Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কিলিং মিশনে সরাসরি অংশ নেয় ৫ জন

অন্যতম পরিকল্পনাকারী কাদির ঢাকায় গ্রেফতার মনি ৫ দিনের রিমান্ডে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে পুলিশ সদর দফতরের তদন্ত কমিটি

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৮ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

মাদরাসাছাত্রী নুসরাত হত্যা মামলার অন্যতম আসামি আব্দুল কাদিরকে গ্রেফতার করেছে পিবিআই। মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর মিরপুরের পীরেরবাগ ছাপড়া মসজিদ এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত ছাত্রী মনিকে ৫দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। এ ঘটনায় পুলিশ সদরদফতর থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। গতকাল কমিটি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। সাবেক ওসিকে রক্ষায় পুলিশ সুপার কাজ করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ঘটনায় জড়িত গ্রেফতারকৃত একজন গতকাল আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে। অপরাধীদের গ্রেফতার ও খুনীদের শাস্তির দাবিতে ঢাকা ও ফেনিতে মানববন্ধন করেছে বিভিন্ন সংঘটন। খবর সংশ্লিষ্ট্র সূত্রের।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তারা বলছেন, নুসরাত হত্যাকান্ডে সরাসরি কিলিং মিশনে অংশ নেন ৫ জন, অন্যরা তাদের সহযোগিতা করেন। এর মধ্যে চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পলাতক একজনকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
পিবিআইয়ের প্রধান ডিআইজি বনোজ কুমার মজুমদার জানান, হাফেজ আবদুল কাদির নুসরাত হত্যার অন্যতম পরিকল্পনাকারী। তিনি সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার হেফজ বিভাগের শিক্ষক এবং ফাজিল দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।
পিবিআই জানায়, নুসরাতকে যৌন নিপীড়নের মামলায় সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার প্রিন্সিপাল সিরাজ উদ দৌলা কারাগারে রয়েছেন। নুসরাত হত্যা মামলার আসামি নুর উদ্দিন, শাহাদাত, শামীমসহ কয়েকজন গত ৪ এপ্রিল কারাগারে সিরাজের সঙ্গে দেখা করেন। ওইদিন নুসরাতকে হত্যার জন্য সিরাজ তাদের নির্দেশ দেন।
নুসরাতের পরিবারের অভিযোগ, পুলিশ সুপার এস এম জাহাঙ্গীর আলম সাবেক ওসিকে রক্ষায় কাজ করছেন। গত ১৫ এপ্রিল নুসরাতের ভিডিও ধারণ করে ছড়িয়ে দেয়ায় সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে আইসিটি আইনে মামলা করা হয়েছে। মামলাটি তদন্ত করে পিবিআইকে রিপোর্ট দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআইয়ের পরিদর্শক শাহ আলম জানান, বুধবার দুপুরে এই মামলার আসামি কামরুন নাহার মনিকে জেলা জ্যেষ্ঠ বিচারিক আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়। শুনানি শেষে বিচারক শরাফ উদ্দিন পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
পুলিশ সদর দফতরের এআইজি মিডিয়া সোহেল রানা দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, পুলিশ সদরদফর নুসরাত হত্যাকান্ডের ঘটনা গুরুত্বের সাথে দেখছে। কারো বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ পাওয়া গেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। পুলিশ সুপারের বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
পুলিশ সদর দফতরের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, নুসরাতকে আগুন ধরিয়ে পুড়িয়ে মারার পর পুলিশের ভূমিকা নিয়ে নানা প্রশ্ন ওঠে। বিশেষ করে সোনাগাজীর ওসির বিরুদ্ধে নুসরাতকে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করার সময় ভিডিও ধারন করা এবং সেই ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়গুলোই তদন্তকারীরা বিস্তারিতভাবে জানার চেষ্টা করবেন।
সোনাগাজী (ফেনি) সংবাদদাতা জানান, পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড প্ল্যান) এস এম রুহুল আমিন বলেছেন, নুসরাত হত্যার ঘটনা তদন্তে পুলিশের কোনও গাফিলতি ছিল কিনা তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। সোনাগাজী সিনিয়র ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসায় ঘটনাস্থল পরিদর্শনের সময় বুধবার বিকেলে উপস্থিত সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি আরো বলেন, আমরা তদন্ত কাজ শুরু করেছি। আমরা দুইদিন এখানে থাকব এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সাথে কথা বলব। আশা করি একটি পূর্ণাঙ্গ তদন্ত প্রতিবেদন আমরা আইজিপির কাছে জমা দিতে পারব। ৫ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি কাজ করছে।
ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যাকান্ডের জড়িতদের শাস্তির দাবিতে সোনাগাজীতে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। বুধবার দুপুরে এতে প্রেসক্লাবের সভাপতি শেখ আবদুল হান্নানের সভাপতিত্বে বক্তারা প্রিন্সিপাল সিরাজসহ হত্যাকান্ডে জড়িতদের দ্রুত শাস্তির দাবি জানান। এছাড়া এ ঘটনায় ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে বিভিন্ন সংগঠন। কর্মসূচি পালন করে ডিজিটাল আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ফাউন্ডেশন, সাকসেস হিউম্যান রাইটস সোসাইটি, বিশ্ব প্রবাসী কল্যাণ পরিষদ, মইনীয়া যুব ফোরাম ও নারী নির্যাতন দমন চাঁদনী মঞ্চ। এছাড়া হত্যাকারীদের বিচার দাবিতে এলাকার বিভিন্ন স্কুলের দুই হাজার শিক্ষার্থীসহ শিক্ষক ও অভিভাবকরা মানববন্ধন করেছে। বুধবার ফেনি শহরের শান্তি কোম্পানি রোডের মাথায় ও দাউদপুল এলাকায় এ প্রতিবাদী মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, মাদরাসাছাত্রী নুসরাতকে যৌন নির্যাতন ও আগুনে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় জড়িত সবাইকে দ্রুতবিচার আইনের আওতায় আনা এবং বর্বর এ হত্যাকান্ডে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি দেয়া হোক। যেন ভবিষ্যতে আর কেউ এমন জঘন্য কান্ড করতে ভয় পায়।



 

Show all comments
  • রবিউল ইসলাম ১৮ এপ্রিল, ২০১৯, ১০:০৬ এএম says : 0
    এই পাঁচজনের প্রকাশ্যে ফাঁসি হওয়া দরকার
    Total Reply(0) Reply
  • Mahbub Masum ১৮ এপ্রিল, ২০১৯, ১০:২২ এএম says : 0
    বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি করে দ্রুততম সময়ে এর দৃষ্টান্তমূলক বিচার করতে হবে যাতে করে বাংলাদেশে এমনি করে কোন নুসরাতকে জীবন দিতে না হয়।
    Total Reply(0) Reply
  • Rakibul Islam ১৮ এপ্রিল, ২০১৯, ১০:২৬ এএম says : 0
    মাদরাসাছাত্রী নুসরাতকে যৌন নির্যাতন ও আগুনে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় জড়িত সবাইকে দ্রুতবিচার আইনের আওতায় আনা এবং বর্বর এ হত্যাকান্ডে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি দেয়া হোক।
    Total Reply(0) Reply
  • Polyen Mollik ১৮ এপ্রিল, ২০১৯, ১০:২৯ এএম says : 0
    সত্য উদঘাটন করার জন্য পিবিআইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি
    Total Reply(0) Reply
  • Tanvir Topu ১৮ এপ্রিল, ২০১৯, ১০:৩০ এএম says : 0
    এদেরকে এমন শাস্তি দিতে হবে যে, ভবিষ্যতে যেন কেউ এরকম করা সাহস না পায়
    Total Reply(0) Reply
  • আলী ১৮ এপ্রিল, ২০১৯, ১১:২৫ এএম says : 0
    আকরাম চেয়ারম্যানের বিচার যদি সঠিক ভাবে হতো তাহলে নুরসাত কে আজ জীবন দিতে হতো না আমাদের দেশের বিচার বলে কথা
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: হত্যা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ