকার বংশাল, মিরপুর এলাকা ঘুরে দেখা গেছে অধিকাংশ সড়ক ও মোড়ে হকার ফুটপাথ দখল করে পশরা নিয়ে বসেছেন। অনেক স্পটে রাস্তার বেশির ভাগ দখল করে দোকান বসানোয় যানবাহন ও পথাচারীদের চলাফেরা করাই দায় হয়ে গেছে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন ইনকিলাবকে বলেন, ফুটপাথে যারা ব্যবসা করেন তাদের একটা নির্দিষ্ট জায়গায় বসতে দিতে হবে। যাতে তারা সুশৃঙ্খলভাবে ব্যবসা করতে পারেন। ফুটপাথ হাঁটার জন্য তাই মানুষের চলাচলের জায়গা ঠিক রাখতে হবে। তাদের নিকট থেকে চাঁদা আদায় করা যাবে না। একেক পক্ষ তাদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করে। যেখানেই হোক একটা নির্দিষ্ট জায়গা ঠিক করে দিতে হবে। নির্ধারিত জায়গায় ক্রেতারা সেখানে যাবেন। তাহলে ফুটপাথে শৃঙ্খলা আসবে।
রাজধানীতে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও দোকানের ভারে অদৃশ্য ফুটপাথ। ঢাকায় সুন্দর ও সুশৃঙ্খলভাবে চলাচলের জন্য হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে নির্মাণ করা হয় ফুটপাথ। কিন্তু সেই চলাচলের ফুটপাথ এখন প্রভাবশালীদের দখলে। চলাচলের ফুটপাথের উপর দোকান ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান বসিয়ে সিন্ডিকেট করে প্রভাবশালীরা হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা। এই সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত রয়েছেন রাজধানীর রাজনৈতিক নেতাসহ এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনের আওতাধীন এলাকার মধ্যে ফুটপাথ দখল করে ব্যবসা কারা এবং ফুটপাথ থেকে টাকা আদায় করা এখন নিত্যনৈমত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজধানীর প্রায় সব এলাকাতেই রয়েছে ফুটপাথে ব্যবসার প্রচলন। এখন শুধু এই ব্যবসা ফুটপাথেই সীমাবদ্ধ নেই। এই ব্যবসা এখন রাজধানীর সড়কগুলোতেও দেখা যাচ্ছে। ফুটপাথ বন্ধ করে ব্যবসা করার পাশাপাশি রাস্তার প্রায় অর্ধেক জায়গাজুড়ে বিভিন্ন এলাকায় এখন বসছে নানা পণ্যের দোকান। রাস্তা বন্ধ করে দোকান বসানোর কারণে তীব্র যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। রাস্তার উপর বা ফুটপাথে দোকান করার কারণে পথচারীদের চলতে পড়তে হয় নানা প্রতিবন্ধকতায়। এছাড়া এসব ফুটপাথের দোকানগুলোর কোনো নির্দিষ্ট খোলার ও বন্ধের সময় নেই। যে যার মতো খোলে ও বন্ধ করে। এসব অভিযোগ সাধারণ নাগরিকদের।
জানা যায়, রাজধানীর গুলিস্তান, পল্টন, নিউমার্কেট, সায়েন্স ল্যাবরেটরি, এলিফ্যান্ট রোড, ধানমন্ডি, ঢাকা কলেজের সামনে, গাউসিয়া মার্কেট এলাকা, ফার্মগেট, উত্তরা, বাড্ডা, রামপুরা, মালিবাগ, মৌচাক, খিলগাঁও, মহাখালী, মতিঝিল, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী, পুরান ঢাকার বংশাল, নবাবপুর এলাকায় নিয়মিতই বসে ফুটপাথে শত শত দোকান।
সরকারের দোকান বন্ধ করার নির্ধারিত সময়ের পরও এসব দোকান খোলা রাখা হয়। রাতের বেলায় অধিকাংশ দোকানই খোলা রাখা হয়। আর এসব দোকানে রাস্তার পাশের বিদ্যুতের খুঁটি থেকে বিদ্যুতের লাইন নামিয়ে অবৈধ সংযোগ দেয়া হয়। এতে বিদ্যুতের অপচয় বাড়ে। কোনো কোনো দোকানে পাশের দোকানের বৈধ লাইন থেকে মাসিক টাকার বিনিময়ে অবৈধ বিদ্যুতের লাইন নামানো হয়। এভাবে ঝুঁকিপূর্ণ লাইন ব্যবহারের কারণে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে। এককালীন মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে এসব দোকানের জন্য জায়গা নিতে হয়। তারপরও মাসিক প্রতি দোকান থেকে ২ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকা দিয়ে দোকান বসাতে হয়। এরপর দৈনিক ১০০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত দিতে হয় বলে জানিয়েছেন রাজধানীর ফুটপাথের কয়েকজন দোকান মালিক।
তারা বলছেন, দোকানের আকারের ওপর নির্ভর করে দোকানের ভাড়া। ছোট দোকান হলে কম টাকা আর বড় দোকান হলে বেশি টাকা দিতে হয় লাইনম্যানকে। এসব দোকানের লাইনম্যানই সব। লইনম্যানকে ঠিক রাখতে পারলে তার দোকানের আর কোনো সমস্যা নেই। প্রতিটি দোকানেরই রয়েছে অঘোষিত ইজারা, খারিজ, জমা এবং ভাড়া। এই সবকিছুই নিয়ন্ত্রণ করে লাইনম্যান নামক ব্যক্তি। এসব দোকানের দৈনিক হারে আদায় করা ভাড়ার পাশাপাশি অন্য নির্দিষ্ট ব্যক্তিরা আদায় করেন চাঁদা। রাজধানীর কোনো কোনো এলাকায় সকাল বেলা বসা মাছের বাজার থেকে শুরু করে অন্য সমগ্রীর ক্রেতাদের কাছ থেকে ১০ থেকে ২০ টাকা চাঁদা আদায় করা হয়। চাঁদা আদায়ের বিষয়ে পরিচয় গোপন রেখে চাঁদা আদায়কারী কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা যায় নিয়মিতই চাঁদা আদায় করা হয়। এই টাকা এলাকার কতিপয় প্রভাবশালীর হাত হয়ে উপরের লোকজনের কাছ পর্যন্ত পৌঁছাতে হয়।
ফুটপাথে দোকান করতে হলে চাঁদা দিতে হয়, না দিলে দোকান ভেঙে রাস্তায় ফেলে দেয়া হয় অথবা পুলিশ দিয়ে উঠিয়ে দেয়া হয়। সিটি করপোরেশনের উচ্ছেদ অভিযান হয় এসময় দোকান ভেঙে ফেলা হয়। কোনো কোনো সময় ফুটপাথের ব্যবসায়ীকে আটক করে নিয়ে যায়। তারপর লাইনম্যানের সহযোগিতায় আটককারীদের ফিরিয়ে আনতে হয় বলে জানিয়েছেন কয়েকজন ব্যবসায়ী।
ইতোমধ্যে ২৪ আগস্ট থেকে সব সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের অফিস সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত খোলা থাকবে গত সোমবার মন্ত্রিসভা বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম এ তথ্য জানান। বৈশ্বির পরিস্থিতির কারণে সম্প্রতি বিদ্যুৎ এবং জ্বালানি সাশ্রয়ের জন্য অফিসের কর্মঘণ্টা কমানোর বিষয়টি আলোচনায় আসে। এছাড়া রাত ৮টার পর দোকানপাট, শপিংমল বন্ধ রাখার বিষয়ে সরকারি নির্দেশনা ইতোমধ্যে কার্যকর হয়েছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ে আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে এলাকার কোন প্রতিষ্ঠান কখন বন্ধ থাকবে তা নির্ধারণ করে গণবিজ্ঞপ্তি দিয়েছে সংস্থাটি। গত সোমবার গণবিজ্ঞপ্তি দিয়ে এই সিদ্ধান্তের কথা জানায় ডিএসসিসি। এতে বলা হয়, বিশ্বব্যাপী জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির কারণে গত ১৬ জুন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ে রাত ৮টা পর্যন্ত দোকান, শপিংমল, মার্কেট, বিপণি বিতান, কাঁচাবাজার খোলা রাখার নির্দেশনা দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। এই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে ডিএসসিসি এলাকার সব দোকানপাট, শপিংমল, মার্কেট, বিপণি বিতান, কাঁচাবাজার ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রাত ৮টার মধ্যে বন্ধ করতে হবে।
এতে ডিএসসিসি এলাকায় শৃঙ্খলা আসবে এবং ঢাকা শহর পরিচালনার সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা তৈরি হবে। ক্যাটাগরি অনুযায়ী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বা দোকান বন্ধের সময়সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছে ডিএসসিসি। এর মধ্যে সব দোকানপাট, শপিংমল, মার্কেট, বিপণি বিতান, কাঁচাবাজার, ব্যবসায়িক-বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান রাত ৮টার মধ্যে বন্ধ করতে হবে। সব ধরনের খাবারের দোকান বা রেস্তোরাঁর রান্নাঘর বন্ধ করতে হবে রাত ১০টার মধ্যে। আর খাবার সরবরাহ (পার্সেল) চলবে রাত ১১টা পর্যন্ত।
এছাড়া চলচ্চিত্র প্রেক্ষাগৃহসহ চিত্তবিনোদনমূলক প্রতিষ্ঠান বা স্থাপনা রাত ১১টার মধ্যে বন্ধ করতে হবে। সাধারণ ওষুধের দোকান বন্ধ করতে হবে রাত ১২টার মধ্যে। আর হাসপাতালের সঙ্গে সংযুক্ত নিজস্ব ওষুধের দোকান বন্ধ করতে হবে রাত ২টার মধ্যে।
রাজধানীতে বসবাসকারী কয়েকজন সাধারণ নাগরিক বলছেন, ফুটপাথের অবৈধ দখল, মানুষের চলাচলের রাস্তায় বসানো হয় দোকান। ব্যবসা আর চাঁদাবাজি চলে এটা পুরনো একটি সমস্যা। নির্দিষ্ট একটি মহলের পকেট ভরলেও সাধারণ মানুষের চলাচল হচ্ছে কঠিন। কোথাও সারি সারি পণ্যের সাজানো দোকান। কোথাও আবার বসেছে বাজার। কাগজে-কলমে কোথাও এমন অবৈধ দোকান বসানোর অনুমতি না থাকলেও কোনো এক অদৃশ্য নির্দেশে বহাল তবিয়তে চলছে ব্যবসা-বাণিজ্য। রাজধানীর সকল এলাকার ফুটপাথের দোকান উঠিয়ে সাধারণ মানুষের চলাচলের ব্যবস্থা করার দাবি তাদের।
গুলিস্তানের ফুটপাথে ব্যবসা করেন শফিকুল ইসলাম। তার গুলিস্তান এলাকায় দুইটি দোকান। এই ফুটপাথের দোকান দিয়েই চলে তার সংসার জানালেন শফিকুল। ৬ জনের সংসারে শফিকুল ও তার ছোট ভাইকে নিয়ে চালান ফুটপাথে কাপড়ের দোকান। তার দোকানে বিক্রি ভালো তবে মাঝে মাঝে পুলিশ এসে অভিযান চালালে বিক্রি কমে যায়। দোকান ভাড়া প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলে তিনি জানান, লাইনম্যানের কাছে টাকা দেই এটুকুই জানি। এর বাইরে কিছু বলতে রাজি হননি তিনি।
সাইফুল নামের এক পথচারী বলেন, রাজধানীতে এখন আর কোনো ফুটপাথ নেই। সব ফুটপাথেই দোকান বাসানো হয়। প্রত্যেকটি বাণিজ্যিক এলাকায় এই ফুটপাথ দখল করে গড়ে উঠেছে বিশাল বাজার। ফুটপাথের ব্যবসায়ীরা এখন শুধু ফুটপাথেই দোকান বসান না। সড়কের অর্ধেকটা পর্যন্ত দখল করে নিয়েছেন। এসব সড়ক দিয়ে ঝুঁকি নিয়েই যাতায়াত করতে হয়। এ কারণে সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হতে হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।