Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

গার্মেন্টস এক্সেসরিজ শিল্পে অশনি সঙ্কেত

| প্রকাশের সময় : ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

দেশের বৈদেশিক রফতানী আয়ের প্রধান ম্যানুফেকচারিং খাত গার্মেন্ট শিল্পের ব্যাকওয়ার্ড লিঙ্কেজ বা সহযোগী শিল্পখাত হিসেবে গার্মেন্টস এক্সেসরিজ শিল্পে ক্রমান্বয়ে আত্মনির্ভরতা অর্জন সামগ্রিকভাবে তৈরী পোশাক শিল্পখাতকে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে বিশেষ ভ‚মিকা পালন করেছে। শুধুমাত্র সস্তাশ্রম নির্ভর তৈরী পোশাক রফতানী খাতে ফেব্রিক থেকে শুরু করে এক্সেসরিজ পর্যন্ত কাঁচামালে সর্বাংশে আমদানী নির্ভর গার্মেন্ট শিল্পে টেক্সটাইল, ফেব্রিক্স এবং এক্সেসরিজ খাতে হাজার হাজার কোটি টাকার দেশীয় বিনিয়োগ ও বিকাশ যখন সমগ্র সেক্টরটিকে নতুন পথ দেখিয়েছে ঠিক তখন এ খাত ভিন্নভাবে আবারো বিদেশ নির্ভর হয়ে পড়তে শুরু করেছে। এক সময় চীন ও ভারত নির্ভর এক্সেসরিজ খাতের হাজার হাজার কোটি টাকার দেশীয় বিনিয়োগ এখন বড় ধরণের হুমকির সম্মুখীন হয়েছে। চীন, ভারত ও হংকংয়ের ব্যবসায়ীরা ইপিজেড এলাকার বাইরে গার্মেন্টস এক্সেসরিজ শিল্পে বিনিয়োগও ট্রেডিংয়ে জড়িত হয়ে দেশীয় বিনিয়োগকে হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে বলে প্রকাশিত সংবাদে জানা গেছে। এ খাতে দিনকে দিন তাদের পদচারণা ও প্রভাব বেড়েই চলেছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে তিলে তিলে গড়ে তোলা দেশীয় কারখানাগুলো লোকসানের মুখে বন্ধ করে দিতে বাধ্য হবে উদ্যোক্তারা। এক্সেসরিজ শিল্প আবারো বিদেশ নির্ভর হয়ে পড়লে এক সময় বিদেশিদের মনোপলি দামে পণ্য কিনতে বাধ্য হবে আমাদের রফতানীমুখী গার্মেন্টস কারখানাগুলো। এভাবে হাজার হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ এবং লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানে বড় ধরনের হুমকির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
গত প্রায় তিন দশকে দেশে তৈরী পোশাক খাতের পাশাপাশি এর জন্য প্রয়োজনীয় এক্সেসরিজ শিল্পেরও বিকাশ ঘটেছে। এ খাতে বিনিয়োগ হয়েছে তিরিশ হাজার কোটি টাকার বেশী। গার্মেন্টস এক্সেসরিজ খাতে বিদেশী বিনিয়োগ নিয়ন্ত্রণ করে দেশীয় উদ্যোক্তাদের বাড়তি সুবিধা নিশ্চিত করে বিনিয়োগ নীতিমালা প্রণয়ন করা হলেও নীতিমালা অমান্য করে বিদেশি বিনিয়োগকারী ও উদ্যোক্তারা এ খাতে ক্রমান্বয়ে প্রভাব সৃষ্টির মধ্য দিয়ে এ খাতের দেশীয় কারখানার বিনিয়োগকারীদের কোণঠাসা করে ফেলা হচ্ছে বলে প্রকাশিত রিপোর্টে জানা যায়। দেশে গড়ে ওঠা প্রায় দেড় হাজার এক্সেসরিজ কারখানায় প্রায় ৩০-৩৫ প্রকারের এক্সেসরিজ উৎপাদনের ব্যবস্থা থাকলেও এখন অল্প কিছু সংখ্যক পণ্যের উপর নির্ভরশীল হয়ে বেশীরভাগ পণ্যে বিদেশিদের বিনিয়োগে গড়ে ওঠা কারখানাগুলোর উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। বাংলাদেশ গার্মেন্ট এক্সেসরিজ অ্যান্ড প্যাকেজিং ম্যানুফেকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের(বিজিএপিএমইএ) তথ্য অনুসারে, বর্তমানে দেশের এক্সেসরিজ কারখানারগুলোর শতকরা ৭০ ভাগই মূলত ৫টি পণ্যের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। এগুলো হচ্ছে, কার্টন, পলিব্যাগ, সুইংথ্রেড, লেবেল এবং ইলাস্টিক ও ড্রস্টিং। অথচ এ খাতের বহুল ব্যবহৃত পণ্যগুলোর মধ্যে বোতাম, জিপার, হ্যাংগার, নেকবোর্ড, ব্যাকবোর্ড, হ্যাংট্যাগ, প্রাইসট্যাগ, ইলাস্টিক,ভ্রস্টিং ইন্টারলাইনিং, কুইল্টিং বারকোড, গামটেপ, পিপি ব্যান্ডসহ প্রায় সব পণ্যই দেশীয় কারখানাগুলো যোগান দিতে সক্ষম। ভারতীয় ও চীনা বিনিয়োগকারিদের বিনিয়োগ নীতিমালা অনুসরণ না করা এবং গার্মেন্টস শিল্পের ব্যাকওয়ার্ড লিঙ্কেজ খাতে তাদের অবাধ অনুপ্রবেশ এ খাতের বিকাশ ও সম্ভাবনাকে বড় ধরনের হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে।
এমনিতেই নানাভাবে দেশে বৈদেশিক রেমিটেন্সের এক বড় অংশ ভারতে ও চীনে চলে যাচ্ছে। দেশে শিক্ষিত বেকারত্বের হার দিন দিন বেড়ে চললেও বিশেষত ভারত প্রভাবিত উদ্যোক্তা এবং বিনিয়োগকারীরা বিভিন্ন সেক্টরে মোটা বেতনে ভারতীয়দের চাকরী দিয়ে প্রকারান্তরে দেশ থেকে ভারতে টাকা পাচারের পথ সুগম করেছে। বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও গার্মেন্ট রফতানী থেকে আয়ের একটি বড় অংশই এখন ভারতে চলে যাচ্ছে। অফিসিয়াল হিসাবে এর পরিমান বছরে ৫-৬ বিলিয়ন ডলার বা প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা ধরা হলেও প্রকৃত অঙ্ক আরো অনেক বড় হবে বলেই সংশ্লিষ্টরা দাবী করছেন। বিশেষত গার্মেন্টস রফতানীতে আন্তর্জাতিক বাজারে ভারত বাংলাদেশের অন্যতম আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দি। বাংলাদেশের তৈরী পোশাক কারখানা এবং এক্সেসরিজ খাতে ভারতীয় ও চীনা বিনিয়োগ ও ব্যবসায়ীদের অবাধ বিনিয়োগ ও ব্যবসায় নিয়ন্ত্রণ করা জরুরী। রাজনৈতিক কারণে মামলা, দমন-পীড়ন ও নিগ্রহের শিকার হওয়ার কারণে দেশের অনেক বিনিয়োগকারী ও ব্যাবসায়ী ব্যবসা ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। এ সুযোগে ভারতীয় ও চীনা বিনিয়োগকারীরা এসব কারখানায় বিনিয়োগ করে এ সেক্টরের নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে নিয়ে নিচ্ছে। একটি রফতানীমুখী প্রতিষ্ঠিত শিল্পের দেশীয় বিনিয়োগ শুধুমাত্র রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও দমনপীড়নের কারণে বিদেশ নির্ভর হয়ে পড়ার এই বাস্তবতা মেনে নেয়া কঠিন। দেশকে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ করতে হলে, দেশের কর্মসংস্থান ও দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাইলে রাজনৈতিক কারণে ব্যবসায়ীদের ধরপাকড় বা বিড়ম্বনার শিকারে পরিনত হওয়ার বাস্তবতার পরিবর্তন হতে হবে। তৈরী পোশাক রফতানী ও গার্মেন্টস এক্সেসরিজ খাতে বিদেশ নির্ভরতা কমিয়ে আত্মনির্ভরশীলতা অর্জন এবং সরাসরি বিদেশে রফতানীর মাধ্যমে টাকা পাচার রোধ করে এ খাতে বছরে আরো হাজার হাজার কোটি টাকা আয় করা সম্ভব। এ জন্য দেশীয় বিনিয়োগ, কর্মসংস্থানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। সম্ভাবনাময় গার্মেন্টস এক্সেসরিজ খাতকে বিদেশী বিনিয়োগ ও ট্রেডের কারণে ধ্বংসের আশঙ্কা দূর করার জরুরী পদক্ষেপ নিতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন