রামগতিতে আ.লীগ নেতাকে বহিষ্কার
লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরআলগী ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেদ আলী মনুকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গত
মাদারীপুর শহরের ট্রলারঘাট এলাকা থেকে শহরের কাঠপট্টি পর্যন্ত ২ একর ৮০ শতাংশ খালটির এখন কোন অস্তিত্ব নেই। ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই খালটির পুরো অংশে প্রায় দেড় শতাধিক অবৈধ স্থাপনা গড়ে তুলেছেন ভূমিদস্যুরা। খালটি ভরাটের কারণে বৃষ্টির পানি নামতে না পারায় বর্ষার মৌসুমে পুরো শহর পানিতে তলিয়ে থাকে।
বিগত ৭০ বছর আগেও এই এলাকায় খাল দেখা গেছে। এখানে ট্রলার ও নৌকা চলাচল করতো। ছিল একটি বড় কালভাটও। এমনি দাবি করেছেন ট্রলারঘাট এলাকায় প্রবীন ব্যবসায়ী কাইয়ুম বেপারী। তিনি জানান, ‘আরো ৭০ বছর আগে এই খালে আমরা গোসল করেছি। পুরান বাজার ব্যবসায়ীদের কাজে কত ট্রলার মালামাল নিয়ে ভিড় করতো। এখানে ট্রলার ভিড়ত বলে এই এলাকার নাম হয় ট্রলারঘাট। কাল ক্রমেই প্রভাবশালীদের দখলে চলে গেছে খালটি।’
কাঠপট্টি এলাকায় বাসিন্দা গনেশ রায় বলেন, ‘আমরা শুনেছি এখানে বড় খাল ছিল। এখন তেমন কিছু দেখি না। এখন বৃষ্টি হলেই শহরের অনেক অংশেই পানি জমে থাকে। খালটি থাকলে বৃষ্টি দিনে এখানে পানি জমাট বাধতো না।’
স্থানীয় সুত্র জানায়, ময়লা আবর্জনা পড়ে খালের পানি চলাচল বাধাগ্রস্ত হলে দখলদারগণ বালু ফেলে খাল ভরাট করে নির্মাণ করেছেন মার্কেট, শপিং মলসহ ছোট-বড়, মাঝারি ও বহুতলা অবৈধ স্থাপনা। খাল ভরাটের কারনে পরিবেশের ভারমাস্য নষ্ট হলেও চলমান রয়েছে অবৈধস্থাপনা নির্মাণ কার্যক্রম।
মাদারীপুর জেলা প্রশাসনের সূত্র জানায়, আড়িয়াল খা নদীর ডান তীর গড়ে উঠেছে মাদারীপুর শহর। আর এই শহরের মূল ভূখন্ডকে নদীর ভাঙণের হাত থেকে বাঁচাতে শহরের মধ্য অংশে প্রায় ১০০ বছর আগে খনন করা হয়েছিলো এই খালটি। তখন খালটি ২০০০ ফিট লম্বা ও ৫০ ফিট চওড়া ছিল। বর্তমানে খালটির নেই কোন অস্তিত্ব। খালটি ভরাট করে দখলে রয়েছে ৩৭টি দোকান, ৭৫টি টিনসেড ঘর, একটি স্কুল ঘর, ১টি কবরস্থান, একটি মসজিদ, এক তলা বিশিষ্ট বাড়ি ৬টি, দোতালা বিশিষ্ট বাড়ি ১০টি, চার তলা বিশিষ্ট বাড়ি ২টি, তিন তলা বিশিষ্ট বাড়ি ২টি, পাঁচ তলা বিশিষ্ট বাড়ি ১টি।
মাদারীপুর পৌর ভুমি অফিসের কর্মকর্তা সেলিম মিয়া জানান, এই খালটি পাঁচখোলা ইউনিয়ন ভ‚মি অফিস, রাস্তি ইউনিয়নর ভ‚মি অফিস ও পৌর ভ‚মি অফিসের জায়গা নিয়ে আছে। কোন অনুমতি ছাড়াই প্রভাবশালীরা এই খালটি ভরাট করে গড়ে তুলেছে অবৈধস্থাপনা। এজন্য আমাদের কাছ থেকে কোন অনুমতি নেয়নি কেউ। আমরা বিষয়টি উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছে।
মাদারীপুর সদর উপজেলার পাঁচখোলা ইউনিয়ন ভ‚মি কর্মকর্তা রুবিনা আক্তার বলেন, আমরা ইতিমধ্যে দখলদারদের নামের তালিকা প্রস্তুত করেছি। তাদেরকে নোটিশও দেয়া হয়েছে। খালটি পূণরায় খনন করতে সব ধরণের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
সদর উপজেলার রাস্তি ইউনিয়ন ভ‚মি কর্মকর্তা ফারুক শিকদার বলেন, আমরা তিন ইউনিয়ন কর্মকর্তারা মিলে খালের জায়গা পরিমাপ করেছি। এখানে প্রভাবশালীদের উচু উচু কয়েকটি ভবনও রয়েছে। তাদের চিহ্নিত করে জেলা প্রশাসকের কাছে তালিকা পাঠানো হয়েছে।
সরেজমিনে শহরের কাঠপট্টি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ২ একর ৮০ শতাংশ খালটির যে এ এলাকার পাশ দিয়ে বয়ে গেছে তার কোন চিত্রই এখানে নেই। খালের জমি ভরাট করে নির্মাণ করা হয়েছে আধা পাকা, পাকাসহ বহুতল ভবন। রয়েছে ফজলুল হক হাওলাদার শিশু নিকেতন বিদ্যালয়, মসজিদ, কবরস্থান ও টিসটেড দোকান।
মাদারীপুর উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক মাসুদ পারভেজ বলেন, ‘মাদারীপুর পৌরসভা, সদরের পাঁচখোলা ও রাস্তি ইউনিয়নের সাথে সংযুক্ত এই খালটির পুরো অংশই ভরাট হয়ে গেছে। এর ফলে আগামীতে পরিবেশের ভারসাম্য হুমকি মুখে পড়বে। জলবন্ধতায় ভরা থাকবে শহর। এর থেকে প্ররিত্রান পেতে হলে প্রশাসনের উচিৎ এই খালটি উদ্ধার করে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করা।’
মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুল ইসলাম বলেন, ‘খালটি উদ্ধার করে পুনরায় খননের মাধ্যমে এর নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে সব ধরণের পদক্ষেপ নেয়া হবে। ইতিমধ্যে আমরা ১০০ জনকে উচ্ছেদ নোটিশ দিয়ে মামলা করা হয়েছে। এদের মধ্যে কেউ কেউ আপত্তি দিয়েছেন। শুনানী শেষে হলেই উচ্ছেদ অভিযান শুরু করা হবে।’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।