নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
কালের গর্ভে এক সপ্তাহ অতি নগন্য সময়। কিন্তু নগন্য এই সময়ে কত কিছুই না ঘটে যেতে পারে নশ্বর এই পৃথিবীতে! রিয়াল মাদ্রিদের দিকেই দেখুন; এমন ‘কালো সপ্তাহ’ তাদের ইতিহাসে আর আসেনি। সংক্ষিপ্ত এই সময়েই মৌসুমের ‘সব শিরোপা স্বপ্নই’ ধুলোয় মিশে গেল ইউরোপিয়ান জায়ান্টদের।
চিরপ্রতিদ্ব›দ্বী বার্সেলোনার কাছে হেরে কোপা দেল রে থেকে বিদায় নেয়ার মাত্র তিন দিন পর আরেক ক্ল্যাসিকোয় শ্রেফ উড়ে গিয়ে লা লিগার শিরোপার আশা ধুসর হয়ে যায় রিয়ালের। একই সময়ের ব্যবধানে এবার আয়াক্সের কাছে নিজেদের ইতিহাসের সবচেয়ে বাজে হারের সাক্ষি হয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের স্বপ্নও শেষ হলো রেকর্ড ১৩ ও টানা তিনবারের ইউরোপ চ্যাম্পিয়নদের। সেটাও এমন একটা দিনে যেদিন তাদের কাটার কথা ছিল ১১৬তম জন্মবার্ষিকীর কেক।
উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ ষোলোয় প্রথম লেগে আমস্টার্ডাম থেকে ২-১ গোলের জয় নিয়ে ফেরার পর অনেকে রিয়ালকেই কোয়ার্টার ফাইনালে দেখছিলেন। ইতিহাস কিংবা পরিসংখ্যানও তাদের পক্ষেই ছিল। কিন্তু সব হিসাব উল্টে রিয়ালকে তাদেরই মাঠে ৪-১ গোলে ধরাশায়ী করে শেষ আটের টিকিট ছিনিয়ে দিলো আয়াক্স। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ইতিহাসে এই প্রথম কোন দল নক আউট পর্বের প্রথম লেগে ঘরের মাঠে দুই গোল খেয়ে পিছিয়ে পড়ার পরও অগ্রযাত্রা অব্যহত রাখলো। সেটাও রিয়ালকে প্রতিযোগিতায় তাদের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় পরাজয় উপহার দিয়ে। কী দুর্দান্তভাবেই না দুই লেগ মিলে ৫-৩ ব্যবধানে এগিয়ে শেষ আটে নিজেদের নাম খোঁদায় করলো ডাচ দলটি। সবচেয়ে অবাক করার বিষয় হলো, রিয়ালের সর্বশেষ এই তিন হারই নিজ আঙ্গিনায়। এসময় তারা আট গোল খাওয়ার বিপরীতে দিতে পেরেছে মাত্র এক গোল। আরেকটু পিছিয়ে জিরোনার ম্যাচের হিসাব আনলে ঘরের মাঠে টানা চার ম্যাচ হারল রিয়াল। ২০০৪ সালের পর এমন বাজে পরিস্থিতে আর দেখা যায়নি রিয়ালকে। এবং এর কোন হারই কোনটির চেয়ে কম জ্বালাময় নয়। এল ক্ল্যাসিকো তো শ্রেফ জয়-পরাজয় কিংবা শিরোপার লড়াইয়ে নিক্তিতে মাপা যায় নাঅ ইতিহাস, ঐতিহ্য আর অহমের সেই ম্যাচে মাথা হেট হওয়ার সঙ্গে শেষ হয় কোপা দেল রের স্বপ্ন। লা লিগায় ব্যবধান বেড়ে দাঁড়ায় ১২ পয়েন্টে। যে ব্যবধান ঘোঁচানো কেবল খাতা-কলমেই সম্ভব। এবার ইউরোপিয়ান আসরেও মাদ্রিদের দলের আধিপত্যের অবসান হলো ১ হাজার ১১ দিন পর। যাকে আবার অনেক ফুটবল বোদ্ধাই বলছেন ‘রিয়ালের একটা যুগের সমাপ্তি’।
মে ২০১৫ এর পর থেকে টানা ৪৬ মাসে এই প্রথম প্রতিযোগিতা থেকে মুছে গেল রিয়াল মাদ্রিদের নাম। একই সঙ্গে ২০১৬ সালে মিলানের ফাইনালে নগর প্রতিদ্ব›দ্বী অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদকে হারিয়ে যে মুকুট তারা মাথায় পরেছিল সেটাই খুলে ফেলতে হলো নিজ আঙ্গিনা আর সমর্থকদের সামনে।
পরশু ঘরের মাঠে সান্তিয়াগো সোলারির দলকে কোন সুযোগই দেয়নি প্রতিযোগিতার চার ও সর্বশেষ ১৯৯৪/৯৫ মৌসুমের চ্যাম্পিয়ন আয়াক্স। ১৮ মিনিটের মধ্যে হাকিম জিয়েখ ও ডেভিড নেরেসের করা গোলে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায় তারা। দুই গোলেরই যোগানদাতা ছিলেন দুশান তাদিচ। এই তাদিচই ম্যাচের ৬২ মিনিটে স্কোরবোর্ড করে দেন ৩-০। সান্তিয়াগো বার্নাব্যুর শুভ্র গ্যালারিতে তখন শুনশান নীরবতা। সেই নীরবতা হঠাৎ ভাঙে মার্কো অ্যাসেনসিওর গোলে। কিন্তু এটা বাতি নিভে যাওয়ার আগে শেষবারের মত ধপ করে জ্বলে ওঠার সেই মুহূর্ত যেন। ম্যাচের তখনও ২০ মিনিট বাকি ছিল ঠিকই। কিন্তু স্বাগতিকদের ফিকে হওয়া স্বপ্ন দুই মিনট পরই এক ফুৎকারে নিভিয়ে দেন ডাচ মিডফিল্ডার লাসসি স্কোনি অবিশ্বাস্য ফ্রি কিকে। এক কথায় দিনটি ছিল আয়াক্সের সব পাওয়ার দিন। নইলে অমন দূরহ কোন থেকে ইঞ্চি মাপা বাঁকানো ফ্রি-কিক জাল খুঁজে নেবে কেন! ম্যাচের যোগ করা সময়ে নাচোর দুই হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছাড়ার বিষয়টিও এদিন হয়ে গেছে গৌণ।
রিয়ালের এই পরাজয়ের অন্যতম কারণ হতে পারে প্রথম লেগে ইচ্ছাকৃত দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে দুই ম্যাচ সার্জিও রামোসের নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি। যেটাকে আয়াক্স কোচ উল্লেখ করেন, ‘শুধুমাত্র ট্যাকটিক্যাল পরাজয় নয়, মানসিক পরাজয়ও।’ দিন শেষে এরিক টেন হাগের সেই কথাই সত্যি হলো। মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে ‘সব হারানোর’ কথা স্বীকার করেছেন দলের ডিফেন্ডার দানি কারবাহালও, ‘এক সপ্তাহেই আমরা ঘরের মাঠে সবকিছু হারালাম। কোন অজুহাত খুঁজছি না। আয়াক্স সাধারণভাবেই আমাদের চেয়ে ভালো ছিল।’ অন্যদিকে আয়াক্স মিডফিল্ডার দুশান তাদিচের ভাষায়, ‘জীবনে যত খেলা খেলেছি তার মধ্যে সম্ভবত এটাই সেরা। আমরা বিশ্বের সেরা দলকে হারিয়েছি। আমি খুবই গর্বিত এবং আমি মনে করি আমরা অনেক সমর্থকদের খুশি করতে পেরেছি। ফুটবলে আপনাকে শান্ত থেকে খেলাটা উপভোগ করতে হবে।’
রিয়াল মাদ্রিদ ১ : ৪ আয়াক্স
দুই লেগ মিলে ৩ : ৫
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।