Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ঝড়ে প্রাণহানি ও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি

| প্রকাশের সময় : ২ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

কালবৈশাখী ঝড়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রাণহানিসহ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। রোববার সন্ধ্যায় এই ঝড় দেশের প্রায় অর্ধেক এলাকার ওপর দিয়ে বয়ে যায়। ঝড়ের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৭৪ কিলোমিটার। ঝড়ের সময় রাজধানীতে গাছের নিচে চাপা পড়ে ও ইটের আঘাতে তিনজন মারা গেছে। দেশের অন্যত্র মারা গেছে আরো অন্তত পাঁচজন। এদের মধ্যে রয়েছে, মৌলভীবাজারে দুই বোন, হবিগঞ্জে একজন, নেত্রকোনায় এক বৃদ্ধ ও সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জে এক কিশোর। ঝড়ের সঙ্গে প্রচুর শিলাবৃষ্টি হয়েছে। ঝড়ে গাছপালা ব্যাপকভাবে উৎপাঠিত হয়েছে, ঘরবাড়ির ক্ষতি হয়েছে, ফসলাদী বিনষ্ট হয়েছে। বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় রাজধানীসহ বিভিন্ন এলাকা অন্ধকারে দীর্ঘক্ষণ নিমজ্জিত থেকেছে। এই মওসুমে এটাই প্রথম কালবৈশাখীর হানা। স্বল্পকাল স্থায়ী এই ঝড়ে যেরকম ক্ষতি হয়েছে, তা অবিশ্বাস্য ও উদ্বেগজনক। সামনে এর চেয়েও প্রবল কালবৈশাখীর আশংকা উড়িয়ে দেয়া যায় না। তেমন পরিস্থিতিতে ক্ষয়ক্ষতির পরিধি ও মাত্রা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, সেটা অনুমান করা কঠিন নয়। এ নিয়ে মানুষের মধ্যে শংকা-আতংক দেখা গিয়েছে। আমরা বিশেষভাবে লক্ষ্য করেছি, রোববারের ঝড় সবচেয়ে বেশি তান্ডব ঘটিয়েছে রাজধানীতে। প্রচুর গাছ রাস্তায় ভেঙে পড়েছে। এতে হতাহতের ঘটনা ছাড়াও গাড়ি ও সম্পদের ক্ষতি হয়েছে। রাস্তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় যানজট সৃষ্টি হয়েছে। মানুষ অবর্নণীয় দুর্ভোগে পড়েছে। ঝড়ে গাছপালা উপড়ে যাওয়া কিংবা ভেঙ্গে পড়া যেমন স্বাভাবিক তেমনি নির্মাণাধীন ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া, বিশেষ করে ভবনের ইট-টিনসহ নির্মাণ উপকরণ উড়ে বা ছিটকে পড়া অস্বাভাবিক নয়। ঢাকাসহ বড় শহরগুলোতে এটা হতে পারে। রোববার সেটা প্রত্যক্ষ করা গেছে ঢাকায়। এ ব্যাপারে যথাযথ সতর্কতা অবলম্বন না করলে প্রাণহানিসহ ক্ষতির পরিমাণ আগামীতে আরো বাড়তে পারে।
রাজধানীসহ বড় শহরগুলোতে গাছপালার বেশির ভাগই ভংগুর অবস্থায় রয়েছে। রাস্তার দু’পাশে প্রাচীন গাছপালার পাশাপাশি নতুন গাছপালাও আছে। প্রাচীন গাছপালা এমনিতেই বয়সের ভারে জরাজীর্ণ, অনেক গাছের প্রবল ঝড় মোকাবিলা করে দাঁড়িয়ে থাকার সামর্থ নেই; তদুপরি রাস্তা ও ফুটপাত নির্মাণের সময় এদের শিকড় কতিত হয়েছে। অনেক গাছই শো-পিচের মতো রাস্তার দু’পাশে খাড়া হয়ে আছে। নতুন গাছপালাও তেমন ভালো অবস্থায় নেই। রাস্তা- ফুটপাত নির্মাণ ও সম্প্রসারনের সময় তাদেরও শিকড়-বাকড়ের ক্ষতি হয়েছে। এমতাবস্থায়, বড় ঝড় হলে এদের ভেঙ্গে পড়া বা উপড়ে যাওয়া প্রায় অবধারিত। বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখা প্রয়োজন। রাস্তার দু’পাশে শোভামান গাছপালার হাল-অবস্থা কেমন, সেটা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। যেসব গাছপালা, তা প্রাচীন বা নতুন যাই হোক না কেন, ভংগুর অবস্থায় উপনীত হয়েছে, সেগুলো শুধু রাস্তার শোভাবর্ধনের জন্য রাখার কোনো প্রয়োজন নেই। উপযুক্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণ শেষে সেগুলো কেটে ফেলা উচিৎ। শোভাবর্ধন, পরিবেশ ও অন্যান্য কারণে গাছাপালার প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। সেক্ষেত্রে ভবিষ্যতে রাস্তা-ফুটপাত নির্মাণ, সংস্কার ও সম্প্রসারনের সময় গাছপালার যাতে কোনো ক্ষতি না হয়, সে বিষয়টি অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। এও সবার জানা, রাজধানীসহ বড় শহরগুলো এমন কি গ্রামাঞ্চলেও ব্যাপকহারে নতুন বাড়িঘর নির্মিত হচ্ছে। এসব নির্মানাধীন ভবনে ইট, কাঠ, টিন ইত্যাদি যথাযথ সংরক্ষণে থাকে না। ফলে ঝড় হলেই এগুলো পড়ে, উড়ে অথবা স্খলিত হয়ে প্রাণহানিসহ দুর্ঘটনার কারণ হয়। এদিকে জরুরি ভিত্তিতে ভবন মালিকদের নজর দিতে হবে। সচারাচারই দেখা যায়, ঝড় হলে বিদ্যুতের খুঁটি হেলে যায় বা ভূপাতিত হয়। তার ছিড়ে যায়। এতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে অনেকেই মারা যায়। বিদ্যুৎ বিভাগকে বিষয়টি আমলে নিতে হবে। বিদ্যুতের খুঁটি নিয়মিত পরীক্ষা করতে হবে, তারের বিষয়টিও দৃষ্টিতে রাখতে হবে। ঝড়ের সময় বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দিতে হবে, যাতে বিদ্যুতের ছোড়া তারে জড়িয়ে কারো মৃত্যু না হয়।
ঝড়ে মৃত্যু হয় প্রধানত গাছপালা ভেঙ্গে, ঘরবাড়ি ধসে, ইট-টিন ইত্যাদি ছিটকে, বিদ্যুতের তারে এবং বজ্রপাতে। সম্প্রতিক বছরগুলোতে বজ্রপাতে মৃত্যুর হার অনেক বেড়ে গেছে। এসব ব্যাপারে শহর ও গ্রামের সকল মানুষের সতর্ক ও সচেতন হওয়া দরকার। সতের্কতা ও সচেতনতা প্রাণহানি অনেক কমাতে পারে। সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোকে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নিতে হবে। বজ্রপাতে যে প্রতিবছর শত শত মানুষের মৃত্যু হচ্ছে, সেটা কমিয়ে আনা যায় যদি বজ্রবৃষ্টি হলে কি করতে হবে, সেটা সবাইকে জানিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়। ঝড়বৃষ্টির মওসুম শুরুর আগেই বাড়িঘরের আশপাশের গাছপালা, বাড়িঘরের অবস্থা, বিদ্যুৎ সংযোগের হাল ইত্যাদি পর্যবেক্ষক করে সবাই যদি প্রয়োজনীয় নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেয়, অন্যান্য ক্ষতি যতই হোক, অন্তত প্রাণহানির সংখ্যা কমবে। যেহেতু চলতি মওসুমে ঝড় ও বজ্রবৃষ্টির আশংকা আরো রয়েছে, সুতরাং এখনই সবাইকে সতর্ক হতে হবে, নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কালবৈশাখী


আরও
আরও পড়ুন