Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয়তাবাদের সাথে বিজেপির ইশতেহারে তাস রামমন্দির

নেই কালো টাকার প্রসঙ্গ

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৯ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

জাতীয়তাবাদ, হিন্দুত্ববাদ, উন্নয়ন। বিজেপির ইশতেহারের মূল মন্ত্র বলতে গেলে এটাই। বিজেপি ভোটে জিতলে এই তিন লক্ষ্যেই যে সরকার চলবে, সেই ইঙ্গিত দিয়ে রাখলেন নরেন্দ্র মোদি। ভারতের লোকসভা ভোট শুরুর তিন দিন আগে গতকাল সোমবার নয়াদিল্লিতে সদর কার্যালয়ে বিজেপির ইশতেহার প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতীয়তাবাদ আমাদের অনুপ্রেরণা, সমাজের দুর্বল অংশের ক্ষমতায়ন আমাদের লক্ষ্য এবং সুশাসন আমাদের মন্ত্র।’ ইশতেহারের রূপকার রাজনাথ সিংহ দিলেন রাম মন্দিরের প্রতিশ্রুতি। আর জেটলি-সুষমারা দিলেন গত পাঁচ বছরে সরকারের উন্নয়নের খতিয়ান। অর্থাৎ সাফল্য এবং আরও সাফল্যের প্রতিশ্রুতি রইল। সেখানে ছিল না ২০১৪ সালে যে ১৫ লক্ষের প্রতিশ্রুতি এবং কালো টাকার প্রসঙ্গ, নীরব মোদি-বিজয় মাল্য-ললিত মোদিদের প্রসঙ্গ বা নোটবন্দি-জিএসটি মোকাবিলার প্রসঙ্গ।
ইশতেহারের থিম ‘সংকল্পিত ভারত-সশক্ত ভারত’। অর্থাৎ প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ভারত, মজবুত ভারত। কিসের প্রতিজ্ঞা? বিজেপির ইশতেহার বলছে, তিন শব্দে দেশকে আরও শক্তিশালী, আরও উন্নত করার শপথ বা সংকল্পই হল এই ইশতেহার। জাতীয়তাবাদে রয়েছে স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তিতে ৭৫ প্রকল্পের কথা।
আরেক ‘মন্ত্র’ সুশাসন। তার জন্য সমাজের অপেক্ষাকৃত দুর্বল অংশের ক্ষমতায়ন যেমন রয়েছে, তেমনই উল্লেখ করা হয়েছে দুর্নীতি দমনের। প্রতিশ্রুতি ২০২০ সালের মধ্যে কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করার। বাজেটে ঘোষণা করা হয়েছিল ‘কৃষক সমৃদ্ধি যোজনা’। তাতে গরিব কৃষকদের বছরে ৬০০০ টাকা আর্থিক সাহায্যের ঘোষণা করেছিল মোদি সরকার। ইশতেহারে আশ্বাস, ক্ষমতায় এলে আর শুধু গরিব নয়, কোনও বাছবিচার না করে সব কৃষকই এই প্রকল্পের আওতায় আসবেন। এ ছাড়া কৃষকদের পেনশন, দিন মজুরদের পেনশন দেওয়ার কথাও ঘোষণা করেছেন মোদি। ইশতেহারে থাকলেও উগ্র হিন্দুত্ববাদ তথা মেরুকরণ তাস অবশ্য আস্তিনের মধ্যেই রেখেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। তবে গোপন রাখেননি রাজনাথ সিংহ। তিনি বলেন, ‘ক্ষমতায় এলে যত দ্রুত সম্ভব রাম মন্দির তৈরি করা হবে।’
অথচ নোটবন্দির ফলে অর্থনীতির যে ক্ষতি হয়েছে, তার উল্লেখ নেই ইশতেহারে। জিএসটি-তে খুচরো ব্যবসায়ীরা যে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন, তাও আসেনি। অর্থনীতির এই দুই ক্ষত কী ভাবে আগামী পাঁচ বছরে মেরামত করা যেতে পারে, তার উপায় যেমন ইশতেহারে নেই, অর্থমন্ত্রীও নিজের ভাষণে তার ধারে-কাছে গেলেন না। বললেন, বিশ্ব অর্থনীতিতে ভারতের অবস্থান শক্তিশালী হয়েছে গত পাঁচ বছরে।
গত পাঁচ বছরে ‘এনআরআই প্রধানমন্ত্রী’ কটাক্ষ বহুবারই শুনতে হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে মোদির বিদেশ সফরের খরচের বহর নিয়ে। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও ভোট প্রচারে বিভিন্ন সভায় অভিযোগ তুলছেন, ‘সাড়ে চার বছর বিদেশে কাটিয়ে এখন ৬ মাস দেশপ্রেমী সেজেছেন মোদি’। ইশতেহার প্রকাশের অনুষ্ঠানে অবশ্য মোদির সেই বিদেশ সফরের সুফলই তুলে ধরলেন বিদেশমন্ত্রী। সুষমার দাবি, ‘মোদীর এই সব সফরের জোরেই সউদী আরব, চিন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া-সহ অধিকাংশ দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের উন্নতি হয়েছে। ভারতকে সবাই সমীহ করছে।’
২০১৪-র লোকসভা ভোটে বিজেপির ভোট প্রচারের অন্যতম হাতিয়ার ছিল কালো টাকা দেশে ফেরানো। আর সেই সূত্রেই মোদির প্রতিশ্রুতি ছিল ওই কালো টাকা উদ্ধার করে গরিব মানুষের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা পড়বে ১৫ লক্ষ টাকা। কিন্তু কালো টাকা উদ্ধার হওয়া দূরে থাক, মোদির জমানাতেই দেশ ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছেন বিজয় মাল্য, নীরব মোদিরা। ২০১৯-এ ফের লোকসভা ভোটের মুখে দাঁড়িয়ে না বিজেপির ইশতেহারে, না মোদির ভাষণে উল্লেখ করা হল কালো টাকার সেই অস্বস্তিকর প্রশ্ন। সূত্র: আনন্দবাজার।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ