Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ঢাবিতে ছাত্রলীগের কোন্দলে পন্ড বৈশাখী অনুষ্ঠান

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৪ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:০৭ এএম

ছাত্রলীগের অভ্যান্তরীণ কোন্দলে পন্ড হয়ে গেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মল চত্বরে চৈত্র সংক্রান্তি ও পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে কনসার্টের আয়োজন। কনসার্ট আয়োজনে শীর্ষ নেতাদের কোন্দলের জের ধরেই শুক্রবার রাত সোয়া ১টার দিকে কনসার্টের মঞ্চ, প্যান্ডেলসহ স্টলগুলোতে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনের সমর্থকরা। এ ঘটনার পর রাতেই ঘটনাস্থলে এসে মহড়া দেয় সংগঠনটির শীর্ষ তিন নেতা ও তাদের সমর্থকরা। রাতে শোভনের সমর্থকদের কয়েকজনকে মারধরও করা হয়। এসব ঘটনায় পন্ড হয়ে যায় চৈত্র সংক্রান্তি উপলক্ষে শনিবারের প্রথম দিনের কনসার্ট। আয়োজক প্রতিষ্ঠান বলছে হামলায় তাদের কমপক্ষে ২৫ লাখ টাকার মালামাল ক্ষতি হয়েছে। ছাত্রলীগের এক পক্ষের অভিযোগ, কনসার্টের এত বড় আয়োজন নিয়ে সংগঠনের সভাপতি শোভনকে কিছু জানাননি অন্য নেতারা। ফলে এ নিয়ে সংগঠনটির অভ্যন্তরীণ কোন্দল প্রকাশ্যে আসে। এ দিকে কনসার্ট এর আয়োজনে ছাত্রলীগের পাশাপাশি ডাকসুর নাম ব্যবহার করার এ নিয়ে ক্ষব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত বরেছেন ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুর। তার অভিযোগ ছাত্রলীগ নেতারা কনসার্টে ডাকসুর নাম ব্যবহার করলেও বিষয়টি নিয়ে ডাকসুতে কোন আলোচনা হয়নি।
জানা যায়, পয়লা বৈশাখকে সামনে রেখে ১৩ ও ১৪ এপ্রিল কনসার্টের আয়োজন করে ছাত্রলীগ। কনসার্টে জেমস, মিলা, ওয়ারফেজ, আর্টসেল ও ফিডব্যাকসহ বেশ কয়েকটি ব্যান্ড আসার কথা ছিল। এই কনসার্টকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুটি পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে কোন্দল দেখা দেয়। শোভনের সমর্থকরা অভিযোগ করে, সংগঠনের সভাপতি হওয়া সত্তে¡ও এ আয়োজন সম্পর্কে তাঁকে কিছুই জানানো হয়নি। এর ফলে গতকাল রাতে কনসার্টস্থলে হামলা ও ভাঙচুর করে তার সমর্থকরা। এর আগে শুক্রবার রাত বৃহস্পতিবার রাত ১২টা পর্যন্ত শোভন টিএসসিতে ছিলেন। এ সময় তার অনুসারীরা তাঁর সঙ্গে ছিলেন। ১২টার পর যখন শোভন টিএসসি থেকে চলে যান, তখন তাঁর অনুসারীদেরও চলে যেতে বলেন। এরপরেই রাত ১টার দিকে মল চত্বরে হামলা চালানো হয়। এসময় শোভনের অনুসারীরাই হামলার সময় ঘটনাস্থলে ছিলেন বলে একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী নিশ্চিত করেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শুক্রবার রাত একটার দিকে শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক নেতা আতিকুর রহমান খান, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আল আমিন রহমান, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইউসুফ উদ্দীন খান, কবি জসীমউদ্দীন হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আরিফ হোসেন, অমর একুশে হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি এহসান উল্লাহ, মুহসীন হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান সানী ও স্যার এফ রহমান হলের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান তুষারের নেতৃত্বে মল চত্বরে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করা হয়। তাঁরা সবাই ছাত্রলীগ সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনের অনুসারী।
ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার পরই মল চত্বর পরিদর্শন ও নিজেদের সমর্থকদের নিয়ে মহড়া দেন ডাকসুর সাধারণ সম্পাদক (জিএস) ও ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী, ঢাবি ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিৎ চন্দ্র দাস ও ডাকসুর সহ সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) ও ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন। এ সময় ছাত্রলীগ সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন উপস্থিত ছিলেন না। এ ঘটনার পরপরই শুক্রবার রাত তিনটার দিকে এ এফ রহমান হলে ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনের সমর্থক সাগর, মেশকাত ও মামুনকে মারধর করা হয়। পরে তাদেরকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
আহতদের দাবি, ডাকসু এজিএস সাদ্দাম হোসেনের সমর্থকরা তাদের মারধর করেছেন। তাঁরা আরো দাবি করেছেন, তাদের মারধর করা ছাড়াও গতকাল রাতে ছাত্রলীগ সভাপতি শোভন সমর্থক এ এফ রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান তুষার ও জহুরুল হক হল শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমির হামজার কক্ষে ভাঙচুর করা হয়। ঢাবি ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিৎ চন্দ্র দাস কনসার্টে হামলার বিষয়ে বলেন, যারা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তাদের খুজে বের করা হবে। এ ঘটনাকে অনাকাঙ্খিত উল্লেখ করে প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেন, যারা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, কনসার্টের মূল মঞ্চ এলোমেলো, পাশে মেলার স্টলগুলো পোড়ানো-ভাঙচুর ও কিছু স্টলের তাঁবু উল্টে আছে, বেশ কয়েকটি ফ্রিজ ভেঙে পড়ে আছে। এছাড়া ব্যানার-ফেস্টুন ছেঁড়া অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। যার কিছু আগুনে পোড়া। এ বিষয়ে মোজোর মার্কেটিং বিভাগের অপারেশন হেড (ব্র্যান্ড) আজম বিন তারেক বলেন, ৩৪টি স্টলের সবকয়টি ভাংচুর, ৬টিতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এছাড়া, ২২টি ফ্রিজের মধ্যে ১৭টি ভাংচুর করা হয় এবং ১টিতে আগুন দেয়া হয়। এছাড়া সকাল সাড়ে ৮টার দিকে পুনরায় ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এতে সাউন্ড সিস্টেমস নষ্ট হয়ে গেছে। আমাদের মোট ২৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
এদিকে ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুর দাবি করেছেন, পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে যে কনসার্টের আয়োজন করা হয়েছে তার আয়োজক ছাত্রলীগ। ডাকসু নয়। এই প্রোগ্রাম নিয়ে ডাকসুতে কোনো আলোচনা হয়নি। ছাত্রলীগের নিজেদের মধ্যে অপকর্ম ঢাকতে ডাকসুকে ব্যবহার করছে। তিনি অভিযোগ করেন, এই কনসার্ট উপলক্ষে এক কোটি ২০ লাখ টাকা বাজেট হয়। মোজো কোম্পানিসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ীপ্রতিষ্ঠান এই কনসার্ট উপলক্ষে টাকা দেয়। ছাত্রলীগের নেতারা এই টাকা ভাগবাটোয়ারা নিয়ে মারামারি, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ করছে। একপক্ষ আরেকপক্ষকে কোণঠাসা করতে প্রচার চালাচ্ছেন এটি ডাকসু ও ছাত্রলীগের প্রোগ্রাম। অথচ ডাকসুতে এই প্রোগ্রাম নিয়ে কোনো আলোচনাই হয়নি। ডাকসুর সঙ্গে এই বাণিজ্যিক কনসার্টের কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা নেই বলে দাবি করেন তিনি। এই ঘটনার পর গতকাল শনিবার দুপুরবেলা ভিসি প্রফেসর ড. মো. আখতারুজ্জামানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আসেন ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন। এসময় ভিসি তাকে বলেন, তারা যদি নিজেদের মধ্যে সমস্যা মিটিয়ে চারজন এক হয় তবে তাদের প্রোগ্রাম করতে দেওয়া হবে। তা না হলে কোন প্রোগ্রাম করতে দেওয়া হবে না। এরপর বিকেল তিনটার দিকে সংগঠনটির কেন্দ্র ও ঢাবির শীর্ষ চার নেতা ভিসির বাসভবনে গিয়ে বৈঠক করেন। মলচত্বরে অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুরের ঘটনা প্রসঙ্গে ঢাবি ভিসি প্রফেসর ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, এ ঘটনায় যারা দোষী তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ঢাবি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ