Inqilab Logo

শক্রবার ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিদ্যুৎ খাতে অশনি সঙ্কেত

সরদার সিরাজ | প্রকাশের সময় : ৫ জুলাই, ২০২২, ১২:০৩ এএম

বর্তমান সরকারের সময়ে দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন বেড়েছে পাঁচগুণ। ২০০৯ সালে সরকার ক্ষমতা গ্রহণকালে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা ছিল ৪,৯৪২ মেগাওয়াট। আর বিদ্যুৎসুবিধাভুক্ত মানুষ ছিল ৪৭%। বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা হয়েছে ২৫ হাজার মেগাওয়াটের বেশি। পার্বত্য চট্টগ্রামের কিছু দুর্গম এলাকা ব্যতীত দেশের সর্বত্রই বিদ্যুতায়ন হয়ে ৯৭% মানুষ বিদ্যুৎসুবিধাভুক্ত হয়েছে। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে, বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাপক বৃদ্ধি পেলেও মানুষের বিদ্যুৎ প্রাপ্তি নিরবচ্ছিন্ন হয়নি। লোডশেডিং চলছে ব্যাপক! বিশেষ করে, গ্রামাঞ্চলে। রাজধানীতেও দিনে কয়েকবার করে লোডশেডিং হচ্ছে প্রতিদিনই। এছাড়া, দেশব্যাপী প্রায়ই লো ভোল্টেজ, ভোল্টেজ আপ-ডাউন চলছে। এর প্রধান কারণ হচ্ছে, বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধিতে যেভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, সেভাবে সঞ্চালন ও বিতরণ লাইন বৃদ্ধিতে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। তাই এসব বহু আগের অবস্থাতেই আছে। চাহিদা মাফিক বিদ্যুৎ সরবরাহ হচ্ছে না। এই দুর্গতি ২০২৮ সাল পর্যন্ত চলবে বলে সংশ্লিষ্ট সংসদীয় স্থায়ী কমিটিকে জানিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। এতে শিল্প ও বাণিজ্যসহ সব ক্ষেত্রেই ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে! মানুষের গড় বিদ্যুৎপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে বৈশ্বিক সূচকে দেশের অবস্থান তলানিতে! অন্যদিকে, সক্ষমতা অনুযায়ী সব বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে না পারায় ৫৮% বিদ্যুৎকেন্দ্র বসিয়ে রেখে ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হচ্ছে বছরে কয়েক হাজার কোটি টাকা করে। তাই ভর্তুকি বেড়েই চলেছে, যা কমানোর জন্য গত ১১ বছরে বিদ্যুতের দাম পাইকারিতে ১১৬% ও গ্রাহকের ৯০% বাড়ানো হয়েছে। পুনরায় ৫৮% বাড়ানোর চেষ্টা চলেছ। নতুবা চলতি বছরে লোকসানের পরিমাণ ৩০ হাজার কোটি টাকা দাঁড়াবে বলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। অর্থনীতিবিদ ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘ক্যাপাসিটি পেমেন্টের কারণে কোনো বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে যেটুকু বিদ্যুৎ কেনা হয় তার দাম প্রতি ইউনিট গড়ে ৬০০ টাকা পর্যন্ত পড়ছে, যা বিস্ময়কর ঘটনা।’ বর্তমানে পাইকারি বিদ্যুতের দাম কিলোওয়াট ঘণ্টা ৫.১৭ টাকা। সরকার ভর্তুকি দিচ্ছে আরও ৩.৩৯ টাকা-জার্মান বেতার। এদিকে, বিদ্যুতের মূল্য ব্যাপক বাড়ানোর কারণে তার প্রভাব পড়েছে দেশের সব ক্ষেত্রেই। বিদ্যুৎ খাতের বিপুল ভর্তুকির প্রধান কারণ হচ্ছে, সরকারি খাতের কম মূল্যের বিদ্যুৎ উৎপাদনের চেয়ে বেসরকারি খাতের অধিক মূল্যের বিদ্যুৎ উৎপাদন ও ক্রয়ের দিকে অধিক গুরুত্বারোপ! যেমন: বর্তমানে মোট উৎপাদিত বিদ্যুতের ৫৬% ক্রয় করা হচ্ছে বেসরকারি খাত থেকে। অথচ বিদ্যুৎ উৎপাদনের হার সরকারি খাতেই বেশি, দুই তৃতীয়াংশ। খবরে প্রকাশ, দেশে বর্তমানে মোট ১৫২টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে। এর মধ্যে বেসরকারি কেন্দ্র ৭৮টি, যাদের মোট উৎপাদনের সক্ষমতা ৮,৭৭৭ মেগাওয়াট, যা মোট সক্ষমতার এক-তৃতীংশের বেশি। বাকিগুলো সরকারি খাতের। দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে, সিস্টেম লসের নামে চুরি!
বিদ্যুৎ খাতের ব্যয় কমানোর লক্ষ্যে সরকারি নির্দেশে গত ১৬ জুন হতে রাত ৮টার পর থেকে সব অফিস, দোকান, মার্কেট, কাঁচাবাজার বন্ধ চলছে (ঈদের কারণে কয়েকদিন স্থগিত রয়েছে)। এতে দৈনিক ১৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে এবং উৎপাদন উপকরণেরও সাশ্রয় হবে বলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। কিন্তু এতে মানুষের চরম ক্ষতি হচ্ছে। এই তুঘলকি কাণ্ড না ঘটিয়ে অধিক মূল্যের রেন্টাল ও কুইক রেন্টালের বিদ্যুৎ নেয়া বন্ধ করলেই এই খাতের লোকসান কমতো ও মানুষের ব্যাপক ভোগান্তি হতো না। সেটা না করে রেন্টাল ও কুইক রেন্টালের বিদ্যুৎ নেয়ার চুক্তি পুনরায় নবায়ন করা হয়েছে! বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির সুফল গ্রাহকরা তেমন না পেলেও বেসরকারি বিদ্যুৎ ব্যবসায়ীরা পেয়েছে শতভাগ! আবার এর বিরুদ্ধে মামলা করা যাবে না বলেও আইন করা হয়েছে!

বিদ্যুৎ খাতের দ্বিতীয় বড় সমস্যা হচ্ছে, বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ ও পরিচালনা ব্যয় বাবদ ২.১৮ লাখ কোটি টাকার অধিক ঋণ হয়েছে। তন্মধ্যে ১ লাখ ৪০ হাজার ৫৫৩ কোটি টাকা বিদেশী। খবরে প্রকাশ, ‘দেশে বর্তমানে বিদ্যুতের উৎপাদন সক্ষমতা ২৫ হাজার মেগাওয়াট। ২০৪১ সালের মধ্যে তা ৬০ হাজার মেগাওয়াটে তোলার লক্ষ্য রয়েছে সরকারের। এজন্য স্থানীয় ও বিদেশি ঋণ নিয়ে বেশকিছু বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এছাড়া, বিদ্যুৎ খাত পরিচালনা করতে সরকারি কোম্পানিগুলোর দেনাও বেড়েছে। সব মিলিয়ে গত এক দশকে খাতটিতে মোট দেনার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২.১৮ লাখ কোটি টাকার বেশি।’ এই বিপুল ঋণ সুদসহ পরিশোধ করতে হবে ২০২৪-২৭ সালের মধ্যে।নতুবা দেনার পরিমাণ আরো বাড়বে। এ ব্যাপারে প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলাম বলেন, ‘বিদ্যুৎ খাতে দক্ষতা দেখানো না গেলে নানা ধরনের খরচ বাড়বে। এতে করে খাতটিতে ঋণের বোঝাও বেড়ে যাবে। সামগ্রিকভাবে অর্থনীতিতেই এর চাপ সৃষ্টি হবে। বিদ্যুতের উৎপাদন সক্ষমতা বাড়বে এমন লক্ষ্যকে সামনে রেখে সক্ষমতা বাড়ানো হলেও আশানুরূপ ব্যবহার বাড়ানো যায়নি।তাই এ খাতের লোকসান বাড়ছে। ঋণের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে হলে বিদ্যুৎ খাতের দক্ষতাও বাড়াতে হবে।’

দেশের সক্ষমতার ৫৮% প্লান্ট বসিয়ে রাখা সত্ত্বেও বিদেশ থেকে অনেক বিদ্যুৎ আমদানি করা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে। এ ব্যাপারে খবরে প্রকাশ, ‘বর্তমানে ভারত থেকে ১,১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি হচ্ছে।’ সম্প্রতি আসামে নদী সম্মেলন চলাকালে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর বলেছেন, দেশটি থেকে আমদানির পাইপলাইনে রয়েছে আরো অন্তত ১,৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। আগামী নভেম্বর নাগাদ নেপাল থেকে ৫০০ মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ আমদানির চূড়ান্ত চুক্তি সই হওয়ার কথা রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য সমঝোতা হওয়া নিয়েও জোর আলোচনা চলছে। অবশ্য এ ক্ষেত্রে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক তামিমের অভিমত হচ্ছে: ‘দেশের অনেক জ্বালানি তেল ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চেয়ে নেপাল থেকে আমদানিকৃত বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী। তবে আমদানির আগে দেশের ব্যয়বহুল বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো বন্ধ করতে হবে।’ ভারত, নেপাল ও ভুটান থেকে আমদানিকৃত বিদ্যুতের মূল্য পড়বে ইউনিট প্রতি ৬.২৫ টাকা। এছাড়া, এসব বিদ্যুৎ হচ্ছে পানি বিদ্যুৎ, যা পরিবেশ বান্ধব। ফলে দেশে নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের পরিমাণ বাড়বে। বর্তমানে এ খাতে বিদ্যুতের হার মাত্র ৩% (ভারতে ৪০% বা ৪৬ গিগাওয়াটের বেশি, যা বিশ্বে চতুর্থ বৃহত্তম)। অথচ, দেশে পরিকল্পনা মতে হওয়ার কথা ছিল ১০%। তবে, বিদেশি বিদ্যুৎ আমদানির কারণে খুবই স্পর্শকাতর বিষয়ে জিম্মি হয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে কি-না তা ভাববার বিষয়।

দেশের বিদ্যুৎ খাতের তৃতীয় বড় সমস্যা হচ্ছে, কয়লা, যার মাত্রা ব্যাপক। কিন্তু দূষণ রোধ কল্পে গত ২২ জুন জাপান মাতারবাড়ি কয়লাভিত্তিক দ্বিতীয় ইউনিটের অর্থায়ন বন্ধ করে দিয়েছে। ২০২৪ সালে প্রথমটি চালু হওয়ার পর এর কাজ শুরু ও ২০৩০ সালে উৎপাদনে আসার কথা ছিল। যার উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১,২০০ মেগাওয়াট। দেশের বিদ্যুৎ খাতে এটি একটি বড় দুঃসবাদ। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের আরও অর্থায়ন বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কারণ, প্যারিস ও গ্লাসগো জলবায়ু সম্মেলনে বহু দেশ জীবাশ্ম জ্বালানি, বিশেষ করে, কয়লার ব্যবহার বন্ধ করার স্ব-স্ব পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। অনেক আন্তর্জাতিক আর্থিক সংস্থা ও দেশ নতুন করে কয়লা খাতে বিনিয়োগ না করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তাই যে কোন সময়ে যে কোন দেশ বাংলাদেশে কয়লা রফতানি বন্ধ করে দিতে পারে। সেটা হলে আমাদের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো হঠাৎ করে একযোগে বন্ধ হয়ে চরম ক্ষতির মুখে পড়বে। অবশ্য, এ ক্ষেত্রে আমাদের নিজস্ব কয়লা ব্যবহার করা যেতে পারে। যার আবিষ্কৃত মজুদের পরিমাণ প্রায় ৮ কোটি মে.টন। এটা নিজস্বভাবে উত্তোলন করার সক্ষমতা নেই আমাদের। উপরন্তু এ ক্ষেত্রে বিদেশি বিনিয়োগও এখন পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। স্মরণীয় যে, পরিবেশের উন্নতিকল্পে গত বছরের জুনে দেশের কয়লাভিত্তিক ১০টি বিদ্যুৎকেন্দ্র বাতিল করা হয়েছে। তাতে এলএনজি ব্যবহার করার চিন্তা-ভাবনা রয়েছে। উপরন্তু বেসরকারি কতিপয় কেন্দ্রে এলএনজি ব্যবহার করা হচ্ছে। এলএনজি দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যয় গ্যাসের চেয়ে ২৪ গুণ বেশি। তাই ভর্তুকির পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। যেমন: ২০২০-২১ অর্থবছরে সরকার বিদেশ থেকে প্রতি কিউবিক মিটার এলএনজি ৩১.৫৬ টাকায় আমদানি করে তা স্থানীয় বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীদের কাছে ৪.৪৫ টাকা করে বিক্রি করেছে। ফলে ভর্তুকি দিতে হয়েছে প্রতি কিউবিক মিটারে ২৭.০৮ টাকা-সিপিডি, যা পরবর্তীতে অব্যাহত থেকেছে এবং বর্তমানে আরো বেড়েছে। কারণ, সম্প্রতি বিশ্বে এলএনজির দাম বেড়েছে ব্যাপক।

দেশের বিদ্যুৎ খাতের চতুর্থ বড় সমস্যা হচ্ছে, দেশে মজুদকৃত গ্যাস শেষ হয়ে আসছে। ফলে অনেক দিন থেকেই চাহিদা মাফিক গ্যাস সরবরাহ হচ্ছে না। তাই অনেক বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে। উপরন্তু শিল্প ও কল কারখানায়ও রেশনিং করা হয়েছে। এই অবস্থায় গ্যাসের বিদ্যুৎকেন্দ্রে তেল ও এলএনজি ব্যবহার করা হচ্ছে। কিন্তু তেল, এলএনজি ও কয়লার মূল্য ক্রমান্বয়ে বেড়ে যাচ্ছে। তাতে বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয়ও বাড়ছে। যেমন: ২০১৯-২০ অর্থবছরে বিদ্যুতের গড় উৎপাদন খরচ ছিল ২.১৩ টাকা। সেটা ২০২০-২১ অর্থবছরে বেড়ে হয়েছে ৩.১৬ টাকায়। আর ২০২১-২২ অর্থবছরে আরো বেড়ে হয়েছে ৪.২৪ টাকা। চলতি অর্থবছরে আরো বাড়বে! জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক বদরূল ইমাম বলেন, ‘বৈশ্বিক জ্বালানি পণ্যের মূল্য এখন ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ পরিস্থিতির ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। ফলে আমদানি নির্ভর দেশগুলোর সবাই এখন ভুক্তভোগী। তাই আমাদের নিজস্ব গ্যাস অনুসন্ধান বাড়াতে হবে।’

দেশের বিদ্যুৎ খাতের পঞ্চম বড় সমস্যা হচ্ছে, সঞ্চালন ও বিতরণ লাইন এবং অধিকাংশ খুঁটি বহু পুরাতন ও জীর্ণ-শীর্ণ। অনেক খুঁটি রাস্তার মধ্যে পড়েছে। অনেক তারও ছিড়ে রয়েছে রাস্তায়। ফলে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। তাই রাজধানীসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে বিদ্যুতের লাইন মাটির নিচ দিয়ে নেওয়া হচ্ছে। রাজধানীতে এটা ২০২৫ সালের মধ্যে সম্পন্ন হবে বলে খবরে প্রকাশ। এ কাজটি খুবই কল্যাণকর। কিন্তু এটি সঠিক সময়ে সম্পন্ন হবে কি-না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। কারণ, আমাদের সরকারি কাজ নির্দিষ্ট সময়ে, অর্থে ও মানে সম্পন্ন হওয়ার নজির কম!

এ যুগে বিদ্যুৎ অপরিহার্য পণ্য। তাই এটা সকলের নিরবচ্ছিন্ন প্রাপ্তি নিশ্চিত করা জরুরি। তাই বিদ্যুৎ খাতের সব বাধা দূর করতে হবে। সারা দেশে চাহিদা মাফিক বিদ্যুৎ নিরবচ্ছিন্ন করার জন্য প্রয়োজনীয় সঞ্চালন ও বিতরণ লাইন আধুনিক করতে হবে। সেগুলোকে আগামী ৫০ বছরের চাহিদা অনুযায়ী সক্ষম ও টেকসই করে করতে হবে। দ্বিতীয়ত: দ্রুত সরকারি সব বিদ্যুৎকেন্দ্র সচল করতে হবে এবং তার উৎপাদিত সব বিদ্যুৎ ক্রয়ের পর চাহিদা থাকলে বেসরকারি বিদ্যুৎ ক্রয় করতে হবে। রেন্টাল ও কুইক রেন্টালের বিদ্যুৎ ক্রয় বন্ধ করতে হবে অবিলম্বে।তৃতীয়ত: দ্রুত বিদ্যুতের সব গ্রাহককে প্রি-পেইড মিটার দিতে হবে। চতুর্থত: বিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়লা ও এলএনজি ত্যাগ করে তদস্থলে দেশীয় গ্যাসভিত্তিক করতে হবে। সে জন্য দেশের আবিষ্কৃত সব গ্যাস উত্তোলন ও ব্যবহার এবং নতুন গ্যাস অনুসন্ধান বাড়াতে হবে। পঞ্চমত: পরিকল্পনা অনুযায়ী নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে হবে। বিপির তথ্য মতে, গত বছর বিশ্বে ১৫% নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন বেড়েছে। চলতি বছর আরো বাড়বে। আইআরইএনএ জানিয়েছে, ‘২০৫০ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য খাতে বিশ্বের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ দাঁড়াবে- সোলার থেকে ৩৫.৮%, হাইড্রো থেকে ১২.৪%, স্থলভাগের বায়ু থেকে ২৪.৩% ও সাগরের বায়ু থেকে ১২.১%। বাংলাদেশের উপকূলে ১০ হাজার মেগাওয়াট বায়ু বিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে।’ খবরে প্রকাশ, ‘হাইড্রোজেন আফ্রিকার জ্বালানি খাতে অভ্যুত্থান ঘটাতে চলেছে। ইউরোপেও হাইড্রোজেন প্রযুক্তির প্রতি আগ্রহ বেড়েছে। বিশ্বব্যাংকের মতে, বর্তমানে বিভিন্ন দেশে ১২টি হাইড্রোজেন প্রকল্প চলমান রয়েছে।এছাড়া, পরিকল্পনা পর্যায়ে রয়েছে আরো কিছু প্রকল্প।হাইড্রোজেন সাধারণত প্রাকৃতিক গ্যাস বা পানির অণু থেকে সংগ্রহ করা হয়। ইলেক্ট্রোলাইসিস নামে পরিচিত একটি প্রক্রিয়ায় এটি উৎপাদন করা হয়।’ দেশে জাইকার সহায়তায় ২০৫০ সাল পর্যন্ত বিদ্যুৎ ও জ্বালানির সমন্বিত সংশোধিত মহাপরিকল্পনা তৈরি করা হচ্ছে।এতে সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থা অবশ্যই রাখতে হবে।নতুবা যেই লাউ সেই কদু হবে।


লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট।
[email protected]



 

Show all comments
  • Asaduj Jaman Shawn-আসাদুজ জামান শাওন ৫ জুলাই, ২০২২, ৬:৫৬ এএম says : 0
    যেই সাফল্য আমাকে আমার রবের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দেয়, তার চেয়ে সেই ব্যর্থতা ভালো যা আমাকে আমার রবের নিকটবর্তী করে নেয়। #Dawah
    Total Reply(0) Reply
  • Mahbub Khan ৫ জুলাই, ২০২২, ৬:৫৬ এএম says : 0
    শুধু বিদ্যুৎ খাতে নয়,আগামীতে জ্বালানী সংকট শুরু হবে।পেট্রল,গ্যাস,ডিজেলের সংকট দেখা দিবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Jamal Bin Rahaman ৫ জুলাই, ২০২২, ৬:৫৬ এএম says : 0
    শ্রীলঙ্কা হতে আমরা আর কত দূর....?
    Total Reply(0) Reply
  • Trinyona Sei Ami ৫ জুলাই, ২০২২, ৬:৫৬ এএম says : 0
    বেশি করে বিনামূল্যে বিক্রি করেন সুখে থাকবেন
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিদ্যুৎ খাতে অশনি সঙ্কেত
আরও পড়ুন