শেখ ফজলুল করিমের জীবন ও সাহিত্য
বাঙ্গালী মুসলমানদের লুপ্ত গৌরব ও ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে যে কয়জন খ্যাতনামা মুসলিম সাহিত্যিক স্মরণীয় বরণীয়
বাংলাদেশ এখন বিশ্বের বুকে মাথা উচুঁ করে কথা বলতে পারে। কারণ এখন আমরা আর পিছিয়ে নেই। আমরা এখন উন্নয়নশীল দেশের কাতারে। স্বাধীনতার পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যেই সূচনা করেছিলেন, তারই হাল ধরেছেন তার সুযোগ্য উত্তরসূরী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফলে এখন আমরা একটি নতুন সড়কে উঠেছি। এই সড়ক হলো উন্নয়নের মহাসড়ক। দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের সঙ্গে আমাদের নারীরাও কোনো অংশে পিছিয়ে নেই। এটি আমাদের জন্য একটি বড় সৌভাগ্যের ব্যাপার হলো, আমরা জননেত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলের নাগরিকত্ব উপভোগ করতে পারছি।
আমি নরীদের কিছু বিষয় আলোকপাত করতে চাই। আমাদের দেশে শিক্ষার হার বেড়েছে যা কেবল সংখ্যায় নয়, মেধার দিক থেকেও মেয়েরা অগ্রসর হয়েছে। এখন আর সংসারে ছেলে-সন্তান জন্ম নিতেই হবে বা ময়ে-সন্তানকে লেখাপড়া করানো হবে না, এমন অবস্থা আর নেই। শ্রমিক, ভূমিহীন ও দরিদ্র পরবিারেও মেয়েকে স্বাবলম্বী হতে দখা যাচ্ছে। মধ্যবিত্ত সমাজে আগে মেয়েরা কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পড়তেই বিয়ে হয়ে যেত। শিক্ষিত হলে ভালো বিয়ে হবে, এমনটা ছিল পরিবার, সমাজ ও মেয়েটির নিজের মানসকিতা। কিন্তু এখন শিক্ষিত হয়ে তারা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছে এবং পরিবার, সমাজ, রাজনীতি ও নানা সংগঠনের দায়িত্ব পালন করছে। ব্যতিক্রম সবসময়ই আছে ও থাকবে। বহুদিন ধরে নারীর বিয়েটাই ছিল সব থকে বড় বিষয়, যা এখন আর অতটা নেই। নারী সমাজিকভাবে একটা অবস্থানে দাঁড়িয়েছে, নিজেকে মানুষ হিসেবে ভাবতে শিখেছে যা ইতিবাচক। বাংলাদেশে অনেক ক্ষেত্রের সূচক বেড়েছে। গড় আয়ু বেড়েছে। তবে একটু সমস্যা এখনো রয়েছে, নারীর কর্মসংস্থান বাড়লেও মজুরি বাড়েনি সেই হারে। যৌন-হয়রানি, যাতায়াত ব্যবস্থার অসুবিধা, কর্মস্থলে নানা বৈষম্য, সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে ক্ষমতা না থাকা নারীর এগিয়ে যাওয়ার পথে এখনও বাধা। যা প্রতিনিয়তই মোকাবেলা করছে নারী। এসব তো সামাজিকভাবে, রাজনৈতিক ও কর্মস্থলের নেতিবাচক পরিস্থিতির চিত্রই তুলে ধরে।
নারীর অগ্রগতি ও ক্ষমতার গল্প আমাদের দেশে উল্লেখ করার মতো হয়েছে, এর বড় কারণ হল, নারীর এখন দুটি চরিত্রে ভূমিকা পালন করতে হয়। সংসারের কাজের দায়িত্ব এবং কর্মস্থলের দায়িত্ব, দুটোই পালন করতে হচ্ছে। পুরুষদের বেলায় সমানভাবে দুই দায়িত্ব পালনে বাধ্যবাধকতা নেই। এর জন্য সমাজ-সংসারে কেউ দোষ ধরে না। এই দৃষ্টিভঙ্গি এখনও সব স্তরেই রয়ে গেছে। যা আমাদের সামাজিক ও ধর্মীয় অজ্ঞতার কুসংস্কারে বন্দি বলেই এমনটা হচ্ছে। ফলে নারীর পথচলা এখনও সহজ হয়নি। আর এসবের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে নারীর অধিকারের বিষয়টি। বিশ্বজুড়েই এখন বলা হয়, ‘নারীর অধিকারই মানবাধিকার’। সংবিধানে নারীর অধিকার একজন নাগরিকের অধিকারের মতোই পাওয়ার কথা লেখা আছে। বাংলাদেশে অনেক আইন আছে নারীর পক্ষে, কিন্তু তা প্রয়োগ হয় কম। এ ছাড়া অধিকাংশ নারীই তাদের অধিকার ও মানবাধিকার সম্পর্কে জানে না। তাই নারীর অধিকার ক্ষুনড়ব হলে মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়, এটা সাদামাটাভাবে বলা যায়। তকে আরেকটি বিষয় নারীর ক্ষমতা এখনো ভালভাবে প্রয়োগ বা বাস্তাবায়ন হয় না। তাই তার অধিকার ক্ষুনড়ব হয় অনেক ক্ষেত্রেই, সেই সঙ্গে মানবাধিকারও। ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ যে বা যারা করে তারাই এই অধিকার নিয়ন্ত্রণ করে। এখনও অধিকাংশ নারীর নিজস্ব সম্পদ কম বা নেই। জমি-বাড়ি ও অর্থ সস্পদের উপর অধিকার নারীর নেই বললেই চলে। অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হলে নারী ক্ষমতা অর্জন করে পরিবারে, সমাজে। রাজনৈতিকভবেও নারী ক্ষমতা অর্জন করে। তবে তারা এই ক্ষমতা কতটা ভোগ করতে এবং প্রয়োগ করতে পারে, সেটা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একটু প্রশড়ববোধক।
বাংলাদেশে রাজনৈতিকভাবে নারীর ক্ষমতায়ন হয়ছে। তৃণমূল থেকে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ে নারী ক্ষমতায় আছে। তার অর্থ এই নয় যে, নারী অধিকার ও মানবাধিকার এ দেশে পুরোপুরি সুরক্ষিত। মানবাধিকার লঙ্ঘন হতে পারে নানাভাবে। কখনও ব্যক্তির উপর ব্যক্তি, ব্যক্তি গোষ্ঠীর উপর আবার গোষ্ঠী, আরেক দুর্বল গোষ্ঠীর উপর নিজেদের মতাদর্শ চাপানোর চেষ্টা করে বা বাধ্য করে, যা মানবাধিকার লঙ্ঘনের নামান্তার। যেমন সংসারে নারীর উপর স্বামী বা অন্য কেউ নানা ধরনের নির্যাতন করে তেমনি নারী গোষ্ঠীর উপর রাজনৈতিক দল, ধর্মীয় ও সামাজিক গোষ্ঠী নানা মত ও ফতোয়া জারি করে, আবার রাজনৈতিক দল আরেক দলের উপর নির্যাতন চালায়। তাতে মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়।
নিজেকে যোগ্য মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য, নিজের স্বপড়বকে ছোঁয়ার জন্য নারীকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়া জরুরি। আমরা নারীর সমতার কথা বলি, অধিকারের কথা বলি। সামনে এগিয়ে যাওয়ার কথা বলি, এ সবকিছুর মূলে অর্থনৈতিক স্বাধীনতা অনেক বড় ভূমিকা পালন করে। গত এক দশকে নারীর জীবনযাত্রার মান এবং অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতিমালার প্রভাব ক্রমান্বয়ে বেশি করে অনুভূত হচ্ছে।
নারীর প্রতি বৈষম্যের আর একটি কারণ নিহিত রয়েছে খোদ অর্থনৈতিক তত্ত্বগুলোর মধ্যে। প্রচলিত অর্থনৈতিক হিসাব-নিকাশের মধ্যে নারীর কাজকে অর্থপূর্ণ ও উৎপাদনশীল ধরা হয়নি। অর্থনৈতিক তত্ত্বগুলোতে নারীর অ-আর্থিক কাজগুলোকে অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের বাইরে ধরা হয়। গতানুগতিক নয়া-ক্ল্যাসিকাল ব্যাষ্টিক অর্থনীতির তত্ত্ব অনুযায়ী একজন ব্যক্তি যদি এমন কোনো পণ্য বা সেবা উৎপাদন বা ভোগের সঙ্গে জড়িত থাকে যার বিনিময়মূল্য আছে অর্থাৎ বাজারে যা অর্থের বিনিময়ে কেনাবেচা করা যাবে শুধু সেসব পণ্যই হিসাবের মধ্যে থাকবে। নারী এবং পুরুষের কর্ম পরিধির ভিনড়বতার কারণে অর্থনীতিতে নারীর ভূমিকা ভিন্নভাবে প্রতিফলিত হয়। মূলত পুরুষের প্রধান ভূমিকা হচ্ছে পরিবারের সদস্যদের ভরণপোষণের জন্য ঘরের বাইরে কাজ করা। আর এই কাজের বিনিময়ে সে অর্থ উপার্জন করে। অন্যদিকে বেশিরভাগ নারী ঘরের কাজকর্ম করে থাকে যার কোনো আর্থিক বিনিময় মূল্য নেই। পুরুষ বাজারে যা উৎপাদন করছে, কিনছে বা ভোগ করছে তা হয়ে যাচ্ছে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড। আর নারী ঘরে পরিবারের জন্য যে পণ্য বা সেবা উৎপাদন করছে এবং ভোগ করছে তা হচ্ছে অ-অর্থনৈতিক কর্মকান্ড। এই ধরনের অর্থনৈতিক তত্ত¡ নারী-পুরুষের অর্থনৈতিক বৈষম্যের অন্যতম কারণ। এই তত্তে¡র ওপর ভিত্তি করেই একটি দেশের মোট জাতীয় উৎপাদন বা জিডিপি হিসাব করা হয়ে থাকে। কিন্তু এই তত্ত¡ খন্ডিত এবং ভ্রান্ত। এ কারণেই জিডিপিতে নারীর অবদান খুব কম দেখানো হয়। নারীর প্রতি বৈষম্য ঘোচনার প্রাথমিক ধাপ হচ্ছে তার উনড়বয়নের জন্য পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ। নারী বাজেট হচ্ছে বাজেটের জেন্ডারভিত্তিক মূল্যায়ন, বাজেটের সকল পর্যায়ে জেন্ডার দৃষ্টিভঙ্গির অন্তর্ভুক্তি এবং রাজস্ব আয় ও ব্যয়ের পুনর্বিন্যাসে জেন্ডার সমতা রক্ষা করা। জেন্ডার সংবেদনশীল বাজেটের অর্থ এই নয় যে, নারীর জন্য আলাদাভাবে বাজেট তৈরি করতে হবে। বরং বিদ্যমান জাতীয় বাজেটে জেন্ডার সমতা রক্ষার জন্য নীতিমালা ও বরাদ্দ করাই হচ্ছে জেন্ডার বাজেটিং এর উদ্দেশ্য। এ ক্ষেত্রে সরকারি অর্থায়নের লক্ষ্য হওয়া উচিত খানা বা পরিবার নয় বরং নারী এবং পুরুষের ভিন্ন ভিন্ন চাহিদার ভিত্তিতেই রাজস্ব আহরণ এবং সরকারি ব্যয় নির্ধারণ করতে হবে। কেননা একই পরিবারের মধ্যেও সদস্য ভেদে দারিদ্র্যের মাত্রা ভিনড়ব হয়। দেখা যায়, নারী সদস্যটিই উচ্ছিষ্ট খাদ্য গ্রহণ করে অপুষ্টিতে ভুগছে কিংবা স্কুলে যাওয়ার সুযোগ না পেয়ে আয় করতে পারছে না।
পরিশেষে বলতে চাই, অধিকার কেউ কখনো দেয় না। এটি পৃথিবীর বাস্তবতা। নারীকে সব সময় অবহেলার চোখে দেখা হয়। এই অবহেলা আর বৈষম্য থেকে রক্ষা পেতে নারীকেই এগিয়ে আসতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।