মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
‘কাশ্মীর ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ’। কথাটি বলার মধ্যেই একটা আস্ফালন লুকিয়ে আছে। জাতিকে যখন ইতিহাস-কানা করে রাখা হয়, রাষ্ট্রশক্তি তখন খুব সহজে ঘটমান বর্তমানকেই একমাত্র সত্য বলে প্রতিপন্ন করে মানুষের ভাবাবেগে আগুন জ্বালিয়ে দিতে পারে। অতীতে কখনও কখনও এমন ঘটেছে। ভারতের বর্তমান শাসকরাও ঠিক সেই কাজটিই করছে। মানুষকে তারা বুঝিয়ে দিতে পেরেছে, কাশ্মীর এবং তৎসংলগ্ন অঞ্চল কেবলই একটি জঙ্গি ঘাঁটি। কাশ্মীরি মাত্রেই উগ্রপন্থী। ফলে তাদের মুখে পেলেট ছোড়া অন্যায় নয়। তাদের হত্যা করায় ভুল নেই। সৈন্যদের গাড়ির সামনে কাশ্মীরি নাগরিককে বেঁধে রেখে শহর ঘোরানো অপরিহার্য কূটনীতি। জেনেভা কনভেনশন তখন নেহাতই অবান্তর। এ সব বলতে বলতে কখনো কখনো কাশ্মীরিদের কার্যত পাকিস্তানি বলেও দাগিয়ে দেওয়া হয়। আর কে না জানে, নয়া-জাতীয়তাবাদী ভাষ্যে পাকিস্তানি মাত্রেই জঙ্গি! খবর আনন্দবাজার পত্রিকা’র।
মহান ভারত কথায় কথায় মোহনদাস কর্মচন্দ গান্ধীকে কষ্টিপাথরের মর্যাদা দেয়। এমনকি, বর্তমান শাসকও (যদিও তাদের শাখাপ্রশাখা একাধারে নাথুরাম গডসেকে ঈশ্বরের আসনে বসান)। কিন্তু শাসক ভুল করেও বলে না, কাশ্মীরে গণভোট চেয়েছিলেন গান্ধী। জানতে চেয়েছিলেন কাশ্মীরের মানুষের ইচ্ছা। বলা হয় না, দেশ টুকরো হওয়ার কিছু দিনের মধ্যে কাশ্মীরে দু’দেশের আগ্রাসী মনোভাব দেখে ঠিক কী প্রস্তাব নিয়েছিল জাতিসংঘ। কেন ৭০ বছর ধরে সেই প্রস্তাবের ধারে কাছেও পৌঁছতে পারল না দু’দেশের সরকার।
ভাবাবেগে ভাসা অন্যায় নয়। মন থেকে আবেগ যখন হারিয়ে যায়, তখন কেবল একটি রোবট পড়ে থাকে। জাতীয় পতাকায় মোড়া থরে থরে সাজানো পুলওয়ামার নিহত জওয়ানদের কফিন দেখলে আঘাত লাগে। মেরুদন্ড বেয়ে ঠান্ডা রক্তের স্রোত বয়ে যায়। কিন্তু একই রকম শিহরণ হয় এক মুখ রক্তে ভাসা পেলেটাহত কাশ্মীরি কিশোরের ছবি দেখলে। আজ যারা সোশ্যাল নেটওয়ার্ক দেশাত্মবোধে ভাসিয়ে দিচ্ছেন, ২০১৮ সালের জুন মাসের জাতিসংঘের মানবাধিকার সংক্রান্ত রিপোর্টে কাশ্মীরের বর্ণনা তারা পড়েছিলেন তো? সেই রিপোর্টে সামগ্রিকভাবে কাশ্মীরের ভয়াবহ পরিস্থিতির কথা লেখা হয়েছে। যার একাংশ ভারতে, অন্য অংশ পাকিস্তানের আওতায়। কাশ্মীরে প্রতিনিয়ত কীভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়ে চলেছে, তার বিস্তৃত বিবরণ লিপিবদ্ধ রয়েছে রিপোর্টটিতে। রিপোর্টে প্রস্তাবনার আকারে লেখা হয়েছে, ‘কাশ্মীরের মানুষের উপর চক্রাকারে যে হিংসা ঘটে চলেছে, এই মুহ‚র্তে তা বন্ধ করার জন্য রাজনৈতিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার। আলোচনার টেবিলে বসতেই হবে সব পক্ষকে।’
শুধু তা-ই নয়, বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের রিপোর্ট বলছে, গত কয়েক দশকে কয়েক লাখ সাধারণ কাশ্মীরিকে হত্যা করেছে রাষ্ট্রশক্তি। লাখ লাখ মানুষ এখনও নিখোঁজ। গ্রামের পর গ্রাম, কাশ্মীরি মহিলারা নিজেদের পরিচয় দেন ‘হাফ উইডো’ বা ‘অর্ধ বিধবা’ বলে। কারণ, তারা জানেন না, সত্যিই তাঁদের স্বামীর মৃত্যু হয়েছে কি না। জান্নাত নয়, ভ‚স্বর্গের আর এক নাম এখন ট্রমা।
জাতীয়তাবাদের যে পাঠ থেকে ভারতীয় জওয়ানদের লাশ দেখে আমাদের ভাবাবেগে আঘাত লাগে, তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া হয়, দশকের পর দশক ধরে একই রকম প্রতিক্রিয়া হয় আমাদেরই মতো রক্তমাংসে গড়া অগণিত কাশ্মীরির।
কে কাকে কীভাবে মদত দিচ্ছে, সে আলোচনা ক‚টনীতির। রাজনীতি এবং ক‚টনীতি ভাবাবেগে চলে না। প্রয়োজন মতো ভাবাবেগ ব্যবহার করে কেবল। এই মুহ‚র্তে ঠিক সে ঘটনাই ঘটছে। ভারতীয় জঙ্গি বিমান পাকিস্তানে ঢুকে জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংস করেছে বলে যে দাবি করা হচ্ছে, তার ক‚টনৈতিক বিশ্লেষণ আমাদের কাজ নয়। কিন্তু সামান্য ইতিহাসবোধ থাকলে এটুকু বোঝা যায়, একটি বা দু’টি জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংস করে আর যা-ই হোক, কাশ্মীর সমস্যার সমাধান হয় না। ‘মায়ের কোল খালি করে দেব’ হুমকি পৃথিবীর কোথাও আগুন নেভাতে পারেনি। তার জন্য নিরন্তর আলোচনা প্রয়োজন। গত ৭০ বছর ধরে সে কাজটিতেই রাজি হয়নি দু’দেশের রাজনীতি। কারণ, আলোচনার টেবিলে বসলে ‘অস্বস্তি’র ইতিহাস মান্যতা পেয়ে যায়। ইগো জলাঞ্জলি দিতে হয়। দেশের মানুষকে বলে দিতে হয় অনেক কথা, যা এখনও ঠেকিয়ে রাখা গেছে।
অতএব, ভাবাবেগকে ব্যবহার করে তাৎক্ষণিক সাফল্যের উদ্যাপন। ইতিহাস-কানা দেশের মানুষ যদি সেই উন্মাদনায় গা ভাসাতে চান, ভাসান। কিন্তু তারা যদি ভেবে থাকেন, এর ফলে কাশ্মীর সমস্যার সমাধান হবে, তা হলে তাঁরা কেবল ভুলই ভাবছেন না, মূর্খের স্বর্গে বাস করছেন। উগ্র জাতীয়তাবাদ কাশ্মীরের মানুষকে আরও দ‚রে ঠেলে দিল। আরও জটিল হল সমস্যা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।