মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
প্রথমবার স›দ্বীপ ওয়াদার যখন ফেসবুকে তাকে বিশ্বাসঘাতক বলা ম্যাসেজ পেলেন, তখন তার কাছে তা পুরোপুরি অবাক ব্যাপার মনে হয়েছে। তিনি আমোদিত হয়েছিলেন। কিন্তু এর পর যখন তাকে বিশ্বাসঘাতক বলে ম্যাসেজের ঢল নামল, তখন তার মনে হলো, কোথাও ভুল হয়ে গেছে।
গত সপ্তাহে ভারত ও পাকিস্তান যখন যুদ্ধে প্রায় জড়িয়ে পড়ছিল, তখন কর্নাটকের ২৯ বছর বয়স্ক সিভিল ইঞ্জিনিয়ার অধ্যাপক ওয়াদার সামাজিক মাধ্যমে তার হতাশার কথা প্রকাশ করেন। ফেসবুকে তিনি ভারতের ক্ষমতাসীন দলকে এজন্য দায়ী করে বলেন, এতে লাখ লাখ জীবন বিপদগ্রস্ত হয়ে পড়বে।
দুদিন পর ডানপন্থী একটি হিন্দু গ্রুপের ছাত্র ও সদস্যরা তার অফিসের সামনে সমবেত হয়ে ‘জাতীয়বিরোধী’ মন্তব্যের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতে বলে। তাকে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হয়। তিনি জানান, এখন এ ধরনের ঘটনা যে কারো ক্ষেত্রে ঘটতে পারে।
গত ১৪ ফেব্রুয়ারি পুলাওয়ামা বোমা হামলার পর ভারতে ক্রুদ্ধ জাতীয়তাবাদের স্রোত বয়ে চলেছে। টেলিভিশন অ্যাঙ্করেরা প্রতিশোধ গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছেন, ভারত সরকার বা সশস্ত্র বাহিনী নিয়ে কোনো প্রশ্ন তোলাকে পাকিস্তানকে সহায়তা করার সমান অপরাধ হিসেবে অভিহিত করছেন।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন ভারত সরকারও তা জোরালো করছে। সাধারণ নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়ার পরিক্রমায় বিরোধী দলগুলোর যেকোনো প্রশ্নেই মোদি দেশের প্রতি তাদের আনুগত্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চাচ্ছেন।
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে সরকারের প্রতি প্রকাশ্যে সমালোচনা করা বা ভারতের সামরিক বাহিনীর নিয়ে প্রশ্ন তুলে বেশ কয়েকজন তাদের চাকরি খুইয়েছেন।
ভারতজুড়ে কাশ্মীরী ছাত্ররা নানাভাবে নির্যাতিত হচ্ছেন। কাশ্মীরী ছাত্রদেরকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আক্রমণের মুখে পড়তে হয়েছে, হকারদেরকে শারীরিকভাবে আক্রান্ত হতে হয়েছে। কাশ্মীরী ও অন্যান্য সংখ্যালঘু গ্রুপকে নিরাপত্তা দিতে সুপ্রিম কোর্টকে নির্দেশ দিতে হয়েছে।
শীর্ষস্থানীয় কলামিস্ট ও ট্রিবিউন সংবাদপত্রের সাবেক সম্পাদক হরিশ খেরের মতে, সাম্প্রতিক পরিবেশ ভারতের জন্য নতুন পথে চলা। তিনি এ জন্য বর্তমান সরকারকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, এই সরকার দেশকে উত্তপ্ত, উত্তেজনাপূর্ণ ও উদ্বেগজনক জাতীয়তাবাদের দিকে চালিত করছে।
সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর কারণে ভারতবিরোধী বিদ্রোহ ও ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার প্রতিদ্ব›িদ্বতার মতো পুরনো সঙ্ঘাত নতুন সামাজিক মাধ্যমের যুগে নতুন করে আত্মপ্রকাশ করেছে। ভারত হলো ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপের সবচেয়ে বড় বাজার। এটি হলো টুইটারের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধমান বাজার।
অনলাইন দাঙ্গাবাজেরা দ্রুত আক্রমণ হানতে পারে। এমনকি যে লোকটি সবচেয়ে সুরক্ষিত আছেন বলে মনে করছেন, তিনিও এর শিকার হতে পারেন। ১৪ ফেব্রুয়ারি পুলওয়ামা হামলায় যে ৪০ জনের বেশির সৈন্য নিহত হয়েছে, মিতা সন্ত্রার স্বামীও তাদের মধ্যে ছিলেন। ৩৮ বছর বয়স্কা এই শিক্ষক যখন প্রকাশ্যে বলেন যে, যুদ্ধ হওয়া উচিত শেষ বিকল্প, তখন তিনিও সামাজিক মাধ্যমে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন। তবে তিনি এখনো তার মতে অনড় রয়েছেন। তিনি বলেছেন, এটিই গণতন্ত্র। আমি যা চাই, তা বলার অধিকার আমার আছে।
তবে অন্যরা আরো ভয়াবহ পরিণতির মুখে পড়েন। ১৪ ফেব্রুয়ারির হামলার পর উড়িষ্যা রাজ্যের সমাজতত্তে¡র অধ্যাপক মধুমিতা রায় স্থানীয় নিউজ শোতে এক অবসরপ্রাপ্ত কর্নেলের তোপের মুখে পড়েন। তিনি বলেছিলেন, পাকিস্তানের সাথে যুদ্ধ সমাধান নয়। তিনি মহাত্মা গান্ধীর অহিংসতা দর্শনের কথা বলেন। তিনি আরো বলেন, কাশ্মীর ও ভারতের উত্তর-পূর্ব এলাকায় বাড়াবাড়ি করছে। এর জবাবে অবসরপ্রাপ্ত ওই কর্নেল তাকে দেশদ্রোহী হিসেবে অভিহিত করে বলেন, তার মতো লোকদের ‘থাপড়ানো’ উচিত।
উদারপন্থী টেলিভিশন অ্যাঙ্কর মনোরঞ্জন মিশ্র বলেন, তিনি মধুমিতা রায়কে হত্যার হুমকি পেয়েছেন। ওয়াদারের মতো অধ্যাপকেরা তাদের ভবিষ্যত নিয়েও অনিশ্চয়তায় পড়ে গেছেন। কেবল নতজানু হয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করেই মুক্তি পাননি তিনি। কর্তৃপক্ষ তাকে অনলাইনে তার মন্তব্যের জন্য ব্যাখ্যা দিতে বলেছে। সূত্র : এসএএম।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।