Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মেসিতে মুগ্ধ প্রতিপক্ষ কোচও

স্পোর্টস ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৪ মার্চ, ২০১৯, ৬:১২ পিএম

আগের রাতে দুর্দান্ত হ্যাটট্রি করে জুভেন্টাসকে কোয়ার্টার ফাইনালে তুলেছেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। নিজেকে জানান দিতে তেমন কিছু করতে হতো লিওনেল মেসিকেও। বার্সেলোনা তারকা সেটাই করে দেখালেন। এবং সেই করাটা এতই মনমুগ্ধকর ছিল যে, তাতে মজে ছিলেন প্রতিপক্ষ কোচও!
ম্যাচ শেষে সেই মুগ্ধতা অবলীলায় প্রকাশ করেছেন লিঁও কোচ ব্রুনো জেনেজিও, ‘আজ (বুধবার) রাতে মেসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগের মেজাজে ছিল। সে প্রতিভাবান এবং সে এমন সব কাজ করতে পারে যা অন্য কেউ পারে না। কখনও কখনও সে এককথায় অপ্রতিরোধ্য। সে যখন এমন মেজাজে থাকে, তখন তাকে আটকানোর কোন ক্ষমতা কারো থাকেনা। আমরা নিজেদের যতটকুু সামর্থ্য আছে তা দিয়ে চেষ্টা করেছি।’
বুধবার ন্যু ক্যাম্পে ফ্রেঞ্চ লিগ ওয়ানের দলটির বিপক্ষে রীতিমত গোল উৎসব করেন মেসিরা। জোড়া গোলের পাশাপাশি আর্জেন্টাইন সুপারস্টার দুই গোল করান জেরার্ড পিকে ও ওউসমান দেম্বেলেকে দিয়ে। স্কোর বোর্ডে নাম লেখান ফর্মের সঙ্গে লড়তে থাকা ফিলিপ কুতিনহোও। ৫-১ গোলের বিশাল জয়ে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ আটে উঠে যায় বার্সেলোনা। প্রথম লেগের ম্যাচটি গোলশূন্য ড্র হয়।
বল নিয়ে প্রতিপক্ষের রক্ষণে তা-ব চালানো, প্রয়োজনে রক্ষণে নেমে প্রতিপক্ষের কাছ থেকে বল কেড়ে নেওয়া কোথায় ছিলেন না মেসি! প্রিয় শিষ্যের এমন পারফর্ম্যান্সে মুগ্ধতা প্রকাশ করেন আর্নেস্তো ভালভার্দে। তবে তার সেই ভাষাটা যেন নিয়মরক্ষার। একই কথা যে তাকে প্রায়ই বলতে হয়, ‘আমরা সবাই চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ভালো করতে আত্মবিশ্বাসী এবং মেসিও তাই। আজ রাতে (বুধবার) সে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখাল, সে ছিল অবিশ্বাস্য।’
স্বল্পভাষী মেসি এসব শুনে অভ্যস্ত। ম্যাচ শেষ না হতেই তাই তার ভাবনায় কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচ। যেখানে তাদের প্রতিপক্ষ হতে পরে ম্যানচেস্টার সিটি, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, টটেনহাম হটস্পার, লিভারপুল, আয়াক্স, পোর্তো এমনকি রোনালদোর জুভেন্টাসও। মেসির অবশ্য কোনো পছন্দ নেই। সব দলকেই সমীহ করছেন পাঁচবারের এই বর্ষসেরা, ‘সব প্রতিপক্ষই কঠিন। পছন্দের সুযোগ নেই। সিটি, জুভেন্টাস, আয়াক্স সবাই ভালো দল। লিভারপুলও মিউনিখে দারুণ খেলে জিতেছে। তাই সব দলই কঠিন হবে।’
মেসিদের রাতেই একই সময়ে অনুষ্ঠিত ম্যাচে বায়ার্ন মিউনিখকে তাদেরই মাঠে ৩-১ গোলে হারিয়ে শেষ আটে জায়গা করে নেয় লিভারপুল। ‘অল রেড’দের হয়ে জোড়া গোল করেন সাদিও মানে, অন্যটি ভার্গিল ফন ডিকের। জার্মান জায়ান্টদের পাওয়া একমাত্র গোলটিও ছিল লিভারপুলের খেলোয়াড়ের করা আত্মঘাতি।
ম্যাচ শেষে আগের রাতে জুভেন্টাসের ম্যাচ নিয়ে নিজের উচ্ছ্বাসের কথা জানান বার্সা অধিনায়ক। রোনালদোর পারফম্যান্সেও মুগ্ধ হন ৩১ বছর বয়সী, ‘গতকাল ক্রিশ্চিয়ানোর পারফর্মেন্স ছিল মনোমুগ্ধকর। সেটি ছিল দারুন বিষ্ময়। কারণ আমি ভেবেছিলাম অ্যাটলেটিকোই শক্তিশালী। কিন্তু জাদুকরি এক রাত উপহার দিয়েছেন ক্রিশ্চিয়ানো।’
এই কারণে হয়ত নিজেও তেমন কিছুই করে দেখাতে চাইলেন মেসি। ১৬তম মিনিটে ডি বক্সে লুইস সুয়ারেজ ফাউলের শিকার হলে স্পট কিকে পানেনকা শট নিয়ে দলকে এগিয়ে নেন তিনি। ৩১তম মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন ফিলিপ কুতিনহো। তবে গোলের কৃতিত্ব বলতে গেলে পুরোটাই সুয়ারেজের। বাঁ প্রান্তে ফাঁকায় উরুগুয়ান তারকার বাড়ানো বল কুতিনহো আলতো টোকা দেন মাত্র।
৫৮তম মিনিটে বার্সার ডি বক্সে জটলার মধ্যে বল পেয়ে লুকা তুজা ব্যবধান কমান। তখন পর্যন্ত এটিই ছিল লক্ষ্যে রাখা তাদের একমাত্র শট। মূল্যবান অ্যাওয়ে গোল পেয়ে উজ্জীবিত ফুটবল খেলতে থাকে লিঁও। এরপর কিছু সময় বার্সার খেলায় এলোমেলো ভাব চলে আসে। দৃশ্যপট পাল্টে যায় ৭০তম মিনিটে কুতিনহোর বদলি ওউসমান দেম্বেলে নামার পর। এরপর প্রতিপক্ষ ডি বক্সে একের পর এক ওঠতে থাকে মেসি ঝড়। যে ঝড়ে শেষ ১৩ মিনিটে আরও তিন গোল খেয়ে বিদায় নেয় লিঁও।
৭৭তম মিনিটে মাঝমাঠ থেকে বল নিয়ে অনেকটা এগিয়ে প্রতিপক্ষ রক্ষণকে নিয়ে ছেলেখেলা করে ডান পায়ের শটে ব্যবধান বাড়ান মেসি। বাকি সময়ে প্রায় একই ভঙ্গিতে মাঝমাঠ থেকে বল নিয়ে লিঁও ডিফেন্স তছনছ করে বাম প্রান্তে দুইবার বল বাড়ান পাঁচবারের বর্ষসেরা। দৌড়ে এসে প্রথতে বল ফাঁকা পোস্টে ঠেলে দেন পিকে, পরের বার গোলরক্ষকের দুই পায়ের মাঝ দিয়ে বল জালে পাঠান দেম্বেলে।

কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠা আট দল : ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, ম্যানচেস্টার সিটি, টটেনহাম হটস্পার, জুভেন্টাস, আয়াক্স, পোর্তো, বার্সেলোনা ও লিভারপুল।

আগামীকালের ড্রয়ে শেষ আটে দলগুলো প্রতিপক্ষ নির্ধারণ হবে।

 

  • চলতি প্রতিযোগিতায় আট গোল হলো মেসির। সমান গোল নিয়ে এতদিন এককভাবে সর্বোচ্চ গোলদাতার আসনে ছিলেন বায়ার্ন মিউনিখের রবার্ট লেভান্দোভস্কি। সব মিলিয়ে প্রতিযোগিতায় মেসির গোল দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১০৮টি। ১২৪ গোল নিয়ে শীর্ষে রোনালদো।
  • টানা ১১ মৌসুমে ক্লাবের হয়ে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ৩৫ বা তার বেশি করে গোল করার কীর্তি গড়েন লিওনেল মেসি।
  • ন্যু ক্যাম্পে ৬১ ম্যাচে ৬২ গোল আর্জেন্টিনা অধিনায়কের।
  • এ নিয়ে টানা ১২ মৌসুম প্রতিযোগিতার শেষ আটে উঠলো বার্সেলোনা।
  • ঘরের মাঠে টানা ৩০ ম্যাচ অপরাজিত রইল বার্সা, চ্যাস্পিয়ন্স লিগ ইতিহাসে যা সর্বোচ্চ। যেখানে জয় ২৭ ম্যাচে, ৩টি ড্র।
  • এক দশক পর প্রতিযোগিতায় প্রিমিয়ার লিগ থেকে চারটি দল শেষ আটে পৌঁছালো।
  • ২০১০-১১ মৌসুমের পর এই প্রথম শেষ আটে উঠতে ব্যর্থ হলো বায়ার্ন মিউনিখ।
  • ষষ্ঠ গোলকিপার হিসেবে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে একশ’ ম্যাচের মাইলফলকে পৌঁছালেন বায়ার্ন গোলরক্ষক ম্যানুয়েল নয়্যর। অন্য পাঁচ তারকা হলেন ইকার ক্যাসিয়াস*, জিয়ানলুইজি বুফন*, পিটার চেক*, ভিক্টোর ভালদেস ও অলিভার কান।


 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ফুটবল

২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ