পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
চলতি অর্থবছরের আট মাসে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর (এডিপি) মাত্র ৩৯ দশমিক ১৯ শতাংশ ব্যয় হয়েছে। বাকী ৬০ শতাংশের বেশি অবশিষ্ট চার মাসে কীভাবে ব্যয় হবে, সেটা অবশ্যই একটি বড় প্রশ্ন। অতীতেও আমরা এডিপি বাস্তবায়নে এহেন ধীরগতিই প্রত্যক্ষ করেছি। বছরের শুরুতে বরাদ্দ ছাড় করতে প্রকল্প পরিচালকদের ক্ষমতা বৃদ্ধি, আইএমইডি ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের নানা উদ্যাগ-পদক্ষেপ সত্তে¡ও এডিপি বাস্তবায়নে প্রত্যাশিত গতি আসেনি। টাকার অংকে বাস্তবায়ন বাড়লেও গুণগত কোনো পরিবর্তন আসেনি। প্রতিবছরই অর্ধেকের বেশী অর্থ শেষ দুই-তিন মাসে ব্যয়ের রেওয়াজ দাঁড়িয়ে গেছে। আইএমইডি সম্প্রতি এডিপি বাস্তবায়নের অগ্রগতি পর্যালোচনা করে যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, তাতে নতুন কিছু নেই। প্রতি বছরের মতো একই চ্যালেঞ্জ, একই সুপারিশ তুলে ধরেছে। প্রকল্প গ্রহণে সদূরপ্রসারী পরিকল্পনা না করা, সম্ভাব্যতা ছাড়াই প্রকল্প গ্রহণ, নিবিড় মনিটারিংয়ের অভাব, ভূমি জটিলতা, প্রকল্প পরিচালকের এলাকায় অবস্থান না করা ইত্যাদির মতো পুরানো ও গতানুগতিক চ্যালেঞ্জের কথাই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রশ্ন উঠতেই পারে, এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় উপায় কি? উপায় অবশ্যই আছে এবং সেটা সংশ্লিষ্টদের অজানা নয়। সাময়িক উদ্দেশ্যবাদী বা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রকল্প গ্রহণ করা যাবে না। প্রকল্প গ্রহণের আগেই তার সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ও অভিপ্রায় সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে। প্রকল্পের সম্ভাব্যতা ভালোভাবে যাচাই করতে হবে। জনগণ কতটা কল্যাণ পাবে, সেটাও বলতে হবে। ভূমি বা অন্যান্য আনুষঙ্গিক জটিলতা দ্রæত দূর করতে হবে। প্রকল্প পরিচালককে অবশ্যই এলাকায় থাকতে হবে। প্রকল্প বাস্তবায়নে নিয়মিত মনিটারিংয়ের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। বাস্তবায়নকারী সংস্থার বাস্তবায়ন সক্ষমতা বাড়াতে হবে। দুর্নীতি নিরোধ করতে হবে এবং কাজের গুণগত মান নিশ্চিত করতে হবে।
চ্যালেঞ্জ বা সমস্যাগুলোর সমাধানের উপায় জানা থাকলেও আমরা বছরের পর একই বৃত্তে আটকে থাকছি। এতে এডিপির মাধ্যমে যে উন্নয়নলক্ষ্য নিধারণ করা হয়, তা অনর্জিত থেকে যাচ্ছে। অনেক প্রকল্প বাস্তবায়ন পর্যায়ে এক বা একাধিকবার সংশোধন করা হচ্ছে। কিছু বাস্তবায়ন হওয়ার পর অনেক প্রকল্প পরিত্যক্ত হচ্ছে। অনেক প্রকল্প নির্দিষ্ট সময়ে বাস্তবায়িত হচ্ছে না সময় বা অর্থাভাব। এসব ক্ষেত্রে জনগণের ট্যাক্সের টাকার অপচয় হচ্ছে। তারা প্রকল্পের সুবিধা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে। প্রকল্প বাস্তবায়নে সময় বাড়ানোর ফলে ব্যয় স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাড়ছে এবং তার জোগানও আসছে জনগণের কাছ থেকেই। যে কোনো প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দুর্নীতি ও লুটপাট একটি অনিবার্য অনুষঙ্গ। এমন কোনো প্রকল্প নেই, যেখানে দুর্নীতি ও লুটপাট হয় না। বাস্তবায়ন সংস্থার কর্মকর্তা, ঠিকাদার এবং ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিবর্গ যুথবদ্ধভাবে প্রকল্পের বেশিরভাগ অর্থ লুটপাট করে খায়। এমন কিছু প্রকল্পও নেয়া হয়, যার একমাত্র লক্ষ্য থাকে লুটপাট। হাওয়াই প্রকল্পের কথাও শোনা যায়, যা কাগজপত্রে থাকে, বাস্তবে থাকে না। অথচ তার অনুকূলে বরাদ্দকৃত অর্থ তুলে নেয়া হয়। বাস্তবায়ন সনদও যথারীতি দেয়া হয়। এসবই সকলের জানা বিষয়। কিন্তু প্রতিকার ও প্রতিনিধান নেই। প্রকল্পের কাজের মান নিয়েও প্রশ্নের অবধি নেই। মানসম্পন্নভাবে যদি প্রকল্প বাস্তবায়িত না হয়, তাহলে অর্থের অপচয়ই নয়, জনগণ সেই প্রকল্প থেকে কাঙ্খিত সুবিধাও পায় না। রাস্তাঘাট, সেতু, বাঁধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক প্রকল্পগুলোর কাজ মানসম্পন্ন না হলে কি বিপত্তি ও হিতে বিপরীত হয়, তা আমাদের অজানা নেই।
যথাসময়ে অর্থ ছাড় ও প্রকল্প বাস্তবায়ন পর্যায়ে মনিটরিং ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা গেলে ধীরগতির অভিযোগ ওঠার কথা নয়। অন্যান্য সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে প্রকল্প নির্ধারিত সময়েই বাস্তবায়িত হতে পারে।
অথচ আমরা প্রতিবছরই লক্ষ্য করি, বছরের শেষ দু’তিন মাস প্রকল্প বাস্তবায়নের ধুম পড়ে যায়। বরাদ্দকৃত অর্থ খরচ করাই তখন মূল লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায়। যে কাজ ছয় মাসে করার কথা তা দুয়েক মাসে করতে হলে কাজের মান যেমন যথাযথ হয় না, তেমনি অর্থের লুটপাটও ভালোভাবেই সম্পন্ন হয়। এই লুটপাটের জন্যই সংশ্লিষ্টরা শেষ দু’তিন মাসের অপেক্ষায় থাকে। নির্ধারিত সময়ে কাজ শুরু ও শেষ করার কোনো গরজ তাদের মধ্যে তাই লক্ষ্য করা যায় না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বহুবার প্রকল্প যথাসময়ে বাস্তবায়নের তাকিদ দিয়েছেন। তাতে কোনো ফলোদয় হয়নি। সবকিছু আগের মতই চলছে। জনকল্যাণের লক্ষ্যেই পরিকল্পনা ও প্রকল্প। সেক্ষেত্রে প্রকল্প বাস্তবায়নের হাল যদি হয় এমন, তাহলে জনকল্যাণ কীভাবে হবে? জনকল্যাণ নিশ্চিত করতে হলে প্রকল্প বাস্তবায়নে গতি আনতে হবে। বাধাগুলো দূর করতে হবে। যাচ্ছেতাইভাবে প্রকল্প বাস্তবায়ন আমরা দেখতে চাইনে। আমরা দেখতে চাইনে বরাদ্দকৃত অর্থ খরচের নামে লুটপাটের মহোৎসব। বছরান্তে এডিপি শতভাগ বাস্তবায়িত হয়েছে, এমন আত্মপ্রসাদমূলক ও কৃতিত্বজাহিরকারী ঘোষণাও আর শুনতে চাইনে। আমরা চাই, সারা বছর এডিপি বাস্তবায়নে কাজ চলবে এবং তা প্রকৃত অর্থে শতভাগই বাস্তবায়িত হবে। ফাঁক ও ফাঁকির সংস্কৃতি অবশ্যই বন্ধ করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।