Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

১০ মাসে অর্ধেক এডিপি বাস্তবায়ন

২ মাসে খরচ করতে হবে ১ লাখ কোটি টাকা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৮ মে, ২০২১, ১২:০১ এএম

চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও আগের অর্থবছরের চিত্রই দেখা যাচ্ছে। অর্থবছরের মাঝ পথে এসে সংশোধনের মাধ্যমে সংশোধিত এডিপি (আরএডিপি) প্রণয়ন করেও বাস্তবায়ন বাড়ানো যায়নি। গত ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই থেকে এপ্রিল) আরএডিপি বাস্তবায়ন হয়েছিল ৪৯ দশমিক ১৩ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে এই হার ৪৯ দশমিক ০৯ শতাংশ। অর্থাৎ অর্থবছরের ১০ মাসে আরএডিপি’র অর্ধেকও বাস্তবায়ন করা যায়নি।
বাস্তবায়ন,পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) প্রতিবেদনে এমন চিত্র উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর আওতায় চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ রয়েছে ২ লাখ ৯ হাজার ২৭২ কোটি টাকা। এর মধ্যে জুলাই থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ১০ মাসে খরচ করা সম্ভব হয়েছে ১ লাখ ২ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা। সে হিসাবে এখনো উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর জন্য বরাদ্দ ১ লাখ ৬ হাজার ৫৪২ কোটি টাকা অব্যয়িত রয়েছে। আরএডিপি শতভাগ বাস্তবায়ন করতে হলে মে ও জুন— এই দুই মাসের মধ্যেই খরচ করতে হবে বরাদ্দের অর্ধেকেরও বেশি এই অর্থ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এডিপি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে এই চিত্র অনেকটাই স্বাভাবিক। অর্থবছরের শেষ দিকে এসেই বিল পরিশোধসহ অন্যান্য কাজে গতি আসে বেশি। ফলে শেষের দিকে এডিপি বাস্তবায়নের হারও বাড়ে। এ বছর ৮০ শতাংশ পর্যন্ত বাস্তবায়ন হতে পারে বলে মনে করছে পরিকল্পনা কমিশন সূত্র।
এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, করোনার ফলে গত অর্থবছর ও চলতি অর্থবছরে কাজ কিছুটা কম হয়েছে। তারপরও গতবছর সর্বাত্মক লকডাউনের পরবর্তী সময়ে আমরা দ্বিগুণ লোকবল দিয়ে কাজ করিয়েছি। আর আগেও আমি নিজেই এডিপিভুক্ত প্রকল্পগুলোর গতি বাড়াতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে চিঠি পাঠিয়েছিলাম। এডিপির অগ্রগতি অব্যাহত রাখতে আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, অগ্রগতি যাই হোক না কেন, অর্থবছর শেষে এ হার বেড়ে ৮০ শতাংশের ওপরে চলে যাবে। কারণ, সব প্রকল্পের কাজই চলমান রয়েছে। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানদের তো আমরা সব বিল পরিশোধ করিনি। এজন্যই বলছি জুনে যখন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বিল পরিশোধ করবো তখন এডিপি বাস্তবায়ন হার অনেক বেড়ে যাবে।
আইএমইডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অর্থবছরের ১০ মাসে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো খরচ করতে পেরেছে ১ লাখ ২ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিলের ৬৬ হাজার ৪৫৫ কোটি টাকা, বৈদেশিক সহায়তা থেকে পাওয়া ৩৩ হাজার ৫১৭ কোটি টাকা এবং স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব তহবিলের ২ হাজার ৭৫৮ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে খরচ হয়েছিল ৯৮ হাজার ৮৪০ কোটি টাকা। এর আগের অর্থবছরগুলোর চিত্রেও খুব বেশি ব্যতিক্রম দেখা যায়নি। এর মধ্যে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে ৫৪ দশমিক ৯৪ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে উন্নয়ন কর্মসূচিতে বরাদ্দ দেওয়া অর্থ। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে ৫২ দশমিক ৪২ শতাংশ এবং ২০১৬-১৭ অর্থবছরের একই সময়ে সংশোধিত এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছিল ৫৪ দশমিক ৫৬ শতাংশ। বাস্তবায়ন,পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ বলছে, চলতি অর্থবছর ও গত অর্থবছরের ক্ষেত্রে এডিপি বাস্তবায়ন কিছুটা কম হওয়ার ক্ষেত্রে করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি ভূমিকা রেখেছ। এই সংক্রমণ পরিস্থিতি সত্ত্বেও উন্নয়ন কর্মসূচিগুলোর বরাদ্দ ব্যয়ের চিত্র হতাশাব্যঞ্জক নয়।
আইএমইডি সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত এডিপি বাস্তবায়নের গতি অনেক ধীর ছিল। কিন্তু আমরা গত অর্থবছরের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়েছি। যে কারণে এপ্রিল থেকে বাস্তবায়নের হার বাড়তে শুরু করেছে। গত অর্থবছরের চেয়ে শতাংশের দিক হতে সামান্য কম অগ্রগতি হলেও অর্থ ব্যয় কিন্তু বেড়েছে। রঞ্জন চক্রবর্তী আরও বলেন, এখনো অনেক টাকা ব্যয়ের চাপ রয়েছে। তারপরও বলব, অর্থবছরের শেষ দিকে বাস্তবায়নের হার বাড়বে। কেননা পূর্ত কাজ বা পণ্য কেনার ক্ষেত্রে সঙ্গে সঙ্গেই বিলগুলো পরিশোধ করা হয় না। সাধারণত বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অর্থবছরের শেষদিকে এসে বিল পরিশোধ করা হয়। বিলগুলো দেওয়া হলে এডিপির বাস্তবায়ন ৮০ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছি।
চলতি অর্থবছরের ১০ মাসে সংশোধিত এডিপি বাস্তবায়নে সবার চেয়ে এগিয়ে রয়েছে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। এই মন্ত্রণালয়টি বরাদ্দের ৭৪ দশমিক ৪৯ শতাংশ বাস্তবায়ন করেছে ১০ মাসে। এছাড়া একই সময়ে বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) ৭০ দশমিক ৪৭ শতাংশ এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) ৬৯ দশমিক ৮৮ শতাংশ আরএডিপি বাস্তবায়ন করেছে। বেশি বাস্তবয়ন করা অন্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে রয়েছে— দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় (৬৯ দশমিক ৬৬ শতাংশ), কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগ (৬৯ দশমিক ০৯ শতাংশ), তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগ (৬৬ দশমিক ৬২ শতাংশ), বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় (৬৩ দশমিক ৬৬ শতাংশ) এবং দুর্নীতি দমন কমিশন (৬৩ দশমিক ১২ শতাংশ)। চলতি অর্থবছরে আরএডিপি বাস্তবায়নে সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ। এই বিভাগটি বরাদ্দের মাত্র ৫ দশমিক ৭১ শতাংশ খরচ করেছে অর্থবছরের ১০ মাসে। এছাড়া একই সময়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় ১৫ দশমিক ৬৪ শতাংশ এবং পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ খরচ করেছে ১৯ দশমিক ১৩ শতাংশ। অন্যান্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে আইন ও বিচার বিভাগ ২৩ দশমিক ৯৪ শতাংশ, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ ২৫ দশমিক ৪৬ শতাংশ, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ২৬ দশমিক ৫৫ শতাংশ এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় ২৯ দশমিক ১৫ শতাংশ আরএডিপি বাস্তবায়ন করেছে অর্থবছরের ১০ মাসে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: এডিপি

২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ