Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

তদন্তের কিনারা হচ্ছে না

সাংবাদিক দম্পতি, তনু ও মিতু হত্যা মামলা

সাখাওয়াত হোসেন | প্রকাশের সময় : ১৭ মার্চ, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

সাংবাদিক দম্পতিসহ বহুল আলোচিত তিন হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের শনাক্ত কিংবা মামলার তদন্তে কুলকিনারা করতে পারছে না তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এসব মামলার রহস্য উদ্ঘাটন না হওয়ায় ভুক্তভোগী পরিবারগুলো যেমন ক্ষুব্ধ, তেমনি তদন্ত নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে হাজারো মানুষের নানা প্রশ্ন। বছরের পর বছর তদন্ত গড়ালেও হত্যাকান্ডে সরাসরি জড়িত, পরিকল্পনাকারী ও মদদদাতাদের সম্পর্কে অন্ধকারে র‌্যাব-পুলিশের তদন্তকারী কর্মকর্তারা।
চাঞ্চল্যকর তিন হত্যা মামলা হচ্ছে সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি, কুমিল্লার সোহাগী জাহান তনু এবং চট্টগ্রামের সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতু। তদন্ত সূত্রে জানা গেছে, এই তিন মামলায় প্রকৃত খুনী, মদদদাতা ও নেপেথ্যে জড়িতরা ধরা ছোয়ার বাইরে। অদৃশ্য কারণে মামলার তদন্তে নেই কোন অগ্রগতি
সাবেক আইজিপি মো. আব্দুল কাইয়ুম দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, বর্তমান সময়ে পুলিশের কর্মকর্তাদের দক্ষতা ও অত্যাধুনিক প্রযুক্তি রয়েছে। কিন্তু দীর্ঘ দিনেও সমাজকে নাড়া দেয়া এসব চাঞ্চল্যকর হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতরা গ্রেফতার না হওয়ায় নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। রহস্য উদঘাটন ও জড়িতদের গ্রেফতারে বিলম্বিত হলে ভুক্তভোগি পরিবারগুলোর মধ্যে হতাশার সৃষ্টি হয়। সে সাথে আইন-শৃংখলা বাহিনীর ভূমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ হয়।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কোনো কোনো মামলার তদন্তে দেরি হতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে তদন্ত কর্মকর্তাকে আদালতে ব্যাখ্যা দিতে হয়। তবে কেউ যেন বিচার পাওয়া থেকে বঞ্চিত না হয় সে বিষয়ে আইন-শৃংখলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের আরো আন্তরিক হওয়া প্রয়োজন।
এ তিনটি চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার তদন্তের সাথে জড়িত কর্মকর্তারা বলছেন, মামলা অধিক গুরুত্বের সঙ্গেই তদন্ত করা হচ্ছে। এখানে কোনো গাফিলতি নেই। জড়িতদের শনাক্ত ও গ্রেফতারে আরো সময়ের প্রয়োজন।
সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যা মামলা
সাত বছর এক মাস আগে ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের বাসায় খুন হন সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি। এই দীর্ঘ সময়েও মামলাটির তদন্ত শেষে করতে পারেনি তদন্তকারী সংস্থা র‌্যাব। আদালতের নির্দেশে ২০১৭ সালের ৩ মার্চ মামলার তদন্তের অগ্রগতির বিষয় একটি প্রতিবেদন জমা দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা র‌্যাবের সহকারি পুলিশ সুপার মহিউদ্দিন আহম্মদ। এরপর আর কোনো অগ্রগতির প্রতিবেদনও দেয়া হয়নি। বর্তমানে র‌্যাবের আরেক সহকারি পুলিশ সুপার মামলাটি তদন্ত করছেন। র‌্যাবের লিগ্যাল ও মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান বলেন, সাগর-রুনি হত্যা মামলাটির অত্যন্ত স্পর্শকাতর। মামলাটির তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। আলোচিত এ মামলাটি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে।
সর্বশেষ অগ্রগতি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, মামলার একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী সাগর-রুনির ছেলে মাহির সরোয়ার মেঘকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তার জবানবন্দি নেয়া হয়েছে। তদন্তকালে বনানী থানার একটি হত্যা মামলায় সন্দেহভাজন আসামি বকুল মিয়া, খায়রুল হাছান, রফিকুল ইসলাম, মিন্টু ও আবু সাঈদকে এই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এছাড়াও সন্দিগ্ধ আসামি তানভীর আহাম্মদ, পলাশ রুদ্র পাল ও এনাম আহম্মেদকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। চুরি যাওয়া ল্যাপটপ ও মোবাইল এখনও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
নিহতের পরিবারের প্রশ্ন, হত্যার রহস্য উদঘাটন করতে আর কত সময় লাগবে? বিচার পাওয়ার আশায় আর কতদিন পথ চেয়ে থাকতে হবে? মামলার বাদী রুনির ভাই নওশের আলম রোমান বলেন, তদন্তের কোনো অগ্রগতিই নেই। তদন্তকারী কর্মকর্তা মামলার অগ্রগতির বিষয়ে কোনো কিছুই জানান না। মামলার বিচার নিয়ে আমাদের পরিবার হতাশ।
সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মিতু
২০১৬ সালের ৫ জুন চট্টগ্রামের জিইসি মোড়ে খুন হন সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা মিতু। ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে ছুটে যান পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। বাবুল আক্তার জঙ্গিবিরোধী একাধিক অভিযানে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। ফলে তাৎক্ষণিকভাবে ধারণা করা হয়, এটি জঙ্গিদের কাজ। পুলিশের বক্তব্যও ছিল তেমনই। এরপর মাঠে নামে পুলিশের পাশাপাশি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা। আর এটা স্পষ্ট হয় যে, এটি জঙ্গিদের কাজ নয়। তবে যে রহস্য ছিল, সেটির কাছাকাছিও যেতে পারেননি তদন্ত কর্মকর্তারা। এর মধ্যে এই হত্যা মামলা নিয়ে নানা কথা ছড়িয়েছে। পুলিশ বাহিনী থেকে অবসরে গিয়ে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি নিয়েছেন বাবুল আক্তার। তদন্তের এক পর্যায়ে তার শ্বশুর বাবুলের বিরুদ্ধে তার মেয়ে হত্যার অভিযোগ আনেন।
মিতুর বাবা পুলিশের সাবেক ইনস্পেক্টর মোশাররফ হোসেন বলেন, প্রায় তিন বছরেও এ হত্যার কোন কুলকিনারা হয়নি। এমনকি তদন্ত কোন পর্যায়ে সেটাও তাদের জানানো হয়নি বলে তিনি অভিযোগ করেন। মামলার তদন্ত করছে চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উত্তর বিভাগ। তদন্তের সাথে সম্পৃক্ত পুলিশের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, তদন্ত কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এরই মধ্যে মামলায় ১১ আসামির সাতজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তিনজন জামিনে রয়েছেন।
তবে সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার পুলিশের চাকরি ছাড়ার বিষয়টি নিয়েও যে রহস্যের তৈরি হয়েছিল তা এখন উদঘাটন হয়নি। এটা স্পষ্ট যে তিনি চাকরি ছেড়েছেন চাপের মুখে। তবে কারা চাপ দিয়েছে, কেন চাপ দিয়েছে, তা নিয়ে মুখ খুলছেন না কেউ। বাবুলও এ বিষয়ে কিছু বলেন না। পুলিশ সদর দপ্তরও নিশ্চুপ। তবে গতকাল সিএমপির কমিশনার মো. মাহাবুবুর রহমান দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, মামলার তদন্ত শেষ পর্যায়ে। খুব শীঘ্রই আদালতে চার্জশীট দাখিল করা হবে।
কুমিল্লার শিক্ষার্থী তনু হত্যা
কুমিল্লার ভিক্টোরিয়া কলেজের শিক্ষার্থী তনু হত্যা মামলা এখন কুলকিনারা হয়নি। ২০১৬ সালের ২০ মার্চ সন্ধ্যায় কুমিল্লা সেনানিবাসের ভেতরে একটি বাসায় টিউশনি করতে যান তিনি। বাসায় না ফেরায় শুরু হয় খোঁজাখুঁজি। পরে রাতে বাসার অদূরে কালা পাহাড় নামের একটি জঙ্গলে তার লাশের সন্ধান পাওয়া যায়।
এ ঘটনার পরদিন বাবা ইয়ার হোসেন বাদী হত্যা মামলা দায়ের করেন। কুমিল্লা থানা পুলিশ ও জেলা গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) পর মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি। তনুর বাবা ইয়ার হোসেন সম্প্রতি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, মামলাটি সিআইডির কাছে যাওয়ার পর থেকে তারা কিছুই জানেন না। শুনেছেন উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি নেই। বিচারের আশা ছেড়ে দিয়েছেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডি কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জালাল উদ্দীন আহমেদ বলেন, মামলাটি অধিক গুরুত্বের সঙ্গেই তদন্ত করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত কোনো আসামিকেই গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: হত্যা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ