পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
ডিজিটাল বাংলাদেশ নিঃসন্দেহে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে একটি মাইলফলক অগ্রগতি। সরকারি প্রতিষ্ঠানে সেবা পেতে প্রথাগত দীর্ঘসূত্রিতা, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, অস্বচ্ছতা ও দুর্নীতি কমিয়ে আনতে ই-গভর্নেন্স ও ই-কমার্স বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে আসবে, এমনটাই ছিল প্রত্যাশা। সেই প্রত্যাশা কতটুকু বাস্তবের নাগাল পেয়েছে সেটা এখন মূল্যায়ন করার সময়। তবে ডিজিটাল ব্যবস্থার আড়ালে দেশের ব্যাংকিং সেক্টর ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় এখন বড় বড় কেলেঙ্কারি ঘটতে দেখা যাচ্ছে। আইডি হ্যাক করে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলে নেয়ার ঘটনা কমবেশি সারাবিশ্বেই ঘটছে। বাংলাদেশে ডিজিটালাইজেশন সে মাত্রায় অর্জিত না হলেও ডিজিটাল ক্যালেঙ্কারির ঘটনা তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভের সুইফ্ট কোড হ্যাক করে শত শত মিলিয়ন ডলার হাতিয়ে নেয়ার ঘটনা সম্ভবত বাংলাদেশ ব্যাংকেই ঘটেছে। এসব ঘটনার মধ্য দিয়ে আমাদের ডিজিটাল নিরাপত্তাব্যবস্থার দুর্বলতা অনেক আগেই চিহ্নিত হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনার অভিজ্ঞতার আলোকে দেশের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ সরকারি অফিস ও অর্থনৈতিক সেক্টরের কম্পিউটার সার্ভারের নিরাপত্তা নিয়ে যে ধরনের সতর্কতা ও নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের কথা ছিল তা এখনো অনুপস্থিত। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সার্ভারে ঢুকে কাস্টমস হাউজ থেকে পণ্য পাচারের ঘটনা থেকে তা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।
বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্ট থেকে জানা যায়, কাস্টমস কর্মকর্তাদের সরকারি আইডি ও পাসওয়ার্ডসহ প্রয়োজনীয় ডক্যুমেন্ট হ্যাক করে শত শত কোটি টাকার পণ্য খালাস করে নিয়েছে সংঘবদ্ধ জালিয়াত চক্র। গত তিন বছরে ৩ হাজার ৭৭৭ বার এনবিআরের সার্ভারে ঢুকে জালিয়াতচক্র পণ্য খালাসসহ নানা ধরনের জালিয়াতির ঘটনা ঘটিয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, তিন বছর ধরে হাজার হাজার বার অবৈধ প্রক্রিয়ায় সার্ভারে ঢুকে জালিয়াতচক্র কাজ করে গেলেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা কিছুই বুঝতে পারেননি। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মত গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের কম্পিউটার সার্ভার বছরের পর বছর ধরে নিরাপত্তাহীন, নজরদারি ও তদারকিবিহীন থাকা বিস্ময়কর ব্যাপার। গত ১৬ জানুয়ারি রাজধানীর রমনা থানায় দায়ের করা এ সংক্রান্ত একটি মামলায় জালিয়াতির মাধ্যমে বন্দর থেকে ৩০টি কনটেইনার খালাসের কথা বলা হলেও বছরের পর বছর ধরে চলা এ ধারাবাহিক জালিয়াতির মাধ্যমে আসলে কী পরিমাণ মালামাল খালাস করা হয়েছে, এতে কত হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে তা পূর্ণাঙ্গ তদন্তসাপেক্ষ ব্যাপার। তবে সার্ভার হ্যাক করে নিষেধাজ্ঞা থাকা কনটেইনার খালাস করার মধ্য দিয়ে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দেয়ার পাশাপাশি এর মাধ্যমে অনুমোদিত ও নিষিদ্ধ পণ্য খালাসের ঘটনায় গভীর উদ্বেগের কারণ রয়েছে। এ ধরনের ঘটনাকে শুধুমাত্র অর্থনৈতিক ক্ষতি নয়, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবেই বিবেচনা করতে হবে।
সুইফ্ট কোড হ্যাক করে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তরফ থেকে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টার অভিযোগ রয়েছে। সে সব ঘটনার সঠিক তদন্ত ও রহস্য এখনো উৎঘাটিত হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংক এবং ফিলিপাইনের রিজাল ব্যাংকের মধ্যে পারস্পরিক দোষারোপ এবং মামলা ও পাল্টা মামলার আসল ঘটনা এখনো অজানাই রয়ে গেছে। এনবিআরের সার্ভারে হ্যাকিং এবং জালিয়াতির মাধ্যমে পণ্য খালাসের ঘটনায় যে সব কর্মকর্তার আইডি ও পাসওয়ার্ড ব্যবহৃত হয়েছে, সে সব কর্মকর্তাসহ প্রাতিষ্ঠানিক স্বচ্ছতা ও নজরদারীর সাথে সংশ্লিষ্টরা দায় এড়াতে পারে না। এ বিষয়ে বিস্ময় প্রকাশ করে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, আগেই ব্যবস্থা গ্রহণ করার দরকার ছিল। অনেক দেরিতে হলেও বিষয়টি উৎঘাটিত হয়েছে এবং অর্থমন্ত্রী এ ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের কথা জানিয়েছেন। শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের তরফ থেকেও এই জালিয়াতচক্রকে চিহ্নিত করা হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ কম্পিউটার সার্ভার এবং শত শত কোটি টাকার জালিয়াতির ঘটনা বছরের পর বছর ধরে চললেও যারা এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি, তাদেরকেও জবাবদিহিতা এবং আইনের আওতায় আনতে হবে। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ, নিরাপত্তা বাহিনী, ব্যাংকিং সেক্টর, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কম্পিউটার সার্ভার, আইডি, পাসওয়ার্ড ও কোডসমূহের নিরাপত্তার সাথে জড়িত ব্যক্তিদের বিশেষ নজরদারীর আওতায় আনতে হবে। এনবিআরসহ রাষ্ট্রের প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক সব সেক্টরের নিরাপত্তায় আরো সতর্কতা ও মনিটরিং বাড়াতে হবে। এ ক্ষেত্রে কোনো ধরনের অস্বচ্ছতা, দুর্বলতা, পরনির্ভরশীলতা বা ন্যূনতম শৈথিল্য গ্রহণযোগ্য নয়। এনবিআরের সার্ভার হ্যাকিংয়ের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক কঠোর শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।