Inqilab Logo

শনিবার, ২৯ জুন ২০২৪, ১৫ আষাঢ় ১৪৩১, ২২ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

সোনাগাজীর সাবেক ওসির বিরুদ্ধে মামলা

নুসরাতের ভিডিও রেকর্ড করে প্রচার

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৬ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

ফেনীর সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালতে মামলা করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সাইদুল হক সুমন। পরে সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন আগামী ৩০ এপ্রিলের মধ্যে এই মামলার তদন্ত করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) প্রতিবেদন দিতে বলেছেন।
ওসির বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৬ ধারাসহ অন্যান্য ধারায় অভিযোগ করা হয়েছে। যৌন হয়রানির অভিযোগ করতে থানায় যাওয়ার পর ফেনীর মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির জবানবন্দি রেকর্ডের সময় ভিডিও করা এবং পরবর্তী সময়ে তা সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ার ঘটনায় তার বিরুদ্ধে এ অভিযোগ করা হয়েছে। গতকাল সোমবার দুপুর ১টার দিকে আদালতে এ অভিযোগ করা হয়।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন বলেন, অসৎ উদ্দেশে রাফির জবানবন্দির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া এবং আপত্তিকর প্রশ্ন করায় সোনাগাজীর সাবেক ওসির বিরুদ্ধে সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালে মামলা করেছি।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ২৭ মার্চ সকাল ১০টার দিকে প্রিন্সিপাল তার অফিসের পিয়ন নূরুল আমিনের মাধ্যমে ছাত্রীকে ডেকে নেন। পরীক্ষার আধঘণ্টা আগে প্রশ্নপত্র দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ওই ছাত্রীকে লাঞ্ছিত করার চেষ্টা করেন প্রিন্সিপাল। পরে পরিবারের দায়ের করা মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়। যৌন হয়রানির অভিযোগ করতে যাওয়ার পর সোনাগাজী থানার তৎকালীন ওসির কক্ষে আরেক দফা হয়রানির শিকার হতে হয়েছিলো নুসরাতকে। ওসি নিয়ম না মেনে জেরা করতে করতেই নুসরাতের বক্তব্য ভিডিও করেন। মৌখিক অভিযোগ নেয়ার সময় দুজন পুরুষের কণ্ঠ শোনা গেলেও সেখানে নুসরাত ছাড়া অন্য কোনো নারী বা তার আইনজীবী ছিলেন না।
ওসির এ ধরনের আচরণের বিষয়ে পুলিশ কর্তৃৃপক্ষ বলছে, আইন না মেনে কারো ভিডিও করলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যাবে।
ভিডিওতে দেখা যায়, থানার ওসির সামনে অঝোরে কাঁদছিলেন নুসরাত। সেই কান্নার ভিডিও করছিলেন সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি। নুসরাত তার মুখ দু’হাতে ঢেকে রেখেছিলেন। তাতেও ওসির আপত্তি। বারবারই মুখ থেকে হাত সরাও, কান্না থামাও বলার পাশাপাশি তিনি এও বলেন, এমন কিছু হয়নি যে এখনও তোমাকে কাঁদতে হবে।
সাইবার ট্রাইব্যুনালের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) নজরুল ইসলাম শামীম বলেন, মামলায় ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে, তিনি (ওসি) খাস কামরায় রাফির ভিডিও ধারণ করেন। পরে সেই ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল করা হয়। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৬, ২৯ ও ৩১ ধারায় মামলা নেয়ার আবেদন করা হয়।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৬ ধারায় বলা হয়, আইনগত কর্তৃৃত্ব ব্যতিরেকে অপর কোনো ব্যক্তির পরিচিতি তথ্য সংগ্রহ, বিক্রয়, দখল, সরবরাহ বা ব্যবহার করা একটি অপরাধ। এর শাস্তি পাঁচ বছর কারাদন্ড। আর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৯ ধারায় বলা হয়, মানহানিকর তথ্য প্রকাশের শাস্তি তিন বছর কারাদন্ড।
আর এই আইনের ৩১ ধারায় বলা হয়, ওয়েবসাইট বা ডিজিটাল বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করা যা বিভিন্ন শ্রেণি বা সম্প্রদায়ের মধ্যে শত্রুতা, ঘৃণা বা বিদ্বেষ সৃষ্টি করে বা সাম্প্রদায়িক স¤প্রীতি বিনষ্ট করে বা অস্থিরতা বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে অথবা আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটায় বা ঘটিবার উপক্রম হয়, তা একটি অপরাধ।
উল্লেখ্য, গত ৬ এপ্রিল পরীক্ষার আগ মুহূর্তে মিথ্যা কথা বলে নুসরাতকে মাদরাসার ছাদে ডেকে নিয়ে গিয়ে মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল সিরাজ উদদৌলার বিরুদ্ধে মামলা তুলে নিতে অস্বীকার করায় নুসরাতের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দেয়া হয়। গত ১০ এপ্রিল ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। নুসরাত হত্যা মামলায় এখন পর্যন্ত ১৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।



 

Show all comments
  • Harun Khan ১৬ এপ্রিল, ২০১৯, ১১:৪০ এএম says : 0
    তার কঠিন শাস্তি হতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • পথিক ১৬ এপ্রিল, ২০১৯, ১১:৪১ এএম says : 0
    অন্যায়কারী যেই হোক না কেন তাকে যথাযথ শাস্তি দিলে সমাজ থেকে অন্যায় কমে যাবে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: হত্যা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ