পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে কারাগার থেকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিল মাদরাসার প্রিন্সিপাল সিরাজ উদ দৌলা। হত্যাকান্ডের পরিকল্পনার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ১৩ জনের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। আর নুসরাতের গায়ে সরাসরি আগুন দেয়ায় জড়িত ছিল ৪ জন। মূলত প্রিন্সিপালের বিরুদ্ধে মামলা ও নুসরাতকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে প্রত্যাখ্যত হওয়ায় তাকে পুড়িয়ে মরার পরিকল্পনা করা হয়।
গতকাল শনিবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে মামলার তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) হেড কোয়ার্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে পিবিআই প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার এ সব কথা বলেন। তিনি বলেন, নুসরাতের গায়ে অগ্নিসংযোগে হত্যার ঘটনায় ১৩ জনের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। এর মধ্যে মামলার এজাহারভুক্ত ৭ জন এবং সন্দেহভাজন হিসেবে ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। নুরাতের গায়ে সরাসরি আগুন দেয়া চারজনের মধ্যে এক নারীসহ দু’জনকে চিহ্নিত করা গেছে। এই দু’জনের একজন শাহাদাত হোসেন শামীমকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাকে এখনও পিবিআইর কাছে হস্তান্তর করা হয়নি।
পিবিআই জানায়, গ্রেফতারদের মধ্যে এজাহারভুক্ত ৭ জন হলো- মাদরাসার প্রিন্সিপাল সিরাজ উদ দৌলা (৫৫), ছাত্র নুর উদ্দিন (২০) ও শাহাদাত হোসেন শামীম (২০), পৌর কাউন্সিলর মাকসুদ আলম (৪৫), জোবায়ের আহম্মেদ (২০), জাবেদ হোসেন (১৯) ও আফতাব উদ্দিন। এজাহারে উল্লেখ থাকা হাফেজ আব্দুল কাদের পলাতক রয়েছে। বাকি পাঁচজনকে গ্রেফতারে অভিযান চলছে।
এছাড়া সন্দেহভাজন গ্রেফতার ৬ জন হলো- কেফায়েত উল্লাহ জনি, সাইদুল ইসলাম, আরিফুল ইসলাম, উম্মে সুলতানা পপি, নূর হোসেন ও আলাউদ্দিন। পুরো ঘটনায় দুই নারীর সম্পৃক্ততার তথ্য জানা গেছে।
হত্যার পরিকল্পনা ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বনোজ কুমার বলেন, নুসরাতকে শ্লীলতাহানির অভিযোগে করা মামলায় ২৭ মার্চ সিরাজ উদ দৌলাকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর তাঁর মুক্তির দাবিতে ‘সিরাজ উদ দৌলা সাহেবের মুক্তি পরিষদ’ নামে একটি কমিটি গঠন করা হয়। ২০ সদস্যের এ কমিটির আহ্বায়ক নুর উদ্দিন এবং যুগ্ম আহ্বায়ক হয় শাহাদাত হোসেন। তাঁদের নেতৃত্বে প্রিন্সিপালের মুক্তির দাবিতে গত ২৮ ও ৩০ মার্চ উপজেলা সদরে দুই দফা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হয়।
মজুমদার আরও বলেন, গত ৪ এপ্রিল মুক্তি প্রিন্সিপালের দাবিকারীদের মধ্যে কয়েকজন জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেয়। পরে তাদের কয়েকজন প্রিন্সিপালের সঙ্গে কারাগারে গিয়ে দেখা করে। তাদের মধ্যে শাহাদাত হোসেন শামীম, জাবেদ হোসেন, হাফেজ আব্দুল কাদেরসহ আরও কয়েকজন ছিল। প্রিন্সিপালের নির্দেশে নুসরাতকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর মধ্যে শামীম নুসরাতকে পুড়িয়ে মারার প্রস্তাব দেয়। এছাড়া নুর উদ্দিন ও শামীমের নেতৃত্বে হত্যার বিশদ পরিকল্পনা করা হয়।
হত্যার কারণ নিয়ে পিআইবি প্রধান বলেন, দুই কারণে নুসরাতকে হত্যার পরিকল্পনা করে তারা। এরমধ্যে প্রিন্সিপালের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির মামলা করে নুসরাত আলেম সমাজকে হেয় করেছে বলে তারা মনে করে। আরেকটি হলো শামীম দীর্ঘদিন ধরে নুসরাতকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়েও সাড়া না পাওয়া। শামীম প্রত্যাখ্যাত হওয়ার ক্ষোভ থেকেই মূলত নুসরাতকে পুড়িয়ে মারার প্রস্তাব দেয়।
কিলিং মিশন নিয়ে বনজ কুমার আরও বলেন, ৬ এপ্রিল আলিম পরীক্ষা শুরুর আগে থেকেই ওই মাদরাসায় লুকিয়ে ছিল হত্যাকারীরা। তারা সাইক্লোন সেন্টারের ছাদে থাকা দুটি টয়লেটের ভেতরে লুকিয়ে থাকে। চার হত্যাকারীর মধ্যে যে মেয়েটি ছিল সে বাকি তিনজনকে বোরকা ও কোরোসিন তেল এনে দেয়। আর চম্পা নামের একটি মেয়ে (পঞ্চম জন) পরীক্ষার হলে গিয়ে নুসরাতকে জানায় যে- তার বান্ধবী নিশাতকে মারধর করা হচ্ছে। এই কথা শুনে নুসরাত দৌঁড়ে ছাদে গেলেই তারা (হত্যাকারীরা) হাত-পা বেঁধে নুসরাতের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে তারা সবার সামনে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে মাদরাসার মূল গেট দিয়ে পালিয়ে যায়। নুর উদ্দিন ও হাফেজ আব্দুল কাদেরসহ পাঁচ জন আগে থেকেই গেটে পাহারায় ছিল। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পর সবাই গা ঢাকা দেয় বলে তিনি জানান।
প্রসঙ্গত, গত ৬ এপ্রিল আলিম পরীক্ষা দিতে গেলে দুর্বৃত্তরা তাঁর গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। গুরুতর দগ্ধ অবস্থায় ওইদিন রাতে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। গত বুধবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ঢামেকের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। এর আগে গত ২৭ মার্চ প্রিন্সিপাল সিরাজ উদ দৌলার বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগে মামলা করেন নুসরাতের মা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।