চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান
॥ চার ॥
নবীদের নামে নামকরণ নিয়ে কেউ কেউ মতভেদ করলেও জমহুর আলিমদের মতে নবীদের নামে নামকরণ বৈধ। কেননা রাসূল (সা.) বলেন, তোমরা নবীদের নামে নামকরণ কর। ‘‘আবু দাউদ সুলাইমান ইবনু আশআ’আস-সিজিস্ তানি, আন-সূনান, প্রাগুক্ত, অধ্যায় : আল- আদাব, পরিচ্ছেদ : ফি তাগ্ইরিল আসমা’, পৃ. ৯২৫, হাদীস নং ৪৯৫০’’ তবে মুহম্মাদ ও আহ্মাদ নামে নামকরণের ফযীলতের বিবরণ সম্বলিত যে সকল হাদীস বর্ণিত হয়েছে তার সবই খুবই দুর্বল বা জাল। ‘‘ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর, হাদীসের নামে জালিয়াহি, ঝিনাইদহ : আস্ সুন্নাহ পাবলিকেশন্স, ২০০৮, পৃ. ২০৯’’ মুহাম্মাদ (সা.)-এর নামে নাম রাখার ব্যাপারেও হাদীসে এসেছে- “আমার নামে (মুহাম্মদ) নামকরণ কর, তবে আমার কুনিয়্যাহ বা উপনাম (আবুল কাসিম) দ্বারা উপনাম রেখো না।” বুখারী, প্রাগুক্ত, অধ্যায়: আল-আদাব, পরিচ্ছেদ : মান সুম্মিয়া বি ইসমিল আম্বীয়া, খ ২, হাদীস নং-৫৯৫৫।
তবে অধিকাংশ মুহাদ্দিস ও ফকীহগণের মতে, রাসূল (সা.)-এর এ নিষেধাজ্ঞা তার জীবদ্দশায় প্রযোজ্য ছিল। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর কুনিয়্যাত (আবুল কাসিম) দ্বারা নামকরণ বৈধ। কেননা আলী (রা.)-এর পৌত্র মুহাম্মাদ ইবনুল হানাফিয়্যা (রহ.)-এর কুনিয়্যাহ ছিল আবুল কাসিম। এভাবে নবী, রাসূল, ওলী, বুযুর্গ ব্যক্তির নামানুনারে নামকরণ উত্তম। ‘‘ওয়ালী উদ্দিন মুহাম্মদ বিন আবদুল্লাহ তাবরিযী, মিশকাত শরীফ ব্যাখ্যাংশ, নুর মুহাম্মদ আজমী ও আফলাতুন কায়সার অনূদিত ব্যাখ্যাসহ, ঢাকা : এমদাদিয়া লইব্রেরী, ২০০৮, খ, পৃ. ৫৩’’ এছাড়া আরবী ভাষায় ভাল অর্থবোধক শব্দে নাম রাখা বৈধ। তবে তা রাসূল (সা.) কর্তৃক নিষিদ্ধি বা অপছন্দনীয় নামসমূহের অন্তর্ভুক্ত হবে না।
নামের ভাষা ঃ মুসলিমের নামকরণ সাধারণভাবে আরবীতেই চলে আসছে সাহাবীদের যামানা থেকে। তবে কিছুসংখ্যক শব্দ যা অন্যভাষার হলেও এগুলো দীর্ঘদিন আরবীতে ব্যবহৃত হওয়ায় আরবী রূপ লাভ করেছে (মর্আরাব) ‘‘যে বিদেশী শব্দকে হুবহু রূপে অথবা আরবী শব্ধ গঠন কাঠামোতে পরিবর্তন করে আরবী ভাষায় রূপান্তর করা হয়েছে। এরূপ শব্দকে ম‘র্আরাব বলে। দ্র. আহমদ মুখতার উমর, মু‘জামুল লুগাতিল আরাবিয়্যাহ আল-মুআ‘সারাহ, কায়রো : আ‘লিমুল কুতুব, ২০০৮, খ. ৩, পৃ. ১৪৭৭’’ এসব শব্দের নামকরণ করা হয়ে থাকে। যেমন ইবরাহীম, ইসরাঈল ইত্যাদি।
এ ব্যাপারে আরবী ব্যতীত অন্য যে কোন ভাষায় নামকরণের ব্যাপারে রাসূল (সা.) থেকে সরাসরি কোন অনুমোদন বা নিষেধাজ্ঞা আমার জানা নেই। তবে উমর (রা.) তাঁর রাষ্ট্রীয় যে ফরমান বিজিত অমুসলিমদের উদ্দেধ্যে প্রেরণ করেন তাতে মুসলিমদের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ নাম অমুসলিমদের অনুসরণের নিষেধাজ্ঞা বুঝায়। তার ফরমানে তিনি এ বলে অমুসলিমদের থেকে অঙ্গীকার আদায় করেন যে, ‘আমরা মুসলিমদের সম্মান করব...। আমরা তাদের নাম ও উপাধির মত উপাধি ব্যবহার করব না। ‘‘ক্বারী মুহাম¥দ তাইয়েব, আত-তাশাববুহ ফি ইসলাম, মাওলানা কারামত আলী নিযামী অনূদিত, ঢাকা : আল-হিকমাহ পাবলিকেশন্স, ২০০৭, পৃ. ৭৭-৭৮’’
এ থেকে মুসলিম অমুসলিম নামকরণের পার্থক্য থাকার আবশ্যকীয়তা বুঝা যায়। ইমাম ইব্নে তাইমিয়্যাহ (রহ.) কেবল অমুসলিমদের নাম নয়; বরং জাতীয়তা বোধক নামকেও মাকরূহ বলেছেন। তিনি দলীল হিসাবে রাসূল (সা.) এর দু‘টি হাদীস উল্লেখ করেছেন। যে ব্যক্তি জাতীয়তার দিকে ডাকে সে আমার দলভুক্ত নয়। ‘‘আবু দাউদ, প্রাগুক্ত, অধ্যায় : আল-আদাব, পরিচ্ছেদ : ফিল আসাবিয়্যাহ, পৃ. ৯৫৬, হাদীস নং ৫১২১; এ হাদীসে পারস্পরিক যে ডাকার কথা বলা হয়েছে তা জাতীয়তাবোধক নামের ক্ষেত্রে। কেননা এরূপ জাতীয়তাবোধক সম্মন্ধবাচক শব্দ দ্বারা ব্যক্তির পরিচয় দেয়া হয় আর জাতীয়তাবোধক এরূপ সম্বন্ধবাচব শব্দ আল্লাহ্র রাসূল (সা.) অপছন্দ করেছেন। যেমন রাসূল (সা.)-এর এক সাহাবী কর্তৃক আমি ফরাসী যুবক বলার প্রতি উত্তরে তিনি বলেন, তুমি কেন বললে না আমি আনসারী যুবক। এর দ্বারা রাসূল (সা.) শারয়ী সম্বন্ধবাচক শব্দকে গ্রহণ করা পছন্দ করেছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।