গুলিস্তানের বিস্ফোরণে নিহত ১৬ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে
রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজার এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ
পুরান ঢাকার চকবাজারে আগুনে পুড়ে কত জন মারা গেছেন, সেই সংখ্যা নিয়ে তথ্য বিভ্রাট দেখা দিয়েছে। গত বৃহস্পতিবার সকালে ফায়ার সার্ভিসের মিডিয়া সেন্টার থেকে নিহতের সংখ্যা বলা হয়েছিল ৭০ জন। অন্যদিকে, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান সোহেল মাহমুদ মর্গ থেকে জানিয়েছেন, অগ্নিকান্ডে নিহত হয়েছেন ৭৮ জন। পরবর্তীতে বৃহস্পতিবার রাতে সোহেল মাহমুদ জানান, সকালে তার বলা সংখ্যাটি ভুল ছিল, প্রকৃত নিহতের সংখ্যা ৬৭ জন।
ওই দিন দুপুরে ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহম্মেদ খান ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন তাৎক্ষণিক প্রেস ব্রিফিংয়ে উদ্ধার করা নিহতের সংখ্যা ৭০ জন বলে জানান। আবার রাতে দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে নিহতের সংখ্যা ৮১ বলে জানানো হয়। শিল্প মন্ত্রণালয়ের প্রাথমিক তদন্তে নিহতের সংখ্যা ৭৮, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে ৭৬ জন বলে জানানো হয়। আইজিপি জানান, ৭০ জন লাশ উদ্ধারের কথা। এখনও সন্ধান মিলছে না অনেকেরই। সে সংখ্যাও ১৬ জন বা তারও বেশি। সব মিলে অগ্নিকান্ডে নিহতের সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। এ প্রসঙ্গে ঢাকা মেডিকেলের ফরেনসিক বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, এখনও অনেক লাশ মর্গে পড়ে আছে। সেগুলো সনাক্ত করা যাচ্ছে না। ঢাকা মেডিকেলের বাইরেও অনেকে ভর্তি আছেন। এতবড় একটা দুর্যোগপূর্ণ ঘটনার পর নিহত ও আহতের সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি হতেই পারে।
নিহতের সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তির বিষয়ে ফায়ার সার্ভিসের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, উদ্ধারের সময় লাশগুলো ব্যাগে ভরে হাসপাতালের মর্গে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। পরে দেখা গেছে, লাশের কোনোটার ওপরের অংশ আছে তো নিচের অংশ নেই। আবার কোনোটার নিচের অংশ থাকলেও ওপরের অংশ পাওয়া যায়নি। এগুলো ব্যাগে ঢুকানোর সময় গণনায় ৭০টি হয়েছিল। হাসপাতালে নেওয়ার পর ব্যাগ থেকে বের করে সেগুলো ফের মিলিয়ে দেখা হয়। তখন গণনায় লাশের সংখ্যা আগের উল্লেখ করা ৭০টির জায়গায় তিনটি কমে ৬৭টি হয়েছে।
এ বিষয়ে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক মেজর এ কে এম শাকিল নেওয়াজ গণমাধ্যমকে বলেন, আগুন নিয়ন্ত্রণের পর আমরা ঘটনাস্থল থেকে টুকরো টুকরো লাশ উদ্ধার করেছি। সেগুলো হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। হাসপাতালে গিয়ে পুনরায় লাশগুলো মিলিয়ে দেখার পর এর সংখ্যা ৬৭টিতে দাঁড়িয়েছে। হাসপাতাল রাইট অথরিটি। তারা যেটা বলবে সেটাই সঠিক। জেলা প্রশাসনের তথ্য কেন্দ্র থেকে একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, তিনটি লাশের ব্যাগে বেশ কিছু খন্ডাংশ রাখা ছিল। ধারণা করা হচ্ছে, এগুলো ৬৭টি লাশেরই। তবে এগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হবে এগুলো ৬৭টি লাশের নাকি পৃথক কোনও মানুষের। তাই ডিএনএ পরীক্ষার জন্য নমুনা নেওয়া হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে আটটার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক সোহেল মাহমুদ তথ্য বিভ্রাটের কারণ ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন, সকালে হাসপাতালের মর্গে ১১ জনের লাশ ছিল। দুপুরে ঢাকা মেডিক্যালে যখন ব্যাগে করে লাশগুলো আনা হয়,তখন সর্বশেষ ব্যাগটিতে ৬৭ সংখ্যাটি লেখা ছিল। দুটি সংখ্যা পৃথক ভেবে সকালের ১১টি আর সর্বশেষ ব্যাগের নম্বর ৬৭ যোগ করে সে সময় নিহতের সংখ্যা ৭৮ বলা হয়েছিল। বোঝার ভুলের কারণেই অগ্নিকান্ডে নিহতের সংখ্যা নিয়ে এই বিভ্রাট হয়েছে। তবে আমরা এপর্যন্ত ৬৭ জন নিহত হওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।