Inqilab Logo

শক্রবার ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কুমিল্লায় যৌতুকের বলি অন্ত:সত্ত্বা গৃহবধূ

বাথরুমে লাশ রেখে স্বামীসহ গোটা পরিবার পলাতক

কুমিল্লা থেকে স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২০ এপ্রিল, ২০১৯, ৩:১৫ পিএম

কুমিল্লায় যৌতুকের জন্য জীবন দিতে হয়েছে টুম্পা নামের এক অন্ত:সত্ত্বা গৃহবধূকে। স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনের নির্মম নির্যাতনের শিকার ওই গৃহবধূকে শ্বাসরোধে হত্যা করে লাশ বাথরুমে রেখে গোটা পরিবার লাপাত্তা। নিহতের পরিবারের অভিযোগ স্বামী, শাশুড়ি, দেবর ও ভগ্নীপতি মিলে অন্ত:সত্ত্বা টুম্পাকে হত্যা করেছে।
কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার ঢালুয়া ইউনিয়নের উরকুটি গ্রাম। সবুজ শ্যামলিমায় ভরা ওই গ্রামের আলো-বাতাসে বেড়ে ওঠা কৃষক কন্যা টুম্পার স্বপ্ন ছিল শিক্ষকতা করার। কৃষক আনোয়ার উল্লাহ মজুমদার হারুনের কিন্তু বিএ পাস করার পর বিয়ের সিঁড়িতে বসার মধ্যদিয়ে বিদেশ ফেরত স্বামীর ইচ্ছে না থাকায় আর উচ্চশিক্ষার দিকে যেতে পারেনি। গ্রামের কোন স্কুল বা কিন্ডারগার্ডেনে শিক্ষকতা করবে এমন ইচ্ছেও পূরণ করতে নারাজ ছিল টুম্পার স্বামী। কয়েক বছর আগে বিদেশ থেকে দেশে এসে গ্রামে ব্যবসা খুলে বসবে এমনটি ভাবতে ভাবতেই প্রায় সাত মাস আগে আকদের মধ্যদিয়ে পারিবারিকভাবে টুম্পার সাথে বিয়ে হয় একই উপজেলার বক্সগঞ্জ ইউনিয়নের মদনপুর গ্রামের পালোয়ান বাড়ির আমিন মিয়ার ছেলে দুলাল মিয়ার সাথে। টুম্পার বাড়িতে দুলালের যাতায়াত থাকে। এরিমধ্যে টুম্পা পাঁচ মাসের অন্ত:সত্ত্বা হয়ে পড়েন।

গত ৪ এপ্রিল মোমেনা আক্তার ওরফে টুম্পাকে আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে দেয়া হয় দুলালের হাতে। এসময় দুলাল ও তার পরিবারের চাহিদা অনুযায়ি টুম্পাকে স্বর্ণালঙ্কারসহ প্রয়োজনীয় সবকিছুই দেয়া হয় মেয়ে বিদায়ের সময়। ৭ এপ্রিল টুম্পা বেড়াতে আসে পিত্রালয়ে। এসময় দুলাল তার ব্যবসার জন্য টাকা ও ঘর সাজানোর আসবাবপত্র দাবী করে। টুম্পার পরিবার থেকে যৌতুকের এ চাহিদা পূরণে অপারগতা প্রকাশ করলে দুলাল পরদিনই টুম্পাকে নিয়ে তার বাড়িতে চলে যায়। তারপর শুরু হয় যৌতুকের জন্য টুম্পার ওপর শারিরিক নির্যাতন। টুম্পার ওপর দুলাল ও তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা নির্যাতন করে এসব খবর টুম্পার পরিবার জানতে পেরে মেয়েকে ধৈর্য্য ধরে সংসার করার পরামর্শ দেয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত য়ৌতুকের বলি হয়েই টুম্পা জীবনের ধৈর্য্যরে সমাপ্তি ঘটে। শুক্রবার দুপুরে দুলালের ঘরের বাথরুম থেকে গলায় কাপড়ের রশি পেছানো অবস্থায় টুম্পার লাশ উদ্ধার করে নাঙ্গলকোট পুলিশ। টুম্পার ছোট ভাই কলেজ ছাত্র মহিউদ্দিন জুলহাস জানান, শুক্রবার দুপরে দুলালের পাশের বাড়ির মর্জিনা নামের এক আত্মীয়ের মোবাইল ফোনে জানতে পারে টুম্পার মৃত্যুর খবর। এসময় তারা ঢালুয়া ইউপি চেয়ারম্যান নাজমুল হাসান বাছিরকে সাথে নিয়ে দুলালের বাড়িতে গিয়ে দেখে বাথরুমে টুম্পার মৃতদেহ পড়ে রয়েছে। বাড়িতে দুলাল ও তার বাবা-মাসহ কেউই নেই। পরে পুলিশে খবর দিয়ে লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসা হয়। শনিবার সকালে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে টুম্পার লাশের ময়নাতদন্ত করা হয়।

নিহত টুম্পার ভাই নিজাম উদ্দিন জানান, যৌতুকের জন্যই তার বোনকে শ্বাসরোধে দুলাল ও তার পরিবারের অন্যরা খুন করেছে। এঘটনায় নিজাম উদ্দিন তার বোন টুম্পাকে যৌতুকের জন্য হত্যা করেছে বলে থানায় দুলালসহ চারজনের নামে অভিযোগ করেছেন। থানার উপরিদর্শক ফরিদ আহাম্মদ জানান, লাশের ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পর আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। যাদের নামে অভিযোগ করা হয়েছে তারা ঘটনার পর থেকেই পলাতক রয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: লাশ উদ্ধার


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ