Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শিশুর নামকরণ : ইসলামী দৃষ্টিকোণ

প্রকাশের সময় : ১৫ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান
॥ তিন ॥
তাঁর মতে, বিষয়টি প্রশস্ত। ‘‘আবু আবদুল্লাহ মুহাম্মদ বিন আবু বকর ইবনুল কায়্যিম, তুহফাতুল মাউদুদ বি আহাকামিল মাউলুদ, জিদ্দাহ : দারু ইলমিল ফাওয়াইদ, তা.বি., পৃ. ১৬২’’ তবে ইমাম বুখারী (রহ.) এক্ষেত্রে সূক্ষ্ম পার্থক্য করেছেন। তাঁর মতে, যে সন্তানের আকীকা দেয়া হবে তার নাম রাখা হবে জন্মের দিন। আল্লামা আহমদ আলী সাহারানপুরী (র.) বলেন, এরূপ সূক্ষè পার্থক্য ইমাম বুখারী (রহ.) ব্যতীত আর কেউ করেছেন বলে আমার জানা নেই। ‘‘বুখারী, আস-সহীহ্, প্রাগুক্ত, পার্শ্ব টীকায় উল্লেখিত, খ. ২ পৃ. ২৮১’’।
নামকরণের অনুষ্ঠান ঃ ইসলামে সন্তান জন্মগ্রহণের ৭ম দিনে আক্বীকার মাধ্যমে সন্তানের নামকরণের কথা বলা হয়েছে। তবে ওযরের কারণে সন্তান জন্মগ্রহণের ১৪তম দিন, ২১তম দিন বা অন্য সময়ে করলে আদায় হয়ে যাবে বলে কোন কোন ফকীহ মতপ্রকাশ করেছেন। ‘‘সাইয়্যেদ সাবিক, ফিক্হুস্ সুন্নাহ, কায়রো : দারুল ফাত্হ, ২০০৯ খ. ৩, পৃ ১৯৩’’ এক্ষেত্রে আকীকা ব্যতীত সন্তানের নামকরণে ইসলাম সম্মত আর কোন অনুষ্ঠানের সম্মতি নাই। এ অনুষ্ঠান করতে পুত্র সন্তানের জন্য দু’টি এবং কন্যা সন্তানের জন্য ১টি ছাগল জাতীয় পশু জবাই করার জন্য রাসূল (সা.) বলেছেন। ‘‘আবু দউদ সুলাইমান ইবনু আশআ’স আস-সিজিসতানীম আন-সূনান, অধ্যায় : আদ্ দাহাইয়া, পরিচ্ছেদ : ফিল আক্বীকাতে, বৈরূত : দারুল ফিক্র, ২০০৫ পৃ. ৫৩৮, হাদীস নং ২৮৪২’’ এমনকি প্রত্যেক সন্তান এরূপ আকীকার প্রতি দায়বদ্ধ। মুহাদ্দিসগণ এ দায়বদ্ধতার ব্যাখ্যা দিয়েছেন যে, যদি পিতা সন্তানের আকীকা না করেন তাহলে এ সন্তান আখিরাতে পিতার জন্য সুপারিশ করবে না। ‘‘আবু আলী মুহাম্মদ আবদুর রহমান বিন আবদুর রাহীম মোবারকপুরী, তুহফাতুল আহ্ওয়াজী, বৈরুত : দারুল ফিক্র, ২০০৫, খ. ৫, পৃ ১১৪’’
অকাল প্রসূত ভ্রƒণের নামকরণ ঃ হানাফী মাযহাবে ইমাম আবু হানীফা (রহ.)-এর মতে, মৃত অবস্থায় জন্মগ্রহণকারী সন্তানের নামকরণ করা হবে না। তবে এক্ষেত্রে ইমাম মুহাম্মাদ (রহ.) ভিন্ন মত পোষণ করেছেন। মালিকী মাযহাবেও এ মতই বর্ণিত হয়েছে। তবে ইমাম শাফিয়ী (রহ.)-এর মতে, এরূপ সন্তানের নামকরণ মুস্তাহাব বলে উল্লেখ করেছেন। এক্ষেত্রে সন্তান ছেলে না মেয়ে বুঝা না গেলে উভয়ের জন্য প্রযোজ্য এরূপ কোন রাখা যেতে পারে। ‘‘ইসলামী ফিক্হ বিশ্বকোষ, প্রাগুক্ত, খ. ২, পৃ. ১৭-১৮’’।
জন্মের পর মৃত্যুবরণকারী নবজাতকের নামকরণঃ ফকীহগণের মতে, জন্মের পর মৃত্যুবরণকারী সন্তানের নামকরণ করা হবে। হানাফী মাযহাব মতে, জন্মের পর নবজাতক চিৎকার করলে বড়দের মত তার সকল অধিকার সাব্যস্ত হয়ে যাবে। মালিকী ও শাফিয়ী মাযহাব মতে, এরূপ সন্তানের নামকরণ করা মুস্তাহাব। ‘‘প্রাগুক্ত, খ ২, পৃ. ১৮’’
যেসব নাম রাখা উত্তম ঃ সাধারণত যে সকল নামের ব্যাপারে ইসলামে নিষিদ্ধতা নেই, সে সকল নাম রাখা বৈধ বলে গণ্য হবে। তবে জমহুর আলিমগণের মতানুসারে আল্লাহ্ বা তাঁর বিশেষ গুণসমূহের সাথে সম্পর্কিত দাসত্বজ্ঞাপক নাম রাখা মুস্তাহাব। ‘‘প্রাগুক্ত, খ ২, পৃ. ১৯’’। রাসূল (সা.) বলেন, তোমাদের নামসমূহের মধ্যে আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয় নাম আব্দুল্লাহ, আব্দুর রহমান। ‘‘আবুল হুসাইন মুসলিম ইবনু হাজ্জাজ আল-কুশাইরী, আস-সহীহ, প্রাগুক্ত, অধ্যায় : আল- আদাব, পরিচ্ছেদ : আন্ নাহ্ইউ আনিত্তাকান্নি বি আবিল কাসিম ওয়া বায়ানু মা ইয়াসতাহিব্বু মিনাল আসমা’, পৃ. ১১৭৪, হাদীস নং ৫৪৮০’’ ইমাম কুরতুবী (র.)-এর মতে, এ উত্তমতা এ দু’টি নামের মত আল্লাহর অন্যান্য গুণবাচক নামের সাথে সম্বন্ধযুক্ত যেমন- আবদুল মালিক, আবদুর রহীম ইত্যাদির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। ‘‘ত্বাকী ওসমানী, তাক্বমিলাতু ফাতহিল মুহিম. করাচী : মাকতাবাতু দারুল উলুম, ১৪২৪ হি., খ. ৪ পৃ. ২০৬-২০৭’’। ইবনে আবিদীনের মতে- সাধারণভাবে ‘আব্দুল্লাহ’ নাম সব নাম থেকে, এমন কি আবদুর রহমান থেকেও উত্তম। আব্দুল্লাহ ও আব্দুর রহমান এ দু’টির পর সর্বোত্তম নাম মুহাম্মাদ, তারপর আহ্মাদ, তারপর ইবরাহীম। তিনি আরো বলেন, আব্দুল্লাহ, আব্দুর রহমান নামকরণ তাদের জন্য উত্তম, যারা দাসত্বসূচক নামকরণে আগ্রহী। সাধারণভাবে উত্তম নয় এবং এ উত্তমতা আল্লাহর নিকট মুহাম্মদ ও আহমাদ নাম সবচেয়ে প্রিয় হওয়ার পরিপন্থিও নয়। কেননা তিনি তাঁর নবীর জন্য হার নিকট সবচেয়ে প্রিয় নামই পছন্দ করেছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ