পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মাদরাসাছাত্রী নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় সরাসরি অংশ নেয়া কামরুন্নাহার মনিসহ দু’জনকে ফেনী থেকে গ্রেফতার করেছে পিবিআই। গ্রেফতারকৃত মনি হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত কেরোসিন ও বোরখা কিনে এনেছিল। গ্রেফতারকৃত অপর ছাত্রীর নাম জান্নাতুল আফরোজ। নুসরাত হত্যার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত দাবি করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। একই সঙ্গে এর জন্য যারা দায়ীদের সুষ্ঠু বিচারেরও দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
অন্যদিকে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বলেছেন, নুসরাত হত্যা মামলার রায় আগামী একমাসের মধ্যে চাই। দ্রুত তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে পিবিআই প্রতি অনুরোধ করেন তিনি। এছাড়া জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের তদন্ত প্রতিবেদন বলা হয়েছে, স্থানীয় প্রশাসন যথাসময়ে ব্যবস্থা নিলে নৃশংস হত্যাকান্ডের ঘটনা এড়ানো যেত। নুসরাত হত্যাকান্ডের ঘটনায় গতকাল ফেনি ও ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধ করে বিচার দাবি করেছেন বিভিন্ন সংগঠনের নের্তৃবৃন্দ।
পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার বলেন, নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় সরাসরি অংশ নেয়া মনিকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। সে কেরোসিন ও বোরকা কিনে মাদরাসার সাইক্লোন শেল্টারে এনেছিল। তার কাছে আরও বিস্তারিত তথ্য রয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। সে এক লিটার কেরোসিন পলিথিনে বহন করে এনেছিল। এছাড়া জান্নাতুল আফরোজ নামে অপর একজনকে গতকাল গ্রেফতার করা হয়েছে। তাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এ নিয়ে মামলায় এখন পর্যন্ত ১৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
মামলা তদন্তের সাথে জড়িত পিবিআইয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, এ ঘটনায় জড়িতদের মধ্যে ৪জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এছাড়া অন্য যে সব আসামির রিমান্ড মঞ্জুর হয়েছে পর্যায়ক্রমে তাদের কারাগার থেকে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
ওই কর্মকর্তা আরো জানান, এ ঘটনায় আরো কেউ জড়িত রয়েছে কিনা এবং নেপথ্যে থেকে কারা সাহায্য করেছে তা জানার চেষ্টা চলছে। গত রোববার রাতে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে নুসরাত হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন মামলার অন্যতম আসামি নূর উদ্দিন ও শাহাদাত হোসেন শামীম। জবানবন্দিতে তারা নুসরাতের গায়ে আগুন দিয়েছে বলে স্বীকার করেছেন।
গতকাল শাহবাগে জাতীয় যাদুঘরের সামনে যৌন নির্যাতন ও নারী নিপীড়ন প্রতিবাদ আন্দোলনের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত সমাবেশে মানবাধিকার নেত্রী সুলতানা কামাল বলেন, দোষিদের দ্রুত বিচার আইনে বিচার কার্য সম্পন্ন করতে হবে। নুসরাত হত্যাকারীদের বিচারের মধ্য দিয়ে বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বাংলাদেশকে মুক্তি দিতে হবে।
পিবিআই সূত্র জানায়, এখন পর্যন্ত যে ১৬জন গ্রেফতার হয়েছে তারা হলো- মাদরাসার প্রিন্সিপাল এসএম সিরাজউদ্দৌলা, কাউন্সিলর ও পৌর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ আলম, শিক্ষক আবছার উদ্দিন, সহপাঠী আরিফুল ইসলাম, নূর হোসেন, কেফায়াত উল্লাহ জনি, মোহাম্মদ আলাউদ্দিন, শাহিদুল ইসলাম, প্রিন্সিপালের শ্যালিকার মেয়ে উম্মে সুলতানা পপি, জাবেদ হোসেন, যোবায়ের হোসেন, নুর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন, মো. শামীম, কামরুন নাহার মনি ও জান্নাতুল আফরোজ। হাফেজ আবদুল কাদের নামে এজাহারভুক্ত এক আসামিকে এখনো গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। তাকে গ্রেফতারে পুলিশের সাঁড়াশি অভিযান চলছে বলেও জানিয়েছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক মো. শাহ আলম।
পূর্ণাঙ্গ তদন্ত ও বিচার চায় হিউম্যান রাইটস ওয়াচ
নুসরাত হত্যার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত দাবি করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। একই সঙ্গে এর জন্য যারা দায়ীদের সুষ্ঠু বিচারেরও দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি। এর দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক পরিচালক মীনাক্ষি গাঙ্গুগুলি বলেছেন, ন্যায়বিচার চেয়েছিলেন নুসরাত। সাহসী এই মেয়েটিকে ভয়াবহভাবে হত্যা করা হয়েছে। যৌন নির্যাতনের শিকারদের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার কতটা বাজেভাবে ব্যর্থ তা ফুটে উঠেছে এর মাধ্যমে। এই হত্যার মধ্য দিয়ে এটা জোরালো হয়ে উঠেছে যে, বাংলাদেশ সরকারকে যৌন নির্যাতনের শিকারদের বিষয়কে কতটা গুরুত্ব দিতে হবে। একই সঙ্গে এটা নিশ্চিত করতে হবে যে, নির্যাতিতরা নিরাপত্তার সঙ্গে আইনগত প্রতিকার পাবেন। তাদেরকে রক্ষা করতে হবে প্রতিশোধ নেয়ার হাত থেকে। নিজস্ব ওয়েব সাইটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ কথা বলেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ লিখেছে, ২৭ মার্চ নুসরাত যখন পুলিশে অভিযোগ করতে চান তখনকার একটি ভিডিওতে দেখা যায় অফিসার ইন চার্জ তাকে বলছেন, ঘটনাটি তেমন বড় কিছু নয়। এর পর পরই অভিযুক্তের সমর্থকরা নুসরাতকে মামলা তুলে নেয়ার জন্য চাপ দিতে থাকে। তার পরিবারের সদস্যরা মিডিয়াকে বলেছেন, হামলার আগে তাদেরকে মামলা তুলে না নিলে হত্যার হুমকি দেয়া হয়।
একমাসের মধ্যে রায় চায় মানবাধিকার কমিশন
মঙ্গলবার দুপুরে কারওয়ানবাজারে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বলেন, মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলার রায় আগামী একমাসের মধ্যে চাই। আমরা দেখেছি শিশু রাজন, রাকিব হত্যার ক্ষেত্রে পুলিশ দ্রুত তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ায় আদালত দ্রুত সময়ের মধ্যেই অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি ঘোষণা করতে সক্ষম হয়েছিল। আমরা নুসরাতের ক্ষেত্রেও সেটা দেখতে চাই। নুসরাত হত্যার বিষয়ে যেসব তথ্য-প্রমাণ রয়েছে, তাতে মনে করি দ্রুত সময়ের মধ্যেই পিবিআই তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে পারবে। আইনে বলা আছে হাতেনাতে ধরা পড়লে ১৫ দিনের মধ্যেই পুলিশকে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে হবে জানান মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান।
নৃশংস হত্যাকান্ডের ঘটনা এড়ানো যেত
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্থানীয় প্রশাসন ও মাদরাসার গভর্নিং বডি যথাসময়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিলে নুসরাতের নৃশংস হত্যাকান্ডের ঘটনা এড়ানো যেত। কমিশনের পরিচালক আল মাহমুদ ফয়জুল কবিরকে আহ্বায়ক এবং উপ-পরিচালক এম রবিউল ইসলামকে সদস্য সচিব করে গত ১১ এপ্রিল দুই সদস্যের এই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাক্ষীদের সাক্ষ্য ও উপস্থিত ব্যক্তিদের বক্তব্য থেকে প্রতীয়মান হয় যে, প্রিন্সিপাল সিরাজ উদ দৌলা ২৭ মার্চ নিজ অফিস কক্ষে নুসরাতের শ্লীলতাহানি করেন এবং তার নির্দেশে তার ঘনিষ্ঠ সহচররা ৬ এপ্রিল নুসরাতের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয়। যার ফলশ্রুতিতে ১০ এপ্রিল নুসরাত মারা যায়।
এতে বলা হয়েছে, যৌন নির্যাতনের শিকার হওয়ার পর পুলিশ নুসরাতকে বিভিন্ন অশ্লীল প্রশ্ন করেছে এবং বিষয়টিকে হালকা ঘটনা হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে এ সংক্রান্ত ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছে। এতে সোনাগাজী থানার অফিসার ইনচার্জ দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছেন।
সিরাজ উদ দৌলার বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ১৯৯৫ সালে দৌলতপুর ছালামতিয়া মাদরাসার সুপার ছিলেন তিনি। তখন ওই মাদরাসার ছাত্রদের সঙ্গে তার সমকামিতার অভিযোগ ছিল। তার বিরুদ্ধে আদালতে একাধিক প্রতারণার মামলা চলমান আছে। প্রতারণার মামলায় ইতোপূর্বে জেলও খেটেছেন তিনি।
উল্লেখ্য, সোনাগাজীর ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত আক্তার রাফিকে যৌন হয়রানি করেছিল ওই মাদরাসার প্রিন্সিপাল সিরাজ উদ্দৌলা। এ ঘটনায় নুসরাত থানায় অভিযোগ করলে প্রিন্সিপালকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরপর থেকেই মাদরাসার প্রিন্সিপাল সিরাজ উদ্দৌলার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির মামলা তুলে না নেয়ায় নুসরাতকে চাপ দেয়া হয়। গত ৬ এপ্রিল পরীক্ষার আগ মুহূর্তে মিথ্যা কথা বলে নুসরাতকে মাদরাসার ছাদে ডেকে নিয়ে গিয়ে তার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দেয়া হয়। শরীরের প্রায় ৮০ শতাংশ পুড়ে যাওয়ায় জীবনের সঙ্গে লড়াই করে হেরে যান তিনি। গত ১০ এপ্রিল ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।